নোয়াখালীতে অগ্নি ঝুঁকিতে শত শত বহুতল ভবন, নেই আধুনিক অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা
১৬ জুন ২০২৫, ০২:৩৯ পিএম | আপডেট: ১৬ জুন ২০২৫, ০২:৪৩ পিএম

নোয়াখালীর নয়টি উপজেলায় গত প্রায় দু'যুগ সময়ে ৫শ শতাধিক বহুতল ভবন গড়ে উঠলেও, অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার নাজুক অবস্থা এবং ফায়ার সার্ভিসের সীমিত সক্ষমতা জেলার জনসাধারণের মাঝে নানা উদ্বেগ,ভয় ও আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে জেলার অন্যতম প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র চৌমুহনী বাজার এলাকার মতো ঘনবসতিপূর্ণ স্থানগুলোতে অগ্নি নির্বাপণের কোনো ব্যবস্থা না থাকা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে যেকোনো বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে।
জেলা ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, জেলার নয়টি উপজেলায় মোট দশটি ফায়ার স্টেশন থাকলেও, তাদের অগ্নি নির্বাপণের সক্ষমতা দ্বিতল ভবনের বেশি নয়। এর ফলে, নোয়াখালীর আকাশচুম্বী বহুতল ভবনগুলোতে আগুন লাগলে তা নেভানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
তদুপরি জেলা শহরসহ নয়টি উপজেলা ও পৌরসভা এলাকায় অননুমোদিত ভাবে সরকারি আইন লঙ্ঘন করে দিঘি,পুকুর,খালসহ জলাশয় ভরাট করে ফেলার ফলে পানি সংকট,বহুতল ভবনসহ ঘর-বাড়ী,মার্কেট ও অন্যান্য
স্থাপনা নির্মাণে বিল্ডিং কোড না মানা,ফায়ার সার্ভিসের যান চলাচলের পথ প্রসস্থ না থাকায় এখানে অগ্নি দুর্ঘটনার ঝুঁকি ক্রমেই বেড়ে চলেছে।
চৌমুহনী বাজারের ওয়ার্কশপ ব্যবসায়ী আবু নাছের ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “যেভাবে বহুতল ভবন উঠছে, তাতে ফায়ার সার্ভিসের কিছু করার আছে কিনা আমার সন্দেহ। সব ছাই হয়ে যায়। আমাদের ফায়ার সার্ভিসগুলোর সেই সক্ষমতা নেই আগুন নেভানোর জন্য। ফায়ার সার্ভিস আদিকালের সেই পুরনো লক্কর-ঝক্কড় মার্ক সরঞ্জাম দিয়ে আগুন নেভাতে আসে। এটা দিয়ে কি আগুন নেভানো সম্ভব? তাদের যে গাড়িগুলো আছে, ১০ তলা বিল্ডিংয়ে আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের তা প্রতিরোধে সক্ষমতা নেই।
চৌমুহনী বাজারের আরেক ব্যবসায়ী আবুল কাশেম বলেন, চৌমুহনী বাণিজ্যিক শহরে প্রতি বছর একাধিকবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের দুর্বলতার কারণে বছরে অর্ধশতাধিক দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সামান্য আগুন লাগলেও তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বাণিজ্যিক কেন্দ্র চৌমুহনীর কোটি কোটি টাকার ক্ষতির কারণ হয়। এর ফলে অনেক বড় ব্যবসায়ী ব্যবসা গুটিয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। তিনি আরও যোগ করেন, ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা এতটাই দুর্বল যে মুহূর্তে আগুন নেভানো বা তাদের সরঞ্জামের দুর্বলতার কারণে মুহূর্তের মধ্যে মার্কেট পুড়ে নি:শেষ হয়ে যায়।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাটের ব্যবসায়ী কাজী ফয়সল, মাসুম,বাবু,জামশেদ মনে করেন, প্রতিটি বিল্ডিংয়ে অগ্নি নিয়ন্ত্রণের সরঞ্জাম রাখা উচিত যাতে আগুন লাগার সাথে সাথে নিজেরাই তা নেভানোর চেষ্টা করতে পারে এবং ব্যবসায়ীদেরও এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া প্রয়োজন।
সুবর্ণচর উপজেলার ব্যবসায়ী জামাল,বোরহান ও মহল বলেন, অগ্নি নির্বাপণ,ঘূর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা প্রায় নেই বললেই চলে। এই জেলাটি আগুন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বেশি ঝুঁকিতে আছে। তাঁরা আরও বলেন , ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উদ্ধার অভিযানে গেলেও আধুনিক সরঞ্জামের অভাবে তাদের কাজ কঠিন হয়ে পড়ছে। উপকূলীয় এই জেলা প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবণ হওয়ায় ছোট-বড় অনেক প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুহূর্তে অন্য জেলার মুখাপেক্ষী হতে হয়। ঘূর্ণিঝড় বা বন্যায় উদ্ধার চালানোর মতো আধুনিক সরঞ্জামও ফায়ার স্টেশনগুলোতে নেই।
ফায়ার সার্ভিসের সীমাবদ্ধতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিষয়ে নোয়াখালীর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ ফরিদ আহমেদ জানান, নোয়াখালীর জীর্ণশীর্ণ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা সত্ত্বেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা কাজ করেন। বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা বা অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হলে আমাদেরকে যেভাবে উদ্ধার সামগ্রী প্রয়োজন, স্বাভাবিকভাবে কিছু আছে। তবে বিশেষভাবে আমাদের টিটিএল এবং অত্যাধুনিক অগ্নিনির্বাপণ উদ্ধার যন্ত্র সমেত গাড়ি প্রয়োজন, যা এলাকার দুর্ঘটনা ও দুর্যোগ মোকাবেলা দ্রুত করবে।”
তিনি আরও জানান, গত এক বছরে নোয়াখালীর নয়টি উপজেলায় ২৬৮টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব অগ্নিকাণ্ডে ফায়ার সার্ভিস ২১ কোটি ১৩ লাখ ৯০ হাজার টাকার মালামাল উদ্ধার করে।কিন্তু ক্ষতির পরিমাণ তার কয়েক গুণ বেশি ছিল। এই পরিস্থিতি জেলার বাসিন্দাদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে এবং ফায়ার সার্ভিসের আধুনিকীকরণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধির দাবি উঠেছে।বাস্তবতার আলোকেই ফায়ার সার্ভিসের আধুনিক সরঞ্জাম সরবরাহ এবং কর্মীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নোয়াখালীর নাগরিকদের অগ্নি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করার দাবি জোরালো হচ্ছে।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও






আরও পড়ুন

উপদেষ্টা শারমিন এস. মুরশিদের অপসারণ দাবি বাংলাদেশে জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয়

বকশীগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে নারীসহ সাতজনকে পুশইন

শ্রীমঙ্গলে চা-বাগানে সেপটিক ট্যাংকের বিষাক্ত গ্যাসে ৪ শ্রমিকের করুণ মৃত্যু

মুকসুদপুরে প্রধান উপদেষ্টার সহায়তায় শিক্ষাবৃত্তি প্রদান

বাতাসের টানে বিমানের ইঞ্জিনে ঢুকে যাত্রীর মৃত্যু

ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, ৯৮ গ্রাম প্লাবিত

জুলাই-আগস্টে গণহত্যা: হাসিনা-কামালের বিচার শুরুর আদেশ

আবারও ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, বেজে উঠল সাইরেন

অর্থকষ্টে ফর্ম ফিলাপ করতে না পারা শিক্ষার্থীর পাশে ইবি ছাত্রদল নেতা

১০০ বছর পূরণ করলেন আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার মাহাথির

শ্রমিক কল্যাণে বেক্সিমকো ফার্মার ৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা অনুদান

দুমকীতে জেলা বিএনপির নবনির্বাচিত নের্তৃবৃন্দের সৌজন্যে সাক্ষাৎ

বাবার চিকিৎসার জন্য গিয়ে ভারতীয়দের রোষানলে বাংলাদেশি যুবক! ভিডিও ভাইরাল

ফরিদপুরে ডেঙ্গুসহ ঠাণ্ডাজনিত রোগী হাসপাতাল ঠাঁসা , রোগী সুস্থের ফল আপেল- মাল্টা - আঙুর বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে

আরও সাতটি দেশের পণ্যে নতুন পাল্টা শুল্ক আরোপ করলেন ট্রাম্প

ইয়েমেনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় হতচকিত ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র

চিরিরবন্দরে ডাম্পট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে ইপিজেড কর্মী নিহত

এবার সউদী আরবে সম্পত্তি কিনতে পারবে প্রবাসীরা

অবশেষে ২০ দিন পর খুলছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ

‘হাসিনাকে রক্ষা করা অনৈতিক’—ভারতের প্রতি প্রেস সচিবের কড়া বার্তা