আনুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন : পতিত স্বৈরাচারের পুনর্বাসনের গভীর ষড়যন্ত্র
১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১০ এএম | আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১০ এএম
ছাত্র-জনতার বিপ্লবের চূড়ান্ত লক্ষ্য দাঁড়িয়েছিল, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান। শেখ হাসিনাকে বিতাড়িত করে বিপুল সমর্থন দিয়ে নোবেল লরিয়েট ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব দিয়েছে তারা। শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। ভারতও তাকে যক্ষের ধনের মতো আগলে রেখেছে। সেখানে বসে শেখ হাসিনা ও তার প্রভু মোদি যৌথভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে নিরন্তর ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত করে যাচ্ছেন। সরকারকে ব্যর্থ ও অকার্যকর করতে তারা হেন কোনো অপচেষ্টা নেই, যা করছেন না। অন্তর্বর্তী সরকার দৃঢ়তার সাথে তাদের সকল ষড়যন্ত্র সফলভাবে মোকাবেলা করেছে এবং করছে। এই ষড়যন্ত্র যে, গণবিপ্লবকে ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য, তা সকলেই জানে। বলার অপেক্ষা রাখে না, সাড়ে ১৫ বছরে হাসিনা পুলিশ, জনপ্রশাসনসহ সকল ক্ষেত্রে তার যে বিপুল সংখ্যক অনুগত রেখে গেছেন, তারা এ ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে সহায়তা করছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে, ভারত ও হাসিনার প্রতি সহমর্মী একশ্রেণীর সুশীল ব্যক্তি এবং মিডিয়া। তারা এখন চক্রান্তের ‘সফট স্ট্র্যাটেজি’ বা নরম কৌশল নিয়ে মাঠে নেমেছে। উল্লেখ করা প্রয়োজন, একজন মানুষকে বিপথে নিতে শয়তান তিনটি কৌশল অবলম্বন করে। এগুলো হচ্ছে, সরাসরি পন্থা, মধ্যপন্থা ও ইতিবাচক পন্থা। প্রথম পন্থায় সে সরাসরি আক্রমণ করে বিপথে নিয়ে যায়। তবে মানুষ তার বোধ দিয়ে বুঝতে পারলে শয়তানের এ কৌশল ব্যর্থ হয়। শয়তান তখন মধ্যপন্থা অবলম্বন করে। সে নানা পরামর্শ দিয়ে ও বুঝিয়ে মানুষকে বিপথে নিয়ে যায়। তাতেও কাজ না হলে তৃতীয় পন্থা অবলম্বন করে। মানুষের মনে যদি কোনো মন্দ কাজের চিন্তা আসে, তখন শয়তান তার সাথে তাল মিলিয়ে বলে, যা চিন্তা করছ, ঠিকই আছে, কাজটি খারাপ হবে না। এভাবে সে ইতিবাচক পন্থায় মানুষকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। অন্তর্বর্তী সরকার তথা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা ও মোদি শয়তানের এই তিন পন্থা অবলম্বন করে চলেছেন। প্রথমে তারা নানা দাবিতে হিন্দুদের দিয়ে আন্দোলন, ১৫ আগস্ট ঢাকায় ১০ লাখ লোক জড়ো করে অচল করে দেয়া, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি ও পুলিশ সদস্যদের দিয়ে আন্দোলন, আনসার বিদ্রোহ ইত্যাদি সরাসরি কৌশল অবলম্বন করেন। এসবে কাজ না হওয়ায় মধ্যপন্থা হিসেবে তাদের অনুগত পুলিশ ও প্রশাসনে থাকা দোসরদের দিয়ে কাজের গতি কমিয়ে দেয়ার কৌশল নেয়। এসবেও কাজ না হওয়ায় এখন তারা আগামী নির্বাচন আনুপাতিক পদ্ধতিতে করার কৌশল তথা সফট স্ট্র্যাটেজি নিয়ে তাদের অনুগত একশ্রেণীর সুশীল ব্যক্তিকে দিয়ে সভা-সেমিনার করাচ্ছে এবং হাসিনামিডিয়া তা ফলাও করে প্রচার করছে। বিষয়টি আপাতদৃষ্টিতে নির্দোষ ও ইতিবাচক মনে হলেও এর পেছনে হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের ভয়ংকর চক্রান্ত রয়েছে।
দুই.
আগামী নির্বাচন কিভাবে হবে, তার ফর্মুলা নিয়ে সুশীলদের মাঠে নামা যে হাসিনা ও মোদির নতুন কৌশল তা রাজনৈতিক বিশ্লেষকরদের কাছে ধরা পড়ে গেছে। তারা স্পষ্ট করেই বলেছেন, দেশ থেকে বিতাড়িত ইতিহাসের নিকৃষ্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তার দলকে পুনর্বাসনে এটি একটি নতুন চক্রান্ত। অন্যদিকে, আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে যাতে একটি স্থিতিশীল সরকার গঠিত হতে না পারে, এজন্য হাসিনা ও মোদি তার দোসর সুশীলদের দিয়ে আনুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচনের কথা জোরেসোরে বলার জন্য মাঠে নামিয়েছেন। কারণ, বাংলাদেশে বিদ্যমান নির্বাচন পদ্ধতিতে নির্বাচিত শক্তিশালী ও স্থিতিশীল সরকার গঠিত হলে হাসিনার পুনর্বাসন হবে না, ভারতও আধিপত্য বিস্তার করতে পারবে না। এ নির্বাচনের মাধ্যমে যেসব দল যেমন, বামপন্থীসহ কিছু ইসলামি দল, যারা ইউনিয়ন পর্যায়ের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও জামানাত বাজেয়াপ্ত হবে, তাদের প্রতিনিধিও সংসদে যাবে। অন্যদিকে, বিএনপির মতো বড় দল যে আগামী নির্বাচনে অনিবার্যভাবেই বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করতে পারে, সে দলগতভাবে সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা না-ও পেতে পারে। বিএনপিকে তখন সরকার গঠন করতে হলে ঐসব ছোট দলের সাথে ঐকমত্যের ভিত্তিতে জোট করতে হবে। এতে তার সাথে জোটবদ্ধ দলগুলোকে ভারত ও হাসিনা নানাভাবে এদিক-সেদিক করে বিএনপিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারবে। কারণ, একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকালে বিএনপি বিপাকে পড়বে এবং সরকারের কোনো স্থিতিশীলতা থাকবে না। এর জ্বলন্ত উদাহরণ হচ্ছে, নেপাল। নেপালে ২০০৬ সালে আনুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচনের সূচনা হয় এবং পরবর্তীতে এ পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে ৯ বছরে ৮ বার প্রধানমন্ত্রী বদল হয়। অর্থাৎ আনুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচনের ফলে নেপালে কোনো স্থিতিশীল সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এতে দেশ পরিচালনায় নেপাল সরকারকে স্থির সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হচ্ছে। কারণ, সরকারই যদি স্থিতিশীল না থাকে এবং তাকে টিকে থাকা নিয়ে সংগ্রাম ও ব্যস্ত থাকতে হয়, তাহলে সে দেশ পরিচালনা করবে কখন? বাংলাদেশে যাতে আগামী নির্বাচনে নেপালের মতোই একটি অস্থিতিশীল সরকার গঠিত হয়, এজন্য হাসিনা ও মোদির প্রেসক্রিপশনে তাদের দোসর সুশীলরা আনুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন নিয়ে নতুন ষড়যন্ত্রে নেমেছে। এ পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে নিশ্চিতভাবেই শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ পুনর্বাসিত হবে। কারণ, বরাবরই আওয়ামী লীগের কম-বেশি ২৫-৩০ শতাংশ ভোট থাকে। বর্তমান পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে সে ৩০-৪০টি বা তারও কম আসন পাবে। যেমনটি ঘটেছিল এরশাদের পতনের পর জাতীয় পার্টির ক্ষেত্রে। অন্যদিকে, আনুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন হলে এবং আওয়ামী লীগের ভোটের হার সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ ধরলে সে আসন পাবে ৯০টি। জাতীয় সংসদে এই আসন থাকার অর্থই হচ্ছে, সে শক্তিশালী বিরোধীদল। অন্যদিকে, বিএনপির যদি এখন গড়ে ৪০ বা ৫০ শতাংশ ভোট থাকে, তাহলে আনুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন হলে সে পাবে ১২০ থেকে ১৫০টি আসন। অথচ বর্তমান পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে বিএনপি দুই-তৃতীয়াংশ আসনে বিজয় লাভ করবে এবং শক্তিশালী ও স্থিতিশীল সরকার গঠন করবে। ফলে, কেন মোদি ও হাসিনা আনুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচনের ষড়যন্ত্রে নেমেছে, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। বিএনপি যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে এবং ক্ষমতায় এলেও যাতে স্থিতিশীল ও শক্তিশালী সরকার গঠন করতে না পারে, এজন্য মোদি ও হাসিনা নতুন করে ষড়যন্ত্র করা শুরু করেছেন। তাদের অনুগত কিছু সুশীলকে দিয়ে সভা-সেমিনার করিয়ে এবং তাদের দোসর মিডিয়া দিয়ে তা প্রচার করে জনগণকে বোঝানোর কাজে নেমেছেন। পরিতাপের বিষয়, তাদের সাথে নাচানাচি করা শুরু করে দিয়েছে, জামায়েতে ইসলামী, ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর জাতীয় পার্টি, বামপন্থী এবং ইসলামপন্থী কিছু দল। তারা যে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে পুনর্বাসনের মাধ্যমে একসাথে ক্ষমতার হালুয়া-রুটির ভাগ পাওয়ার জন্য উদগ্রীব, তা বোঝা যাচ্ছে। জামায়েতে ইসলামী বুঝে হোক, না বুঝে হোক, মোদি ও হাসিনার ফাঁদে পা দিয়েছে। আর জাতীয় পার্টিতো ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে সহযোগিতা করে সাড়ে ১৫ বছরের স্বৈরশাসনকে টিকিয়ে রেখেছে। সে তো চাইবেই ফ্যাসিস্ট হাসিনা পুনর্বাসিত হোক। তাছাড়া, এরশাদ বেঁচে থাকতেই প্রাদেশিক সরকারের দাবি করেছিল। এর অর্থ হচ্ছে, প্রাদেশিক সরকার হলে সে রংপুরের মুখ্যমন্ত্রী হতে পারত। কারণ, সেখানেই তার দল বেশি আসন পায়। এটাও ভারতের ষড়যন্ত্র ছিল এবং এরশাদ তা বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিল। প্রাদেশিক সরকার হলে বাংলাদেশকে ছিন্নভিন্ন করে দিতে ভারতের একমুহূর্তও সময় লাগত না।
তিন.
আনুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন করার ক্ষেত্রে বিএনপি ছাড়া অন্যদলগুলোর একমত হওয়া নিয়ে তাদের যুক্তি হচ্ছে, সকলের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা। অথচ গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হচ্ছে, যে ব্যক্তি বা দল সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পাবে, সে প্রতিনিধিত্ব করবে। ম্যাজরিটি মাস্ট বি গ্রান্টেড বা সংখ্যাগরিষ্ঠতাই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট নিয়ে নির্বাচিত হবে, সে দলকে অন্য ভোটাররা ভোট না দিলেও সে তাদের প্রতিনিধিত্ব করে। সে আর তখন শুধু নিজের ভোটারের থাকে না। গণতন্ত্রের সৌন্দর্য এখানেই। এ সৌন্দর্যই ধারন করে আছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, নরওয়েসহ গণতান্ত্রিক দেশগুলো। আমাদের দেশও গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নির্বাচনকে অনুসরণ করে। দেশের মানুষও তা মেনে নিয়েছে। আগামী ৪ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে, তা এই সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটারের ভোট দান পদ্ধতিতেই হবে। যুক্তরাজ্যেও একইভাবে নির্বাচন হয়। উল্লেখ করা প্রয়োজন, আমাদের নির্বাচন পদ্ধতিকে সবচেয়ে বেশি কলঙ্কিত করেছে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ও ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা। তারা পাতানো ও ভুয়া নির্বাচন করে পদ্ধতিটিকে কলুষিত করেছে। বিষয়টি হচ্ছে, আমাদের বিদ্যমান নির্বাচন পদ্ধতির কোনো দোষ নেই। দোষ হচ্ছে তাদের, যারা যেনতেনভাবে এবং জোর করে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছে। এরশাদ ও হাসিনা এই কাজটিই করেছে। অথচ আমরা দেখেছি, বিদ্যমান পদ্ধতিতেই ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যে তিনটি নির্বাচন হয়েছে, সেগুলো ছিল, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য। দেশের মানুষও ভোট দিতে পেরে খুশি ছিল। যারা বেশি ভোট পেয়েছে, তারা সরকার গঠন করেছে। এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন ছিল না। এটাই আমাদের দেশের ভোটের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। এখন এ পদ্ধতি বদলানোর জন্য যে আনুপাতিক পদ্ধতিতে ভোটের কথা বলা হচ্ছে, তাতে যে ফ্যাসিস্ট হাসিনা পুনর্বাসিত হবে, তাতে সন্দেহ নেই। আর যেসব রাজনৈতিক দল, যাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট নিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই, তারা এ পদ্ধতি চাচ্ছে। তারা ক্ষমতার লোভে বা ক্ষমতার অংশীদার হওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। এতে যদি ছাত্র-জনতার বিপ্লবে গণহত্যাকারি ফ্যাসিস্ট হাসিনা পুনর্বাসিত হয়, তাতেও যেন তাদের আপত্তি নেই। তারা চাচ্ছে, দেশে কোনো স্থিতিশীল ও শক্তিশালী সরকার না আসুক। যেসব সুশীল ব্যক্তি আনুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন করার ভারতীয় এজেন্ডা নিয়ে নেমেছে, তারা ইনিয়ে-বিনিয়ে ইউরোপ ও অন্যান্য দেশের উদাহরণ দিয়ে তাদের কুমতলব প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে। তারা এ কথা বলছে না, ইউরোপের গণতন্ত্র শত বছরের পুরনো এবং প্রতিষ্ঠিত। তারা যেকোনো এক্সপেরিমেন্ট চালাতে পারে। এতে তাদের কোনো সমস্যা নেই। তারা ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের স্পিরিটকে ভুলে যেতে চাইছে। অন্যদিকে, আমাদের দেশে বিদ্যমান নির্বাচন পদ্ধতি পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়নি এবং যা কিভাবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়, সেদিকে তাদের মনোযোগ নেই। তারা বুঝতে পারছে না, নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে নতুন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গেলে পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়াটিই ভেস্তে যাবে এবং দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির মধ্যে পড়বে। অথচ তাদের উচিৎ, আমাদের ঐতিহ্যের নির্বাচন পদ্ধতি এবং যা মীমাংসিত ও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য তার মধ্যে থেকেই তাদের জনভিত্তি তৈরি করা। বিদ্যমান ব্যবস্থাকে কীভাবে সংস্কার করে নিরপেক্ষ নির্বাচন করা যায়, তা নিয়ে তাদের জোরালো ভূমিকা থাকা উচিত। আমরা দেখছি, ক্ষমতায় যওয়ার মতো জনভিত্তি না থাকা রাজনৈতিক দলগুলো তা না করে হাসিনা ও মোদির ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দিয়েছে। হাসিনা যে দেশবিরোধী এবং ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে না, এ বিষয়টি তারা আমলে নিচ্ছে না।
চার.
প্রশ্ন হচ্ছে, আগামী নির্বাচন কিভাবে হবে, তার ফর্মুলা নিয়ে যেসব সুশীল হাজির হয়েছে, গণবিপ্লবে তাদের ভূমিকা কি ছিল? ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নির্দেশে যখন গণহত্যা চলছিল, তখন তার প্রতিবাদে তারা কি রাস্তায় নেমেছিল? ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে কি কোনো বক্তব্য-বিবৃতি দিয়েছিল? দেয়নি এবং রাস্তায় তাদেরকে দেখাও যায়নি। গণবিপ্লবে তাদের কোনো ভূমিকাই ছিল না। গণবিপ্লবের পক্ষে কথা না বলে, চুপ থেকে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকেই সমর্থন দিয়েছিল। তারা গর্তে লুকিয়েছিল। এখন গর্ত থেকে বের হয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচন কীভাবে হবে, সভা-সেমিনার করে জাতিকে নসিহত করতে শুরু করেছে। অথচ এই তাদেরকেই হাসিনার নিকৃষ্ট স্বৈরশাসনের সাড়ে ১৫ বছরে টুঁ শব্দ করতে দেখা যায়নি। হাসিনার ফ্যাসিস্ট শাসন নিয়ে কোনো সভা-সেমিনারে কথা বলতে শোনা যায়নি। এখনো হাসিনার ফ্যাসিজম নিয়ে কোনো সভা-সেমিনার করতে দেখা যাচ্ছে না। বরং উল্টো ভারতের এজেন্ডা আনুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতির সবক দিয়ে হাসিনাকে আবার বাংলাদেশে পুনর্বাসনের কাজে নেমে পড়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, যেসব সুশীল আনুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচনের কথা বলছে, তাদের নিজেদেরই কোনো জনভিত্তি নেই। সুশীল হিসেবে তাদের সর্বজনগ্রহণযোগ্যতাও নেই। ফলে তারা কি করে আনুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচনের কথা বলে? অন্যদিকে, যেসব রাজনৈতিক দল, যাদের ক্ষমতায় যাওয়ার মতো জনসমর্থন নেই তাদের উচিৎ হবে রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিদ্যমান নির্বাচন ব্যবস্থায় কীভাবে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করা যায়, সে ব্যাপারে কাজ করা। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও মোদির পাতা ফাঁদে পা না দেয়া। যদি তারা জেনেবুঝে এই ফাঁদে পা দেয়, তাহলে তা গণবিপ্লবে হাজারো শহীদ ও বিশ হাজারের বেশি পঙ্গু-অন্ধ হয়ে যাওয়া ছাত্র-জনতা এবং জেনারেশন জি’র সাথে বেইমানি করা হবে। তারা নতুন স্বাধীনতার শত্রু হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনে হামলা: যা বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত
প্রাক বড়দিন পালন করলে গারো পাহাড় সীমান্তে খ্রীষ্টানরা
আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে জাতির জন্য কঠিন নির্বাচন
ভারত বিরোধী স্লোগানে উত্তাল খুলনা
রেকর্ডের মালা গেঁথে বাংলাদেশের সিরিজ জয়
মমতা ব্যানার্জির জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর প্রস্তাবটি বাস্তবতা বিবর্জিত গালগল্প
গত সাড়ে ১৫ বছর এ জাতি জিম্মি দশায় ছিল- জামায়াত আমির ডা.শফিকুর রহমান
বেনাপোলের বিএনপির সহ-সভাপতি দ্বীন ইসলামকে হত্যা, সাবেক তিন পুলিশ কর্মকর্তাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা
গ্যাস লাইন সংযোগ সহ ১০ দফা দাবিতে সিলেটের জৈন্তাপুরে সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের সাথে মতবিনিময়
৬ দফার ভিত্তিতে মাসব্যাপী কর্মসূচি জাতীয় নাগরিক কমিটির
সব ভারতীয় টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধে হাইকোর্টে রিট
উইন্ডিজ শিবিরে নাহিদের জোড়া আঘাত
আন্তবিভাগ ফুটবল প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন জবির ফিন্যান্স বিভাগ
আগরতলা হাইকমিশনে ভাঙচুরের ঘটনায় ক্ষুব্ধ বাংলাদেশ
বায়তুল মোকাররমের খতিবসহ ১২ আলেমের বিরুদ্ধে সাদপন্থীদের মামলা
নেতাদের ভুল শুধরে নিয়ে জনগণের পাশে থাকার আহবান তারেক রহমানের
‘বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুন্ন করতে জাতিসংঘে সেনাবাহিনীর আহবান করেছে মমতা ব্যানার্জি’
‘উগ্রহিন্দুদের আট দাবিতে বাংলাদেশকে অখণ্ড ভারতের অংশ বানানোর পরিকল্পনা চলছে’
ফুটবল মাঠে সংঘর্ষ, ৫৬ জন নিহত