অপেক্ষায় ভারত, কী করবে বিএনপি?

Daily Inqilab কামরুল হাসান দর্পণ

০৯ মে ২০২৫, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ০৯ মে ২০২৫, ১২:০৪ এএম

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের সাথে সাথে ভারতের আধিপত্যবাদী নীতিরও পতন হয়েছে। ভারত শেখ হাসিনাকে তার দাসী বানিয়ে প্রায় দেড় দশক ধরে বাংলাদেশকে যেভাবে তার অঙ্গরাজ্যে পরিণত করে রেখেছিল, তা গণঅভ্যুত্থানে কর্পুরের মতো উড়ে গেছে। শেষ সম্বল হারিয়ে ভারত এখন এতটাই হতবিহ্বল ও দিশাহারা যে, বাংলাদেশের উপর প্রতিশোধ নিতে নানা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। বিগত দিনগুলোতে দেশের মানুষ তা দেখেছে। যদিও তার এই প্রতিশোধ পরায়নতা ‘অক্ষমের আস্ফালনে’র মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ তার এই আচরণকে এখন থোড়াই কেয়ার করছে। তারা ভারতের আধিপত্যবাদকে আর কোনোভাবেই বরদাশত করছে না। তাদের মনে এই সাহস ও প্রত্যয় জন্মেছে, ভারতের যেকোনো আগ্রাসন তারা রুখে দিতে প্রস্তুত। তার কিছু দৃষ্টান্তও তারা স্থাপন করেছে। গত শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে দিনাজপুরের বিরল এলাকা দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে দুই বাংলাদেশী কৃষি শ্রমিককে ধরে নিয়ে যায়। এ খবর পাওয়ার সাথে সাথে শত শত বাংলাদেশী একত্রিত হয়ে ভারতের ভেতর থেকে দুই ভারতীয়কে ধরে নিয়ে আসে। পরবর্তীতে বিজিবি ও বিএসএফ আইনি প্রক্রিয়া মেনে উভয় দেশের নাগরিকদের ফেরত দিয়েছে। সীমান্তে বিএসএফের আগ্রাসী আচরণের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের রুখে দাঁড়ানোর এমন ঘটনা বিগত কয়েক মাসে আরও ঘটেছে। গত জানুয়ারিতে কালিগঞ্জ সীমান্তে বিএসএফের সৈন্য মোতায়েন নিয়ে বিজিবির সাথে সংঘর্ষে বাংলাদেশের শত শত মানুষ লাঠি-সোঁটা নিয়ে একাত্ম হয়ে বিএসএফ ও ভারতীয়দের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। অন্যদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের চৌকা সীমান্তে আন্তর্জাতিক নিয়ম লঙ্ঘন করে বিএসএফ শূন্যরেখার ১০০ গজের মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করতে চাইলে বিজিবি প্রতিবাদ করলে তা বন্ধ করতে ভারত বাধ্য হয়। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে বিজিবি ও দেশের মানুষের রুখে দাঁড়ানোর এসব ঘটনায় আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তারা যে, যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, তা আবারও প্রমাণিত হয়েছে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা শুধু ক্ষমতায় থাকার জন্য মানুষকে দমিয়ে এবং বিজিবিকে অকার্যকর বানিয়ে ভারতকে তার চাওয়ার সব দিয়ে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিয়েছিল। তিনি স্বীকারও করেছিলেন, ভারতকে যা দিয়েছেন, তা সে সরাজীবন মনে রাখবে। দেশের স্বাধীনতার সাথে বিশ্বাসঘাতকতার এমন নজির বিশ্বে খুব কম রয়েছে। তার সাথে কেবল তুলনা হতে পারে মীর জাফর ও লেন্দুপ দর্জির সাথে। এই দুজন নিজ স্বার্থে স্ব স্ব দেশের স্বাধীনতা বিক্রি করেছিলেন। লেন্দুপ দর্জি সিকিমকে ভারতের অঙ্গরাজ্যে পরিণত করেন।

দুই.
এটা ঐতিহাসিক সত্য, বাংলাদেশের মানুষ কোনো কালেই দেশের স্বাধীনতা নিয়ে আপস করেনি। স্বাধীনতার জন্য খেয়ে না খেয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম ও যুদ্ধ করেছে। তারা না খেয়ে থাকতে রাজী, স্বাধীনতাহীনতায় বেঁচে থাকতে রাজী নয়। একাত্তরে পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর তারা বুঝেছিল, স্বাধীনতা রক্ষায় তাদেরকে ভারতের সাথে আজীবন লড়তে হবে। তাই তাদেরকে করতে হচ্ছে। ভারতের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে তাদের লড়তে হচ্ছে। এ লড়াই করতে হতো না, যদি শেখ হাসিনার মতো শাসক বাংলাদেশে না আসত। ক্ষমতায় থাকার জন্য ভারতকে নমনম না করে যদি সমতাভিত্তিক ও আত্মমর্যাদার সম্পর্ক বজায় রাখত। বিশ্বের এমন দেশ খুব কমই রয়েছে, যেগুলোর এক দেশের সাথে আরেক দেশের ভূমি সীমান্ত নেই। প্রত্যেক মহাদেশের দেশগুলো একে অপরের সাথে কোনো না কোনোভাবে সংযুক্ত রয়েছে। তারা পারস্পরিক সহবস্থান ও সমমর্যাদা নিয়ে সুপ্রতিবেশী হয়ে আছে। তাদের মধ্যে সমতাভিত্তিক ব্যবসা-বাণিজ্য ও যাতায়াত রয়েছে। ইউরোপে এক ভিসায় এক দেশের মানুষ অনেক দেশে যেতে পারছে। এ নিয়ে দেশগুলোর মধ্যে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। কোনো দেশ কোনো দেশের স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ বা আধিপত্য বিস্তার করছে না। উপমহাদেশে ব্যতিক্রম শুধু ভারত। সে তার প্রতিবেশীদের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। এজন্য সরাসরি দেশ দখল করার পরিবর্তে আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে দেশগুলোর সাথে তার অঙ্গরাজ্যের মতো আচরণ করে। তার দাসে পরিণত করে রাখতে চায়। দেশগুলোর স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সে মানতে চায় না। তার সর্বশেষ নজির হচ্ছে, ২০২৩ সালের জুনের প্রথম সপ্তাহে ভারতের সংসদ ভবনের ম্যুরালে মোদি সরকারের অখ- ভারতের মানচিত্র স্থাপন করা। অখ- ভারতের ধারণাটি উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ বা আরএসএসের মূল মতাদর্শগত চিন্তা। মানচিত্রে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও তিব্বতকে একত্রে দেখানো হয়েছে। এই অখ- ভারতের মানচিত্র উদ্বোধনের সময় অনেক হিন্দু সাধুসন্তদের উপস্থিতিতে যজ্ঞানুষ্ঠান করা হয়। এর মধ্য দিয়ে অখ- ভারতের ধারণাকে একটা হিন্দু রাষ্ট্র হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে। সে সময় ভারতের লেখক ও প্রাবন্ধিক রন্তিদেব সেন গুপ্ত বিবিসি বাংলাকে বলেন, একটা ধর্মনিরপেক্ষ দেশের সংসদে কেন একটা বিশেষ ধর্মের রীতি মেনে যজ্ঞ হবে? কেন সেখানে একটা ধর্মের সাধু সন্ন্যাসীরা হাজির হবেন? কেন সেখানে আরএসএসের চিন্তা অনুসারে অখ- ভারতের মানচিত্র রাখা হবে? এর অর্থ হচ্ছে, ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র হিসাবে তুলে ধরা। তিনি আরও বলেছেন, বর্তমানে অখ- ভারতের চিন্তাটাই তো অবাস্তব। প্রাচীন কালে কোনো দেশের বিভাজন না থাকতে পারে, কিন্তু এখন তো প্রতিটা দেশের রাজনৈতিক সীমা নির্ধারিত হয়েছে। এ বাস্তবতায় অখ- ভারতের রূপ কল্পনা করা কি বাস্তবসম্মত? তার মতো ভারতের অনেকেই মোদি ও আরএসএসের অখ- ভারতের মানচিত্র প্রকাশের সমালোচনা করেছেন। যেসব দেশকে এই মানচিত্রে দেখানো হয়েছে, বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকার ছাড়া প্রত্যেকেই এর তীব্র প্রতিক্রিয়া ও প্রতিবাদ করেছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় টুঁ শব্দ করেনি। সে সময় আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, ভারতের সংসদ ভবনে এ ধরনের মানচিত্রের মাধ্যমে কী বোঝানো হচ্ছে, সেটা তারা জানার চেষ্টা করবেন। তারা বলেন, ভারতের সংসদ ভবনে ম্যুরালের মাধ্যমে অখ- মানচিত্রের ব্যাপারে তাদের কোনো ধারণা নেই। ভারত এ ধরনের মানচিত্র দিয়ে কী বোঝাতে চেয়েছে, সেটা তারা জানার চেষ্টা করবেন। বিএনপিসহ কিছু বামপন্থী দল সে সময় এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছিল। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখররুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, অন্য কোনো দেশের অখ- মানচিত্রে বাংলাদেশকে দেখানোটা দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি। এটি বাংলাদেশের জন্য অপমানজনক। অখ- ভারতের মানচিত্র প্রকাশ নিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার যে, কোনো নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাবে না, তা অজানা ছিল না। কারণ, সে ভারতের কথার বাইরে যাবে না। ভারত যা বলেছে, তা করেছে। ফলে ভারতের নতুন মানচিত্র প্রকাশকে সে সমর্থন করবে, এটাই স্বাভাবিক। এর মধ্য দিয়ে এ ধারণাই ভিত্তি লাভ করেছে, শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না। বিশ্বাস করলে তো প্রতিবাদ করতেন। এজন্যই হাসিনা ও আওয়ামী লীগ ভারতের কাছে এত প্রিয় এবং তাদের টিকিয়ে রাখতে সে উদগ্রীব। ফলে ৫ আগস্ট হাসিনা ও আওয়ামী লীগের পতনে সে যারপরনাই ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ হয়েছে।

তিন.
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন ও পালিয়ে যাওয়ার পর সঙ্গতকারণেই দেশকে ভারতীয় আধিপত্যবাদ থেকে মুক্ত রাখার বড় দায়িত্ব পড়েছে বিএনপির ওপর। দেশের মানুষও তাই প্রত্যাশা করে। দেশের নব্বই ভাগ মানুষ মনে করে, ভারত মোটেই বাংলাদেশের মিত্র রাষ্ট্র নয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতায় সে বিশ্বাস করে না। বিএনপিকে মানুষের এই মনোভাব বুঝতে হবে। যদি বিএনপি আওয়ামী লীগের মতো ক্ষমতায় থাকা বা যাওয়ার জন্য ভারততোষণ নীতির পথ ধরে, তাহলে তারা তাকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে একমুহূর্ত দ্বিধা করবে না। হাসিনা ক্ষমতায় থাকার জন্য জনগণকে উপেক্ষা করে ভারতের শক্তিতে বলিয়ান হয়েও টিকে থাকতে পারেনি। জনগণকে খুন-জখম করেও গণঅভ্যুত্থান ঠেকাতে পারেনি। ভারতও তার পতন ঠেকাতে পারেনি। শেখ হাসিনাকে করুণ পরিণতি বরণ করতে হয়েছে। এমনকি প্রশাসন থেকে শুরু করে দেশের সর্বত্র ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ গিজগিজ করলেও হাসিনার পতন হতে পারে, তা টের পায়নি। ভারতও স্বীকার করেছে, এক্ষেত্রে ‘র’-এর ব্যর্থতা ছিল। বলা বাহুল্য, ‘র’ টের পেলেও গণঅভ্যুত্থান ঠেকানো তার পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না। কারণ, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েই আন্দোলন করেছে। জনগণের ঐক্য এমনই যে, তা পৃথিবীর কোনো শক্তির পক্ষেই ভাঙা সম্ভব নয়। জনগণ যখন ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করে, তখন তা কেউ ঠেকাতে পারে না। যদি পারত, তাহলে একাত্তরে লাঠি-সোটা নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়া জনগণকে পাকিস্তানের প্রশিক্ষিত ও সশস্ত্র বাহিনী ধুলোয় মিশিয়ে দিতে পারত। বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানেও এ চিত্র দেখা গেছে। হাসিনার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে পুলিশ সদস্য ভিডিও দেখিয়ে বলেছিল, স্যার, একটা মারলে আরেকটা দাঁড়িয়ে যায়। এটাই হচ্ছে, জনগণের ঐক্যবদ্ধতার শক্তি। জনগণের প্রতিরোধ কোনো অস্ত্র দিয়েই ঠেকানো যায় না। স্বাধীনতার পর এরশাদ ও হাসিনার স্বৈরশাসন টিকতে পারেনি, শুধু জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কারণে। বিএনপিকে জনগণের এই পাল্স বুঝতে হবে। জনগণের ঐক্যবদ্ধ শক্তি উপলব্ধি করতে হবে। দেশের জনগণের শক্তি ও ঐক্য এবং তাদের মন বুঝে চলতে পারারে চেয়ে বড় শক্তি নেই। জনগণ পাশে থাকলে বাইরের কোনো শক্তিই দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। অন্যায্য, অন্যায় ও আগ্রাসী আচরণ করা তার পক্ষে সম্ভব হয় না। হাসিনার মতো ফ্যাসিস্ট হয়ে সাময়িকভাবে দমিয়ে রাখা গেলেও চিরকাল দমিয়ে রাখা যায় না। হিটলার, মুসোলিনির মতো কুখ্যাত ফ্যাসিস্টরাও জনগণকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। হাসিনা এবং তার প্রভু ভারত এক হয়েও বাংলাদেশের মানুষকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। বিএনপিকে এটা বুঝতে হবে।

চার.
ভারত এখন অপেক্ষায় আছে, বাংলাদেশে কত দ্রুত রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসে। এটা সে খোলামেলাভাবেই বলেছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারকে সে কোনোভাবেই পছন্দ করছে না। হাসিনার মতোই তার চক্ষুশূল হয়ে আছে। সে অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক চায় না। এর কারণ হচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকার তাকে পাত্তা দিচ্ছে না। তার চোখে চোখ রেখে ধমকের সুরে কথা বলছে। তাৎক্ষণিকভাবে তার অন্যায্য আচরণ ও বক্তব্য-বিবৃতির কড়া প্রতিবাদ জানাচ্ছে। অবশ্য, ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার আগেই ভারতের এনডিটিভি চ্যানেলের সাথে এক সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট করেই বলেছেন, ভারত যদি বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়, তাহলে তার সেভেন সিস্টার্সও অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে। দায়িত্ব নেয়ার আগেই এমন সাহসী কথা বলে ভারতকে বুঝিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশকে আর তার দাসী হাসিনার চোখ দিয়ে দেখা যাবে না। এ এক নতুন বাংলাদেশ। এ দেশে তার আর খবরদারি চলবে না। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এ কথা ভারতের গালে চপেটাঘাতের মতো হয়ে আছে। ফলে ভারত ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দুচক্ষে দেখতে পারবে না, এটাই স্বাভাবিক। এজন্য সে বাংলাদেশে কত দ্রুত একটি নির্বাচিত সরকার আসে, সেটা যে সরকারই হোক, সে অপেক্ষায় রয়েছে। আগামী নির্বাচনে বিএনপির ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা বেশি। ভারতও সেটা জানে। স্বাভাবিকভাবেই সে বিএনপির সাথে সম্পর্ক গড়তে এবং তাকে হাসিনা সরকারের মতো করায়ত্ত করতে চাইবে। বিএনপি যদি হাসিনার মতো মনে করে, ক্ষমতায় যেতে ভারতের সহায়তা লাগবে, তাহলে তা হবে জনগণের শক্তির প্রতি অনাস্থা ও অবজ্ঞার প্রকাশ এবং বিশ্বাসঘাতকতা করা। জনগণ জীবন দিয়ে হাসিনা ও ভারতের আধিপত্যবাদের পতন ঘটিয়ে যে নতুন বাংলাদেশের সূচনা করেছে, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করেছে, তার সাথে বেঈমানী করা। দীর্ঘ দেড় দশক ধরে বিএনপির নেতাকর্মীরা ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে যে জীবন দিয়েছে, হামলা-মামলা, জেল-জুলম, গুম-অপহরণের শিকার হয়েছে, তাদের আত্মত্যাগের অবমূল্যায়ন করা। এটা এখন পরিস্কার, এদেশে এখন আর ভারততোষণ নীতি ও তার আধিপত্যবাদকে পুনরায় ঠাঁই করে দেয়া কোনো দলকে জনগণ মেনে নেবে না। বিএনপির হাইকমান্ডকে এটা বুঝতে হবে। ইতোমধ্যে বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ভারতের সাথে গোপনে যোগাযোগ রাখছে, এমন একটা পারসেপশন ছড়িয়েছে। এ নিয়ে কিছু অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট বিএনপির কড়া সমালোচনা করছে। তাদের ভারতবিরোধী সমালোচনায় জনগণের মতামতের প্রতিফলন রয়েছে। জনগণের এ মতামত যদি বিএনপি অনুধাবন না করে, তাহলে তার ক্ষমতায় যাওয়ার পথ সংকুচিত হয়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। জনগণ মনেপ্রাণে চায়, বিএনপি ভারতের ফাঁদে পা না দিয়ে সবসময় তাদের ওপর আস্থা রাখুক।

[email protected]


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

তীব্র গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন
ভারত-পাকিস্তান সংঘাত কারো জন্যই কল্যাণকর নয়
নারীবিষয়ক কমিশনের প্রতিবেদন সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের অংশ
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে
শেখপাড়ায় লোডশেডিং
আরও
X
  

আরও পড়ুন

সাভারে ছাত্র জনতা হত্যা মামলার আসামি ছাত্রলীগ নেতা গ্রেফতার

সাভারে ছাত্র জনতা হত্যা মামলার আসামি ছাত্রলীগ নেতা গ্রেফতার

‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’: জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সচিত্র দলিল

‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’: জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সচিত্র দলিল

এনসিপির ‘জাতীয় যুবশক্তি’র ১৩১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা

এনসিপির ‘জাতীয় যুবশক্তি’র ১৩১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা

ওড়ার পর খুলে পড়ল বিমানের চাকা, ঢাকায় জরুরি অবতরণ

ওড়ার পর খুলে পড়ল বিমানের চাকা, ঢাকায় জরুরি অবতরণ

ফারাক্কা বাঁধ এদেশে কারবালা তৈরি করেছে -উপদেষ্টা ফরিদা আখতার

ফারাক্কা বাঁধ এদেশে কারবালা তৈরি করেছে -উপদেষ্টা ফরিদা আখতার

মু’মিন হওয়ার জন্য শরিয়তের শিক্ষাকে আঁকড়ে ধরতে হবে : জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ান

মু’মিন হওয়ার জন্য শরিয়তের শিক্ষাকে আঁকড়ে ধরতে হবে : জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ান

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিলো সরকার

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিলো সরকার

বিপ্লবের পরে বাংলাদেশ : সংস্কারের পথে আশা, আন্দোলন ও আলোচনা

বিপ্লবের পরে বাংলাদেশ : সংস্কারের পথে আশা, আন্দোলন ও আলোচনা

ডিজিটাল রূপান্তরের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান সুযোগ নিশ্চিতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ -প্রধান উপদেষ্টা

ডিজিটাল রূপান্তরের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান সুযোগ নিশ্চিতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ -প্রধান উপদেষ্টা

আদালতকে অবজ্ঞা

আদালতকে অবজ্ঞা

দিল্লি থেকে ৪০ রোহিঙ্গাকে ধরে সাগরে ‘ফেলে দিলো’ ভারত

দিল্লি থেকে ৪০ রোহিঙ্গাকে ধরে সাগরে ‘ফেলে দিলো’ ভারত

ওয়াকফ সংশোধনী আইনের শুনানি ফের পেছাল

ওয়াকফ সংশোধনী আইনের শুনানি ফের পেছাল

ট্রাম্পের শুল্কনীতির জন্য পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে ওয়ালমার্ট

ট্রাম্পের শুল্কনীতির জন্য পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে ওয়ালমার্ট

ফরিদগঞ্জে পুলিশের বাসা থেকে চুরি অস্ত্র ঢাকা থেকে উদ্ধার : আটক ২

ফরিদগঞ্জে পুলিশের বাসা থেকে চুরি অস্ত্র ঢাকা থেকে উদ্ধার : আটক ২

শিশু কিশোরদেরকে আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে : ডা: আবদুল্লাহ খান

শিশু কিশোরদেরকে আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে : ডা: আবদুল্লাহ খান

ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা

ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা

সাভারে বন বিভাগের জমি দখলে বাধা বিট কর্মকর্তাসহ আহত ৫

সাভারে বন বিভাগের জমি দখলে বাধা বিট কর্মকর্তাসহ আহত ৫

মানবিক করিডোর ও চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র বরদাশত করা হবে না ইসলামী ঐক্যজোট

মানবিক করিডোর ও চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র বরদাশত করা হবে না ইসলামী ঐক্যজোট

কোন ফ্যাসিস্ট অপশক্তি দ্বিতীয়বার ফিরে আসেনি : ড. হেলাল উদ্দিন

কোন ফ্যাসিস্ট অপশক্তি দ্বিতীয়বার ফিরে আসেনি : ড. হেলাল উদ্দিন

বন্দর উপজেলা বিএনপি সভাপতিকে চাঁদাবাজির অভিযোগে শোকজ

বন্দর উপজেলা বিএনপি সভাপতিকে চাঁদাবাজির অভিযোগে শোকজ