গোদাগাড়ীসহ বরেন্দ্র অঞ্চলে কুমড়োর ও পেঁয়াজোর বড়ি বেশ জনপ্রিয় হয়েছে, বিদেশেও যাচ্ছে
১৬ মার্চ ২০২৫, ০৩:০৯ পিএম | আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২৫, ০৩:০৯ পিএম

প্রতি বছরের মতো এবারো রাজশাহীর গোদাগাড়ী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাসহ গোটা উত্তরাঞ্চলজুড়ে মাসকলাই ও কুমড়োর বড়ি তৈরিতে হাজার হাজার বউ, শাশুড়ি, মা-বোনেরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। শীত মৌসুমের শেষ সময়ে মাসকলাইয়ের ডালের আটা ও পাঁকা চাল কুমড়ো মিশিয়ে এ সুস্বাদু বড়ি তৈরি করা হয়। এ অঞ্চলের নারীরা শত শত বছরের ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য কয়েক মাস পূর্ব থেকে চাহিদা মতো চালকুমড়ো পাঁকানোর ব্যবস্থা করে থাকেন। নতুন কলাই জমি থেকে ঘরে, বাজারে আসার সাথে সাথে বড়ি তৈরির ধুম পড়ে যায়। এসব এলাকার ৮০ ভাগ মহিলারা পালা করে বড়ি দেয়ার কাজটি করে থাকেন। পাক পবিত্র অবস্থায় বড়ি দিতে হয়। অপবিত্র অবস্থায় দিলে বড়ির রং হলুদ হয়ে যায় এবং গন্ধ হয়ে যায়, স্বাদ লাগে না।
বড়ির প্রধান উপাদান ভালো জাতের মাসকলাই সংগ্রহ করে প্রথমে সূর্যের আলোতে শুকিয়ে যাঁতাতে ডালের আকার দেয়া হয় এবং ওই ডালকে পানিতে ৫/৬ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে ভালোভাবে হাত দিয়ে চটের ছালায় ঘুষে ডালের খোসা ছাড়ানো হয়, তারপর পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে রোদে শুকোতে হয়। শুকানো ডাল (যাঁতার দ্বারা) আটায় পরিণত করা হয় এবং খুব সকালে পাকা কুমড়োকে দু’ভাগ করে কেটে কুড়ানি দিয়ে চিকন করে নিয়ে কুমড়োর বীচি আলাদা করে নিতে হয়। ওই কলাইয়ের আটা ও কুড়ানো কুমড়ো একটি পাতিলে মিশিয়ে দীর্ঘসময় নাড়াচাড়া করতে হয়। মিশ্রণ ঠিকভাবে হয়েছে কিনা তা দেখার মহিলারা মাঝে মাঝে বড়ির আকৃতি করে পানির পাত্রে ছেড়ে দিলে তা যদি ডুবে যায় তবে আরো ফেনাতে নাড়াচাড়া করতে হয়, আংশিক ভাসলে বড়ি তৈরি উপযোগী হয়েছে বলে তারা মনে করেন। ২/৩ জন মহিলা সুতি মশারী কিংবা প্লাস্টিকের জাল দড়ির খাটের উপর বিছিয়ে দিয়ে এর উপর ওই মিশ্রণ বড়ি আকৃতি করে লাইন করে দেয়া হয়। ৩/৪ দিন ভালো করে রোদে শুকোতে হয়।
মেঘলা ও ঘন কুয়াশা থাকলে বড়ি গন্ধ ও লাল হয়ে যায়। সেগুলো সহজে সেদ্ধ হয় না। খেতেও ভালো লাগে না। ভালোভাবে শুকিয়ে মুখ আটকানো পাত্রে সংরক্ষণ করলে ১২ থেকে ১৪ মাস পর্যন্ত খাওয়া যায়। প্রবাসী ভাই বোনেরা বিভিন্ন দেশে নিয়ে যায়, আপদকালীন তরকারী হিসেবে ব্যবহার করার জন্য। অনেক গৃহবধূরা মাসকলাই’র সাথে পিঁয়াজ, পাকা লাউ, আলু, পেঁপে, মূলা, কপিসহ নানা পদের সবজি মিশিয়ে বড়ি তৈরি করে থাকেন। বিশেষ করে পিঁয়াজের বড়ি বেশ সুস্বাদু কিন্তু এগুলো বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায় না। আগের দিনে প্রায় বাড়ির ছাঁদে, ঘরের টিনের উপর কিংবা চালে পাকা কুমড়া দেখা যায় আর জমিতে তো মাসকলাই হতো অনেক বেশি। কিন্তু এখন নদীর ভাঙনে চরে বেশিরভাগ জমি নদী গ্রাস করেছে। পলিমাটির পরিবর্তে হাজার হাজার একর জমিতে শুধু বালি আর বালি পড়ায় কলাইয়ের আবাদ কমে গেছে। আগে যে কলাই বড়ি দেয়ার জন্য বিনামূল্যে পাওয়া যেত সে কলাই এখন ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর বড়ি দেয়ার ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি। কুমড়ো বিক্রি হচ্ছে ৬৫/৭৫ টাকা কেজি এতে ১টি বড় সাইজের কুমড়ো ৪শ’ থেকে ৫শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঘরে তৈরি করা ডালের বড়ি রেডিমেট কেনা ডাল দিয়ে বড়ির চেয়ে অনেক বেশি সুস্বাদু। বড়ির উপকরণের মূল্য বেশি হওয়ায় বড়ি তৈরিতে এখন খরচ অনেক বেশি হচ্ছে। অনেকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বড়ি তৈরি করে বিভিন্ন হাটবাজারে বিক্রি করে জীবন-জিবিকা নির্বাহ করে থাকেন, এ বড়ি কেউ কেউ বিদেশে পাঠাচ্ছেন। কিন্তু বর্তমানে বড়ির উপকরণের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির কারণে তারা বড়ি তৈরির আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। বড়ির সাথে ইলিশ মাছ, চিংড়ি মাছ, বেগুন, হাঁস, মুরগির ডিম বেশ মজাদার খাবার।
বড়িকে এককভাবে রান্না করে খাওয়া যায়। বিদেশে বড়ি এখন বেশ জনপ্রিয়। অনেকে আত্মীয়-স্বজনের নিকট বিদেশে বড়ি পাঠাচ্ছেন এবং বিদেশে পাড়ি দেয়ার সময় তরকারি হিসেবে বড়িকে সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন এমবিবিএস ডাক্তার এ প্রতিবেদককে জানান, বড়ির পুষ্টিগুণ অনেক বেশি, পেটের জন্য বেশ উপকারী, রুচিসম্মতভাবে খাওয়া যায়। দীর্ঘসময় ক্ষুধা নিবারণের কাজ করে থাকে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ভুতপুকুর এলাকার নুর সুলতান জানান, আমার ভাতিজা কোরিয়া গেছে, যাওয়ার সময় তিন কেজি বড়ি নিয়ে গেছে , সেখানে এটা নিয়ে বেশ উপকার পেয়েছে আপদকালীন তরকারী, ভর্তা হিসেবে ব্যবহার করছে। যারা প্রবাসে যায় তারাই বড়ি নিয়ে যায়। প্রবাসে বড়ি একটি জনপ্রিয় খাবার।
গৃহবধু গুলবোদন বলেন, বড়ি দেয়া খুব ঝামেলার কাজ অনেক কষ্ট হয়। এ বছর প্রচুর বৃষ্টির কারনে এলাকায় চালকুমড়া হয় নি। কালাই ১৩০ টাকা কেজি ও ৮০কেজি কুমড়া কিনে বড়ি দেয়া খুবকষ্টকর তাই একটি কুমড়া কিনেছি ৫৩০ টাকা দিয়ে, জমির কালাই আজ সকালে বড়ি দিয়েছি, কিন্তু আকাশে মেঘের আনা গুনা। রোদ কম হচ্ছে, চিন্তায় আছি বড়ি ভাল হয় কি না।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

১৪ বছর বয়সেই রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরি সূর্যবংশীর

আগের সরকার চিফ জাস্টিসকে গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছে, আমরা তেমন সরকার নই

চ্যালেঞ্জ নিয়ে মুখোমুখি

আনিসুল হককে গণধোলাই

প্রসঙ্গ : রাষ্ট্রীয় সফর!

স্টারলিংকের লাইসেন্স অনুমোদন দিলেন প্রধান উপদেষ্টা

হজ অ্যাপ ‘লাব্বাইক’ উদ্বোধন করলেন প্রধান উপদেষ্টা

তারেক রহমানের নজরদারিতে নেতারা

কিশোর গ্যাং, মাদক ও ড্রেজার বন্ধে ব্রাহ্মণপাড়ায় কঠোর থাকবে প্রশাসন

কুমিল্লায় দুই প্রতিষ্ঠান গুনলো লক্ষাধিক টাকা জরিমানা

মোহাম্মদপুরের সেই ব্যবসায়ীর অফিসে আবারো গুলি

প্রেমিকাকে দল বেঁধে ধর্ষণ

কেরানীগঞ্জে ট্রিপল মার্ডারের রহস্য উদ্ঘাটন : মূল ঘাতক গ্রেফতার

বিচারক নিয়োগের অধ্যাদেশ রিট পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি

শপথ না পড়াতে লিগ্যাল নোটিশ ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ইশরাক

মূল ধারার শিক্ষার সঙ্গে কারিগরি শিক্ষা সম্পৃক্ত করা দরকার Ñশিক্ষা উপদেষ্টা

সীমান্তে বিএসএফের হত্যা বন্ধে জোরালো প্রতিবাদ করতে হবে ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ

স্ত্রীসহ বাগেরহাটের বন বিভাগের ৩ কর্মকর্তার ব্যাংক হিসাব ও সঞ্চয়পত্র অবরুদ্ধ

তুরিন-মুরাদ-মশিউর-নজরুল নতুন করে গ্রেফতার

‘পাকিস্তানের পাশে ২ কোটি শিখ’, ভারতকে হুমকি পান্নুনের