সংসার চলে না স্বল্প আয়ের মানুষের
২৬ আগস্ট ২০২৩, ১০:৪২ পিএম | আপডেট: ২৭ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম
নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়েই চলছে। শত চেষ্টা করেও বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সরকার। মাছ-গোশত, ডিম-দুধ এবং ফলসহ পুষ্টিকর খাবার বাজারের তালিকা থেকে বাদ দিয়েও সংসার চালাতে পারছে না স্বল্প আয়ের মানুষ। জমানো টাকা অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। ঋণ করে কোন মতে এতদিন চললেও এখন আর সামাল দিতে পারছে না। যারা মাসিক ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করেন- তারা চোখে অন্ধকার দেখছেন। বাসা ভাড়া দিতেই চলে যায় আয়ের একটি বড় অংশ। বাকি টাকায় মাসের অর্ধেকও চলছে না। অনেকে বন্ধ করছেন সন্তানের লেখা পড়া। অনেকে আবার শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরে যাচ্ছেন। সবমিলিয়ে মধ্যবিত্ত ও নিন্মমধ্যবিত্তরা শুধু গুমরে কাঁদছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূল্যস্ফীতির কারণে ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর। বিশেষ করে কঠিন চাপের মধ্যে আছেন মধ্য আয়ের মানুষ। এই মুহূর্তে মূল্যস্ফীতি ও বাজার নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আরও কঠিন হয়ে পড়বে সাধারণ মানুষের জীবন।
রাজধানীর বাড্ডার সাতারকুল এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন ইসমাঈল। ছোট ছোট দুই সন্তানসহ ৪ জনের সংসার তার। কাকরাইলে একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তিনি। বেতন পান ২২ হাজার টাকা। বাসা ভাড়া যেন কম লাগে সেজন্য থাকেন ভেতরের দিকে রাজধানীর এক প্রান্তে। তিনি বলেন, ২০-২২ হাজার টাকা বেতন দিয়ে সংসার চালানো খুব কঠিন হয়ে গেছে। বাসাভাড়া দিয়ে আর বাজার সদাই করে পুরো মাস চলা যায়না। বেতন পাওয়ার ১০-১২ দিনে মধ্যে তা শেষ হয়ে যায়। বাকি দিনগুলো ধার-দেনা করে অনেক কষ্ট করে চলতে হয়। গ্রামে বাবা-মা আছেন। বাড়িতে টাকা পাঠানো তো দূরের কথা উল্টো আরও নিয়ে আসার লাগে। হঠাৎ করে কোনো মেহমান এলে খুবই চিন্তায় পড়তে হয়। আর অসুখ-বিসুখ হলেতো দু’চোখে অন্ধাকার দেখা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। বড় ছেলেটাকে একটা কিন্ডারগার্টেন স্কুলে গত বছর ভর্তি করে ছিলেন। এবার আর তাকে সেখানে পড়াতে পারছেন না। স্থানীয় একটি সরকারী প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি করেছেন।
একই আয়ের রাজধানীর আরেক বাসিন্দা সুমন বলেন, খুবই কাটছাঁট করে হিসাব নিকাশ করে চলতে হচ্ছে। প্রতি মাসেই ধার করতে হয়। জিনিস পত্রের যে দাম, বাজারে গেলে নাভিশ্বাস অবস্থা। তিনজনের পরিবার নিয়েই চলা খুব কঠিন হয়ে গেছে।
একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে কর্মরত মগবাজার এলাকার বাসিন্দা আনিসুর রহমান বলেন, ২৫ হাজার টাকার মতো ইনকাম করি। এই টাকা দিয়ে চার সদস্যের সংসার চালানো যায় না। তাই পরিবারকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। এখন এখানে একটা মেসে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কেউ যদি মাসিক ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা ইনকাম করেন তবে তার ছোট্ট ২ রুমের একটি বাসা ভাড়ার পেছনেই চলে যায় কম করে হলেও ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। তাও রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র বাদ দিয়ে ভেতরের এলাকার দিকে বাসা নিতে হয়। পাশাপাশি গ্যাস বিল, বিদ্যুৎ বিল, পানির বিলের জন্য আরও গুনতে হয় ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা। যদি সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করতে হয় তবে এখানে আরও এক হাজার টাকা বাড়তি খরচ হয়। অর্থাৎ শুধুমাত্র বাসা ভাড়ার পেছনেই ব্যয় হচ্ছে ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা।
এরপর তিন থেকে ৪ জনের সংসারে প্রতিমাসে বাজারের সর্বনিম্ন দামের ২৫ কেজির এক বস্তা চাল কিনতে ব্যয় হয় ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকা। নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজারের মধ্যে এক মাসে মাছ-গোশত ৩০০০-৪০০০ টাকা, এক মাসে ডিম ৪০০-৫০০ টাকা, সয়াবিন তেল ৫ কেজি বোতল ৮০০ টাকা, প্রতিদিন হাফ কেজি করে দুধ কিনতে হলে মাসে ৫০ টাকা হিসেবে মাসে ১৫০০ টাকা, রসুন পেঁয়াজ মরিচ মশলা, চিনি সাবান ইত্যাদি পণ্য কম করে কিনতে গেলেও ১৫০০-২০০০ টাকা, আলু, শাক-সবজির বাজার সব মিলিয়ে কমপক্ষে ৫০০০ হাজার টাকা। এছাড়াও পরিবারের একজন সদস্যের প্রতিদিন যাতায়াত করতে ৫০ টাকা ব্যয় হলে প্রতি মাসে খরচ হয় ১৫০০ টাকা।
এ হিসেবে খুব কাটছাঁট করে তিন থেকে চার জনের একটি পরিবারের মাসিক ব্যয় হয় ২৬,০০০-৩০,০০০ টাকার বেশি। যারা মাসিক এই টাকা রোজগার করেন সঞ্চয় বলতে কিছুই থাকে না তাদের। তার ওপর যদি ছেলে মেয়ের পড়ার খরচ থাকে, বাসায় কোনো মেহমান আসে কিংবা কোনো কারণে ওষুধপত্র কিনতে হয় তবে ধার করা ছাড়া তাদের কোনো উপায় থাকে না।
বর্তমানে দেশের সব থেকে বড় মূল্যমানের নোট হচ্ছে এক হাজার টাকা। সেই এক হাজার টাকা নিয়ে বাজার করতে গেলে সেটা দিয়ে বাজারের যদি ছোট ব্রয়লার মুরগিও কেনা হয় তবে সেটার দাম পড়বে ২৫০ টাকার ওপরে, তিন কেজি চাল ৬০ টাকা হিসেবে ১৮০ টাকা, এক কেজি ডাল ১১০ টাকা, এক কেজি সয়াবিন তেল ১৮০ টাকা, ২৫০ গ্রাম কাঁচা মরিচ ৬০ টাকা, ২৫০ গ্রাম রসুন ৬০ টাকা, ২৫০ গ্রাম আদা ৬০ টাকা, গরম মশলা ৫০ টাকা, হাফ কেজি চিনি ৭০ টাকা। কোনো ধরনের সবজি না কিনেও ২০ টাকা ঘাটতি থেকে যায়। অর্থাৎ দেশের সর্বোচ্চ মূল্যমানের নোটটি নিয়েও বাজারে গেলে তা দিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় সব কিছু কেনা যায় না। চাল-ডাল-তেল আর কিছু মশলা কিনতেই তা শেষ হয় যায়। বর্তমান বাজারে ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই বললেই চলে। আর এক কেজি গরুর গোশত কিনলে তো হাজার টাকার নোট একবারেই প্রায় শেষ হয়ে যায়।
বাজারে গরিবের মাছ খ্যাত পাঙাশ ছাড়া বাজারে তিনশ টাকার নিচে কোনো মাছ নেই। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায় পাঙাশ মাছ প্রতি কেজি ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, রুই ৩০০-৩৫০ টাকা, কাতল ৩০০-৩৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০-২২০ টাকা, মৃগেল মাছের কেজি ৩০০ টাকা। বাতাসি মাছের কেজি ৫০০ টাকা।
এছাড়া বাজারে পোয়া মাছের কেজি ৪০০-৫০০ টাকা কেজি, চিংড়ি ৬০০-৮০০ টাকা কেজি, সুরমা মাছের কেজি ২৫০-৩৫০ টাকা কেজি, ট্যাংরা মাছ ৫০০-৬০০ টাকা কেজি। এক মাস আগেও যা ৫০-১০০ টাকা কমে বিক্রি হয়েছে। এছাড়াও গোশতের বাজারে ব্রয়লার ১৮০-১৯০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৮০-৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে যখন তখন হুটহাট করে বাড়ে নিত্যপণ্যের বাজার। ৫০-৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া কাঁচা মরিচ কখনো ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। ৩৫-৪০ টাকার পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১০০ টাকার ওপরে। দেশে উৎপাদন কম হওয়ায় সম্প্রতি ৫০০ টাকা অতিক্রম করে কাঁচা মরিচের বাজার। পরবর্তীতে আমদানির পরে তা ২০০ টাকা কেজিতে নেমে আসে। বর্তমানে ২০০-২২০ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ। আবার ১০০-১১০ টাকা বিক্রি হওয়া ডিমের ডজন দেড়শ টাকা ছাড়িয়েছে। কয়েক মাস আগেই এক ডজন ডিম ১১০-১২০ টাকা বিক্রি হয়েছে। এখন বাজারে তা ১৫৫-১৬০ টাকা। এক বছর আগে ১০০ টাকার নিচে বিক্রি হওয়া চিনি এখন বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৪০ টাকা। শুধু মরিচ, পেঁয়াজ, ডিম কিংবা চিনি নয়, হুহু করে বাড়ছে প্রত্যেকটি নিত্যপণ্যের দাম। আদা-রসুন ২২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি ও বাজার নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আরও কঠিন হয়ে পড়বে সাধারণ মানুষের জীবন। এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, যে হিসেবে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে সে হিসেবে মানুষের আয় বাড়েনি। এর জন্য মানুষের অনেক কষ্ট হচ্ছে।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি
কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি
কিউবায় সমাবেশ
ঈশ্বরদীতে দূর্বৃত্তের হামলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আহত
থিনেস্ট স্বাস্থ্যের