কলাপাড়ায় সার নিয়ে কৃষকের শঙ্কা
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:২৮ পিএম | আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম

সরকার কৃষকের নিকট সারের সহজলভ্যতা নিশ্চিতে নীতিমালা প্রনয়ণের পরও পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ন্যায্যমূল্যে সার পাচ্ছে না কৃষক। সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চড়া মূল্যে বিক্রি হচ্ছে সার। ফলে চাষাবাদের ভরা মৌসুমে সার নিয়ে কৃষকের শঙ্কা যেন কিছুতেই কাটছে না।
এছাড়া বিসিআইসি’র বাফার গুদাম ও বিএডিসি’র গুদাম থেকে সার উত্তোলনের পর তদারকির অভাবে এক উপজেলা থেকে বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই সার যাচ্ছে অন্য জেলা, উপজেলায়। এতে সরকারের ভর্তুকি দিয়ে কেনা সার কৃষক নির্ধারিত মূল্যে পাচ্ছে না। তথ্য নির্ভরযোগ্য সূত্রের।
তবে স্থানীয় কৃষি বিভাগের দাবি, সার নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই। নির্ধারিত মূল্যে সার পাচ্ছেন কৃষক। আর বিসিআইসি’র বাফার গুদাম ইনচার্জ ও বিএডিসি’র স্টোর কিপারের দাবি, বরাদ্দপত্র, পে-অর্ডার চালান পেয়ে গুদাম থেকে সার দেয়া হয় ডিলারদের। যা তদারকির দায়িত্ব কৃষি অফিস ও সার-বীজ মনিটরিং কমিটির।
সূত্র জানায়, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আ. রহমান কলাপাড়া কৃষি অফিসে যোগ দেন ২০ সেপ্টেম্বর ২০০৬ সালে। একই কর্মস্থলে যুগ যুগ ধরে কর্মরত থাকায় ডিলারদের নিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন সার সিন্ডিকেট। কৃষি অফিস, জেলা খামারবাড়ী, সার-বীজ মনিটরিং কমিটি ম্যানেজে বিসিআইসি’র সার ডিলার খান ট্রেডার্সের জাকির খানকে দিয়ে তিনি নিয়ন্ত্রন করছেন সিন্ডিকেট। স্থানীয় উত্তরা ব্যাংকের শাখায় সিন্ডিকেটের নামে ৩২১০১১১০০১২২০৫৮ নং সঞ্চয়ী হিসাব খোলা হয়েছে। উত্তরা ব্যাংকের মাধ্যমে সিন্ডিকেটের লেনদেনের তথ্য ফাঁস হয়ে পড়ার পর থেকে লেনদেন চলছে ক্যাশে।
সূত্রটি আরো জানায়, উপজেলার একাধিক বিসিআইসি’র সার ডিলারের লাইসেন্স বাৎসরিক ভিত্তিতে ভাড়া নিয়ে খান ট্রেডার্স ব্যবসা করলেও, কৃষি অফিসের তথ্যে সার উত্তোলন ও বিক্রি করেছে স্ব স্ব লাইসেন্সধারীরা।
এরআগে সার কেলেঙ্কারিতে কলাপাড়া কৃষি অফিসের দুই উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও সার ডিলারের নামে মামলা হলেও আইনের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যান তারা।
সূত্র মতে, কলাপাড়ায় বিসিআইসির ১৪ জন ডিলার রয়েছে। কার্ডধারী খুচরা বিক্রেতা রয়েছে ১১৮ জন। সরকারি নির্দেশনায় কৃষকের কাছে ২৭ টাকা কেজি দরে ইউরিয়া সার, টিএসপি ২৭, ডিএপি ২১ এবং এমওপি ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করার নিয়ম থাকলেও কৃষককে সার কিনতে হচ্ছে ২৮-৩০ টাকা কেজি দরে। প্রতিবস্তা ইউরিয়া সার সরকারি মূল্য ১ হাজার ৩৫০ টাকার পরিবর্তে বিক্রি করা হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৪৫০ টাকা মূল্যে, ডিএপি সার ১ হাজার ৫০ এর পরিবর্তে বিক্রি করা হচ্ছে ১ হাজার ৩৫০ টাকা মূল্যে এবং টিএসপি সার ১ হাজার ৩৫০ এর পরিবর্তে বিক্রি করা হচ্ছে ১ হাজার ৯০০ টাকা মূল্যে। বিসিআইসি’র ডিলারসহ খুচরা বিক্রেতাদের গুদামেও মজুদ করা হচ্ছে বৈধ, অবৈধ উৎস থেকে কেনা সার।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রবিশষ্য মৌসুমে সারের চাহিদা অপেক্ষাকৃত কম হওয়ায় বরাদ্দকৃত সার বরিশাল বিসিআইসি বাফার গুদাম ও টিএসপি, এমওপি ও ডিএপি সার বরগুনা বিএডিসি গুদাম থেকে উত্তোলনের পর স্ব স্ব ডিলার গুদামে না নিয়ে চড়া মূল্যে বিক্রি হয় মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের কাছে।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, মহিপুর ইউনিয়নের খুচরা সার ডিলার মিজান ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী আ. রশিদ খান মারা যান বেশ কয়েক বছর আগে। সেই থেকে তার লাইসেন্সের বরাদ্দ ছাড় হচ্ছে প্রতিমাসে। লতাচাপলি ইউনিয়নের খুচরা ডিলার রশিদ সর্দার, আশরাফুজ্জামান বাবু, জুলহাস খান জালাল’র লাইসেন্স ১ লাখ টাকা অগ্রিম ও মাসিক ভাড়ায় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সার ব্যবসা করছেন মধ্যস্বত্ত্বভোগী রুবেল, শহিদ মুসুল্লী, বশির মোল্লা, জাহাঙ্গীর মুসুল্লী। উপজেলার সর্বত্র এমন চিত্র। লতাচাপলি ইউনিয়নের বিসিআইসি সার ডিলার রতন তালুকদার চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মারা যাওয়ার পর নীতিমালা অনুযায়ী পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের ডিলারকে না দিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এআরএম সাইফুল্লাহ উক্ত লাইসেন্সের বরাদ্দের সার দেন পৌরশহরের খান ট্রেডার্সকে। অথচ পৌরসভার অভ্যন্তরে আবাদি জমি রয়েছে ৭৩ হেক্টর, লতাচাপলিত ৩ হাজার ৭৪০ হেক্টর, নীলগঞ্জে ৩ হাজার ৮৯৫ হেক্টর।
উপজেলার একাধিক কৃষক জানান, ’বাজার থেকে ১ বস্তা সাদা ইউরিয়া ১ হাজার ৪০০ টাকায়, ডিএপি ১ হাজার ৩০০ টাকা, টিএসপি ১ হাজার ৯০০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে তাদের। ক্যাশ মেমো চেয়েও তারা পাচ্ছেন না।’
বিসিআইসি’র বাফার গুদাম ইনচার্জ মো. শাহে আলম গাজী বলেন, সার ও বীজ কমিটির বরাদ্দপত্র, পে-অর্ডার চালান পেয়ে গুদাম থেকে সার দেয়া হয় ডিলারদের। ডিলাররা সার উত্তোলনের পর তাদের কাছে সংগ্রহের চালান দিয়ে দেয়া হয় গুদাম থেকে। বিএডিসি’র গুদাম কর্তৃপক্ষের।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এআরএম সাইফুল্লাহ জানান, সারের কোথাও কোনো সঙ্কট নেই। আগস্ট মাসের বরাদ্দকৃত ১ হাজার ২৪২ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার ডিলাররা উত্তোলন করেছেন। সেপ্টেম্বরে বরাদ্দ রয়েছে ১ হাজার ১৭৮ মেট্রিক টন সার। কেউ যদি সার নিয়ে অনিয়ম করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি, কলাপাড়া ইউএনও মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, গত ৬ মাসে কৃষি অফিস সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির মাত্র একটি সভা করেছে। এছাড়া সার সংক্রান্ত বিষয়ে তারা আমাকে কোনকিছু অবগত করেনি। কমিটির সভায় সার বিক্রি তদারকিতে ইউপি সচিবদের ট্যাগ অফিসার হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও






আরও পড়ুন

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করলেন নাহিদ ও হাসনাত

তারুণ্যের সমাবেশ সফল করতে কিশোরগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রস্তুতি সভা

জ্ঞানভিত্তিক, নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন প্রজন্ম গড়ে তুলতে হবে : কাইয়ুম চৌধুরী

রায়িসির স্মরণে তেহরানে ‘জাতির সেবক’ প্রদর্শনীর উদ্বোধন

আসামি গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পেল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা

‘ফ্যাসিস্ট আমলে গ্রেফতারকৃত আলেমদের ঈদের আগেই মুক্তি দিতে হবে’

ভারত হাজার হাজার ‘বাংলাদেশিকে’ ফেরত পাঠাতে চায়

ঝিনাইদহে গ্রাম আদালত বিষয়ক প্রশিক্ষণ ”অল্প সময়ে স্বল্প খরচে সঠিক বিচার পেতে চলো যায় গ্রাম আদালতে”

শাহরাস্তিতে বিএনপি নেতার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আওয়ামীলীগ নেতার হামলা ও ভাংচুর

প্যারাবন কেটে ঘের নির্মাণের পায়তারা আওয়ামী ভূমিদস্যু চক্রের

ইরানের মধু রপ্তানি বেড়েছে ২০ শতাংশ

বিভাজন মিটিয়ে ফের এক হওয়ার আহ্বানে যা বললেন জুলাই যোদ্ধারা

সৈয়দপুরে সড়ক থেকে অতিরিক্ত স্পিড ব্রেকার অপসারণের দাবিতে গণস্বাক্ষর ও মানববন্ধন

জুলাই-আগস্টের আন্দোলন তারেক রহমানের নির্দেশেই পরিচালিত হয়েছে - শফিউদ্দিন আহম্মেদ সেন্টু

সীমান্ত অনুপ্রবেশের সময় বিজিবি'র হাতে আটক ২ জন

ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান মির্জাপুরে সড়কে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ৩ ব্যবসায়ীর জরিমানা

ঈশ্বরদীর পদ্মা নদীতে বালুমহালের আধিপত্যের দ্বন্দ্বে দুই গ্রুপের বন্দুকযুদ্ধে ৭ জন গুলিবিদ্ধ

কাশ্মীরে স্বাধীনতাকামী সঙ্গে সংঘর্ষে ভারতীয় সেনা নিহত

কুষ্টিয়ায় দুধ দিচ্ছে পাঠা

মনোহরগঞ্জ উপজেলার নবাগত নির্বাহী অফিসারের মতবিনিময় সভা