যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক স্থগিতের সময়কে কাজে লাগাতে হবে
১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৪৪ এএম | আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৪৪ এএম

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতি এবং শুল্কবৃদ্ধির ঘোষণাকে এক ধরণের বাণিজ্য যুদ্ধের সূচনা হিসেবে দেখছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিশেষত চীন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিক্রিয়া অনেকটা বাণিজ্য যুদ্ধে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশি পণ্যের উপরও যুক্তরাষ্ট্র ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এটি আমাদের গার্মেন্ট খাতে বড় ধরনের অভিঘাতের সৃষ্টির আশঙ্কা তৈরী করেছে। অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস শুল্ক আরোপের বিষয়টি ৩ মাসের জন্য স্থগিত রাখার আহ্বান জানিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দিয়েছেন। অন্যান্য দেশও এ ধরনের চিঠি দিয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পও তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দিয়ে ৯০ দিনের জন্য শুল্কনীতি স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। তার এই ঘোষণা বাংলাদেশের জন্য নতুন করে সুযোগ করে দিয়েছে। এতে গার্মেন্ট রফতানিকারকরা এক ধরনের স্বস্তিবোধ করছেন। তবে এ সময়ের মধ্যে যদি বায়ারদের অর্ডার ও পোশাক রফতানির প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা না যায়, তাহলে তিন মাস পর পুনরায় সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য, তাদের পূর্ণমাত্রায় প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।
বাংলাদেশের তৈরী পোশাক রফতানির একক বৃহৎ দেশ যুক্তরাষ্ট্র। এ বাজারে পন্য রফতানিতে হঠাৎ করে বিদ্যমান হারের দ্বীগুনের বেশি শুল্ক আরোপের ধাক্কা সামলে ওঠা রফতানিকারকদের জন্য কঠিন। এহেন বাস্তবতায়, ৯০ দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক স্থগিত করা কিছুটা স্বস্তির কারণ হলেও এ সময়কে যথধাযথভাবে কাজে লাগানোর বিকল্প নেই। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারিরাও এ দিকেই বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করছেন। গত ১৩ এপ্রিল, রবিবার আমেরিকান চ্যাম্বার (অ্যামচ্যাম) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ সম্পর্কে তাঁদের মতামত তুলে ধরেছেন। ‘ইউএস ট্যারিফ ইম্প্যাক্ট অ্যান্ড ওয়ে ফরোয়ার্ড’ (মার্কিন শুল্কের প্রভাব এবং উত্তরণের পথ) শিরোনামের ডায়ালগে ব্যবসায়ীরা ট্রাম্পের শুল্ক স্থগিতের সিদ্ধান্ত ও অর্ন্তবর্তীকালীন ৩ মাস সময়কে কাজে লাগাতে করণীয় নির্ধারণে সরকারকে ব্যবসায়ী তথা বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন। বিশেষত বছরের এ সময়ে ক্রিস্টমাসকে সামনে রেখে তৈরী পোশাক খাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রচুর ক্রয়াদেশ আসে। তিন মাসের শুল্ক স্থগিতের সিদ্ধান্ত বছর শেষে শিপমেন্টের উপর কতটা প্রভাব রাখতে পারে তার উপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে। এর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে গঠনমূলক আলোচনা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বৃদ্ধি ও আমদানি পণ্যের উপর শুল্ক কমিয়ে একটি সমঝোতামূলক অবস্থান নিশ্চিত করতে দ্রুত সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিৎ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানির মাধ্যমে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে একটি সমঝোতামূলক অবস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব হতে পারে বলে কেউ কেউ মত দিয়েছেন।
বাংলাদেশের অর্থনীতি একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেশের ব্যাংকিং সেক্টর, বিনিয়োগ ও আর্থিক খাতকে ভঙ্গুর ও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রেখে গেছেন। অর্ন্তবর্তী সরকার যখন নতুন গতিশীল নেতৃত্ব ও নতুন নীতিমালার আওতায় পরিস্থিতি উত্তরণে কার্যকর উদ্যোগ নিয়ে এগুচ্ছে, তখনই মার্কিন শুল্কনীতি শাকের আঁটির মতো বোঝা হয়ে এসেছে। এহেন স্পর্শকাতর সময়ে ভারত বাংলাদেশের পণ্য রফতানিতে ভারতীয় বন্দরগুলোতে কার্গো হ্যান্ডেলিংয়ের ট্রানশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে বাংলাদেশ বাড়তি চাপের মুখে ঠেলে দিতে চাইছে। মার্কিন শুল্ক আরোপের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশের তৈরী পোশাক রফতানির অগ্রযাত্রা ব্যহত করতেই ভারতের এই সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে বাংলাদেশ সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে এগিয়ে যেতে পারলে মার্কিন শুল্কনীতি কিংবা ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের সিদ্ধান্ত তেমন কোনো প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াতে পারবেনা বলেই সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের বিশ্বাস। তৈরী পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কা শুল্ক স্থগিতের তিন মাস কাজে লাগাতে ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে। তারা বায়ারদের অর্ডার নেয়া ও সরবরাহ দ্রুত করছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের তেমন উদ্যোগ ও প্রস্তুতি আছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না। কেবল করণীয় সম্পর্কে বড় বড় লেকচার শোনা যাচ্ছে। বাস্তবে উদ্যোগের প্রতিফলন নেই। উদ্যোগ না নিয়ে লেকচারে যে কাজ হবে না, তা ব্যাখ্যা করে বলার কিছু নেই। শুল্কনীতি স্থগিতের ৩ মাসে সুযোগ কাজে লাগাতে হলে কোনোভাবেই সময় ক্ষেপণ করা যাবে না। পণ্য উৎপাদন নির্বিঘœ রাখতে নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ অত্যন্ত জরুরি। এ বিষয়টি সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। উৎপাদিত পণ্য যাতে বিমানে দ্রুত বায়ারদের কাছে পৌঁছে দেয়া যায়, এ পদক্ষেপ নেয়া যায় কিনা, তা বিবেচনা করতে হবে। গার্মেন্ট খাতের প্রবৃদ্ধি, উৎপাদন ও রফতানি ধরে রাখতে যা যা করা দরকার, তাই করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

রাজধানীতে আইবিডব্লিউএফ’র দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

ফেনীতে ইনকিলাব সাংবাদিককে নির্যাতন মামলার প্রধান আসামি জামাই ফারুক গ্রেপ্তার

গাজীপুরে বলাৎকারের অভিযোগে এনে ইমামকে গণপিটুনি, কারাগারে মৃত্যু

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্টিকার ছাড়া সচিবালয়ে যানবাহন প্রবেশ বন্ধের সিদ্ধান্ত

ইফার প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ নেই

ইউআইইউ বন্ধের ঘটনায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির উদ্বেগ

অবৈধ গ্যাস সংযোগ উচ্ছেদে তিতাসের অভিযান : জরিমানা আদায়

হামদর্দের গাজার জনগণের প্রতি মানবিক সহায়তা

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধরের পর পুলিশে সোপর্দ

বনশ্রীর মেরাদিয়ায় কোরবানির পশুর হাট বসানো যাবে না

দিল্লি আর আওয়ামী দোসরদের দৌরাত্ম্য চলবে না : রাশেদ প্রধান

নুসরাত ফারিয়া, অপু বিশ্বাস, ভাবনাসহ ১৭ অভিনয়শিল্পীর বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলার আবেদন

মিয়ানমার সীমান্ত সংক্রান্ত পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য বিকৃতভাবে উপস্থাপন : বাংলাফ্যাক্ট

দেশের আর্থিক পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে ঋণমান সংস্থা ফিচকে জানাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ দগ্ধ অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূর মৃত্যু

দীপ্ত টিভির সংবাদ বন্ধ করতে বলেনি সরকার : তথ্য উপদেষ্টা

সউদী নুসুকে কাঙ্খিত হজ ভিসা হচ্ছে না

কোম্পানির মুনাফার জায়গা গো-খাদ্য হতে পারে না : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

এনসিপির সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই : উমামা ফাতেমা

শেখ রেহানার স্বামী-দেবরসহ ৮ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা