Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কর্মমুখী বিজ্ঞানসম্মত মাদ্রাসা শিক্ষার তাগিদ

মাদ্রাসা শিক্ষাকে বাদ দিয়ে চিন্তার সুযোগ নেই -ড. গোলাম রহমান

হোসাইন আহমদ হেলাল : | প্রকাশের সময় : ৩১ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

মাদ্রাসা শিক্ষার ৭৫ শতাংশ বেকার : বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষার অভাবে হচ্ছে না কর্মসংস্থান, কারিগরি শিক্ষা চালুর দাবি : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর মাদ্রাসায় পরিণত : ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থীই মাদরাসার


বিশিষ্টজন এখন মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নের কথা বলছেন। ‘ওলামা-পীর-মাশায়েখের বাংলাদেশ’ কথাটি যখন জনসাধারণের মাঝে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা লাভ করছে, ঠিক তখনই বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও শিক্ষাবিদগণ মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ে তাদের ভাবনার কথাগুলো প্রকাশ করেছেন। সরকারকে তাগিদ দিচ্ছেন মাদ্রাসা শিক্ষা আধুনিকায়নের। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ৬০ শতাংশই মাদ্রাসা থেকে আগত। বিশিষ্টজনরা বলেছেন, দারিদ্র্য ও ধর্মীয় অনুভ‚তির কারণে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষার অভাবে হচ্ছে না যথাযথ কর্মসংস্থান। তাদের জন্য প্রয়োজন কারিগরি শিক্ষা চালু করা। মাদ্রাসা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে সমাজের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হবে না বলে মনে করছেন ওই বিশিষ্টজনরা। ‘ওলামা-পীর-মাশায়েখের বাংলাদেশ’ কথাটি এখন বাস্তবে রূপ লাভ করতে শুরু করেছে।
উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম, ইসলামী গবেষক, সাবেক মন্ত্রী ও দৈনিক ইনকিলাব প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আলহাজ মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) বাংলাদেশের মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ও উন্নয়নে যে রোডম্যাপ তৈরি করেছিলেন, যে স্বপ্ন তিনি মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ে দেখেছেন আজ তার সুযোগ্য উত্তরসুরি আলহাজ এ এম এম বাহাউদ্দীন সেটিকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। কোনো দলের হয়ে নয়, কোনো লোভ-লালসায় নয়, মরহুম পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন এবং সামাজিক উন্নয়ন ও অবহেলিত মাদ্রাসা শিক্ষা ও কুরআন সুন্নাহর ভিত্তিতে সঠিক ধর্ম পরিচালনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ একটি গর্বিত ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত করার মানসে নিজের জীবনের সবচেয়ে বেশি সময় ও ত্যাগ স্বীকার করে সারাদেশের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়িয়েছেন। সরেজমিন প্রত্যক্ষ করে তিনি অনুধাবন করেছেন, তার এ ছুটে বেড়ানো কোনো বিনোদন ছিল না, লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়েই তিনি আলেম, ওলামা, পীর-মাশায়েখের কাছে গিয়ে পরামর্শ নিয়ে দেন-দরবার শুরু করেন সরকারের সাথে। কেউ কেউ ভাবছেন, তিনি এমপি-মন্ত্রী হওয়ার জন্য এবং ব্যক্তিগত লাভবান হওয়ার জন্য এসব করছেন। বিগত সরকার আমলে তাকে বিতর্কিত করতে নানাভাবে ষড়যন্ত্র করেছেন একটি রাজনৈতিক দল। ব্যর্থ হয়ে জমিয়াতুল মোদার্রেছীন ভাগ করে তারা মাদ্রাসা শিক্ষক পরিষদ করেছিলেন। তারপরও তিনি থেমে থাকেননি। দাবি-দাওয়া নিয়ে তিনি সরকারের কাছে বারবার গিয়েছিলেন। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় প্রতিষ্ঠিত ঐ সংগঠন (মাদ্রাসা শিক্ষা পরিষদ) আজ নিজেরাই বিলুপ্ত। ঐ রাজনৈতিক সংগঠনের নানা হয়রানি, মামলা, হামলার কাছে হেরে যাননি সৎ সাহসী বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন সভাপতি, দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক আলহাজ্ব এ এম এম বাহাউদ্দীন। তিনি মরহুম পিতার আদর্শ ও কুরআন-সুন্নাহর আদর্শ বুকে ধারণ করে বর্তমান সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা এবং শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে একাধিক বৈঠক করে বুঝতে সামর্থ্য হয়েছেন। দেশের বিশাল একটি জনগোষ্ঠী মাদ্রাসা শিক্ষার সাথে জড়িত। তাদের বঞ্চিত করে, অবহেলা করে বাংলাদেশের সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। বর্তমান সরকার এ এম এম বাহাউদ্দীনের চিন্তা, চেতনাকে সঠিক বিবেচনায় রেখে মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। আজ মাদ্রাসা শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা গর্বিত তাদের নেতা এ এম এম বাহাউদ্দীনের কাছে। তাকে এবং বর্তমান সরকারকে কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্য তারই নির্দেশে সারাদেশ থেকে কয়েক লাখ ওলামা-পীর-মাশায়েখ গত ২৭ জানুয়ারি ঢাকায় এসেছিলেন।
সেই দিনই (২৭ জানুয়ারি) একটি সংগঠন ‘বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বনাম শিক্ষা বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম’ শীর্ষক এক আলোচনা সভার আয়োজন করেন। আলোচনা সভায় মাদ্রাসা শিক্ষাকে বন্ধ নয়, মাদ্রাসা শিক্ষাকে আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত করার তাগিদ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারাকাত। তিনি বলেছেন, দারিদ্র্য ও ধর্মীয় অনুভূতির কারণে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে প্রতি ৩ শিক্ষার্থীর মধ্যে একজন মাদ্রাসাছাত্র। আর তাদের অর্ধেকেরও বেশি কওমি মাদ্রাসার- যারা সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণে নেই। তিনি আরো বলেন, মাদ্রাসাছাত্রদের ৭৫ শতাংশই বেকার। তাই মাদ্রাসা শিক্ষাকে কর্মমুখী ও বিজ্ঞানসম্মত করতে হবে, না হলে দেশের অর্থনীতি ও রাজনীতি প্রভাবিত হবে। এএলআরডির চেয়ারপারসন খুশী কবিরের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় গবেষণা প্রতিবেদন ও বইয়ের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত। প্যানেল আলোচক ছিলেন ড. সফিক উজ জামান, ড. মেজবাহ কামাল, অধ্যাপক এম এম আকাশ এবং সাবেক তথ্য কমিশনার ড. গোলাম রহমান। সূচনা বক্তব্য দিয়েছেন এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামছুল হুদা। সভায় ‘বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষার রাজনৈতিক, অর্থনীতি’ নামে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। সভায় ড. গোলাম রহমান বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষা যেভাবে বিস্তার লাভ করেছে তাতে তাদের বাদ দিয়ে চিন্তা করার সুযোগ নেই। মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশ হলেও ধর্মীয় ও আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে তারা মাদ্রাসামুখী হচ্ছে। বিষয়টি সমাধানে সরকারকে গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে।
ড. গোলাম রহমান বলেন, আমাদের গোটা শিক্ষাব্যবস্থা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার মান কমে গেছে। এ অবস্থায় পরিবর্তন হওয়া দরকার। না হলে সমাজের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হবে না। ড. শফিক-উজ-জামান বলেন, সমাজে বৈষম্যের কারণেই মাদ্রাসা বিস্তার লাভ করছে। অনেকেই দারিদ্র্যের কারণে সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থায় না গিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষার দিকে ঝুঁকে পড়ছে। ড. শফিক বলেন, এক সময় মাদ্রাসা শিক্ষা আধুনিক শিক্ষার আলোকবর্তিকা ছিল। তখন মাদ্রাসা থেকে অনেক জ্ঞানী, গুণী ব্যক্তি বেরিয়ে এসেছেন। সমাজে অবদান রেখেছেন। কিন্তু এখন শিক্ষাব্যবস্থার কারণেই তারা পিছিয়ে পড়ছে। এটা মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের দোষ নয়, দোষ সমাজব্যবস্থায়।
ড. মেজবাহ কামাল বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন উচ্চতর মাদ্রাসায় পরিণত হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতির কারণে মাদ্রাসার ছাত্ররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশি সুযোগ পাচ্ছে। এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ৬০ শতাংশ ছাত্র মাদ্রাসা থেকে আগত। এম এম আকাশ বলেন, অর্থনীতি উন্নয়নের যে লক্ষ্য সরকারের রয়েছে, তার জন্য শিক্ষা খাতের উন্নয়ন দরকার। আর এ উন্নয়ন বাজেটের আড়াই শতাংশ ব্যয় দিয়ে অর্জন করা সম্ভব নয়। জিডিপির অন্তত ৪/৫ শতাংশ ব্যয় হতে হবে শিক্ষা খাতে। মাদ্রাসা শিক্ষার পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষার প্রসার বাড়াতে হলে সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থা সবার জন্য ফ্রি করতে হবে। মাদ্রাসা শিক্ষায় কারিগরি ব্যবস্থা শিক্ষাব্যবস্থা চালুর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। খুশী কবির বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষা সমস্যা নয়, মাদ্রাসা শিক্ষার সমস্যা হলো মাদ্রাসা রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।



 

Show all comments
  • মানিক হায়দার ৩১ জানুয়ারি, ২০১৮, ২:২২ এএম says : 0
    এই বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করার সময় এসেছে
    Total Reply(0) Reply
  • কামরুজ্জামান ৩১ জানুয়ারি, ২০১৮, ২:২৪ এএম says : 0
    বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে মাদ্রাসার ছাত্র যাতে আর কোন বৈষম্যের শিক্ষার না হয় সেদিকে সরকারকে নজর দিতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->