ভারতীয় নাগরিকদের পুশইন উস্কানিমূলক
০৯ মে ২০২৫, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ০৯ মে ২০২৫, ১২:০৪ এএম

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধাবস্থার মধ্যেই বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতীয় মুসলমানদের জড়ো করে পুশইন করছে বিএসএফ। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত এক সংবাদে জানা যায়, খাগড়াছড়ি সীমান্ত দিয়ে নারী ও শিশুসহ ৭৯ জন ভারতীয় মুসলমান নাগরিককে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া হয়েছে। বুধবার ভোরে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মাটিরাঙ্গা এবং পানছড়ি সীমান্ত দিয়ে বিএসএফ এসব ভারতীয় মুসলমান নাগরিকদের জোরপূর্বক বাংলাদেশে ঠেলে দেয়। এসব দরিদ্র মুসলমানকে গুজরাট থেকে বিমানযোগে ত্রিপুরায় এনে সীমান্ত এলাকায় জড়ো করা হয়েছিল এবং এমন আরো শত শত মানুষ বিএসএফ’র তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে এবং সময়মত পার্বত্য জেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়ার পরিকল্পনা করছে বলে জানা যায়। পাকিস্তান সীমান্তে ভারতের আগ্রাসী ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও পাল্টা হামলায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ও নাস্তানাবুদ অবস্থায় মোদি সরকার দেশে-বিদেশে বড় ধরনের চাপের মুখে পড়েছে। এহেন বাস্তবতায় বাংলাদেশ সীমান্তে উস্কানিমূলক তৎপরতা চালানো শুরু করেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সীমান্তের অভ্যন্তরে দুই বিএসএফ জওয়ান সশস্ত্র অবস্থায় স্থানীয় জনতার হাতে আটক হলে তারা গণপিটুনি থেকে বাঁচতে বিজিবি সদস্যদের পা জড়িয়ে ধরে প্রাণভিক্ষা চেয়ে রক্ষা পায়। এই দৃশ্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বদলে যাওয়া বাংলাদেশ ভারতীয় আধিপত্য ও নতজানু পররাষ্ট্রনীতি থেকে বেরিয়ে এসেছে। বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী তার হারানো ঐতিহ্য ও গৌরব ফিরিয়ে আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পার্বত্য অঞ্চলে এমনিতেই বহুমাত্রিক নিরাপত্তা হুমকি দেখা দিয়েছে। এ সময়ে বিএসএফ’র পুশইন তৎপরতা পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তোলার হীন অপচেষ্টা হিসেবেই গণ্য করা যায়।
কাশ্মিরে, পাকিস্তান সীমান্তে এবং বাংলাদেশ সীমান্তে বিজেপি সরকারের আগ্রাসী ও উস্কানিমূলক তৎপরতা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। হিন্দুত্ববাদী নরেন্দ্র মোদির মুসলমানবিদ্বেষী আধিপত্যবাদী নীতি পাকিস্তান সীমান্তে পরাভূত ও বিপর্যস্ত হলেও তারা এখন বাংলাদেশ সীমান্তে পরিকল্পিত উত্তেজনা ও উস্কানিমূলক তৎপরতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। হিন্দুত্ববাদীরা কখনোই বাংলাদেশে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা প্রত্যাশা করে না। গত ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ধ্বংস করে ভারতীয় সেবাদাস সরকার হিসেবে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে ভারত তার সর্বাত্মক প্রভাব কাজে লাগিয়েছে। গুম-খুন, গণহত্যা, আয়নাঘর, ব্যাংক জালিয়াতি, বাংলাদেশ ব্যাংকের সুইফ্ট কোড হ্যাক করে রিজার্ভ চুরিসহ লাখ লাখ কোটি টাকা লুটপাট ও পাচারের সাথে ভারতীয় সংশ্লিষ্টতার সুস্পষ্ট আলামত রয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতনের পর শেখ হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় দিয়ে বিজেপি সরকার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে নানা রকম অপপ্রচার ও চাপ সৃষ্টির কৌশল গ্রহণ করেছে। তারা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপর নির্যাতনের কাল্পনিক অভিযোগ তুলে ভিসা বন্ধ, বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞাসহ অপ্রত্যাশিত সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেই ক্ষান্ত হয়নি, মোদির অনুগত মিডিয়া বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দখল করে নেয়ারও অব্যাহত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। ভারতের অভ্যন্তরে এনআরসি, ওয়াক্ফ আইন ইত্যাদি বিধি ব্যবস্থা জারি করে মুসলমানদের সম্পদহীন ও নাগরিকত্বহীন করে প্রতিবেশী দেশগুলোতে ঠেলে দেয়ার পরিকল্পনা হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিরই অংশ। পাকিস্তান সীমান্তে পুশইন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব না হলেও বাংলাদেশ সীমান্তে তারা বরাবরই এহেন তৎপরতা চালাচ্ছে। খাগড়াছড়ি সীমান্ত দিয়ে জোরপূর্বক ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়ার অপচেষ্টা হিন্দুত্ববাদী বিজেপির হীন চক্রান্তের অংশ।
দিল্লি, মুম্বাই ও গুজরাটসহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে মুসলমানদের জাতিগত পরিচয় ও বিভক্তির মুখে ঠেলে দেয়ার হিন্দুত্ববাদী নীতি দেশে-বিদেশে সমালোচিত হলেও মোদি সরকার এ ব্যাপারে বেপরোয়া। বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, সম্প্রতি গুজরাটে যে সব বাংলা ভাষাভাষি মুসলমানদের বাংলাদেশি বলে দাবি করা হয়েছিল তারা প্রায় সবাই ভারতীয় মুসলমান। কিছু সংখ্যক মানুষ আছেন, যাদের পূর্বপুরুষ বাংলাদেশি। সে সব গুজরাটি মুসলমানদের পার্বত্য সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পুশইন করছে বিএসএফ। উত্তরাঞ্চলের অন্যান্য সীমান্ত দিয়েও বেশকিছু ভারতীয়কে বিএসএফ পুশইন করেছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। গুজরাট, বিহার ও আসামে শত বছর ধরে বসবাসরত লাখ লাখ বাংলা ভাষাভাষি মানুষদের নাগরিকত্বহীন করে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়ার হুমকি জারি রেখেছে বিজেপির নেতারা। এক সময়ের অবিভক্ত বাংলার মানুষ দেশভাগের পর এপার-ওপারে ছড়িয়ে পড়ার ঐতিহাসিক ডেমোগ্রাফিকে অস্বীকার করা যায় না। শুধুমাত্র ধর্মীয় পরিচয়ের নিরীখে এসব জনগোষ্ঠিকে বাস্তুহীন করে প্রতিবেশী দেশে ঠেলে দেয়া হিন্দুত্ববাদী সামাজিক-রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন ছাড়া আর কিছুই নয়। অবৈধ অভিবাসীদের আইনগত প্রক্রিয়ায় পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তাদেরকে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন বা পুনর্বাসনেরও কিছু আন্তর্জাতিক রীতিনীতি রয়েছে। সেখানে কোনো রকম বাছবিচার ছাড়াই গুজরাটি মুসলমানদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অন্যায়-আগ্রাসন। এ ধরনের যে কোনো পুশইন প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সীমান্ত এলাকাগুলোতে বিজিবিকে সতর্ক নজরদারি বাড়াতে হবে। বিএসএফ’র এহেন তৎপরতা শক্ত হাতে প্রতিহত করতে হবে। ভারতকে অবশ্যই সুপ্রতিবেশীসুলভ ও সভ্য আচরণ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং রোহিঙ্গা বিষয়ক হাইরিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান যথার্থই বলেছেন, ভারতের অবৈধ অভিবাসীদের এভাবে বাংলাদেশে পুশইন করাটা সঠিক প্রক্রিয়া নয়। তারা বাংলাদেশের নাগরিক প্রমাণিত হলে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে পাঠানোর উদ্যোগ নিলে বাংলাদেশ গ্রহণ করবে। অবৈধ পুশইন প্রতিরোধে বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। প্রয়োজনে তাদেরকে পুশব্যাক করতে হবে। সেই সাথে বাংলাদেশে অবস্থানরত অবৈধ ভারতীয় নাগরিকদেরও ভারতে ফেরত পাঠাতে হবে। ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত যুদ্ধের উত্তেজনায় বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতীয় বাহিনীর উস্কানিমূলক কর্মকা- সম্পর্কে সরকারকে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ভারতের উস্কানিমূলক বিভিন্ন তৎপরতা ও পদক্ষেপ বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। ভারত শক্তের ভক্ত নরমের যম। এখন পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে হেরে, বাংলাশের ওপর চড়াও হতে চাচ্ছে। এটা প্রমাণিত, পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা চীনের সহায়তায় শক্তিশালী হয়েছে। বাংলাদেশও অস্ত্রশস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামের ক্ষেত্রে প্রধানত চীনের ওপর নির্ভরশীল। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান চীনের সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক ও সহযোগিতা গড়ে তুলেছিলেন। সেই ধারাবাহিকতা বহাল আছে। আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সুরক্ষায় চীন পরিক্ষীত সহযোগী। তার এ সহযোগিতা আরো বাড়াতে হবে। নিজস্ব শক্তির সঞ্চয় বাড়ানোর বিকল্প নেই।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

সাভারে ছাত্র জনতা হত্যা মামলার আসামি ছাত্রলীগ নেতা গ্রেফতার

‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’: জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সচিত্র দলিল

এনসিপির ‘জাতীয় যুবশক্তি’র ১৩১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা

ওড়ার পর খুলে পড়ল বিমানের চাকা, ঢাকায় জরুরি অবতরণ

ফারাক্কা বাঁধ এদেশে কারবালা তৈরি করেছে -উপদেষ্টা ফরিদা আখতার

মু’মিন হওয়ার জন্য শরিয়তের শিক্ষাকে আঁকড়ে ধরতে হবে : জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ান

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিলো সরকার

বিপ্লবের পরে বাংলাদেশ : সংস্কারের পথে আশা, আন্দোলন ও আলোচনা

ডিজিটাল রূপান্তরের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান সুযোগ নিশ্চিতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ -প্রধান উপদেষ্টা

আদালতকে অবজ্ঞা

দিল্লি থেকে ৪০ রোহিঙ্গাকে ধরে সাগরে ‘ফেলে দিলো’ ভারত

ওয়াকফ সংশোধনী আইনের শুনানি ফের পেছাল

ট্রাম্পের শুল্কনীতির জন্য পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে ওয়ালমার্ট

ফরিদগঞ্জে পুলিশের বাসা থেকে চুরি অস্ত্র ঢাকা থেকে উদ্ধার : আটক ২

শিশু কিশোরদেরকে আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে : ডা: আবদুল্লাহ খান

ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা

সাভারে বন বিভাগের জমি দখলে বাধা বিট কর্মকর্তাসহ আহত ৫

মানবিক করিডোর ও চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র বরদাশত করা হবে না ইসলামী ঐক্যজোট

কোন ফ্যাসিস্ট অপশক্তি দ্বিতীয়বার ফিরে আসেনি : ড. হেলাল উদ্দিন

বন্দর উপজেলা বিএনপি সভাপতিকে চাঁদাবাজির অভিযোগে শোকজ