Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দাঙ্গার শহরে উন্মাদনা ছড়াচ্ছে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা: নীরব দর্শকের ভূমিকায় পুলিশ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:২৯ পিএম

মৌজপুর-বাবরপুর চৌকে বিজেপি নেতা জয় ভগবান গয়ালকে ঘিরে জড়ো হয়েছিল হিন্দু জনতা। শ’ খানেকের কিছু বেশি মানুষের সমাবেশে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন তিনি। এরপর মুসলিম-বিদ্বেষী তিক্ত কথাবার্তা শুরু করলেন তিনি।

গেরুয়া দলের ৬০ বছর বয়সী এই নেতা ঘোষণা দিলেন, “তোমরা যদি এখানে থাকতে চাও, তাহলে তোমাদের উঠে দাঁড়াতে হবে”। তার কথার মাঝখানেই শ্লোগান উঠলো ‘জয় শ্রী রাম’, ‘হরে হরে মহাদেব’।

গয়াল যদিও মুসলিমদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই হিন্দুদেরকে উসকানি দিচ্ছিলেন, তবু তার এক সমর্থক বললেন, “মুসলিমরা চারদিক থেকে আমাদের ঘিরে রেখেছে। আমরা যদি নিজেদের বাঁচাতে চাই, তাহলে আমাদের লড়াই করতে হবে”।

সোমবার থেকে উত্তরপূর্ব দিল্লীর বেশ কিছু এলাকায় বড় ধরনের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছে। মঙ্গলবার এ অঞ্চলের মিশ্র জনবহুল এলাকাগুলোও ধর্মীয় বিবেচনায় পুরোপুরি বিভক্ত হয়ে যায়।

যে এলাকায় মুসলিম বেশি, সেখানে তারা জড়ো হয়েছে। অন্যদিকে রাজনৈতিক দাঙ্গাবাজদের বাদ দিলে হিন্দুরাও তাদের বাড়ির মধ্যেই অবস্থান করছে।

গয়ালের সমাবেশের এলাকায় পাহারারত এক পুলিশকে এক সাংবাদিক জিজ্ঞাসা করলেন, “এখানে কি ১৪৪ ধারা জারি করা হয়নি?”

“হাঁ”, জবাব দিলো সে।

“তাহলে এই নেতা সমাবেশ করছেন কিভাবে?” আবার জানতে চাইলেন সাংবাদিক।

“জানি না”, জবাব দিলো পুলিশ।

গয়াল আর তার সমর্থকরা যেভাবে উসকানি দিচ্ছিলো, তাতে যে কোন পর্যবেক্ষক হতভম্ব হয়ে যাবে। জাফরাবাদ থেকে মৌজপুর মেট্রো স্টেশান পর্যন্ত অংশই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার একেবারে মূল কেন্দ্র। এই জায়গায় দূরত্ব এক কিলোমিটারেরও কম, কিন্তু ধর্মীয়ভাবে এমনভাবে বিভাজিত হয়ে গেছে এই এলাকা, যেটা রাজধানীতে আগে কখনও দেখা যায়নি।

জাফরাবাদ মেট্রো স্টেশানের কাছাকাছি এলাকায় মুসলিমদের উপস্থিতি বেশ জোড়ালো। কিন্তু মঙ্গলবার মুসলিম বিক্ষোভকারীরা মূলত চুপচাপ ছিল। জাফরাবাদের এক বিক্ষোভকারী দ্য ওয়্যারকে বললেন, “আমাদের উদ্দেশ্য হলো সিএএ’র বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করা। আমাদের হিন্দু ভাই বা বোনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কোন আগ্রহ নেই আমাদের”।

শুধু হিন্দুত্ববাদীদের কারণেই পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “মিথ্যা বলবো না। গতকাল হিন্দু জনতা যখন পাথর ছুড়তে শুরু করেছিল, তখন আমাদের দিক থেকে কিছু তরুণ ওই একই পাথর ও ইটের টুকরাগুলো কুড়িয়ে তাদের দিকে ছুড়েছিল। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। কিন্তু আজ আমরা সুস্পষ্ট অবস্থান নিয়েছি যে কোন ধরনের সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না”।

কিছু পুলিশ পাহারা দিলেও বিক্ষোভকারীরা সিএএ বিরোধী শ্লোগান দিয়ে যাচ্ছিল। বেশ কিছু বক্তা সবাইকে যে কোন ধরনের সহিংসতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানালেন।

এর ঠিক বিপরীত চিত্র মৌজপুর স্টেশানের চারপাশে। সেখানে পুরোপুরি দখল করে বসেছে হিন্দুত্ববাদী উগ্র জনতা।

সেখানে প্রথমেই চোখে পড়বে ‘জয় শ্রী রাম’ লেখা বড় একটি ব্যানার। দিল্লী পুলিশের ছোট একটি ব্যাটালিয়নকে সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে। তাদের সামনেই যুবকেরা লাঠি, টিউবলাইট, পিভিসি পাইপ নিয়ে প্রকাশ্যে শক্তি প্রদর্শন করছে। উগ্র জনতার রোষ বাড়তে থাকলেও সেখানে নীরব দর্শকের মতো দাঁড়িয়ে আছে পুলিশেরা। সাংবাদিকদের দিকে সন্দেহের চোখে তাকাচ্ছিল তারা। কেউ ছবি তোলা বা ভিডিও করার চেষ্টা করলেই তারা ফোন কেড়ে নিয়ে সব ছবি ডিলিট করে দিচ্ছিল এবং তাদেরকে পেটানোর হুমকি দিচ্ছিল।

পুলিশ সাংবাদিকদের অনুরোধ করছিল যাতে তারা এই সমাবেশ থেকে দূরে থাকে। কিন্তু ১৪৪ ধারা জারি থাকা সত্বেও কেন তাদের জমায়েত হওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে, সে বিষয়ে কথা বলতে তারা অস্বীকার করছিল।

ত্রিশের কাছাকাছি বয়সের এক হিন্দু দ্য ওয়্যারকে বললেন, “জঙ্গিরা আমাদের ঘিরে রেকেছে। তারা শুধু লাঠির ভাষায় বোঝে”। রিপোর্টার হিন্দু – এটা নিশ্চিত হওয়ার পরেই কেবল সে এই কথা বললো। পাশেই একজন মুসলিম রিপোর্টার দাঁড়িয়ে ছিল। তার সাথে কথা বলতে রাজি হলো না সে।

একটু পরে পরেই বিভিন্ন জায়গা থেকে ‘জয় শ্রী রাম’ শ্লোগান উঠছিল। মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সবচেয়ে বড় শ্লোগান হয়ে উঠেছে এখন এটা। উসকানিমূলক কথাবার্তা – বিশেষ করে যেগুলো মুসলিমদের বিরুদ্ধে বলা হচ্ছিল – সেগুলোও শোনা যাচ্ছিল বেশি। সেই সাথে মাঝে মাঝে পুলিশের ছোড়া টিয়ার গ্যাসের শব্দ আসছিল, যেগুলো দিয়ে তাদের বিক্ষিপ্ত করে দেয়ার চেষ্টা করছিল পুলিশ।

আরেক কোনায় মধ্যবয়সী নারীরা গেরুয়া কাপড় পড়ে উপস্থিত হয়েছে। হিন্দু প্রধান বাবরপুর সড়কে তারা ঘুরে বেড়াচ্ছিল। মুসলিমদের বিরুদ্ধে হিন্দুদেরকে আরও বেশি জড়ো করার জন্যই মূলত তারা এটা করছিল।

সমাবেশের মধ্যে অনেকেই প্রধানমন্ত্রীর নাম ধরে শ্লোগান দিতে চাচ্ছিলেন। তাদের উদ্দেশে একজন বললেন, “মোদি মোদি বলা যাবে না। শুধু ‘জয় শ্রী রাম’ শ্লোগান হবে”।

উত্তর পূর্ব দিল্লীর অধিকাংশ দোকানপাট ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান যদিও মঙ্গলবার বন্ধ ছিল। কিন্তু জাফরাবাদ ও মৌজপুর মেট্রো স্টেশান পর্যন্ত অংশ দেখে বোঝা যায় যে সোমবার কি হয়েছে। জাফরাবাদে মুসলিমদের বহু দোকান জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। রাস্তায় পাথর, ইট আর গ্লাস পড়ে আছে এদিকে ওদিকে।

প্রায় দুই মাস ধরে একদল মুসলিম নারী পুরষ সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্টের (সিএএ) বিরুদ্ধে জাফরাবাদে ধরনায় বসেছে। কিন্তু ধর্নায় কাজ হচ্ছে না ভেবে দিন তিনেক আগে এদের একটা অংশ আলাদা হয়ে জাফরাবাদ মেট্রো স্টেশানের নিচে সড়ক আটকে অবরোধ কর্মসূচিতে বসেছে।

এর পরপরই মাঠে নেমেছে হিন্দুত্ববাদী নেতারা। বিজেপি নেতা কাপিল মিশ্র – যিনি সম্প্রতি নির্বাচনে হেরে গেছেন – তিনি দিল্লী পুলিশ এবং সরকারের প্রতি হুমকি দিয়ে বলেছেন যে, তার সমর্থকরা এই রাস্তা থেকে সিএএ-বিরোধী বিক্ষোভকারীদেরকে উঠিয়ে দিতে শক্তি প্রয়োগ করতে দ্বিধা করবে না।

সমাজকর্মী ওয়াইস সুলতান খান দ্য ওয়্যারকে বলেন, “বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর শান্তি বজায় রাখার জন্য হিন্দু আর মুসলিম সম্প্রদায়কে প্রচণ্ড চেষ্টা করতে হয়েছিল। সিলামপুর আর আশেপাশের এলাকাগুলো ভারতের সম্প্রীতিমূলক সংস্কৃতির প্রতীক ছিল। এর কিছুই আর নেই। এমনকি আমাদের হিন্দু প্রতিবেশীরা এখন আমাদের দিকে সন্দেহের চোখে তাকায়”।

তিনি বলেন, “দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পর্ক মেরামত করতে এখন বহু বছর লেগে যাবে”।

সূত্র :সাউথ এশিয়ান মনিটর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->