ঈদের পর আবারো অস্থির হয়ে উঠেছে সবজির বাজার। গত সপ্তাহের চেয়ে এই সপ্তাহে শেরপুর জেলা- উপজেলার বাজারে কেজি প্রতি দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। এছাড়া বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। সামনে দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল রবিবার শেরপুরের বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়। বাজারের এই অস্থির পরিস্থিতিতে অস্বস্তিতে পড়ছেন ক্রেতাসাধারণ। বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের পর এখনও পুরোপুরি সচল হয়নি সরবরাহ। এতে শাক-সবজি কম আসায় দাম বাড়ছে। বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে প্রতি কেজি করলা ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

গত সপ্তাহে করলা বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয় ৪০ থেকে ৫০ টাকা। বরবটি ১৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা, লতি ১০ টাকা বেড়ে ৬০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা ও টমেটো ১০ টাকা বেড়ে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি পেঁপে ২০ টাকা বেড়ে ৫০ টাকায়, গাজর ১০ টাকা বেড়ে ৪০ টাকায়, শসা ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়, পটোল ১৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা, শিম ২৫ থেকে ৩০ টাকা, সজনে ডাটা ২০ টাকা বেড়ে ১০০ থেকে ১২০ টাকা ও ধনেপাতা ১০ টাকা বেড়ে ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া বাজারে প্রতি পিস চালকুমড়া ৫০ টাকা ও লাউ ৩০ টাকা বেড়ে ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বেড়েছে কাঁচা মরিচেরও। খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। পাইকারি পর্যায়ে যা কেনাবেচা হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। ঝিনাইগাতী উপজেলা সদর বাজারের সবজি বিক্রেতা আবুল কাশেম বলেন, সরবরাহ কমায় দাম বেড়েছে সবজির। সপ্তাহের ব্যবধানে কোনো কোনো সবজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্তও বেড়েছে। সরবরাহ বাড়লে দাম কমে আসবে। ক্রেতারা বলছেন, রমজানে সবজির দাম কম থাকলেও, ঈদের পর থেকেই শাকসবজির বাজার চড়া। দাম কমাতে বাজার মনিটরিং অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। তা না হলে ফের অস্থির হয়ে উঠবে নিত্যপণ্যের বাজার। তবে রমজানজুড়ে ভোগানো লেবুর ডজন নেমে এসেছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়।

বিক্রেতারা বলছেন, রমজানে যেখানে লেবুর হালি বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়, সেখানে এখন দাম কমে ডজনই বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। লেবু বিক্রেতারা বলেন, বাজারে নতুন লেবু আসছে। এতে দাম কমছে। মান ও আকার ভেদে প্রতিপিস লেবু বিক্রি হচ্ছে ১ থেকে ৪ টাকায়। বৃষ্টি বাড়লে লেবুর উৎপাদন বাড়বে। তখন দাম আরও কমবে। ক্রেতারা বলেন, গত সপ্তাহের চেয়ে এই সপ্তাহে সবজি ও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। সরবরাহ কম থাকার কারণেই এটি বেড়েছে। দ্রুত সরবরাহ বাড়বে বলে আশা করছি।

সরবরাহ বাড়লে এগুলোর দাম কমে যাবে। এদিকে অস্থিরতা কমেনি চালের বাজারেও। বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট ৮৬ থেকে ৯০ টাকা, আটাশ ৬০ থেকে ৬২ টাকা ও নাজিরশাইল ৭৬ থেকে ৮৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি পোলাও চাল বিক্রি হচ্ছে ১১৬ থেকে ১১৮ টাকায়। এদিকে দাম বাড়ানোর পর বাজারে সরবরাহ বেড়েছে ভোজ্যতেলের। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৮৯ টাকা, খোলা সয়াবিন ১৬৯ টাকা ও পাম তেল ১৬৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের জন্য গুনতে হচ্ছে ৯২২ টাকা। তবে বাজারে স্থিতিশীল রয়েছে আলুর দাম। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি আলুর জন্য গুনতে হচ্ছে ২০ থেকে ২২ টাকা।

এছাড়া প্রতিকেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। আর প্রতিকেজি আমদানি করা রসুনের জন্য ১৮০ থেকে ২১০ ও দেশি রসুনে গুনতে হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। এদিকে গত সপ্তাহের তুলনায় বাজারে কমেছে সব ধরনের মুরগির দাম। কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত কমে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা কমে প্রতিকেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৭০ টাকায়। এছাড়া দেশি মুরগি ৬৫০ থেকে ৬৮০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৭০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়। মুরগির দাম কমলেও বাজারে স্থিতিশীল রয়েছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি খাসির মাংস ১ হাজার ২০০ টাকা ও ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ টাকায়।

এদিকে বাজারে কিছুটা বেড়েছে মাছের দাম। বাজারে প্রতি কেজি রুই ২৫০ থেকে ৩২০ টাকা, কাতল ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকা, চাষের শিং ৪৫০ টাকা, চাষের মাগুর ৪০০ টাকা, চাষের কৈ ২০০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০ থেকে ২৩০ টাকা ও তেলাপিয়া ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি বোয়াল ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর বর্তমানে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২২০০ টাকায়। এছাড়া ছোট ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৫০০- ৬০০টাকায়। বড় ইলিশতো চোখেই পড়ছে না!