আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাবি শিক্ষার্থীরা
১০ মে ২০২৫, ০১:০৮ এএম | আপডেট: ১০ মে ২০২৫, ০১:০৮ এএম

৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে আসছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক ক্রিয়াশীল বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন। তৈরি হয় নতুন নতুন প্লাটফর্ম। বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষার্থীর নেতৃত্বে গত ২১ মার্চ তৈরি হয় গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ মঞ্চ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী এবি জুবায়ের ও বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মুসাদ্দিক আলি ইবনে মোহাম্মদের নেতৃত্বে এই মঞ্চ থেকে লাগাতার কর্মসূচি পালন করা হয়। শিক্ষার্থীরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র জনতার উপর নির্বিচারে সন্ত্রাসী কায়দায় গুলিবর্ষণ ও হামলার অপরাধে গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি জানান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দও এ দাবিতে একাত্মতা পোষণ করে।
ঢাবি শিক্ষার্থী ও মঞ্চের আহ্বায়ক এবি জুবায়ের বলেন, সাত-আট মাস হয়ে গেল অথচ আজকে এই সময়ে এসেও আমাদের আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে রাস্তায় নামতে হলো। এই সরকারের উচিত ছিল গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা। তারা এত বড় গণহত্যা চালালো অথচ তাদের মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই। এই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা ছাড়াই সরকারের আর কোনো সুযোগ নেই। আমরা জুলাইয়ের জনতা আপনার (প্রধান উপদেষ্টা) সঙ্গে আছি। আপনি প্রয়োজনে গণভোটের আয়োজন করুন, এই দেশের মানুষ রায় দিবে। এই দেশে আর আওয়ামী লীগের রাজনীতি চলবে না।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে গত মঙ্গলবার ৩৫টি সংগঠনের সমন্বয়ে ‘জুলাই ঐক্য’ নামে একটি জোটের আত্মপ্রকাশ হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন এই জোটের ঘোষণা দেওয়া হয়।
এই জোটের শরিকদের মধ্যে রয়েছে ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ-আপ বাংলাদেশ, ইনকিলাব মঞ্চ, জুলাই রেভল্যুশনারি জার্নালিস্ট অ্যালায়েন্স, জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্স, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ, অ্যান্টি-ফ্যাসিস্ট কোয়ালিশন, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-পুনাব, এসএডি (স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি), প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস অব বাংলাদেশ-পুসাব, জুলাই মঞ্চ ইত্যাদি।
সংবাদ সম্মেলনে জুলাই ঐক্যের অন্যতম সংগঠক ও গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ মঞ্চের আহ্বায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। তিনি বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। বিগত সাড়ে ১৫ বছরের দমন-নিপীড়ন, দুর্নীতি, লুটপাট ও গণতন্ত্র হরণের বিরুদ্ধে অভূতপূর্ব এক জাগরণে সংঘটিত হয় ছাত্র-জনতার জুলাই গণ-অভ্যুত্থান। এই অভ্যুত্থানে জীবন দিতে হয় দুই হাজারে বেশি মানুষকে। আহত হন প্রায় ৩১ হাজার মানুষ।
মুসাদ্দিক আলী দাবি করেন, ওই সময় রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও দলীয় ক্যাডারদের দ্বারা পরিচালিত হামলা আন্তর্জাতিক মহলে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। কিন্তু আমরা দেখছি, জুলাই বিপ্লবের আট মাস পেরিয়ে গেলেও গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিচারপ্রক্রিয়া এখনো অনিশ্চিত।
জুলাই ঐক্যের এই সংগঠক বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন দেশে স্বাভাবিক গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার স্বপ্নকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করার শামিল। সেই সঙ্গে জুলাই বিপ্লবে অংশগ্রহণকারী বিপ্লবীদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত। জুলাই বিপ্লব–পরবর্তী সময়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসররা বিভিন্ন দাবি তুলে জুলাইয়ে অংশ নেওয়া বিপ্লবীদের বিতর্কিত করতে চায়। এই বাস্তবতা উপলব্ধি করেই আমরা বিভিন্ন মতাদর্শের সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকে নিয়ে আজ “জুলাই ঐক্য” নামে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ঐক্যবদ্ধ জাতীয় জোটের ঘোষণা করছি।
সংবাদ সম্মেলনে ইনকিলাব মঞ্চের প্রতিনিধি ফাতিমা ঝুমা বলেন, জুলাই পরবর্তী সময়ে যখন আমাদের কথা ছিল, আওয়ামী লীগের বিচারটা সবার আগে নিশ্চিত হবে, সেখানে আমরা কোনো বিচারিক কার্যক্রম তো দূরে থাক, এ ব্যাপারে কোনো অগ্রগতিই দেখতে পাইনি।
আপ বাংলাদেশের প্রতিনিধি প্লাবন তারিক বলেন, দেশের মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলো কিন্তু আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের ইস্যুকে একেবারেই এড়িয়ে যাচ্ছে। আমরা দেখছি, আওয়ামী লীগের যেসব নেতা অপরাধে যুক্ত ছিলেন, তারা জেলে যাওয়ার কয়েক দিন পর ছাড়া পেয়ে আবার তাঁদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এগুলো নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।
জুলাই ঐক্য গঠনের ঠিক একদিন পর গত বৃহস্পতিবার সংবাদ পাওয়া যায় বুধবার রাতে গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদকে সেফ এক্সিট দিয়ে দেশত্যাগে সহযোগিতা করা হয়েছে। এ সংবাদে ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে পুরো দেশ। এর প্রভাব পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও। বৃহস্পতিবার রাতেই দুই ধাপে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ, এ ঘটনায় দায়ী সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টা ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে শিক্ষার্থীরা।
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ ও জুলাই ঐক্যের ব্যানারে পৃথক এ কর্মসূচিতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের পদত্যাগ ও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
সমাবেশে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সদস্যসচিব রেজওয়ান আহমেদ বলেন, বিএনপি বলছে আওয়ামী লীগের ক্লিন ইমেজের নেতা–কর্মীরা বিএনপিতে যোগ দিতে পারবেন। বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, সেটা নিয়ে আমরা সন্দিহান।
রেজওয়ান আহমেদ বলেন, যেসব উপদেষ্টা আজকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে অবস্থান করছেন, আওয়ামী লীগের দোসরদের সেফ এক্সিট দিচ্ছেন; আমরা আহ্বান করব, আপনারা পদত্যাগ করুন। নাহয় দেশের শিক্ষার্থীরা আপনাদের পদ থেকে টেনে নামাবে।
গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আরেক নেতা হাবিবুর রহমান বলেন, দুই হাজার শহীদের রক্তের বিনিময়ে গড়া অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ ছিল খুনি (আওয়ামী) লীগের বিচার করা। কিন্তু এখন পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে বড় সংস্কার হলো খুনি লীগারদের পুনর্বাসন।
পরে জুলাই ঐক্য প্ল্যাটফর্মের সমাবেশে সরকারের উদ্দেশে ইনকিলাব মঞ্চের প্রতিনিধি আবদুল্লাহ আল জাবের বলেন, কারা সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদকে সেফ এক্সিট দিয়েছেন, তাদের নাম প্রকাশ করুন। আর আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের ব্যাপারে কতটুকু অগ্রসর হয়েছেন, সেটা জানান।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে অটল বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্র শিবির। গতকাল জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাদের ডাকে সাড়া দিয়ে আন্দোলনে অংশ নেয় শিবির নেতারা। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবির পক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন খান ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবির মনে করে গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের বিচার ও নিষিদ্ধকরণের ব্যাপারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যথেষ্ট উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছে। ৫ আগস্টের পর থেকেই আমরা বারবার জুলাই গণহত্যার জন্য দায়ী আওয়ামী লীগের বিচারের জন্য বলে আসছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা দেখেছি কোন বিচার না করে বরং ফ্যাসিবাদকে পুনর্বাসন এবং দায়মুক্তির চক্রান্ত করা হয়েছে। ফলে জনমনে যে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে তাই মূলত বর্তমানের আন্দোলন।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও






আরও পড়ুন

সাভারে ছাত্র জনতা হত্যা মামলার আসামি ছাত্রলীগ নেতা গ্রেফতার

‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’: জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সচিত্র দলিল

এনসিপির ‘জাতীয় যুবশক্তি’র ১৩১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা

ওড়ার পর খুলে পড়ল বিমানের চাকা, ঢাকায় জরুরি অবতরণ

ফারাক্কা বাঁধ এদেশে কারবালা তৈরি করেছে -উপদেষ্টা ফরিদা আখতার

মু’মিন হওয়ার জন্য শরিয়তের শিক্ষাকে আঁকড়ে ধরতে হবে : জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ান

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিলো সরকার

বিপ্লবের পরে বাংলাদেশ : সংস্কারের পথে আশা, আন্দোলন ও আলোচনা

ডিজিটাল রূপান্তরের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান সুযোগ নিশ্চিতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ -প্রধান উপদেষ্টা

আদালতকে অবজ্ঞা

দিল্লি থেকে ৪০ রোহিঙ্গাকে ধরে সাগরে ‘ফেলে দিলো’ ভারত

ওয়াকফ সংশোধনী আইনের শুনানি ফের পেছাল

ট্রাম্পের শুল্কনীতির জন্য পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে ওয়ালমার্ট

ফরিদগঞ্জে পুলিশের বাসা থেকে চুরি অস্ত্র ঢাকা থেকে উদ্ধার : আটক ২

শিশু কিশোরদেরকে আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে : ডা: আবদুল্লাহ খান

ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা

সাভারে বন বিভাগের জমি দখলে বাধা বিট কর্মকর্তাসহ আহত ৫

মানবিক করিডোর ও চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র বরদাশত করা হবে না ইসলামী ঐক্যজোট

কোন ফ্যাসিস্ট অপশক্তি দ্বিতীয়বার ফিরে আসেনি : ড. হেলাল উদ্দিন

বন্দর উপজেলা বিএনপি সভাপতিকে চাঁদাবাজির অভিযোগে শোকজ