শহীদদের স্বজন ও আহতরা রাস্তায় কেন?
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০২ এএম

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। অভ্যুত্থানে এক হাজারের বেশি মানুষ শাহাদত বরণ করেছেন। আহত হয়েছেন ২০ হাজারের অধিক মানুষ। আহতদের অনেকে চোখ হারিয়েছেন, পা হারিয়েছেন বা অন্য কোনো অঙ্গ হারিয়েছেন। তারা এখন চিকিৎসাধীন। সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারমূলক দায়িত্ব হলো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন এবং আহতদের সুচিকিৎসা। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, সরকারের ক্ষমতাকাল প্রায় ৬ মাস অতিক্রান্ত হলেও শহীদ পরিবারগুলোর পুনর্বাসন ও আহতদের সুচিকিৎসার বন্দোবস্ত করা সম্ভবপর হয়নি। সরকার কথা দিয়েও কথা রাখতে পারেনি। এমনটা কীভাবে হতে পারে? শহীদদের রক্তের বিনিময়ে এবং আহতদের অঙ্গ বিসর্জনের ত্যাগে যে সরকার গঠিত, সেই সরকার এতটা নির্লিপ্ততা, এতটা অবহেলা কেমন করে প্রদর্শন করতে পারে? যখন শহীদ পরিবারগুলোর সদস্যদের সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের দাবির কথা জানাতে হয় এবং আহতদের হাসপাতাল থেকে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ প্রকাশ করতে হয়, তখন দুঃখ রাখার জায়গা থাকে না। গত শনিবার শহীদ পরিবারগুলোর সদস্যরা ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে তারা শহীদদের জাতীয় স্বীকৃতি, প্রতিটি শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন এবং হত্যায় জড়িতদের দ্রুত বিচার দাবি করেছেন। তাদের এই দাবি অত্যন্ত সংগত ও যৌক্তিক। সংবাদ সম্মেলনে এমন কথাও জানানো হয়েছে, এরূপ শহীদ পরিবারও রয়েছে, যার একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তিটি শহীদ হয়েছেন। গণতন্ত্র ও জাতীয় মুক্তির জন্য যারা শহীদ হয়েছেন তারা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি কিংবা তাদের পরিবারগুলো যথাযথ পুনর্বাসনের অধিকার কেন পাবে না? খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, শহীদ পরিবারগুলোর সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠক করার অনুরোধ জানিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন এবং অনশন ও রাজপথে কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন। ওদিকে সুচিকিৎসা, পুনর্বাসন ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে আহতদের একাংশ গত রোববার দিনভর আগারগাঁও শ্যামলীতে মিরপুর রোডে অবস্থান নিয়ে মধ্যরাতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। ওই সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ সেখানে যান এবং বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলাপ করে তাদের দাবি পূরণে আশ্বাস প্রদান করেন। অবশেষে তারা ফিরে যান।
আহতদের ওই অংশের বিক্ষোভ শুরু হয়, শনিবার সন্ধ্যায়। বিদেশে চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ছাড়াও তাদের অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে, আন্দোলনের/যোদ্ধাদের সরকারি গৃহায়ন, পরিচয়পত্র প্রদান, রেশন কার্ডের ব্যবস্থা করা, যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি চাকরি দেয়া ইত্যাদি। কার্যত তাদের দাবি দু’ভাগে বিভক্ত: চিকিৎসা ও পুনর্বাসন। বলাবাহুল্য, আহতদের সুচিকিৎসার অপরিহার্যতা প্রশ্নাতীত। যারা অঙ্গ হারিয়েছেন দ্রুত চিকিৎসা না হলে তাদের ভালো হওয়ার সম্ভাবনা কম। গত প্রায় ৬ মাসেও অনেকের প্রয়োজনীয় ও যথাযথ চিকিৎসা হয়নি। সরকারের তরফে বলা হয়েছিল, আহতদের চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয়ভার সরকারিভাবে বহন করা হবে। প্রয়োজনে তাদের বিদেশে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো হবে। সরকারের এ কথা ঠিকমতো প্রতিপালিত হয়নি। অনেকেরই স্মরণ আছে, ১৩ নভেম্বর পঙ্গু হাসপাতালে আহতদের দেখতে গিয়েছিলেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূর জাহান বেগম। তার সঙ্গে ছিলেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারা কুক। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সবার সঙ্গে দেখা করেননি, এই অভিযোগে তার গাড়ি আটকে বিক্ষোভ করেন আহতরা। পরদিন আহতদের সঙ্গে সচিবালয়ে সরকারের বৈঠক হয়। বৈঠকে সরকার আহতদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের আশ্বাস দেয়। গত আড়াই মাসেও সে আশ্বাস বাস্তবায়িত হয়নি। হলে ফের আহতদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের দাবিতে রাস্তায় নামতে হতো না। ক্ষমতায় আসার পর অন্তর্বর্তী সরকারের জরুরি কাজগুলোর মধ্যে ছিল : ১. শহীদের তালিকা প্রণয়ন করা, ২. আহতদের তালিকা প্রণয়ন করা, ৩. আহত সকলের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা, ৪. শহীদ ও আহতের পরিবারগুলোকে প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা দেয়া, ৫. চিকিৎসান্তে আহতদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, ৬. শহীদ ও আহতদের পরিবারবর্গের স্থায়ী পুনর্বাসন করা ইত্যাদি। স্বীকার করতেই হচ্ছে, এতদিনেও প্রথম দায়িত্ব অর্থাৎ হতাহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা হয়নি। অন্যান্য দায়িত্বও প্রতিপালিত হয়নি। জুলাই বিপ্লবে হতাহতাদের সহায়তার জন্য শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন নামে একটি ফাউন্ডেশন করা হয়েছে। এই ফাউন্ডেশন থেকে সহায়তা পাওয়ার প্রক্রিয়া অত্যন্ত ধীরগতির, যা নিয়ে প্রচন্ড ক্ষোভও রয়েছে সংশ্লিষ্টদের।
জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের চিকিৎসাসহ তাদের পরিবার-পরিজনের সহায়তার জন্য অর্থের কোনো অভাব নেই বলে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, টাকার অভাব নেই; কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় তা দ্রুত দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এটা অন্তর্বর্তী সরকারের একটা বড় দুর্বলতা যে, আমলাতন্ত্রকে উপেক্ষা করা তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা কম থাকায় সরকারের উপদেষ্টাদের আমলাদের ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে। বর্তমান আমলাতন্ত্রে আবার পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের অবশেষ রয়ে গেছে, যারা চাইছে না সরকার সফল হোক। এ কারণেই, পর্যবেক্ষকদের মতে, সরকারের প্রায় সকল ক্ষেত্রেই ধীরতা-শ্লথতা ও ব্যর্থতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। সরকারের কাজ গভর্ন করা। তা না করতে পারলে তার অকার্যকারতা প্রমাণিত হতে বাধ্য। শহীদ পরিবারদের সহায়তা, দেখভাল ও পুনর্বাসন এবং আহতদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের বিষয়গুলো এক বা একাধিক মন্ত্রণালয়ের কাজ নয়, গোটা সরকারেরই কাজ। সকলকেই যথাযথ আন্তরিকতা ও দক্ষতার সঙ্গে কাজগুলো করতে হবে। এটা জাতির পক্ষ থেকে করণীয় অপরিহার্য কর্তব্য। পর্যবেক্ষকদের প্রশ্ন: ছাত্র সমন্বয়করা কী করছেন? শহীদ ও আহত সহযোদ্ধাদের প্রতি তাদের এই অসহযোগ ও অবহেলা কেন? তারা সরকারে আছেন, ভালো আছেন, দল গঠন করছেন, হেলিকপ্টারে দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে সফর করছেন। সহযোদ্ধাদের রক্ত ও অঙ্গহানির মধ্য দিয়ে অর্জিত বিজয়ের মাধ্যমেই তো সেটা সম্ভব হয়েছে, নাকি? ছাত্র সমন্বয়করদের এদিকে বিশেষভাবে নজর দেয়া উচিত। যারা প্রাণ দিয়ে, অঙ্গ দিয়ে জাতিকে ঐতিহাসিক সাফল্য উপহার দিয়েছেন ও দুঃশাসন থেকে দেশকে মুক্ত করেছেন, তারা কিংবা তাদের পরিবার-পরিজন অবহেলিত ও উপেক্ষিত থাকতে পারে না। তাদের যথার্থ মর্যাদা, সম্মান ও প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

আলেমসমাজ ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোন ষড়যন্ত্রই বাংলাদেশকে ঠেকাতে পারবেনা: এ এম এম বাহাউদ্দীন

অযথা কালক্ষেপণ করে ক্ষমতায় থাকার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা সরকারের নেই: আইন উপদেষ্টা

শ্রীলঙ্কাকে হোয়াইটওয়াশের খুব কাছে অস্ট্রেলিয়া

ডিআইজিসহ পুলিশের ৪ ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা আটক

ভারতে বসে নতুন চক্রান্ত শুরু করেছে হাসিনা: মির্জা ফখরুল

ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিটে দুবাই যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা

বাবার মতোই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হবেন কেজরিকে হারানো পরভেশ?

বগুড়ায় ইলেকট্রিক মোটরসাইকেল চালু করল রিভো

সৌদি আরব ও আমিরাত সফরে গেলেন বিমান বাহিনী প্রধান

কতটা নির্লজ্জ হলে দেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেয় - আতাউর রহমান

মুসলমানদেরকে কুরআন ও সুন্নাহর ছায়াতলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে: ধর্ম উপদেষ্টা

সবচেয়ে শক্তিশালী পাসপোর্ট সিঙ্গাপুরের, বাংলাদেশ কত নম্বরে?

ময়মনসিংহে ‘মাইক্লো বাংলাদেশ’র যাত্রা শুরু

টিএমএসএস পাবলিক স্কুল এ্যান্ড কলেজে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত

আমরা ক্ষমতায় গেলে বাদলেসের দাবি পূরণ করবো-খায়রুল কবির খোকন

তিন রাকাত বিশিষ্ট নামাজের প্রথম বৈঠক না করে ইমাম সাহেবের দাঁড়িয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে।

মনোহরগঞ্জে অবৈধভাবে পরিচালিত দুটি ইটভাটা বন্ধ ঘোষণা

লক্ষ্মীপুরে হত্যা মামলায় দুই আসামি গ্রেপ্তার

বই পড়ায় অনাগ্রহ বাড়ছে

চাটমোহরে ১৭ আসামি গ্রেফতার