বরগুনায় ডেঙ্গুর ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসন ও বর্তমান সরকারকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে বরগুনা সদর উপজেলা ও পৌর বিএনপিসহ সর্বস্তরের জনগণ। এ সময় বরগুনাকে ডেঙ্গু হটস্পট হিসেবে ঘোষণা এবং জরুরী ব্যবস্থা গ্রহণ না করাসহ নানা কারণে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি করেন উপস্থিত নেতাকর্মীরা।
মঙ্গলবার (১০ জুন) সকাল ১১ টার দিকে বরগুনা প্রেসক্লাব সংলগ্ন সদর রোড এলাকায় এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। এছাড়াও সাকাল সাড়ে ৯ টার দিকে একই স্থানে সর্বস্তরের সাধারণ জনগণের ব্যানারে পর্যাপ্ত নার্স ও চিকিৎসকের দাবিতে আরও একটি প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করা হয়।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে উপস্থিত নেতাকর্মীরা বলেন, সারদেশে মোট ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর চার ভাগের এক ভাগ রোগীই বরগুনায়। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি এ জেলায়। দিনদিন ডেঙ্গুর পরিস্থিতি বরগুনায় আরও ভয়াবহ রুপ নেয়া শুরু করেছে। প্রতিদিন হাসপাতালে অসংখ্য আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছেন। এরপরও বরগুনা জেলাকে ডেঙ্গু হটস্পট হিসেবে ঘোষণা করে নেয়া হয়নি কোনো জরুরি ব্যবস্থা।
বক্তারা আরও বলেন, বরগুনার প্রায় ১২ লাখ মানুষের চিকিৎসার জন্য একমাত্র প্রতিষ্ঠান বরগুনা জেনারেল হাসপাতালটিও ভুগছে চিকিৎসক সঙ্কটে। এছাড়াও নার্সসহ বিভিন্ন জনবল এবং শয্যা সঙ্কটে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে চিকিৎসা নিতে আসা আক্রান্ত রোগীদের। এসব নানা কারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিও জানান তারা।
বরগুনার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী নাসরিন আক্তার শিমু বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসাসেবায় অব্যবস্থাপনার কারণে স্থানীয় উদ্যোক্তা মোনালিসা জেরিন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। আরও অনেকেরই একই কারণে মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে আমাদের জেলায় ভয়াবহ পরিস্থিতি ধারণ করেছে ডেঙ্গু। যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে এ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
বরগুনা প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট সোহেল হাফিজ বলেন, সারা বাংলাদেশে যেখানে সাড়ে ৪ হাজার রোগী সেখানে শুধু বরগুনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দেড় হাজার। এ পরিস্থিতিতে বরগুনার সিভিল সার্জনসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকগণ কিছুতেই ছুটিতে যেতে পারেন না। এছাড়াও বর্তমান এ সময়ে মাত্র ১০ জন চিকিৎসক নিয়ে এতসংখ্যক রোগীর চিকিৎসা দেয়াটা হাস্যকর।
বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মোল্লা বলেন, ডেঙ্গু মশার ভয়াবহ উপদ্রপের কারণে প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা এখন হাসপাতালের সক্ষমতার বাইরে গিয়ে অচল অবস্থার তৈরি হয়েছে। অথচ এমন পরিস্থিতিতেও রাষ্ট্রের কোনো গরম নেই। এভাবে একটি জেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চলতে পারে না।
কর্মসূচির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ফিরোজ উজ জামান মামুন বলেন, বরগুনায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করায় বরগুনা পৌরসভা, স্বাস্থ্য বিভাগ এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সকলেরই দায়িত্বহীনতা রয়েছে। বর্তমানে ডেঙ্গুর এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির পরও স্বাস্থ্য সচিব বরগুনায় আসেননি। এছাড়াও এখন পর্যন্ত বরগুনার চিকিৎসাসেবায় পর্যাপ্ত চিকিৎসক এবং নার্সসহ প্রয়োজনীয় কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। আমাদের দাবি দ্রুত সময়ের মধ্যে বরগুনাকে ডেঙ্গুর হটস্পট হিসেবে ঘোষণা করে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।