রাস্তা দখল করে মানুষকে কষ্ট দেয়া যাবে না
১৩ মে ২০২৫, ১২:২৬ এএম | আপডেট: ১৩ মে ২০২৫, ১২:২৬ এএম

রাজধানীর শাহবাগ, সয়েন্স ল্যাবরেটরি, প্রেসক্লাব, প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন, সচিবালয়ের আশপাশ প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হরহামেশা আন্দোলনকারীদের জমায়েত প্রত্যক্ষ করা যায়। বিভিন্ন দল ও সংগঠন তাদের দাবি-দাওয়া জানাতে এসব স্থান বেছে নেয়। তাদের কর্মসূচির কারণে রাস্তাঘাটে যানজট সৃষ্টি হয়। মানুষের যাতায়াত বাধাগ্রস্ত হয়। তাদের হয়রানি পেরেশানির শেষ থাকে না। যানবাহনের তেল-গ্যাস পোড়ে, সময়ের কাজ সময়ে করা যায় না, শ্রমঘণ্টা নষ্ট হয়, বড় রকমে আর্থিক ক্ষতি সাধিত হয়। এ মুহূর্তে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান করছেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আহতরা। আওয়ামী লীগকে চিরতরে নিষিদ্ধ করা, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা ও জুলাই সনদ ঘোষণা করা- এই তিন দফা দাবিতে তারা রাস্তায় অবস্থান নিয়েছেন। পুলিশ অবশ্য রাস্তা খুলে দিয়ে যান চলাচলে সহায়তা করেছে। আন্দোলনকারীদের একাংশ সেখানে অবস্থান বহাল রেখেছেন। এর আগে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে টানা তিন দিন শাহবাগ এলাকায় কর্মসূচি পালন করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন, তাদের দাবি না মানা পর্যন্ত রাস্তা ছাড়বেন না। তারা দেশব্যাপী কর্মসূচি পালনের কথাও বলেছিলেন। এহেন পরিস্থিতিতে শনিবার রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠক বসে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায়। ওই সভার পর আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল মধ্য রাতে সংবাদ সম্মেলন করে জানান, উপদেষ্টা পরিষদের সভায় আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল আইনের সংশোধনী অনুমোদিত হয়েছে, যাতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কোনো রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গ সংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠিদের শাস্তি দিতে পারবেন। তিনি আরো জানান, সভায় আওয়ামী লীগ ও দলটির নেতাকর্মীদের বিচারকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কার্যত উপদেষ্টা পরিষদের এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে নেয়া হয়েছে। বিএনপি ও জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন সরকারের সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। আন্দোলনকারীরা আনন্দমিছিলের মাধ্যমে তাদের কর্মসূচির ইতি টেনেছেন। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা ইত্যাদি দাবি নতুন নয়। সরকার যথাসময়ে সিদ্ধান্ত নিলে এসব নিয়ে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে হতো না। অন্যদিকে, আন্দোলন-সংগ্রামের একটা রীতি-পদ্ধতি আছে। হুট করে রাস্তা দখল, রাস্তায় লাগাতার অবস্থান কিংবা হরতাল ডাকা ওই রীতি-পদ্ধতির মধ্যে পড়ে না। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতরাই হোন, আর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সমন্বয়করাই হোন কিংবা কোনো রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতাকর্মীরাই হোনÑ কারোই উচিত নয়, জনগণের হয়রানি-পেরেশান ও আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়, এমন কিছু করা।
স্বৈরাচার বিদায়ের পর দাবি-দাওয়া আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রামের হিড়িক পড়ে যায়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিতে না নিতেই সরকারি-বেসরকারি নানান সংস্থা ও সংগঠনের তরফে দাবি-দাওয়া জানানো হয় একের পর এক। বক্তৃতা-বিবৃতি, মিছিল, সমাবেশ, রাস্তাঘাট দখল, অবরোধ ইত্যাদি চলতে থাকে সমানে। এই সুযোগে পতিত স্বৈরাচারের দোসররা দাবি-দাওয়ার নামে, আন্দোলন-সংগ্রামের নামে বিভিন্ন ধরনের নাশকতামূলক কাজ, ভাংচুর, হামলা ইত্যাদি করতে থাকে। এহেন পরিস্থিতিতে সরকারের তরফে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থান, রাস্তায় অবস্থান ও সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। বিশেষ করে, সচিবালয় ও তার আশপাশ, প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন এলাকায় জমায়েত, মিছিল, সমাবেশ ও শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করা হয়। সেই নিষেধাদেশ তুলে নেয়া হয়েছে, এমন তথ্য নেই। তা সত্ত্বেও বিশেষ করে শাহবাগের মোড়ে রাস্তা আটকে নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। পুলিশ কিছু বলছে না। কখনো কখনো এমন সব ব্যক্তি বা সংগঠন কর্মসূচি দিচ্ছে, যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া পুলিশের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। পুলিশ দ্বিধামুক্ত হতে পারছে না। মাঝে মাঝে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন নমুনা অথবা শাহবাগ মোড়ে রাস্তা দখল করে কোনো কর্মসূচি পালন করা যাবে না। উল্লেখ্য, শাহবাগ মোড় এমন একটি জায়গা যেখানে চারটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা এক বিন্দুতে মিলেছে। এসব রাস্তার আশপাশে, হাসপাতাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পার্ক, জাদুঘর বিভিন্ন অফিস ইত্যাদি রয়েছে। শাহবাগ বন্ধ হলে সব দিকেই বন্ধ। এজন্যই আন্দোলনকারীরা এই স্থানটি বেছে নেয়, যাতে সরকার চাপ অনুভব করে এবং দাবি-দাওয়া দ্রুত মেনে নিতে বাধ্য হয়। আন্দোলনকারীদের এই মাইন্ডসেট বুঝতে হবে সরকারকে এবং সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও পদক্ষেপ নিতে হবে।
ঢাকা এমনিতেই যানজটের শহর হিসাবে কুখ্যাত। তার ওপর কোথাও কোনো কারণে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। একথাও সত্য, যে পরিমাণ রাস্তা এই শহরে থাকার কথা, তা নেই। তদুপরি যানবাহনের চাপ অত্যাধিক। ফলে যানজট স্বাভাবিকভাবেই সৃষ্টি হতে দেখা যায়। যানজটে কত শ্রমঘণ্টা নষ্ট হয়, কত তেল-গ্যাস পোড়ে, কত আর্থিক ক্ষতি হয়, মানসিক ক্ষতিই বা কতটা হয়, তার হিসাব বিভিন্ন গবেষণা-পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। যানজটে ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের যে রকম চেষ্টা ও দুর্ভোগের শিকার হতে হয়, তার কোনো তুলনা নেই। ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ালেখা ও মানসিক ক্ষতি পরিমাপের অসাধ্য, সিরিয়াস রোগী ও রোগীর সঙ্গীরা রীতিমত মহাবিপদে পড়ে যায় যানজটে আটকা পড়লে। এসব কষ্ট-দুর্ভোগ ও বিভিন্ন রকম ক্ষতির হাত থেকে মানুষজনকে রেহাই দিতে হলে রাস্তাঘাটকে সম্পূর্ণ উন্মুক্ত রাখতে হবে, রাস্তার সংখ্যা বাড়াতে, যানবাহন বিশেষ করে রিকশার সংখ্যা কমাতে, পারলে বন্ধ করে দিতে হবে। একইসঙ্গে কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের রাস্তা দখল করে দাবি-দাওয়া আদায়ের কর্মসূচি পালন রহিত করতে হবে। তাদের জন্য বিকল্প স্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। দাবি-দাওয়া থাকবে; সব দেশেই থাকে, কিন্তু কোনো দেশেই আমাদের দেশের মতো রাস্তাঘাট দখল করে ভাংচুর ও নাশকতা করে করে দাবি আদায়ের চল নেই। সরকার বা কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি-দাওয়া, তার কাছেই পেশ করতে হবে। আলাপ-আলোচনা করতে হবে। আলোচনার মাধ্যমে দাবি-দাওয়া অর্জিত হলে আন্দোলন-সংগ্রামের আর কি প্রয়োজন? সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত যত দ্রুত সম্ভব আলোচনায় বসা এবং আলোচনার মাধ্যমে ফয়সালায় উপনীত হওয়া। আমাদের দেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, সরকার বা কর্তৃপক্ষ দাবি-দাওয়া শুনতে চায় না। সহজে মানতেও চায় না। আবার দাবি-দাওয়া পেশকারীরাও গোঁ ধরে থাকে। এতে অহেতুক সময় ক্ষেপণ হয়। তিক্ততা বাড়ে। আন্দোলন-সংগ্রাম ঘরে থেকে রাস্তায় আসে। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্তও হয় অনেক ক্ষতি-খেসারতের পর। এমতাবস্থায়, উভয় পক্ষের সহনশীলতা ও বাস্তববাদী হওয়া অত্যন্ত জরুরি। দু’পক্ষের বাস্তবতা অনুযায়ী সর্বোত্তম সমাধানে পৌঁছানোর মনোভাব থাকলে আলোচনাতেই সমাধান হবে। রাস্তাঘাটে আন্দোলন-সংগ্রাম করার বাধ্যতা আপনা আপনি রহিত হবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা দরকার, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ নেই। শেয়ার বাজারে স্মরণকালের ভয়াবহ ধস সৃষ্টি হয়েছে। রফতানিতে ঝুঁকির আশংকা বিদ্যমান। ব্যংকিং খাতও ঝুঁকিতে। দুর্বল ব্যাংক অধিগ্রহণ করে বাঁচানোর পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। নতুন কর্মসংস্থান নেই। উল্টো কর্মসংস্থান হারাচ্ছে মানুষ। মূল্যস্ফীতি ক্রমবর্ধমান। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন-যাপন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এই প্রেক্ষাপটে সবার মধ্যে সংযম, সহনশীলতা ও দূরদশির্তা অত্যাবশক।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

ভ্যাপসা গরমে হাসপাতালে রোগীর ভিড়, সংকট স্যালাইনের

গুমবিষয়ক স্থায়ী কমিশন গঠন করা হবে: আসিফ নজরুল

নালিতাবাড়ীতে বিএনপি নেতার উপর আওয়ামী নেতার সন্ত্রাসী হামলা: গ্রেপ্তার দাবি

চিন্ময় কৃষ্ণকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ

কুলাউড়ায় স্কুলছাত্রী আনজুম হত্যার রহস্য উদঘাটন, হত্যাকারী যুবক আটক

ইবি শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে ছাত্রদলের শোক

ঢাবিতে ইনকিলাব মঞ্চের জুলাই সনদ ও গণহত্যার বিচার দাবি সংবাদ সম্মেলন

তেল আবিবে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত মার্কিন দূতাবাস

ঢাবিতে ককটেল বিস্ফোরণ-ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল নিয়ে উত্তেজনা

নোয়াখালীতে অগ্নি ঝুঁকিতে শত শত বহুতল ভবন, নেই আধুনিক অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা
বিশ্ববাজারে আরও বাড়লো জ্বালানি তেলের দাম

ইরানের পাল্টা হামলায় ইসরায়েলে মৃতের সংখ্যা ২০ ছাড়াল

বীরগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ গেল অষ্টম শ্রেণির ছাত্রের

‘ভারত পানি বন্ধ করলে যুদ্ধই একমাত্র পথ’— হুঁশিয়ারি বিলাওয়ালের

শেরপুরের ফুটবলের ফাইনালে কানিপাড়া স্পোর্টিং ক্লাব চ্যাম্পিয়ন

মাগুরায় ছাত্রদল নেতা মেহেদী হাসান রাব্বী হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল

বিস্ফোরক মামলায় খালাস পেলেন বিএনপি নেতা এ্যানীসহ ৯ জন

ফ্যাসিস্টমুক্ত গণমাধ্যম জাতির জন্য আশীর্বাদ -সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজার

গণহত্যা মামলায় হাসিনাকে হাজিরার নির্দেশ, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ

সাভারে অসহায় বিধবা নারীকে আর্থিক সহায়তা দিলেন বিএনপি নেতা খোরশেদ আলম