আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেছেন, নিক্সন (ফরিদপুর-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন) নিজেকে সিংহ মনে করেন, তাকে আবার ভোট দিলে আপনাদের চাবাইয়া খাইয়া ফেলবে। পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিলে সেই ভোট আমি পাব। আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। আমাকে ভোট দিলে আপনারাই লাভবান হবেন।

বুধবার (২৫ অক্টোবর) দুপুরে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় এক উঠান বৈঠকে উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে তিনি এসব কথা বলেন। সকাল ৯টার দিকে উপজেলার মানিকদহ ইউনিয়নের ফাজিলপুর গ্রামের মঞ্জু খানের বাড়ির উঠানে এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়।

কাজী জাফর উল্যাহ আরও বলেন, যারা বড় বড় কথা বলেন, উন্নয়ন বলতে কি বোঝায় তা তারা জানেন না। আমার বাবা কাজী মাহবুব উল্যাহ পাকিস্তান আমলে ট্রাস্টের মাধ্যমে ভাঙ্গায় একটি ডিগ্রি কলেজ করেছেন। আরে নিক্সন সাহেব আপনি তো ক্লাস নাইন পর্যন্ত পড়েছেন, আপনার কাছে তো এগুলো উন্নয়ন না। আপনি বালু কেটে বাড়ি বানিয়েছেন, বালু কেটে হাজার হাজার বিঘা জমির মালিক হয়েছেন বলে শুনেছি। এগুলো কোনো উন্নয়ন না। এগুলো আপনার ব্যক্তিগত উন্নয়ন, এ উন্নয়ন জনগণের কোনো উপকারে আসবে না। গরিব মানুষের কয়টা ছেলেকে সরকারি চাকরি দিয়েছেন সেই তালিকা থাকলে দেন।

তিনি বলেন, অবৈধভাবে মাটি কেটে, অবৈধভাবে বালু কেটে সেই টাকা দিয়ে কিছু লোকজন পোষেন। আবার জমিদারি প্রথা স্থাপন করতে চান। বৃটিশ আমলে জমিদারি প্রথা ছিল। বৃটিশরা তাদের মাধ্যমে প্রজাদের ওপর জুলুম করে খাজনা আদায় করত। তারা টিকতে পারেনি। জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ হয়ে গেছে।
আপনারা যাতে আবার কোনো ভুয়া জমিদার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত না হন সেজন্য নৌকায় ভোট দিতে হবে।

কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, শেখ হাসিনা মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত বিনামূল্যে বই দিচ্ছেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অবৈতনিক করে দিয়েছেন। রাস্তা ঘাট করে দিচ্ছেন। এ রাস্তা ঘাট হচ্ছে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায়। কোনো এমপি এগুলো করে দেয়নি। অথচ উনি (নিক্সন) স্কুলে স্কুলে গিয়ে বলেন, তিনি নাকি বই দিচ্ছেন, রাস্তা করে দিচ্ছেন। এগুলো মিথ্যা কথা। মিথ্যার কাঁথা বেশিক্ষণ গায়ে থাকতে পারে না। কেননা এই রাস্তা হচ্ছে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায়, কারও ব্যক্তিগত টাকায় হচ্ছে না।

তিনি বলেন, এমপি সাহেবকে জিজ্ঞাসা করেন- নিজের টাকায়, বালু বেচা হলেও তো নিজের টাকা, ওই টাকা দিয়ে তিনি কোথায় কয়টা কলেজ করেছেন, কয়টা হাসপাতাল করেছেন। নিক্সনের নির্বাচন করে টাকা দিয়ে কেনা লোক, টাকা থাকলে তারা থাকে, না থাকলে থাকে না। নিক্সন গরু-ছাগলের মতো আপনাদের মাথা কিনতে চায়। যারা টাকা দিয়ে মাথা কেনে তারা কখনো ভালো কাজ করে না, সে কখনো অপন লোক হবে না।

কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, তিনি বৃটিশদের মতো এসেছেন শিবচর থেকে, এই জেলাও নয়, আসছেন মাদারীপুর থেকে। শুনেছে এখানে কিছু গরু-ছাগলের হাট আছে, মানুষ কেনা যায় অল্প টাকায়, সেজন্য এসেছে। এটা আমাদের জন্য লজ্জার ব্যাপার। ভাঙ্গার লোক টাকায় বিক্রি হয় না, তবে কিছু বেঈমান, নমরুদ টাকায় বিক্রি হয়। তারা টাকা ছাড়া কিছু বোঝে না, তারা টাকার রাজনীতি বোঝে।

কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, গত ১০ বছর নিক্সনকে দেখেছেন। যাদু দেখাতে চেয়েছিলেন, যেখানে দাঁড়াবেন সেই জায়গা পাকা হয়ে যাবে, যে সাঁকো পাড় হবেন সেটা সেতু হয়ে যাবে। তা কি হয়েছে? এ থেকে আপনাদের বুঝে নিতে হবে সে একজন ভুয়া লোক, ১০ বছর ধরে যে কথা দিয়েছে তা ভুয়া। নিজের কোনো চাওয়া পাওয়া নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, নির্বাচিত হলে বাবার রেখে যাওয়া শত শত কোটি টাকা দিয়ে পদ্মা সেতুর এপাড়ে ভাঙ্গায় একটি হাসপাতাল করে দেব। পাশাপাশি প্রতিটি পরিবারে যেসব শিক্ষিত ছেলে আছে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেব।

বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন মানিকদহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ারা বেগম। এতে বক্তব্য দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আকরামুজ্জামান, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাসেল মাতুব্বর, মহিলা আওয়ামী লীগের কর্মী রেহানা পারভীন প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী কাজী জাফর উল্যাহকে পরাজিত করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দুই বার ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মাদারীপুররের শিবচর উপজেলার দত্তপাড়া মহল্লার বাসিন্দা মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে নিক্সনের প্রতীক ছিল আনারস ও ২০১৮ সালে প্রতীক ছিল সিংহ।