শিক্ষা খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি দূর করতে হবে
১৪ মে ২০২৩, ০৮:৩২ পিএম | আপডেট: ১৫ মে ২০২৩, ১২:০১ এএম
শিক্ষামন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের প্রায় দু’শ কোটি টাকা লুটপাটের আয়োজন চূড়ান্ত হয়েছে বলে ইনকিলাবে প্রকাশিত এক খবরে জানা গেছে। খবরে বলা হয়েছে, প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ এবছরই খরচ দেখাতে হবে। না হলে অর্থ ফেরৎ চলে যেতে পারে। এ কারণেই তোড়জোড় চলছে কার্যাদেশ প্রদানের আনুষ্ঠানিকতা দ্রুত সম্পন্ন করার। নীতিমালা বেতোয়াক্কা করে বই কেনায় জোর তৎপরতাও অব্যাহত আছে। এর মধ্যেই এই অনিয়ম, দুর্নীতি ও সম্ভব্য লুটপাটের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে একটি রিট করা হয়েছে এবং দুদকে দায়ের করা হয়েছে অভিযোগ। যারা প্রকল্পের অর্থ লুটপাটের আয়োজক, তারা এতে কিছুটা হলেও বিচলিত। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের পাঠাভ্যাস তৈরিতে সরকার ২০১০ সালে একটি পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচী গ্রহণ করে, কর্মসূচী বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেকে-ারি এডুকেশন ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রামের (এসইডিপি) আওতায় শিক্ষার্থীদের পাঠাভ্যাস ও পাঠদক্ষতা বাড়ানোর একটি কর্মসূচী দেশের ১৫ হাজার মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিচালিত হচ্ছে। এজন্য উপযুক্ত বইয়ের প্রয়োজন এবং তা কেনার জন্য একটি নীতিমালা প্রণীত হয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে, সেই নীতিমালা লংঘন করে বই নির্বাচন ও কেনার প্রস্তুতি চলছে। খবরের বর্ণনা মতে, পদে পদে নীতিমালা লংঘন করা হয়েছে। বই বাছাইয়ের জন্য একটি বাছাই কমিটি থাকলেও কমিটির সদস্যদের মতামতের তেমন প্রয়োজন হয়নি। অধিকাংশ বইয়ের তালিকা এসেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, সচিবের দফতর এবং স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রী বাছাই কমিটির ওপর প্রভাব বিস্তার করেন বলে অভিযোগ আছে। বই প্রকাশকদের একটি সিন্ডিকেট শুরু থেকেই এই ঘোঁটে জড়িত। দেখা গেছে, তাদের মালিকানাধীন একাধিক প্রকাশনা সংস্থার বই মনোনীত হয়েছে। প্রকল্প ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক শ্রেণির কর্মকর্তার সঙ্গে চিহ্নিত প্রকাশনা সংস্থার মালিকদের সিন্ডিকেটের যোগাসাজসেই এই দুর্নীতি ও লুটপাট সংঘটিত হতে যাচ্ছে। এখন দেখা যাক, উচ্চ আদালত ও দুদক কী করে।
শিক্ষামন্ত্রণালয় এবং শিক্ষাসংশ্লিষ্ট দফতর, বিভাগ ও প্রকল্পে অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাট সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। কিছুদিন আগে মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যবই নিয়ে তুলকালাম হয়ে গেছে। উদ্দেশ্যমূলক পাঠ্যবিষয় সংযোজন, ইসলামী বিষয় বাদ, মুসলিম বিদ্বেষ প্রচার, অন্য গ্রন্থ থেকে সরাসরি চুরি, তথ্য ও বানান বিভ্রাট ইত্যাদি অভিযোগে রীতিমত বিক্ষোভ, আন্দোলন হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আগের বেশ কিছু বই বাতিল করে উপযুক্ত সংশোধনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এজন্য সরকারের কোটি কোটি টাকা গচ্ছা দিতে হয়েছে। অথচ, যাদের কারণে এই গচ্ছা, তাদের জবাবদিহি চাওয়া হয়নি। তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থাও নেয়া হয়নি। তাদের কারো কারো দুঃখপ্রকাশ ও ক্ষমা চাওয়াকেই যথেষ্ট মনে করা হয়েছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, দেশের শিক্ষা নিয়ে, শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে যারা এরকমের ছিনিমিনি খেলেন, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। ভুক্তভোগীদের সাধারণ অভিযোগ এই যে, শিক্ষামন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে এমন কোনো দফতর, বিভাগ ও অফিস নেই, যেখানে অনিয়ম-দুর্নীতি নেই। ঘুষ ছাড়া কোথাও কিছু হয় না। টিআইবি’র দুর্নীতির ধারণাসূচকে শিক্ষাখাতের অবস্থান তালিকার উপর দিকে। নিয়োগ-বদলি থেকে ক্রয়-নির্মাণ ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের চর্চা বহাল আছে এবং লক্ষণীয়ভাবে তা বাড়ছে।
এক সময় শিক্ষাখাতকে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত খাত হিসাবে মনে করা হতো। শিক্ষাখাতে যারা কাজ করেন, তাদের প্রায় সবাই শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত। তারা মানুষ গড়ার কারিগর। ব্যক্তিগত জীবনে তারা মানবিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের অনুশীলন করে থাকেন। তারা এই মূল্যবোধ শিক্ষা দিয়ে থাকেন শিক্ষার্থীদের। তারা শিক্ষার্থীদের কাছে অনুসরণীয়। কাজেই, পেশাগত দায়িত্ব পালনে ও জীবনযাপনে তাদের সততা, স্বচ্ছতা প্রদর্শন অপরিহার্য। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক, শিক্ষা ও শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের মধ্যে মূল্যবোধের চর্চা একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ে এসে উপনীত হয়েছে। তার ফলাফল আমরা ভোগ করছি নানা ক্ষেত্রে ও পর্যায়ে। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, নিয়োগে দুর্নীতি, অযোগ্যদের নিয়োগ, স্বজনপ্রীতি, দলপ্রীতি ইত্যাদি অন্যান্য খাতের মতো শিক্ষাখাতকে বিপর্যয়ের কিনারে এসে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এর উপযুক্ত সংস্কার ও প্রতিকার জরুরি। শিক্ষা নিয়ে আমাদের দেশে বরাবরই এক ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। এই সাথে শিক্ষানীতি ও পাঠ্যবিষয়ে পরিবর্তন আনার একটা মতলবী তৎপরতাও চলছে। ইসলাম ও মুসলমান সম্পর্কিত বিষয়াবলি পাঠ্যবই থেকে বাদ দিয়ে বামচিন্তা ও মূল্যবোধ প্রতিস্থাপনের চেষ্টা করে যাচ্ছে এক শ্রেণির বামচিন্তক। সরকার তাদেরই পৃষ্ঠপোষকতা করছে। শিক্ষামন্ত্রী সম্পর্কেও নানা কথা আছে। তাকে শিক্ষামন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার দাবিও উঠেছে। যাহোক, শিক্ষাকে জাতীয় প্রয়োজনেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষাখাতের অনিয়ম, দুর্নীতি যে কোনো মূল্যে দূর করতে হবে। এর বিকল্প নেই।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
লিটনের উপর চাপ আসে বাইরে থেকে: পোথাস
মির্জাপুরে জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে স্বামী-স্ত্রীকে পিটিয়ে আহত
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে শতভাগ স্বচ্ছতা থাকবে : কুমিল্লায় প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী
ঈদে বাড়তি ভাড়া চেয়ে হয়রানি করলেই কঠোর ব্যবস্থা- আইজিপি
দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করলেন শাভি
খানসামায় ২২ বছর পর যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী আটক
আমতলীতে এক কিশোরীকে অপহরণ শেষে গণধর্ষণঃ তিন ধর্ষক গ্রেপ্তার
ইউক্রেনে ক্রমশ জোরদার হচ্ছে রাশিয়ার আক্রমণ- দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস
‘নাইটহুড’ সম্মানে ভূষিত হলেন ‘ওপেনহাইমার’ পরিচালক
আর্থিক জালিয়াতির দায়ে এফটিএক্স প্রতিষ্ঠাতার ২৫ বছরের জেল
বিচারিক বিষয়ে নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করা হবে না: সিজেপি
কুয়েতে কুরআনে হাফেজদের সম্মাননা প্রদান
রাজার সঙ্গে ভুটান সফরে তথ্য প্রতিমন্ত্রী
সাকিবকে পেয়ে উজ্জীবিত বাংলাদেশ
মোংলায় বলগেট ডুবিতে নিখোঁজ ব্যাক্তির লাশ উদ্ধার
মোরেলগঞ্জে নদীতে ডুবে ৮ম শ্রেণীর ছাত্রের মৃত্যু
কালিয়াকৈরে ছিনতাইকারীদের রামদায়ের কুপে স্বর্ণ ব্যবসায়ী ও ছেলে আহত
হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ লাইলাতুল কদর জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ান
ছিনতাইয়ে অভিযুক্ত ৩ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
ভারত ও নিউজিল্যান্ডের সাবেক তিন অলরাউন্ডার যুক্তরাষ্ট্র দলে