Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহাসড়কে টাকার খেলা

চাকা ঘুরলেই দিতে হবে চাঁদা

কামাল আতাতুর্ক মিসেল : | প্রকাশের সময় : ২ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

সড়ক-মহাসড়কে গাড়ির চাকা ঘুরলেই দিতে হবে টাকা। করোনার অতিমারির এই সময়েও বদলায়নি চাঁদাবাজির সংজ্ঞা। চাঁদার মচ্ছব চলছে ঘাটে-ঘাটে। শুধু পাল্টেছে কৌশল। উত্তরবঙ্গের দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়কে যানবাহন খাতে চলছে ব্যাপক চাঁদাবাজি।

মহাসড়কটির মোড়ে মোড়ে চলছে ব্যাপক চাঁদাবাজি। অথচ গত বছর এ সংক্রান্ত একটি রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টে সড়ক পথে ব্যারিকেড দিয়ে টোল আদায় বন্ধের নির্দেশ দিলেও তা কোনো কাজে আসেনি। হাইকোর্টের এ আদেশ যাদের পালন করার কথা, দিনাজপুরে তারাই সড়কে চাঁদাবাজিতে ব্যস্ত সময় পার করেন। উত্তরবঙ্গের এক শীর্ষ পরিবহন ব্যবসায়ীর দাবি, শ্রমিক সংগঠন ও পুলিশ প্রতি মাসে সড়ক থেকে কোটি টাকার বেশি চাঁদা আদায় করে থাকে। তিনি এ বিষয়ে সুরাহা চেয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে যোগাযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি বলে অভিযোগ করেছেন।

এদিকে মহাসড়কে চাঁদাবাজি ও শ্রমিক হয়রানি বন্ধসহ চার দফা দাবিতে গতকাল বুধবার ভোর ৬টা থেকে ৯৬ ঘণ্টার কর্মবিরতি ঘোষণার ডাক দিয়েছিল দিনাজপুর জেলা ট্রাক, ট্যাঙ্কলরি, কাভার্ডভ্যান ও ট্রাক্টর শ্রমিক ইউনিয়ন। পরবর্তীতে পুলিশ সুপারের আশ্বাসে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে সংগঠনটি।

অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ সদস্য ও পরিবহন শ্রমিকরা মিলে গড়ে তুলেছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। পরস্পরের যোগসাজশে কৌশলে সড়ক-মহাসড়কে চলছে টাকার খেলা। কোথাও কোথাও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও পরিবহন সংগঠনগুলো নানা উদ্যোগ নিলেও বন্ধ হয়নি সড়কের এই অপতৎপরতা।

এখানকার চাঁদা আদায়কারী মনির (ছদ্মনাম) বলেন, এই টাকা আমরা একা নেই না। নেতা, পুলিশ, শ্রমিক সবাই মিলে মিলেমিশে খাই। এ কারণে পুলিশের ঝামেলা নেই। আর মাঝে মাঝে ঝামেলা তৈরি হলে ১-২ ঘণ্টা চাঁদা তোলা বন্ধ রাখি। মহাসড়কের ভূঁইয়াগাঁতী এলাকায় প্রকাশ্যেই যাত্রীবাহী বাস ও মাইক্রোবাস থেকে চাঁদা তুলতে দেখা যায়। প্রতিটি গাড়ি থেকে শুধু এই পয়েন্টেই নেয়া হচ্ছে ৫০০ থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত। বিনিময়ে কোনো স্লিপ বা টোকেন দেয়া হচ্ছে না। আদায়কারীদের জিজ্ঞাসা করলে বলা হচ্ছে এটা সম্মিলিত চাঁদা। অর্থাৎ মালিক শ্রমিক পুলিশ সবাই মিলেই এই চাঁদা তুলছেন। সরাসরি চাঁদা হিসেবে এই টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করলেও শ্রমিকদের কল্যাণসহ সব মহলকে ম্যানেজ করতেই এই টাকা উত্তোলন করা হচ্ছে বলে স্বীকার করেন চাঁদা উত্তোলনের দায়িত্বে থাকা রাজু আহম্মেদ নামের স্থানীয় এক শ্রমিক নেতা। পরিবহন মালিক, শ্রমিক ও চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কুড়িগ্রাম থেকে রংপুর, লালমনিরহাট, বগুড়া, রাজশাহী, দিনাজপুর এবং অভ্যন্তরীণ রুটে প্রায় পাঁচ হাজার যানবাহন চলে। এসব যানবাহন থেকে প্রকারভেদ অনুযায়ী চাঁদা তোলা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিধিনিষেধ ও বাধা সত্তে¡ও উত্তরবঙ্গের সড়ক-মহাসড়কে কৌশলে চাঁদাবাজি চলছেই। এটি বন্ধে পুলিশ ও পরিবহন সংগঠনগুলোর নানা উদ্যোগ এবং অভিযানও ফল দিচ্ছে না। দিনাজপুর থেকে রংপুর পর্যন্ত যেতে বিভিন্ন পয়েন্টের অন্তত ১০টি স্থানে দিতে হচ্ছে এই চাঁদা। একইভাবে চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছে রংপুর থেকে দিনাজপুরগামী গাড়িগুলোও।

ময়নাল নামের একজন বাসচালক জানান, ঢাকা থেকে রংপুরগামী একটি নন ব্র্যান্ডের যাত্রীবাহী বাসকে যাত্রাপথে সড়ক-মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে এক হাজার টাকা থেকে ১৮০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘বগুড়া ও রংপুর জোনের ভেতরে সবচেয়ে বেশি চাঁদা দিতে হয়। কামাল হোসেন নামের অপর এক বাসচালক বলেন, পুলিশের অভিযান শুরু হওয়ার পর চাঁদাবাজরা চাঁদাবাজির পয়েন্ট পরিবর্তন করেছে। আগের নির্দিষ্ট অবস্থানে না থেকে অন্য স্থানে চাঁদা আদায়ের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। আগে বাস থামিয়ে টাকা হাতে দিতে হতো। এখন টাকা কাগজে পেঁচিয়ে রাখা হয়। নির্দিষ্ট স্থান অতিক্রমের সময় ছুঁড়ে মারতে হয়।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. রুস্তম আলী খান বলেন, সড়কে চলাচলরত পণ্যবাহী ট্রাক থেকে প্রতিদিনই চাঁদা আদায় করে পুলিশ। এর প্রতিবাদ করলে হয়রানি আরও বেড়ে যায়। সড়ক-মহাসড়কে ট্রাক চলাচল করতে গিয়ে একেকটি স্পটে ৫০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়। এই চাঁদা যেমন হাইওয়ে পুলিশ নেয়, তেমনি মালিক ও শ্রমিক সমিতির নামেও আদায় করা হয়। পণ্যবাহী ট্রাক ট্রাফিক জ্যামে পড়লে একটি গ্রুপ আছে যারা ভাঙচুরের হুমকি দিয়েও চাঁদাবাজি করে থাকে।

জেলা বাস-মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি বলেন, মহাসড়কে কোনো চাঁদা আদায় করা হয় না। শুধু শ্রমিক ফেডারেশনের নির্ধারিত শ্রমিকদের জন্য কল্যাণ চাঁদা নেয়া হয়। এছাড়া কোনো চাঁদাবাজির সঙ্গে আমার সংগঠনের কোনো শ্রমিক নেতারা জড়িত নেই। দিনাজপুর জেলা ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও ট্রাক্টর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আলতাফ হোসেন বলেন, মহাসড়কে আমাদের কোনো লোকজন চাঁদা তুলছে না। যারা রয়েছে এরা সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ। তাদের ধরে ধরে কারাগারে পাঠানো হোক।

এ বিষয়ে দিনাজপুর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, সড়ক-মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে গাড়ি থেকে অবৈধভাবে চাঁদা আদায়ের বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে। অনেকে গ্রেফতার হয়েছে। মামলাও হয়েছে। এখন নতুন করে কেউ চাঁদা আদায়ের জন্য পথে নামলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মহাসড়ক

২৮ ডিসেম্বর, ২০২২
২১ ডিসেম্বর, ২০২২
২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->