ঢাকা   শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫ | ৩০ কার্তিক ১৪৩২

সরকারের প্রতি আস্থা রেখে ব্যবসায়ীদের ধৈর্য ধারণ করতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

২৯ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ২৯ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৫ এএম

রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও স্বাভাবিক কর্মপরিবেশ ফিরিয়ে আনা অর্šÍবর্তীকালীন সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। দেশের ব্যবসাীয়রা ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ ও নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর এমন বাস্তবতা ও পরিনতি দেখা দিয়েছে তা নয়। আওয়ামী স্বৈরাচারী শাসনে গত ১৬ বছরে দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেছে। দেশ থেকে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। জাল-জালিয়াতি ও বেপরোয়া লুন্ঠনের কবলে ব্যাংক-বীমা সেক্টর, পুঁজিবাজার ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমুহ দেউলিয়াত্বের মুখোমুখী দাঁড়িয়েছে। গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সুশাসনের প্রশ্নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, দেশি-বিদেশি সংগঠন ও বিভিন্ন দেশের তরফে সময়ে সময়ে সর্তকতা ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও দেশের ব্যবসায়ী সংগঠন ও শীর্ষ ব্যবসায়ীরা পতিত স্বৈরাচারি সরকারের এসব কর্মকান্ডের কোনো প্রতিবাদ না করে সব সময় সমর্থন ও সহযোগীর ভূমিকা পালন করেছেন। এমনকি জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহে ঢাকাসহ সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদের উপর পুলিশের নির্বিচার গুলিবর্ষণে আবু সাঈদসহ অনেকে শহীদ হওয়ার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার সময়ও ব্যবসায়ী নেতারা গণভবনে গিয়ে শেখ হাসিনার প্রতি তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন ব্যক্ত করে ছাত্র-জনতাকে কঠোর হস্তে দমনের পরামর্শ দিয়েছিলেন। স্বৈরাচারের দোসর হিসেবে পরিচিত ব্যবসায়ী নেতারা সরকারের দলীয় কর্র্মীর ভূমিকা পালনের বদলে রাজনৈতিক সমঝোতা, দুর্নীতি-অস্বচ্ছতার বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক সুশাসন ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের পক্ষে অবস্থান নিলে হয়তো দেশে আজকের পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।
রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতার কারনে স্বাধীনতাত্তোর ৫৩ বছরেও বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তির উপর দাঁড়াতে পারেনি। বিশেষত ১৬ বছরে দেশ যে অনিয়ম-দুর্নীতি, লুটপাট ও পাহাড়সম সমস্যা-বিশৃঙ্খলার সম্মুখীন হয়েছে তা রাতারাতি দূর করা সম্ভব নয়। সব ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনতে সকলকেই ধৈর্য ও সহনশীলতার সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। সীমাহীন অপরাধ-অপকর্ম করে পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে ১৬ বছরে গড়ে ওঠা মাফিয়াতন্ত্রের সহযোগিরা পালিয়ে বিদেশে কিংবা আত্মগোপনে চলে গেলেও পর্দার অন্তরালে তাদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই। দেশকে আরো অস্থিতিশীল, অশান্ত ও অকার্যকর করে তুলে ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবকে ব্যর্থ করার নানামুখী ষড়যন্ত্র দেখা যাচ্ছে। পতিত স্বৈরাচারের লেসপেন্সার ও বশংবদ ব্যবসায়ী সম্প্রদায় যখন ২০ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে সাক্ষাৎ করে তার প্রতি অভিনন্দন ও সমর্থন ব্যক্ত করেন, দেশের মানুষ তা ইতিবাচক হিসেবেই গ্রহণ করেছে। কিন্তু এর দুদিন পরেই ২২ আগস্ট সেনাপ্রধানের সাথে সাক্ষাৎ করে ব্যবসার নিরাপত্তায় সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চাওয়ার বিষয়টিকে অনেকেই সন্দেহের চোখে দেখেছেন। জাতির এই ক্রান্তিকালে এমনিতেই সেনাবাহিনী প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে চলেছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশের অসহযোগিতা ও বিজিবি’র নিস্ক্রিয় ভূমিকার মধ্যে সেনাবাহিনী ছাত্র-জনতার কাতারে এসে ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে তাদের হারানো ঐতিহ্য ও আস্থা ফিরিয়ে আনতে ইতিবাচক ভূমিকা রেখে চলেছে। ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, সিলেট-চট্টগ্রামসহ দেশের বন্যা উপদ্রুত এলাকাগুলোতে উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতায় সেনাবাহিনীর ভূমিকাকে দুর্যোগ মুহূর্তে সাধারণ মানুষের সাথে সেনাবাহিনীর নিবিড় এক মেলবন্ধন হিসেবে দেখা হচ্ছে। শত শত শহীদের রক্তের বিনিময়ে ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবে বিজয়ের সন্ধিক্ষণ থেকে পরবর্তী চলমান সময় পর্যন্ত সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রতি দেশের ছাত্র-জনতা ও সাধারণ মানুষের দৃষ্টি নিবদ্ধ রয়েছে। পক্ষান্তরে পতিত স্বৈরাচারের দোসর ব্যবসায়ী নেতারা যখন নিরাপত্তার জন্য আলাদাভাবে সেনাপ্রধানের সাথে দেনদরবারে লিপ্ত হন, দেশের মানুষ তা সন্দেহের চোখে দেখবে, এটাই স্বাভাবিক।

অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.মুহাম্মদ ইউনূসের প্রজ্ঞা, মেধা, আন্তর্জাতিক সুনাম, মর্যাদা ও গ্রহণযোগ্যতা দেশের ক্রান্তিকাল উত্তরণে অনেক বড় ভূমিকা পালন করবে। জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়, চীন-জাপান, অস্ট্রেলিয়াসহ উন্নয়ন সহযোগীরা ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রতি দেশের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার পক্ষে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। ছাত্র-জনতার উপর গণহত্যার তদন্তে এরই মধ্যে জাতিসংঘের তদন্ত টীম মাঠে নেমেছে। পিলখানা গণহত্যা, আয়নাঘরসহ প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিতে সেনাবাহিনী ও সেনা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। গত ১৭ বছরে দেশের সেনাবাহিনীসহ পুলিশ,বিজিবি, আনসারের মত সংস্থাগুলোর প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। ৫ আগস্টের গণবিপ্লবের পর ইতিমধ্যে ২৪দিন অতিক্রান্ত হলেও সেনাবাহিনী ছাড়া অন্য সংস্থাগুলো জনগণের আস্থা অর্জনের কোনো চেষ্টাই করেনি। সেনাবাহিনী এ ক্ষেত্রে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। আগেই বলেছি, দেড় দশকে জঞ্জাল রাতারাতি সাফ করা সম্ভব নয়। সকলকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। একেকটি সংস্থার কর্মীরা হঠাৎ করেই নানা ধরণের দাবি-দাওয়া নিয়ে রাজপথে নেমে এসে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ঠেলে দেয়ার অপচেষ্টা দেখা গেছে। ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ও অর্থ উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎ করে বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে ২ হাজার কোটি টাকা ঋণের প্রস্তাব করেছেন। অথচ বন্যা উপদ্রুত কোটি মানুষের জন্য তাদের কোনো সম্মিলিত উদ্যোগ বা প্রতিশ্রুতি দেখা যাচ্ছে না। দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের দীর্ঘ সংগ্রাম এবং ছাত্র-জনতার রক্ত-¯œাত বিপ্লবের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ এক নতুন অগ্রযাত্রার সূচনা করেছে। এই বিপ্লবী অগ্রযাত্রায় দেশের বৃহত্তর ব্যবসায়ী সমাজকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। স্বৈরাচারী সরকারের সুবিধাভোগীদের ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। জুডিসিয়াল কিলিং, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুন্ঠনের বিচার নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনীকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। বিশেষত পিলখানা হত্যাকান্ড, শাপলা চত্বর হত্যাকান্ড, অসংখ্য গুম-খুন, বিচারবর্হিভুত হত্যাকান্ড, আয়নাঘরের নির্যাতন, রানাপ্লাজা ট্রাজেডির মত ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে। দেশের মানুষ এখন অনেক ঐক্যবদ্ধ। সেনাবাহিনী ও ছাত্র-জনতার ঐক্য যে কোনো ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে দেশকে কাঙ্খিত লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ঢাকা কলেজের ফুটপাত
হিসাববিজ্ঞান দিবস : দেশ ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল
ব্যাটারিচালিত রিকশার চলাচল বন্ধ করতে হবে
খুনি-ফ্যাসিস্টের অগ্নিসন্ত্রাস রুখতে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই
ক্যাম্পাসে মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রয়োজন
আরও

আরও পড়ুন

দুই শেয়ারবাজারেই বড় পতন

দুই শেয়ারবাজারেই বড় পতন

দিল্লির লকডাউন ঢাকায় দাফন হয়েছে : জাগপা

দিল্লির লকডাউন ঢাকায় দাফন হয়েছে : জাগপা

ইমাম প্রশিক্ষণে সউদী সরকারের সহায়তার আশ্বাস

ইমাম প্রশিক্ষণে সউদী সরকারের সহায়তার আশ্বাস

চোর সন্দেহে কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা, নারী গ্রেফতার

চোর সন্দেহে কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা, নারী গ্রেফতার

পঞ্চদশ সংশোধনীর রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি

পঞ্চদশ সংশোধনীর রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি

কিছু রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ডে পতিত ফ্যাসিস্টরা উৎসাহিত হচ্ছে : রিজভী

কিছু রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ডে পতিত ফ্যাসিস্টরা উৎসাহিত হচ্ছে : রিজভী

রাজনৈতিক দলগুলোকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বার্তা

রাজনৈতিক দলগুলোকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বার্তা

বিআরটিসি বাসে পাইলটিং ভিত্তিতে ই-টিকেট সেবা কার্যক্রম শুরু

বিআরটিসি বাসে পাইলটিং ভিত্তিতে ই-টিকেট সেবা কার্যক্রম শুরু

ডিএমপি কমিশনারের ভুয়া ভিডিও ছড়িয়ে বিভ্রান্তি

ডিএমপি কমিশনারের ভুয়া ভিডিও ছড়িয়ে বিভ্রান্তি

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে সংকট উত্তরণের প্রচেষ্টা থাকলেও সাংবিধানিক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে : সাইফুল হক

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে সংকট উত্তরণের প্রচেষ্টা থাকলেও সাংবিধানিক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে : সাইফুল হক

মতভিন্নতা সত্ত্বেও প্রধান উপদেষ্টার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালো এবি পার্টি

মতভিন্নতা সত্ত্বেও প্রধান উপদেষ্টার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালো এবি পার্টি

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে দেশবাসী উজ্জীবিত : লেবার পার্টি

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে দেশবাসী উজ্জীবিত : লেবার পার্টি

দেশকে দ্রুতবেগে বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছি : ফরহাদ মজহার

দেশকে দ্রুতবেগে বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছি : ফরহাদ মজহার

দিল্লি-কাবুলের ষড়যন্ত্রেই বেড়েছে সন্ত্রাসী হামলা: শেহবাজ শরীফ

দিল্লি-কাবুলের ষড়যন্ত্রেই বেড়েছে সন্ত্রাসী হামলা: শেহবাজ শরীফ

জীবন্ত ফার্ন গাছে বিরল খনিজের সন্ধান

জীবন্ত ফার্ন গাছে বিরল খনিজের সন্ধান

চীনের গুপ্তচর হিসেবে অভিযুক্ত লিন্ডা সানের বিচার শুরু

চীনের গুপ্তচর হিসেবে অভিযুক্ত লিন্ডা সানের বিচার শুরু

তীব্র পানি সংটে ইরানের নাগরিক জীবন ঝুঁকিতে

তীব্র পানি সংটে ইরানের নাগরিক জীবন ঝুঁকিতে

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে চীনকে পাশে পেল ভেনেজুয়েলা

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে চীনকে পাশে পেল ভেনেজুয়েলা

মালয়েশিয়াগামী শ্রমিকদের ৩১৪ কোটি টাকা আত্মসাতে ৫ এজেন্সির বিরুদ্ধে মামলা

মালয়েশিয়াগামী শ্রমিকদের ৩১৪ কোটি টাকা আত্মসাতে ৫ এজেন্সির বিরুদ্ধে মামলা

গণতন্ত্র ফেরাতে নির্বাচনই একমাত্র বিকল্প : মির্জা ফখরুল

গণতন্ত্র ফেরাতে নির্বাচনই একমাত্র বিকল্প : মির্জা ফখরুল