কৃষ্ণচূড়ার নান্দনিক সাজ এখন আর খুব একটা চোখে পড়ে না শেরপুর গারো পাহাড়ে!

Daily Inqilab শেরপুর থেকে স্টাফ রিপোর্টার

১৬ মে ২০২৫, ০৯:২১ এএম | আপডেট: ১৬ মে ২০২৫, ০৯:২১ এএম

কেউ কৃষ্ণচূড়া ফুল নিয়ে প্রিয় মানুষটিকে দেবে বলে গাছের নিচে বসে থাকতো। কেউবা সৌন্দর্যর দেখতে তাকিয়ে থাকতো কৃষ্ণচূড়া গাছের দিকে। তাপপ্রবাহে কৃষ্ণচূড়া গাছের ছায়ায় বসে পথিক সুখ অনুভব করতো। কৃষ্ণচূড়া দৃষ্টি কাড়তো ফুল প্রেমীদের। তারা শত ব্যস্ততায়ও ফুলের জন্য অপেক্ষা করতেন। এমনি অবস্থা দেখা যেতো শেরপুরের গারো পাহাড়ের সড়কের দুপাশ জুড়ে কোথাও না কোথাও দেখা মিলতোই কৃষ্ণচূড়ার। হাট-বাজার, রাস্তা মাঠ, পাহাড় থেকে শুরু করে অনেক অফিস আদালতের সামনে সড়কে ও দেখা মিলতো কৃষ্ণচূড়া ফুল। যেন সড়কের দুপাশ জুড়ে সগর্বে দাঁড়িয়ে থাকতো কৃষ্ণচূড়া ফুলেভরা গাছ। গারো পাহাড়ে ঘুরতে আসা স্থানীয়রাও সৌন্দর্য দেখে ছবি তুলতেন। ফুল উৎসবের ঋতু গ্রীষ্মকালে কৃষ্ণচূড়ার লাল রংয়ের যে উন্মাদনা। তা এতই আবেদনময়ী যে চোখ ফেরানো ছিল অসম্ভব।

 

গারো পাহাড় ছাড়াও শেরপুর জেলার বিভিন্ন গ্রামীণ জনপথ ও বসতবাড়ির আঙিনায় ছড়িয়ে পড়তো রক্তরাঙা কৃষ্ণচূড়ার জৌলুস। থোকায় থোকায় ফুল ফুটে থাকতো গাছে গাছে। যা দেখে যে কারো প্রাণ জুড়িয়ে যেতো। দেখতে সবুজের বুকে এক খন্ড লালের রাজত্বের মত! দূর থেকে দেখে মনে হতো ময়ূর প্রকৃতির মাঝে রাঙা পেখম মেলে ধরেছে। কৃষ্ণচূড়া ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতেন ফুলপ্রিয় পথিকরা। ফুলপ্রেমীও প্রকৃতি প্রেমীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের কাছে কৃষ্ণচূড়া অত্যন্ত জনপ্রিয় ফুল। সড়কের দু’পাশ জুড়ে কৃষ্ণচূড়া ফুলের সৌন্দর্য দেখে আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে যেতেন তারা। নানা বৈশিষ্ট্যে দৃষ্টিনন্দন এ ফুলের কদর রয়েছে সর্ব মহলেই। বিশেষ করে বাংলা কাব্য, সাহিত্য, সংগীত ও বিভিন্ন উপমায় কৃষ্ণচূড়া ফুলের কথা উঠে এসেছে। ফুলের রং এত তীব্র যে দূর থেকেও চোখে পড়ে। হঠাৎ দেখলে মনে হয়, কৃষ্ণচূড়া গাছে যেন রঙের আগুন লেগেছে। কৃষ্ণচূড়ার বৈজ্ঞানিক নাম ডেলোনিঙ্ রেজিয়া।

 

এটি সিসালপিনিয়েসি গোত্রের অন্তর্গত একটি উদ্ভিদ। কৃষ্ণচূড়া লাল, হলুদ ও সাদা রঙেরও হয়ে থাকে। তবে দেশে লাল ও হলুদ রঙের ফুল দেখা গেলেও সাদা রঙের কৃষ্ণচূড়া দেখা যায় না। এখনও রাস্তা ঘাটে কোথাও হঠাৎ চোখে পড়ে কৃষ্ণচূড়া গাছ। অনেকেই বিশ্রাম নিতে খানিক সময় দাঁড়িয়ে গাছের নীচে বসে তার সৌন্দর্য অনুভব করেন। লাল সবুজের মিলনে রক্তিম আভা ছড়ানো কৃষ্ণচূড়া ফুল যেন জীবনে ছড়িয়ে দেয় মুগ্ধতা। গজনী অবকাশ পর্যটন কেন্দ্রে ঘুরতে আসা পর্যটকরা দেখার ইচ্ছায় ব্যাকুল হয়ে খুঁজেন কৃষ্ণচূড়ার গাছে লাল-সবুজ রঙে ভরে ওঠা ফুল। কৃষ্ণচূড়ার ফুল ফুটার সময়টা যেন অন্যরকম ভালোবাসা। সড়কের দুপাশ জুড়ে যে ফুলে সৌন্দর্যের সমারোহ তা দেখে যে কেউ মুগ্ধ হন। কৃষ্ণচূড়ার ফুল রঙিন, লাল বা মেরুন রঙের। লম্বা পরাগযুক্ত পালকযুক্ত পাপড়ি রয়েছে। পাতাগুলি পালকযুক্ত এবং ভিতরে চ্যাপ্টা মটরশুটি এবং বীজের মতো লম্বা ফল। এর শক্তিশালী গন্ধ নেই। সুন্দর ফুলের বিভিন্ন থেরাপিউটিক উদ্দেশ্য রয়েছে। যা বেদে সাধুদের দ্বারা বর্ণিত হয়েছে।

 

 

গাছের শিকড়,বাকল এবং ফুল সবই পরজীবী সংক্রমণ নিরাময়ে ব্যবহার করা যায়। এর গুঁড়ো ২ গ্রাম, শুকিয়ে গুঁড়ো করে হালকা গরম পানির সাথে খেলে শ্বাসকষ্ট মুক্ত হয়। রস বের করার জন্য একটু পানিতে ফুলের রস প্রতিদিন দুবার পান করলে শ্বাসকষ্ট এবং হাঁপানির উপকার হয়। জ্বর নিরাময়ে পাতার রস মিশিয়ে ২০ মিলিলিটার দুবার পান করলে জ্বর ভালো হয়। পেটের সমস্যা নিরাময়ে ছাল ধুয়ে পাচন সমস্যা সমাধান করে। চিনি- মিষ্টির সাথে খেলে রক্তাক্ত ডায়রিয়া সেরে যায়। দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্যে পাতার নির্যাসে উপকার হয়।

 

 

কলেরা নিরাময়ে গাছের শিকড় সেদ্ধ করে একটি ক্বাথ তৈরি করে যা কলেরার চিকিৎসা করে। প্রতিদিন ৩ ঘন্টার জন্য, কলেরার চিকিৎসায় এই পানির ২০ সিসি পান করলে সেরে যায়।

 

 

খিঁচুনি নিরাময়ে শিকড় গুলিয়ে চিনি মিছরি দিয়ে খেলে উপকার হয়। মাড়ির চিকিৎসায়, দাঁতের ক্ষয়, মুখের ঘা ও মাড়ির রক্তপাতে ফুল থেকে তরল বের করে গরগর করতে হয়।

 

 

ফুলের ক্বাথ ম্যালেরিয়া চিকিৎসায় কার্যকর। পাতা সেদ্ধ করে নির্যাস তৈরি করে কিডনিতে পাথরের চিকিৎসায় ৫০ মিলি ডোজে দিনে দুবার খেতে হয়। চোখ পরিষ্কার রাখতে এবং ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ মুক্ত রাখতে পাতার ক্বাথের পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ফুল এবং বীজ নিয়মিত ঋতুস্রাব অর্জন করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। যদি মাসিকের সমস্যা থাকে তবে ক্র্যাম্প কমাতে পারে।

 

“ঝিনাইগাতী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম রাসেল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, কৃষ্ণচ‚ড়া ফুল থোকায় থোকায় গাছের ডালে পর্যায়ক্রমে ফুল ফুটতে থাকে। সৌন্দর্যবর্ধনে পরিবেশবান্ধব কৃষ্ণচ‚ড়া গাছের পাশাপাশি অন্যান্য গাছ ও লাগানোর পরামর্শ দেন তিনি।”


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

নতুন চমক ইরানের, সেজিল ক্ষেপণাস্ত্র সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে

নতুন চমক ইরানের, সেজিল ক্ষেপণাস্ত্র সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে

স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে দেশটির আইন মেনে চলুন : বাংলাদেশিদের প্রতি কনসাল জেনারেল

স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে দেশটির আইন মেনে চলুন : বাংলাদেশিদের প্রতি কনসাল জেনারেল

সুন্দরগঞ্জে বিএনপি নেতা হত্যা, প্রধান আসামি সুমন গ্রেফতার

সুন্দরগঞ্জে বিএনপি নেতা হত্যা, প্রধান আসামি সুমন গ্রেফতার

আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে বেকার যুবকদের ভাতা প্রদান করা হবে - ব্যারিস্টার ইরফান ইবনে আমান অমি

আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে বেকার যুবকদের ভাতা প্রদান করা হবে - ব্যারিস্টার ইরফান ইবনে আমান অমি

মারা গেছেন খ্যাতিমান আলোকচিত্র শিল্পী চঞ্চল মাহমুদ

মারা গেছেন খ্যাতিমান আলোকচিত্র শিল্পী চঞ্চল মাহমুদ

ইরানে নিরীহ নাগরিকদের হত্যার মূল্য দিতে হবে নেতানিয়াহুকে

ইরানে নিরীহ নাগরিকদের হত্যার মূল্য দিতে হবে নেতানিয়াহুকে

কিশোরকে নির্যাতন ঘটনায় আসামি সাইফুল গ্রেফতার

কিশোরকে নির্যাতন ঘটনায় আসামি সাইফুল গ্রেফতার

বেপরোয়া গতিতে দুর্ঘটনা, পরিচয় মিলেছে ময়মনসিংহে নিহত ১১ জনের

বেপরোয়া গতিতে দুর্ঘটনা, পরিচয় মিলেছে ময়মনসিংহে নিহত ১১ জনের

দাউদকান্দিতে ড.খন্দকার মোশাররফ ফাউন্ডেশন ডিগ্রি কলেজে দোয়া মাহফিল

দাউদকান্দিতে ড.খন্দকার মোশাররফ ফাউন্ডেশন ডিগ্রি কলেজে দোয়া মাহফিল

বেনাপোলে ৯ লাখ ২০ হাজার টাকার জাল নোটসহ আটক ১

বেনাপোলে ৯ লাখ ২০ হাজার টাকার জাল নোটসহ আটক ১

স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে বুড়িচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে ১০০ শয্যায় উন্নীতকরণ সময়ের দাবী

স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে বুড়িচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে ১০০ শয্যায় উন্নীতকরণ সময়ের দাবী

আউটসোর্সিং শিল্প বিকাশে সরকার সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে: শিল্প উপদেষ্টা

আউটসোর্সিং শিল্প বিকাশে সরকার সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে: শিল্প উপদেষ্টা

রাতে চীন যাচ্ছেন মির্জা ফখরুলসহ ৯ সদস্যদের প্রতিনিধি

রাতে চীন যাচ্ছেন মির্জা ফখরুলসহ ৯ সদস্যদের প্রতিনিধি

দাকোপে ভয়াবহ নদী ভাঙন: হরিয়ে যাচ্ছে ভিটেমাটি, ভেসে যাচ্ছে ভবিষ্যৎ

দাকোপে ভয়াবহ নদী ভাঙন: হরিয়ে যাচ্ছে ভিটেমাটি, ভেসে যাচ্ছে ভবিষ্যৎ

খুলনার সাংবাদিক মামুন রেজার দাফন সম্পন্ন

খুলনার সাংবাদিক মামুন রেজার দাফন সম্পন্ন

নোয়াখালীতে প্রবাসীর বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, আটক ৪

নোয়াখালীতে প্রবাসীর বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, আটক ৪

হরিনাকুন্ডু উপজেলায় ডেঙ্গু জ্বরে কলেজ ছাত্রের মৃত্যু

হরিনাকুন্ডু উপজেলায় ডেঙ্গু জ্বরে কলেজ ছাত্রের মৃত্যু

তেহরানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেছে, রাজধানীতে ফিরতে শুরু করেছেন বাসিন্দারা

তেহরানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেছে, রাজধানীতে ফিরতে শুরু করেছেন বাসিন্দারা

নানা আয়োজনে কবি রুদ্রকে স্মরণ

নানা আয়োজনে কবি রুদ্রকে স্মরণ

আরেক সেঞ্চুরিতে শান্তর বিরল কীর্তির পর বল হাতেও বাংলাদেশের দুর্দান্ত শুরু

আরেক সেঞ্চুরিতে শান্তর বিরল কীর্তির পর বল হাতেও বাংলাদেশের দুর্দান্ত শুরু