কুতুবউদ্দিন আইবেকের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ-২
২৬ মে ২০২৩, ১১:২৪ পিএম | আপডেট: ২৭ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম

কুতুবউদ্দিন আইবেকের বিরুদ্ধে তথাকথিত ইতিহাস লেখকদের অভিযোগগুলোর একটি হলো, তিনি হিন্দু মন্দির ধ্বংস করে তৈরি করেন মসজিদ। কোনো ইতিহাস লেখকের দাবি, তিনি প্রায় ১০০০ মন্দির ধ্বংস করেন এবং মসজিদ বানান। তিনি এও দাবি করেন, কুতুবউদ্দিন আইবেক ধ্বংসপ্রাপ্ত, মন্দিরের পাথর ও রতœরাজি দিয়ে কুওয়াতুল মসজিদ সজ্জিত করেন।
এইসব ইতিহাস লেখকের দাবি যে সত্য ও বাস্তবতার সঙ্গে যায় না, সে কথা সত্যসন্ধ ঐতিহাসিকরা উল্লেখ করেছেন। একজন ইতিহাসবিদ লিখেছেন: কালিঞ্জর, বেনারস, কালপি, দিল্লী, আজমীর, আজাইন, বাদায়ুনের যুদ্ধে কুতুবউদ্দিন আইবেক যত মন্দির ধ্বংস করেছিলেন বলে বর্ণনা পাওয়া যায়, তা সত্য হলে উত্তর ভারতের একটি মন্দিরও অবশিষ্ট থাকতো না এবং হাজার হাজার মসজিদ হতো। কিন্তু বাস্তব অবস্থা অন্য রকম। উত্তর ভারতে তখন ১২টি মসজিদও ছিল না। পক্ষান্তরে হাজার হাজার মন্দির বিদ্যমান ছিল। দু’ একটা মন্দির যা ধ্বংস হয়েছে, তা কোনো ধর্মীয় উদ্দেশ্য অনুযায়ী হয়নি, যুদ্ধের হাঙ্গামার ফলেই হয়েছে। (‘সালাতীনে দেহলীকে মজহারি রুজহানতা’, ‘ইতিহাসের ইতিহাস’, আল্লামা গোলাম আহমদ মোর্তজা)।
কোনো কোনো ঐতিহাসিক লিখেছেন, ‘গনিমতে’র সম্পদ দিয়ে কুতুবউদ্দিন আইবেক মসজিদ ও কুতুবমিনার নির্মাণ করেন। গনিমত হলো যুদ্ধলব্ধ সম্পদ ও মালামাল। এর মধ্যে ভগ্ন ও পরিত্যক্ত মন্দিরের ইট-কাঠ-পাথর ইত্যাদিও শামিল হতে পারে। তাই মসজিদ ও মিনারে যদি মন্দিরের কোনো উপকরণ ব্যবহৃত হয়ে থাকে সেটা দোষের কিছু হতে পারে না। এ ধরনের ঘটনা নজিরবিহীনও নয়।
কুতুবউদ্দিন আইবেকের বিরুদ্ধে অন্য একটি অভিযোগ হলো, তিনি হাজার হাজার মানুষ হত্যা করেন। যুদ্ধ ছাড়া বেসামরিক মানুষকে তিনি হত্যা করেছেন, এমন সাক্ষ্য-প্রমাণ ইতিহাসে পাওয়া যায় না। আর যুদ্ধক্ষেত্রে মানুষ হত্যা করা কোনো অন্যায় বা দোষের নয়। যুদ্ধে উভয় পক্ষেই হতাহত হয়। এ জন্য কেউ কাউকে দায়ী করে না। যুদ্ধ হবে, কেউ হতাহত হবে না, এটা হয় না।
উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের দাবি, কুতুবমিনার প্রাঙ্গনে পূজা-আর্চনার আধিকার যেমন দিতে হবে, তেমনি কুতুবমিনারকে বিষ্ণুস্তম্ভ হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। এর সোজা অর্থ, মুসলিম ঐতিহ্যের পরিচয় পাল্টে হিন্দু ঐতিহ্য প্রতিস্থাপন করতে হবে। এভাবে ইতিহাস পাল্টে দিতে হবে। প্রশ্ন হলো, প্রকৃত ইতিহাস কি পাল্টে দেয়া যায়?
মুসলমান বিজেতা ও শাসকদের যেভাবে অপচিহ্নিত ও তাদের ভাবমর্যাদা বিনষ্ট করার চেষ্টা হচ্ছে, সেটা উগ্র মুসলিম বিদ্বেষের পরিচায়ক। কুতুবউদ্দিন আইবেক শাসক হিসেবে ছিলেন অসাম্প্রদায়িক, সজ্জন ও সহৃদয়। তার সেনাবাহিনীতে বহু হিন্দু সৈন্য ছিল। প্রশাসনেও বহু হিন্দু ছিলো। রাজস্ব বিভাগে হিন্দু কর্মচারীদের উপস্থিতি ছিলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। হিন্দু বিদ্বেষী নয়, শাসক হিসেবে তিনি কতটা মহৎ ছিলেন, এটা তারই প্রমাণ বহন করে। (সমাপ্ত)
বিভাগ : ভারতের সভ্যতায় মুসলমানদের অবদান
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

ক্লাব ছাড়ার গুঞ্জনের ব্যাপারে বেনজেমা / 'বাস্তবতা ইন্টারনেটের জগৎ থেকে ভিন্ন'

সরকারি চাকরিতে ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৯৭৬ পদ ফাঁকা

পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও কোস্টগার্ডের জন্য যত বরাদ্দ

স্মার্ট দেশ গড়ার প্রত্যয়

মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির বঙ্গজয়-১

হজের সংক্ষিপ্ত নিয়ম ও জরুরি মাসায়েল-৫

দাম বাড়বে

দাম কমবে

চলমান সঙ্কট সমাধানের পথরেখা নেই : ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

সঙ্কট স্বীকার করা হয়নি ও সমাধানের কথাও নেই -সিপিডি

কর আদায়ের লক্ষ্য পূরণই চ্যালেঞ্জ -এফবিসিসিআই সভাপতি

সঙ্কটে ঘুরে দাঁড়ানোর বাজেট -ওবায়দুল কাদের

সরকার ঋণ করে ঘি খাচ্ছে : আমীর খসরু

এটা নির্বাচনমুখী বাজেট বাস্তবসম্মত নয় : জি এম কাদের

অর্থমন্ত্রী উন্নয়নের কথামালা দিয়ে বাস্তবতা অস্পষ্ট করেছেন -রাশেদ খান মেনন

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সঙ্গে পিটার হাসের বৈঠক

সুষ্ঠু নির্বাচনের কি ব্যবস্থা নিয়েছে ইসির কাছে জানতে চেয়েছে জাপান

লোডশেডিংমুক্ত দেশ গড়তে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মহাপরিকল্পনা

১০ মেগা প্রকল্প পাচ্ছে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ

বাখমুতের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে চেচেন যোদ্ধারা