‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ উক্তি সম্পূর্ণ ইসলামবিরোধী'
১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:০৪ পিএম | আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:০৮ পিএম
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুল মালেক আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মেহেরবানি করে আমাদেরকে হায়াত দান করেছেন। সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালা আমাদের হায়াত আর মউতের একমাত্র মালিক। কারো মৃত্যু আসতে পারে না আল্লাহর হুকুম ব্যতীত। (মৃত্যুর জন্য) নির্ধারিত সময় লেখা হয়ে গেছে। যখন কারো মৃত্যুকাল উপস্থিত হয়ে যাবে, তখন না এক মুহূর্ত পেছনে থাকতে পারবে, না এগিয়ে যেতে পারবে।
এরপর তিনি বলেন, কম বয়সে কারো মৃত্যু হলে ‘অকাল মৃত্যু’ শব্দটি ব্যবহার করতে দেখা যায়। এই কথাটা এড়িয়ে চলা কর্তব্য। কারণ প্রত্যেক প্রাণীর জন্য ‘মৃত্যু’ যেমন অনিবার্য তেমনি তার দিন-ক্ষণও নির্ধারিত। সেই নির্ধারিত সময়েই তার মৃত্যু হবে। এতে সামান্য এদিক-সেদিক হবে না। আর যদি আল্লাহ মানুষকে তাদের জুলুমের কারণে শাস্তি দিতেন তবে ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণকারী কোনো প্রাণীকেই রেহাই দিতেন না, কিন্তু তিনি এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দিয়ে থাকেন। অতঃপর যখন তাদের নির্ধারিত সময় উপস্থিত হয় তখন তারা মুহূর্তকাল বিলম্ব অথবা ত্বরা করতে পারে না। অতএব কেউ যদি মায়ের পেট থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর পর মারা যায়, তবে এইটুকুই তার হায়াত। তদ্রূপ কেউ যদি পঁচিশ-ত্রিশ বছরের যৌবনকালে মৃত্যুবরণ করে তবে এই পঁচিশ-ত্রিশ বছরই তার হায়াত। তার মৃত্যু সেই সময় মতোই হয়েছে, আল্লাহ তাআলা যা তার জন্য নির্ধারিত করেছেন। এমনিভাবে একশ বছর বয়সে কারো মৃত্যু হওয়ার মানে এই নয় যে, সে তার জন্য নির্ধারিত সময়কালের অধিক হায়াত পেয়েছে। এটি অতি সহজ একটি কথা। সুতরাং কম বয়সে কারো মৃত্যু হলে আবেগের বশে ‘অকাল মৃত্যু’ শব্দ ব্যক্ত করব না। খতিব তাকওয়া অর্জনের বিষয়ে বলেন, কোরআনুল কারীমে মুমিনের যেসব বিষয়ের প্রতি বেশি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে তার মধ্যে তাকওয়া অন্যতম। কারণ তাকওয়া বা আল্লাহভীতি মুমিনের অনন্য বৈশিষ্ট্য। এই বৈশিষ্ট্য অর্জন ছাড়া দুনিয়া ও আখিরাতে মুমিন কখনো সফলতা লাভ করতে পারে না। আল্লাহর কাছে একমাত্র দ্বীন হচ্ছে ইসলাম। অন্য মতাদর্শ অনুসরণ করে কখনো মুক্তি পাওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’ এহেন উক্তি বা বক্তব্য দেয়া সম্পূর্ণ ইসলাম ও যুক্তিবিরোধী। তিনি বলেন, হিন্দু ধর্মানুসারীরাও এ ধরনের বক্তব্য স্বীকার করে না। তিনি বলেন, এটা সকলেরই স্মরণ রাখা দরকারÑ ঈদ অথবা পূজা জাতীয় কিংবা সামাজিক কোনো রীতি-অনুষ্ঠান নয়, এটা একেবারেই ধর্মীয় উৎসব। ধর্মীয় যে কোনো আয়োজন-উৎসবে প্রত্যেক ধর্মাবলম্বীরই স্বাতন্ত্র্যবোধ থাকতে হবে। তিনি বলেন, একটি বিষয় মুসলমানদের জেনে রাখা জরুরি, অমুসলিমদের প্রতি ইনসাফভিত্তিক নাগরিক আচরণ ও সম্প্রীতিপূর্ণ মনোভাব রাখা ইসলামের শিক্ষা। অমুসলিমদেরকে সব ধরনের সামাজিক ও মানবিক সহযোগিতা করা যাবে। এতে ইসলাম কোনোরূপ বাধা দেয় না। কিন্তু তাদের ধর্মীয় উপাসনা, পূজা বা আরাধনায় যে কোনোরূপে অংশ নেয়া মুসলমানের জন্য অবশ্যই হারাম। প্রবীণ এই আলেমে দ্বীন বলেন, মুসলমানগণ পরস্পরের প্রতি ভাইয়ের মতো আচরণ করবে। ইসলামের নির্দেশনা হচ্ছে, মুসলমানরা ইবাদত-বন্দেগি ও ধর্মীয় আচার-আয়োজনের ক্ষেত্রে সর্বাবস্থায় স্বাতন্ত্র্যবোধ বজায় রেখে ইসলামের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাপূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে হবে। রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক আচরণের প্রশ্নে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সাথে বিদ্বেষ পোষণ না করে বরং সহনশীল ও সহিষ্ণু আচরণ করবে। মুসলিম দেশে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী জনগণ অবশ্যই নাগরিক ও সামাজিক সকল সুবিধা ভোগ করবেন। তিনি বলেন, লা ইকরাহা ফিদ্দীন- ধর্মে কোনো জোরজবরদস্তি নেই। আল্লাহর দেয়া দ্বীন বা জীবন ব্যবস্থা হচ্ছে ইসলাম। আর এই জীবন ব্যবস্থা আল্লাহ ওহী নাযিল করে নবী-রসূলের মাধ্যমে মানব জাতিকে প্রদান করেছেন। যাতে মানুষ শয়তান দ্বারা প্ররোচিত হয়ে বিপথগামী হতে না পারে, অশান্তি ও অরাজকতা সৃষ্টি করতে না পারে, পৃথিবীতে ফিৎ্না-ফাসাদ সৃষ্টি করতে না পারে।
রাজধানীর মহাখালীস্থ ঐতিহ্যবাহী মসজিদে গউছুল আজমে জুমার পূর্ব আলোচনায় খতিব প্রিন্সিপাল মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ এসব কথা বলেন,ধীরে ধীরে রাসূলে আকরাম (সা.) এর বাণীসমূহ স্পষ্ট হচ্ছে। কিয়ামত পূর্বে যেসকল ঘটনা সংগঠিত হবে বলে তিনি প্রায় পনেরশত বছর আগে বলে গেছেন, তা প্রকাশ পাচ্ছে। জালিমদের কবল থেকে আল্লাহ কর্তৃক ঘোষিত পবিত্র ভূখন্ডসমূহ মুক্ত হচ্ছে। ইয়াহুদী খৃষ্টানরা মুসলমানদের সোনালী ইতিহাস-ঐতিহ্য বিকৃতি করে ইসলাম ধর্মালম্বিদের ঈমান-আকিদা বিনষ্টের অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিল এবং আছে, ভবিষ্যতেও এর ধারা অব্যাহত থাকবে। এথেকে পরিত্রাণের জন্য নিজিদের ইতিহাস গবেষণা ও পর্যালোচনার মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করে তা থেকে শিক্ষা অর্জন করতে হবে।
প্রসঙ্গক্রমে সিরিয়ার গণঅভ্যুত্থানের কথা উল্লেখ করে খতিব পবিত্র কোরআনের উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সূরা আ’রাফের ১৩৭ নং আয়াতে ইরশাদ করেন, আর আমি দুর্বল মনে করা কওমকে পৃথিবীর বরকতময় পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের ওয়ারিশ করি। বনী ইসরাঈলের সবরের কারণে রবের উত্তম ওয়াদা পূরণ হল। আর ফেরাউন ও তার কওমের বানানো সব শিল্প এবং উঁচু প্রাসাদ ধ্বংস করি। এ আয়াতে শাম অঞ্চলের দিকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সিরিয়া, জর্ডান, ফিলিস্তিন, লেবানন এবং এর আশেপাশের দেশসমূহ শাম অঞ্চলের অন্তভুক্ত। হযরত নূহ (আঃ) এর এক সন্তানের নাম ছিল শাম, তিনি এই অঞ্চলে বংশ বিস্তার করেন এবং তাঁর কওম নিয়ে বসবাস করতেন বিধায় তাঁর নামানুসারে এ অঞ্চলকে শাম নামে চিহ্নিত করা হত। খতিব বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ওয়াদা ও রাসূল (সা.) এর বাণী অনুযায়ি পবিত্র এ শাম অঞ্চল মুসলমানদের দখলে থাকবে। শুধু দখলেই নয় সকল অপশক্তি-পরাশক্তি পরাস্ত হয়ে সারাবিশ্বে আল্লাহর দ্বীনকে সমুন্নত রাখার কেন্দ্র হবে এই অঞ্চল। আর সেজন্যই স্বয়ং রাব্বুল আলামীন ধিরে ধিরে এ অঞ্চলকে পরিশুদ্ধ করছেন। সিরিয়ার জালিম সরকারের পতন সেদিকেই ইঙ্গিত করছে। সদ্য পালাতক সিরিয়ার রাজনৈতিক নেতা সেখানকার সাধারণ জনগণকে কোণঠাসা করে রেখেছিল, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ছিলনা কারোরই, মিডিয়াসমূহ নিজ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বিরোধী দলিয় শক্তিতে দমন নিপীড়ন করতেন একই সাথে সেখানকার সেনাবাহিনীকে কব্জায় রেখে নীতি-নৈতিকতার তোয়ক্কা না করে ইচ্ছেমত দেশ চালিয়ে আসছিল এই জালিম শাসক।
এযেন গত ১৭ বছরের বাংলাদেশের সাথে একই সুত্রে গাঁথা একটি ভূখন্ড। এসব শাসকগণ ক্ষমতা ও দাম্ভিকতার মোহে আল্লাহকে ভুলতে বসেছিল। মহাপরাক্রমশালীর ক্ষমতা ও পরিকল্পনার নিকট জালিম শাসকদের সকল শক্তিই যে অসহায় তার আর একটি দৃষ্টান্ত অবলোকন করলো পুরো বিশ্ববাসী। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, পবিত্রতা সেই আল্লাহর যিনি বান্দা মুহাম্মদকে রাতে কাবা থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত ভ্রমন করান। যার চারপাশ বরকতময় করেছিলেন তাঁকে নিদর্শনসমূহ দেখানের জন্য। নিশ্চয়ই তিনি শোনেন এবং দেখেন (সূরা বনী ইসলাইল: ০১)। এ আয়াতে চারপাশকে বরকতময় করা বলতে পুরো শাম অঞ্চলকে বুঝানো হয়েছে। দখলদার মুক্ত হওয়া সিরিয়ার ও শাম অঞ্চলের গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে খতিব বলেন, এটি এমন স্থান যেখানে কিয়ামতের পূর্বে বহু ঘটনা সংঘটিত হবে, এমনকি কিয়ামতের ময়দান শুরু হবে এই স্থান থেকে। দাজ্জালের আবির্ভাব ও ধ্বংস, হযরত ঈসা (আ.) এর আগমন, ইমাম মাহাদী (আ.) এর শাসনকার্যের হেডকোয়ার্টার এই শাম অঞ্চল। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নির্দেশনা অনুযায়ী পবিত্র এ ভূমিসমূহ অচিরেই মুসলিম ও ন্যায়পরায়নগণ বিজয় করবেন। দখলদার ও চির অভিশপ্ত ইসরাইলের নিকৃষ্ট ইয়াহুদী জাতীর পতন সন্নিকটে। নিশ্চয়ই তিনি (আল্লাহ) ওয়াদা করেছেন ইয়াহুদীরা ধ্বংস হবে, যা তিনি অবশ্যই বাস্তবায়ন করবেন। তারই সূচনা সিরিয়ার এ স্বাধীনতা।
খতিব বলেন, মুসলমানদের গৌরবোজ্জল সোনালী ইতিহাস মুছে ফেলার জন্য দূরদর্শী পদক্ষেপের মাধ্যমে ইয়াহুদী খৃষ্টানরা ইতিহাস বিকৃতির মত ঘৃণিত ও জঘন্ন কাজ করে আসছে। যার কারণে মুসলিমগণ নিজেদের শেকড় খুঁজে পাচ্ছে না। ঈমানী জজবাহ্, তাজাল্লি মুসলিমদের থেকে দূরে সরে আছে কেবল মাত্র নিজেদের অতীত ও পূর্বপুরুষদের অর্জন ভুলে যাওয়ার কারণে। আমাদের এই উপমহাদেশের শাসন ছিল মুসলিমদের, মুঘলদের আমলের কথাতো বর্তমান প্রজন্ম জানেই না। আর একারণেই ধিরেধিরে আমাদের এ জনপদ মুসলিমদের থেকে হাতছাড়া হয়েগেছে। যে পথে ইসলামের পতাকা হাতে বহু দিক বিজয়ী বীরগণের পদচারণ ছিল সে ভূ-খন্ডেই মুসলিমরা লাঞ্চিত। নিজেদের আদর্শ ও ঐতিহ্য ভুলে যাওয়ার কারণেই এ দ্বৈন্যদশা আমাদের। তবে নিশ্চিন্ত থাকুন ভারতের জুলম ও অত্যাচারের অবসান ঘটার সময়ও বেশী নেই। তাদের নাফরমানি, অবাধ্যতা ও আল্লাহর সাথে জুলুমের পাল্লা ক্রমশ ভারী হচ্ছে। মনে রাখবেন কোন ব্যক্তি বা জনপদ ধ্বংস করার জন্য আল্লাহর কোন সাহায্যকারীর প্রয়োজন হয় না। এমনকি পূর্ব পরিকল্পনারও দরকার পরে না। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন আমীন।
মীরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাইতুর মামুর জামে মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুর রহিম কাসেমী আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, জীবনের বিনিময়ে হলেও ছাত্র জনতার বিজয় সমুন্নত রাখতে হবে। জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের এই বিজয়কে যেন আর কোন অপশক্তি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নস্যাৎ করতে না পারে সদা জাগ্রত থাকতে হবে। ইসলাম প্রিয় দেশ প্রেমিক তাওহিদী জনতাকে প্রয়োজনে আবার রাজপথে ময়দানে নামতে হবে। দেশের বিরুদ্ধে কোনো পরাশক্তির রক্ত চক্ষুকে তোয়াক্কা করা যাবে না। নিজেদের শক্তি সঞ্চয়ে প্রাণপন প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
আর ব্যক্তি পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে মহান আল্লাহর বিধান পালনে নিজেকে অধিক মনোযোগী হওয়ার পরিচয় দিতে হবে। কারণ মুমিনের বিজয় মহান আল্লাহর দান। বিজয়ের আনন্দে প্রকৃত বিজয় দানকারী আল্লাহকে কিছুতেই ভুলে যাওয়া যাবে না। প্রতিটি ক্ষেত্রে তার অনুগত হওয়ার মাধ্যমে তাকে স্মরণ করে যেতে হবে। গান বাজনা, অশ্লীলতা বেহায়াপনা, অন্যায় অত্যাচার, জেনা ব্যভিচারসহ যাবতীয় গুনাহের কাজ হতে বিরত থেকে নেক আমলের মধ্যে জীবন অতিবাহিত করতে হবে। বিজয় পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনুল কারীমে স্পষ্ট ভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য ও বিজয়ের আগামন ঘটবে এবং তোমরা দেখবে মানুষ দলে দলে ইসলামের ছায়াতলে আসছে তখন তোমরা তোমাদের রবের তাসবিহ পড় আর তার গুণগান বর্ননা কর এবং তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই তিনি তাওবা কবুল করেন। (সূরা নসর)। আল্লাহ আমাদের সকলকে দেশের এই বিজয় সুসংহত করার লক্ষ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রেখে তার ইবাদত ও হুকুম আহকাম পালন করার তৌফিক দান করেন। আমিন।
গাজীপুরের টঙ্গী পূর্ব আরিচপুর সরকার বাড়ী ঈদগাহ মসজিদুল আকসার খতিব মাওলানা রিয়াদুল ইসলাম মল্লিক জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, মানবসমাজে বিপর্যয় সৃষ্টিকারী অন্যায় ও ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপকে ইসলাম সম্পূণরুপে নিষিদ্ধ করেছে এবং পবিত্র কোরআনে ঘোষিত হয়েছে, ‘পৃথিবীতে শান্তি স্থাপনের পর এতে তোমরা বিপর্যয় ঘটাবে না।’ (সূরা আল-আরাফ, আয়াত: ৫৬) বিভিন্ন দল-মতের কলহ-বিবাদ ও ফিতনা-ফ্যাসাদ সামাজিক অনাচার, জুলুম-নির্যাতন, দমন-নিপীড়ন ও অন্যায়-অত্যাচারের অন্যতম কারণ। অনেক সময় সামান্য তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জাতি-গোত্রে তুমুল ঝগড়া-বিবাদ ঘটে এবং বড় আকারের সামাজিক বিশৃঙ্খলায় রূপ ধারণ করে মানবসমাজে অহেতুক হত্যাযজ্ঞের মতো মহাপাপ সংঘটিত হয়ে থাকে। তাই পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ফিতনা হত্যা অপেক্ষা গুরুতর।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৯১)রাসূলুল্লাহ (সা.) মানুষকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা অন্যের দোষ-ত্রুটি অন্বেষণ করবে না, গুপ্তচরবৃত্তি করবে না, পরস্পরের সঙ্গে ঝগড়া-ফ্যাসাদ করবে না, পরস্পরের সঙ্গে হিংসা-বিদ্বেষ করবে না, পরস্পরকে ঘৃণা করবে না এবং পরস্পরের ক্ষতিসাধন করার জন্য পেছনে লাগবে না। আর তোমরা সবাই আল্লাহর বান্দা হিসেবে ভাই ভাই হয়ে যাবে।’ (বুখারি ও মুসলিম) সমাজে মিথ্যা দোষারোপ ও তর্ক-বিতর্ক জনজীবনে দুঃখ-কষ্ট বয়ে আনে এবং মানুষের গোপন রহস্য বা দোষ-ত্রুটি ফাঁস করে দেয়। ফিতনা-ফ্যাসাদের বিরুদ্ধাচরণ করে নবী করিম (সা.) বলেছেন ‘তুমি তোমার ভাইয়ের সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হবে না।’
(তিরমিজি) বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের যেমন সাধারণ মানুষ ঘৃণা করে, তেমনি আল্লাহ তাআলাও অপছন্দ করেন। তাই বলা হয়েছে, ‘তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে না, নিশ্চয়ই আল্লাহ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীকে পছন্দ করেন না।’ (সূরা আল-কাসাস, আয়াত: ৭৭)পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘মুমিনদের দুই দল দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেবে। অতঃপর তাদের একদল অন্যদলকে আক্রমণ করলে তোমরা আক্রমণকারী দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, যতক্ষণ না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। যদি তারা ফিরে আসে, তবে তাদের মধ্যে ন্যায়ের সঙ্গে ফয়সালা করে দেবে এবং সুবিচার করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবিচারকারীদের ভালোবাসেন।’ (সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ৯)। পুরো বিশ্বে অস্থিরতা বিরাজ করছে,আমাদের দেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংঘাত এর পাশাপাশি দাওয়াত ও তাবলীগ এর মহান কাজে দুই গ্রুপের সৃষ্ট মত বিরোধ নিরসনে রাষ্ট্রিয় হস্তক্ষেপ অতিব জরুরী ও সময়ের দাবী। ধর্মীয় কাজে ধর্ম মন্ত্রণালয় উদ্যোগী হয়ে উলামায়ে কিরামের সমন্বয় কমিটি করে ফয়সালা করা আমাদের দাবি। পারস্পরিক সহানুভূতি, সহমর্মিতা ও সামাজিক সম্প্রীতি অটুট রেখে শান্তিপূর্ণ সমঝোতার মাধ্যমে এর অবসান ঘটানো যায়।আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুন।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
সাবেক আইনমন্ত্রীর বিশেষ বার্তা!
ইউক্রেনকে তীব্র সমালোচনা ট্রাম্পের
লেবানন থেকে ফিরলেন আরও ৮৫ বাংলাদেশি
দ্রুত রূপপুর প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করতে চায় সরকার: অর্থ উপদেষ্টা
শেখ পরিবারের সিনেমায় ৫৭৪ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছিল পলকের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়
বিএনপি ক্ষমতায় আসলে মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে : ড. জালাল উদ্দিন
তৃতীয়বার রয়েল ক্লাব লিঃ এর সভাপতি হলেন জহির রায়হান
ভৈরবে ২৮ কেজি গাঁজাসহ দুজন গ্রেফতার
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হামিদুর রহমান হামিদের এলাকাবাসীর সাথে মতবিনিময়
সিলেটে আ'লীগের সাবেক এক কেন্দ্রিয় নেতাকে অপহরণ ও হামলা : সত্যতা নিয়ে ধূম্রজাল !
ট্রাম্পের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করবেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তারপরও ভারতের মাথায় হাত!
'হাউ সুইটের শুটিং সেটে আহত অপূর্ব-ফারিন-পাভেল, যা বললেন ফারিণ'
ছাতকে কর্মী সভায় সাবেক এমপি কলিম উদ্দিন মিলন-প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে নির্বাচন দিন
নতুন বাংলাদেশ গঠনে কাজ করছেন তারেক রহমান: ওয়াহাব আকন্দ
বাঘায় প্যারোলে মুক্তি পেয়ে বাবার জানাজায় অংশ নিয়েছেন কালাম
আগামীর বাংলাদেশ হবে দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও চাঁদামুক্ত -এডভোকেট এসএম কামাল উদ্দিন
আমরা চাই মানুষ তার সমন্ত অধিকার ফিরে পাবে - সাঈদ সোহরাব
শরণখোলায় বীরমুক্তিযোদ্ধা আঃ গফ্ফার মোল্লাকে রাষ্টীয় মর্দাযাদায় দাফন
কালিগঞ্জে জেকে বসেছে শীত গরম কাপড়ের দোকানে উপচেপড়া ভীড়
ভারতীয় আধিপত্য রুখতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে সাভারে হেফাজতের সমাবেশে নেতৃবৃন্দ