বাংলাদেশ ইনোভেশন কনক্লেভের উদ্যোগে সফলভাবে অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ এআই সামিট ও হ্যাকাথন
০৯ মে ২০২৫, ০৭:১৭ পিএম | আপডেট: ০৯ মে ২০২৫, ০৭:১৭ পিএম

বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের আয়োজনে গত ৮ মে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ এআই সামিট। আকিজ রিসোর্স ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসির পৃষ্ঠপোষকতা এবং ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের সহযোগিতায় এই আয়োজনটি বাংলাদেশ ইনোভেশন কনক্লেভের একটি ফ্ল্যাগশিপ উদ্যোগ।
এই সম্মেলনটি দেশি ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক নেতা, টেক ও এআই বিশেষজ্ঞ, নীতিনির্ধারক ও উদ্ভাবকদের একত্রিত করে একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে। বিশেষজ্ঞ আলোচকেরা এআই প্রযুক্তির ব্যবহার, প্রাতিষ্ঠানিক অভিজ্ঞতা, উদ্ভাবন এবং সম্ভাবনা নিয়ে একক ও পারস্পরিকভাবে আলোচনা করেন। পাশাপাশি বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা জোরদার করা এবং বাংলাদেশে এআই ট্যালেন্ট তৈরির সম্ভাব্য সুযোগ নিয়েও আলোচনা হয়।
এই সম্মেলনের মূল লক্ষ্য ছিল একটি সমন্বিত জাতীয় এআই কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সহায়তা করা—যার মধ্যে রয়েছে এআই-এর সম্ভাবনা নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, সরকার, বেসরকারি খাত ও একাডেমিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা, দক্ষ পেশাজীবীর সংখ্যা বৃদ্ধি এবং নীতিগত দিকনির্দেশনা তৈরির পথ সুগম করা।
সামিটের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মোহাম্মদ মুজিবুল হক, পিএইচডি, ডিন, ব্র্যাক বিজনেস স্কুল, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম এবং বাংলাদেশ ইনোভেশন কনক্লেভের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন আর শুধু প্রযুক্তির বিষয় নয়—এটি আমাদের জীবনের প্রতিটি খাতকে ছুঁয়ে যাচ্ছে। শিল্পকারখানা থেকে কৃষি, স্বাস্থ্যসেবা থেকে শিক্ষা, প্রশাসন থেকে দৈনন্দিন জীবন—সবখানেই এআই এনে দিচ্ছে দ্রুত সমাধান, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও অগ্রগতির সম্ভাবনা। তবে প্রযুক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি আমাদের একটি বড় দায়িত্বও রয়েছে—এর সচেতন ব্যবহার এবং সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। আজকের এই সম্মেলন কেবল আলোচনা নয়—এটি ভবিষ্যতের রূপরেখা তৈরির সম্মিলিত প্রয়াস। সামিটের পাশাপাশি আমরা হ্যাকাথন আয়োজনেও সক্ষম হয়েছি, যেখানে দেশের তরুণ উদ্ভাবকেরা গুরুত্বপূর্ণ কিছু খাতের জন্য এআই ভিত্তিক সমাধান তৈরি করেছে।”
প্রধান অতিথি হিসেবে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন শীষ হায়দার চৌধুরী, এনডিসি, এমসিআইপিএস (সিএস), সচিব, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। তিনি বলেন, “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শুধু একটি প্রযুক্তি নয়—এটি সময়ের সবচেয়ে বড় রূপান্তরমূলক শক্তি। আজ আমরা দাঁড়িয়ে আছি এক বৈশ্বিক পরিবর্তনের সন্ধিক্ষণে, যেখানে সিদ্ধান্ত নিতে হবে—আমরা কি কেবল প্রযুক্তির অনুসারী হব, নাকি পথপ্রদর্শক? এই সামিট আমাদের সেই ভাবনার দিগন্ত খুলে দিয়েছে। বাংলাদেশ এখন শুধু এআই গ্রহণ করতে চায় না, নেতৃত্ব দিতেও প্রস্তুত। সরকার, শিল্প, শিক্ষাব্যবস্থা এবং স্টার্টআপদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা এমন একটি পথ তৈরি করতে চাই, যেখানে প্রযুক্তি হবে সমান সুযোগের ভিত্তি। দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও নৈতিক নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ হতে পারে বৈশ্বিক এআই অগ্রযাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ কণ্ঠস্বর।”
সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী, ওএসপি, এনডিসি, পিএসসি, টিই, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। তিনি বলেন, “এই প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞরা একত্রিত হয়ে কেবল জ্ঞান বিনিময় করেননি—তারা আমাদের সামনে খুলে দিয়েছেন এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার। এই আলোচনা আমাদের বুঝতে শিখিয়েছে, এআই একদিকে যেমন বিশাল সুযোগ এনে দিচ্ছে, অন্যদিকে তেমনি কিছু গভীর চ্যালেঞ্জও সামনে আনছে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তাটি হচ্ছে—এই প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ কেমন হবে, তা নির্ভর করছে আমাদের আজকের সিদ্ধান্তের ওপর। এআই এখন আর শুধু ভবিষ্যতের বিষয় নয়, এটি এখন আমাদের জীবনের অংশ। এখনই আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়—আমরা কি এআই-কে ব্যবহার করব সবার জন্য, নাকি এটিকে হতে দেব বৈষম্যের মাধ্যম? আমাদের কাজই নির্ধারণ করবে, এই প্রযুক্তির অপার সম্ভাবনা কিভাবে জনকল্যাণে কাজে লাগানো যাবে।”
সামিটে ৪টি কি-নোট সেশন, ২টি প্যানেল আলোচনা, ৫টি ইনসাইট সেশন, ২টি কেস স্টাডি এবং ১টি ফায়ারসাইড চ্যাট অনুষ্ঠিত হয়। পাশাপাশি ৫টি ব্রেকআউট সেশনে বিশেষজ্ঞরা শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য, ফিনটেক ও শিল্পখাতে এআই অন্তর্ভুক্তি নিয়ে আলোচনা করেন।
কি-নোট আলোচনায় উঠে এসেছে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ গঠনে এআই-এর ভূমিকা, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এআই-এর অগ্রগতি ও সম্ভাবনা, পরিবর্তিত এআই পরিস্থিতি মোকাবিলায় উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর করণীয় এবং কৃষি, শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নে অন্তর্ভুক্তিমূলক উদ্ভাবনের গুরুত্ব।
আলোচনায় অংশ নেন মাইক্রোসফট বাংলাদেশের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এমডি ইউসুফ ফারুক, প্রফেসর খন্দকার এ. মামুন, কামাল কান্ত (সেলসফোর্স), মেহনাজ তাবাসসুম ও সাইফ আহমেদ (কগনিকো এআই) প্রমুখ।
প্যানেল আলোচনায় বক্তারা জাতীয় উন্নয়ন, নৈতিক নীতি প্রণয়ন ও আর্থিক সেবার পরিধি বৃদ্ধিতে এআই-এর ভূমিকা নিয়ে মতবিনিময় করেন। আলোচনায় উঠে আসে কৃষি রূপান্তর, কমিউনিটি ক্ষমতায়ন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় প্রযুক্তি ডিজাইন, শিক্ষাখাতে সহজলভ্য শিক্ষা তৈরি, গোপনীয়তা রক্ষা এবং ক্ষমতার ভারসাম্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
সমাপনী অধিবেশনে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার এআই-এর বিকেন্দ্রীকরণের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
সামিটে আরও উপস্থিত ছিলেন মাহতাব উদ্দিন আহমেদ (আইসিএমএবি), ফাহিম মাশরুর (বিডিজবস), রাহাত আহমেদ (অ্যাঙ্করলেস), ইয়াসির আজমান (গ্রামীণফোন), মাহমুদ হোসেন (বিটিআরসি), এম মনজুর মাহমুদ (ডেটাসফট), লুসিয়ানো ফ্লোরিডি (ইয়েল), ফ্রেডেরিক স্কল (কুইনিপিয়াক), শাহির চৌধুরী (শিখো), সাব্বির আহমেদ (ভিসা) এবং আরও অনেকে।
এই সামিটে একইসঙ্গে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ ইনোভেশন কনক্লেভের আরেকটি যুগান্তকারী উদ্যোগ—এআই হ্যাকাথন। ৬টি খাতে উদ্ভাবনী এআই সমাধানের জন্য ৬টি দলকে বিজয়ী ঘোষণা করে ১ লক্ষ টাকা করে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
হ্যাকাথনে বিজয়ী দলগুলো হলো:
-
ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরে মেশিন মাইন্ডসেট (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়)
-
হেলথকেয়ারে কিউআরএআরজি (এমআইএসটি)
-
ফিনটেকে রানটাইম টেররস (আইআইটি)
-
কৃষি খাতে কোড ফার্মারস (ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়)
-
সিটি প্রবলেম সেক্টরে টিম গ্লাইডার্স (বিইউপি)
-
শিক্ষা খাতে বুরাক (রুয়েট)
হ্যাকাথনের যাত্রা শুরু হয় ১০ মার্চ ২০২৫। ৭০টি প্রতিষ্ঠান থেকে ১৭৭টি দল অংশ নেয়। ৩১টি দলকে শর্টলিস্ট করে ১৭ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত প্রোটোটাইপ তৈরির কাজ করে। পরে ৬-৭ মে অনুষ্ঠিত হয় বুটক্যাম্প ও চূড়ান্ত প্রদর্শনী। জুরি বোর্ডের মূল্যায়নে বিজয়ীদের নির্বাচন করা হয়।
বাংলাদেশ এআই সামিট ও হ্যাকাথনের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার ছিল ক্রিয়েটিভ আইটি ইনস্টিটিউট, রিভ চ্যাট, আইডিসি, মার্কেটিং সোসাইটি অব বাংলাদেশ, ন্যামকন, আইএএ বাংলাদেশ। অফিসিয়াল ক্যারিয়ার পার্টনার টার্কিশ এয়ারলাইনস, রিফ্রেশমেন্ট পার্টনার প্রাণ এবং পিআর পার্টনার ব্যাকপেজ পিআর। আয়োজন দুটি ছিল বাংলাদেশ ইনোভেশন কনক্লেভের ফ্ল্যাগশিপ উদ্যোগ।
বিভাগ : অর্থনীতি
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

পরিস্থিতি ঘোলাটে না করে নির্বাচনের সুর্নিদিষ্ট তারিখ ঘোষণা করুন : তারেক রহমান

ঢাবির সাম্য হত্যা: তিন জনের ৬ দিনের রিমান্ডে

বিএনপি মহাসচিব সুস্থ আছেন, সেরে উঠতে সময় লাগবে : মেয়ে শামারুহ মির্জা

আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার সর্বকালের বর্বরোচিত ইতিহাস ভঙ্গ করেছিল

খুলনার সমাবেশে ধানমানব

মানবিক করিডোর নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে

হুঁকা-সিসার বিরুদ্ধে কিসের বিদ্বেষ! মূল উদ্দেশ্য কী?

সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে পুশইনের চেষ্টা বিএসএফের

শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় হিটু শেখের মৃত্যুদণ্ড

সিন্ডিকেটের ‘মেডিকিট’ ধরা খেলো

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তোলপাড়

মাইক্রোক্রেডিটই ব্যাংকিংয়ের ভবিষ্যৎ :ড. মুহাম্মদ ইউনূস

দমন হবে সন্ত্রাস?

যৌক্তিক সংস্কার নিস্পন্ন করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুন : বাংলাদেশ মুসলিম লীগ

ফেসবুক পোস্টে প্রতিক্রিয়া দেওয়ায় মৎস্য অধিদপ্তরের পাঁচ কর্মকর্তাকে নোটিশ

উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে সচেতনতা জরুরি

ভারতের পুশ ইন বন্ধ করতে হবে : রাশেদ প্রধান

কর সংস্কার যৌক্তিক, প্রতিবাদ দুঃখজনক

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অডিও-ভিজ্যুয়াল

জামিন নামঞ্জুর, কারাগারে মমতাজ