ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে
২১ মে ২০২৩, ০৮:৩৮ পিএম | আপডেট: ২২ মে ২০২৩, ১২:০১ এএম

এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এটা কৃষক ও দেশের জন্য সুখবর। অন্যান্য বার আগাম বন্যা ও নানা কারণে বোরোর ক্ষতি হয়। কৃষক কাক্সিক্ষত উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হয়। এবার তা হয়নি। ধানের আবাদ-উৎপাদন ভালো হলে শুধু কৃষকের মুখে হাসি ফোটে না, বরং জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তাও মজবুতি অর্জন করে। এই সুখবরের পাশাপাশি দুঃখের খবর হলো, কৃষক ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। এরকম আশঙ্কা বোরো মওসুমের শুরুতেই অনেকে করেছিলেন। আমরাও এক সম্পাদকীয় নিবন্ধে কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছিলাম। অত্যন্ত পরিতাপের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, কৃষকের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি। নিলে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার কোনো কারণ ঘটতো না। ইনকিলাবে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, কৃষকের মুখে হাসি নেই। কারণ, তারা ধানের উপযুুক্ত মূল্য পাচ্ছে না। যা পাচ্ছে, তাতে উৎপাদন খরচ পর্যন্ত উঠছে না। সরকার ৩০ টাকা কেজি দরে ধান কেনার ঘোষণা দিলেও তা এখনো শুরু হয়নি। অন্যদিকে বাজারে ধানের দাম কম। বিভিন্ন প্রয়োজনে কৃষকরা এই কম দামেই ধান বেচতে বাধ্য হচ্ছে। ব্যবসায়ী ও মিলাররা কম দামে ধান কিনে মজুদ করছে। পরবর্র্তীতে তারা উচ্চ দামে ধান বিক্রী করে লাভবান হবে। বঞ্চিত থেকে যাবে কৃষক। এবার আগের তুলনায় ধান উৎপাদনে খরচ বেশি পড়েছে। বীজ, সার, কীটনাশক, সেচ, শ্রমিকমজুরি প্রভৃতি প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাড়তি খরচ গুণতে হয়েছে। খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রতিমণ ধান উৎপাদনে কৃষকের খরচ হয়েছে কমপক্ষে ১ হাজার ১৫০ টাকা। অথচ, একমণ মোটা ধান বিক্রী করে তারা পাচ্ছে মোটা ধান বড়জোর ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা এবং সরু ধান ১ হাজার ১০০ টাকা। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ধান উৎপাদন করার পর যদি উৎপাদন খরচ পর্যন্ত না ওঠে, তবে এর চেয়ে হতাশা ও বঞ্চনা আর কিছু হতে পারে না।
বরাবরই এটা হয়। কৃষক উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য পায় না। সে ধান, পাট, আখই হোক কিংবা হোক তরিতরকারি বা অন্য কিছু। পাট ও আখের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে তা খেতেই রেখে দেয়া অথবা পুড়িয়ে ফেলার দুঃখজনক ঘটনা আমাদের অজানা নেই। টমেটো, কপি, তরমুজ ইত্যাদি ফেলে দেয়া বা গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করার কথাও আমরা জানি। এও জানি, ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার কারণে কৃষক পাট, আখের উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। ফলে জুটমিলগুলো প্রয়োজনীয় পাট পায় না, চিনিকলগুলো পায় না আখ। এটাই স্বাভাবিক, কৃষক যে ফসলের উচিত-মূল্য পায় না, সে ফসল উৎপাদন থেকে সরে আসে। একারণেই পাট ও আখের উৎপাদন নামকাওয়াস্তে টিকে আছে। ধানের ক্ষেত্রেও এটাই হওয়ার কথা। কিন্তু প্রধান খাদ্যশস্য হওয়ার কারণে হয়নি বা হচ্ছে না। কৃষকরা তাদের পরিবার-পরিজনের খাদ্য সংস্থানের জন্যেই বাধ্য হয় ধান উৎপাদনে। তাছাড়া দেশের কোনো কোনো এলাকায় বা জমিতে ধান ছাড়া অন্য ফসল উৎপাদন করার সুযোগ নেই। যেমন, হাওর এলাকায় বছরের একমাত্র ফসল বোরো ধান উৎপাদন ছাড়া অন্য কোনো ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হয় না। ধানের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে কৃষক আবাদ ছেড়ে না দিলেও কমিয়ে দেয়। বিভিন্ন বছরের আবাদ-উৎপাদনের তুলনামূলক পরিসংখ্যানে তার প্রমাণ পাওয়া যায়। ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার ক্ষেত্রে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায় সবচেয়ে বেশি। ধানের প্রতি মওসুমে ধান-চাল সংগ্রহের কর্মসূচি থাকে। ধান বা চালের কেজি প্রতিমূল্য নির্ধারণসহ সংগ্রহের টার্গেট নির্ধারণ করা হয়। আগে ক্রয়কেন্দ্র খুলে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান-চাল কেনার ব্যবস্থা ছিল। সেটা উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন অনলাইনে আবেদন করে কিংবা ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে নাম লিপিবদ্ধ করে লটারির ভিত্তিতে কৃষক ধান বিক্রী করতে পারে। এ ধরনের জটিল প্রক্রিয়ায় সাধারণ কৃষক যেতে চায় না। এখন ব্যবসায়ী ও মিলারদের কাছ থেকেই মূলত সরকার ধান-চাল কেনে। এই ব্যবস্থার ফলে কৃষক নয়, ধান-চালের ব্যাপারে ব্যবসায়ী ও মিলাররাই সর্বোচ্চ প্রাধান্যে এসেছে। মধ্যসত্ত্বভোগী হিসেবে তাদের ভূমিকা অত্যন্ত ঘৃণ্য। তারা কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনে সরকার নির্ধারিত দামে সরকারের কাছে বিক্রী করে। পর্যবেক্ষকদের মতে, বর্তমান খাদ্যমন্ত্রী পারিবারিকভাবে খাদ্যশস্যের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হওয়ায় ব্যবসায়ী ও মিলারবান্ধব যতটা, কৃষকবান্ধব ততটা নন। একারণে কৃষকরা সহজে তাদের ধান সরকারনির্ধারিত দামে বিক্রী করতে পারে, এমন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বোরো ধান কাটা-মাড়াই শেষ প্রায়। অথচ, এখনো ধান কেনা শুরুই হয়নি। কৃষকের যখন ধান বেচার সময় তখন কেনা হচ্ছে না। যখন কেনা শুরু হবে, তখন অনেক কৃষকেরই আর বেচার মতো ধান ঘরে থাকবে না। বলা যায়, অনেকটা পরিকল্পিতভাবেই কৃষকদের ঠকানো হচ্ছে। এর দায় খাদ্যমন্ত্রীসহ খাদ্য মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট বিভাগ এড়িয়ে যেতে পারে না।
বোরোর ন্যায্যমূল্য না পাওয়া যে-কোনো বিচারে উদ্বেগজনক। হতাশ ও বঞ্চিত কৃষক ধানের আবাদ কমিয়ে দিলে আগামীতে চালের মূল্য ও খাদ্য নিরাপত্তার ওপর তার অনিবার্য বিরূপ প্রভাব পড়বে। এখনই চালের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। মোটা চাল ৫৫-৬০ টাকা দিয়ে কেনার সামর্থ্য কতজনের আছে? প্রয়োজনের তুলনায় মানুষ চাল কম কিনছে, ভাত কম খাচ্ছে। খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সরকার যেসব ব্যবস্থা নিয়েছে তা কাজে আসছে না। চালের দাম বাড়ছে বৈ কমছে না। ওদিকে আন্তর্জাতিক খাদ্য পরিস্থিতিও শোচনীয়। নানা কারণে খাদ্যশস্যের উৎপাদন কম হয়েছে। খাদ্যবাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এমতাবস্থায় আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যমূল্য ক্রমবর্ধমান। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ইতোমধ্যেই দুর্ভিক্ষাবস্থা দেখা দিয়েছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থা বিশ্বের খাদ্য পরিস্থিতির আরো অবনতির আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। এহেন প্রেক্ষাপটে আমাদের খাদ্যশস্যের উৎপাদন বাড়াতে হবে, খাদ্যের একটা নিরাপদ মজুদ সব সময় বজায় রাখার ব্যবস্থা নিতে হবে। উৎপাদনের ব্যাপারে কৃষি মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব ও উদ্যোগ নিতে হবে। আর খাদ্য মন্ত্রণালয়কে খাদ্যশস্য সংগ্রহ ও মজুদ নিশ্চিত করতে হবে। কৃষকদের জন্য উৎপাদিত ধান ও অন্যান্য খাদ্যশস্যের মূল্য এমনভাবে বির্ধারণ ও তার প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তারা সন্তুষ্ট ও উৎসাহিত হয়। আমরা আশা করবো, সহজে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং অবিলম্বে কেনার কার্যক্রম জোরদার করা হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

বিদায়ী ম্যাচ গোলে রাঙালেন বেনজেমা,গোলরক্ষক বীরত্বে হার এড়াল রিয়াল

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট রিজিওনাল কনফারেন্স (পিএমআরসি) অনুষ্ঠিত

এডিস মশা কামড় দেয়ার সময় চিনবেনা কে মেয়র-কাউন্সিলর ইমাম-খতিব: ডিএনসিসি মেয়র

প্রাচীন ধর্ম সনাতকে শুধু শ্রদ্ধা নয় এ সম্পর্কে জানতে হবে, ইসকনের অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপমন্ত্রী

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য তরুণ শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষামন্ত্রীর আহ্বান

সাংহাই উৎসবে লড়বে যেসব ইরানি ছবি

এলডিসি-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মেধাস্বত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ : শাহরিয়ার

১০-১৫ দিনের মধ্যে বর্তমান বিদ্যুৎ ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা চলছে : নসরুল

গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান পদে আজমত উল্লা খান

আগামীকাল থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি বা আইপি দেয়া হবে

বাজেট সম্পর্কে আলোচনায় ডিব্রিফিং সেশনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে : স্পিকার

প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষের ভূমিকা অনস্বীকার্য : প্রধানমন্ত্রী

দুর্বিষহ জনজীবন

পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে : প্রধানমন্ত্রী

গত অর্থবছরে বিমান লাভ করেছে ৪৩৬ কোটি টাকা : বিমান প্রতিমন্ত্রী

মির্জা ফখরুলের সঙ্গে ইওয়ামা কিমিনোরি ও জিএম কাদেরের সঙ্গে পিটার হাসের বৈঠক

নালিতাবাড়ীতে বিদ্যুত স্পৃষ্ট হয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু

প্রধানমন্ত্রী যখন মনে করবেন নির্বাচনকালীন ছোট সরকার গঠন করবেন : আইনমন্ত্রী

লোডশেডিং আরো দুই সপ্তাহ

সাগরে ভারতীয় জেলেদের মাছ ধরা ঠেকাবে