মব ও কিশোর গ্যাং রুখতে হবে
০২ জুন ২০২৫, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ০২ জুন ২০২৫, ১২:০৬ এএম

গত শনিবার রাজধানীর দারুসসালাম থানার আহম্মদ নগরের হাড্ডিপট্টি এলাকায় পিটিয়ে দুই যুবককে হত্যা করা হয়েছে। তাদের একজনের নাম তানভীর ও অপরজনের নাম জাহিদ। ওরা মাদক ব্যবসা, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ইত্যাদির সঙ্গে জড়িত ছিল বলে জানা গেছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের বরাতে পত্রিকান্তরে বলা হয়েছে, শুক্রবার রাত পৌনে ৩টার দিকে হাড্ডিপট্টিতে তানভীরের নেতৃত্বে আশরাফুল, বিশু ও জাহিদসহ বেশ কয়েকজন মাদক কারবারি দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়। তখন পুলিশ অভিযান চালিয়ে সাড়ে ৫ কেজি গাজাসহ আশরাফুল ও বিশুকে গ্রেফতার করে। তানভীরসহ অন্যরা পালিয়ে যায়। শনিবার দুপুরের দিকে তানভীরের নেতৃত্বে আবারও বেশ কয়েকজন ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এলাকায় মহড়া দেয়। কারা পুলিশকে তথ্য দিয়েছে, সেটি খোঁজখবর করতে থাকে। এ ঘটনায় এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে। এলাকাবাসী তাদের ধাওয়া করে। তখন অন্যরা পালিয়ে গেলেও তানভীর ও জাহিদকে গণপিটুনি দেয়া হলে তারা ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, এলাকাটি দারুসসালাম থানার শেষ প্রান্তে অবস্থিত হওয়ায় মাদক ব্যবসায়ী, কিশোর গ্যাং, ছিনতাইকারী ইত্যাদির অভয় আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে এলাকায় ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও নারীদের উত্ত্যক্ত করার ঘটনা বেড়ে গেছে। গণপিটুনিতে নিহত তানভীর ও জাহিদ কিশোর গ্যাং লিডার টুন্ডা বাবু গ্রুপের সদস্য। এই গ্রুপে ১০-১৫ জন সদস্য রয়েছে বলে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন। অন্য আরেক খবরে জানা গেছে, গত শুক্রবার হাইকোর্ট মাজার এলাকায় এক অজ্ঞাত পরিচয় যুবককে কিছু লোক পিটিয়ে আহত করে। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শনিবার দুপুরে তার মৃত্যু হয়। স্মরণ করা যেতে পারে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে গণপিটুটিতে নিহত হওয়ার ঘটনা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ওয়েব সাইটে দেয়া তথ্যমতে, গণঅভ্যুত্থানের মাস গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ৯ মাসে সারাদেশে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে ১৬১ জন। গত বছরের শেষ ৫ মাসে নিহত হয়েছে ৯৬ জন। আর চলতি বছরের প্রথম ৪ মাসে ৬৫ জন। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এটা গণপিটুনিতে নিহতের সর্বোচ্চ সংখ্যা এবং অত্যন্ত উদ্বেগজনক। কারণে-অকারণে গণপিটুনিতে হতাহত করা এখন সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। কারণ থাক বা না থাক কাউকে হত্যা করার অধিকার কারো নেই। গণপিটুনি দেয়া মানে আইন হাতে তুলে নেয়া, যার এখতিয়ার কোনো আইন কাউকে দেয়নি। গণপিটুনিতে হত্যাকা- বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের নামান্তর। কেউ অন্যায়-অপরাধ করলে তাকে আইনের হাওলায় তুলে দিতে হবে। আইন মোতাবেক তার বিচার ও শাস্তি হবে। আইন হাতে তুলে নেয়া বিশৃংখলা ও অরাজকতা সৃষ্টি করা আইনশৃংখলা ও জননিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। উসকানি দিয়ে মব সৃষ্টি করা এবং মবের মাধ্যমে কারো বাড়িঘরে হামলা কিংবা গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করার বেশ কিছু ঘটনা লক্ষ করা গেছে। এগুলো সুপরিকল্পিত হামলা ও হত্যাকান্ড, সন্দেহ নেই। এভাবে হামলা হত্যাকান্ড ঘটতে থাকলে কেউই নিরাপদ বোধ করতে পারে না।
স্বৈরাচারের বিদায়ের পর অন্তর্বর্তী সরকারের ১০ মাস হতে চললো। এর মধ্যে আইনশৃংখলার উন্নতি তেমন একটা হয়নি। শুরুতেই সরকারের তরফে বলা হয়েছিল, সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ন। সরকার সে কথা রাখতে পারেনি। দেশজুড়ে চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, দখল, চাঁদাবাজি, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, খুন-সন্ত্রাসসহ বিভিন্ন অপরাধ বরং বেড়েছে। স্বৈরাচারের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হিসাবে ভূমিকাপালনকারী পুলিশ বাহিনী এখনো স্বাভাবিক ও দায়িত্বশীল হয়ে উঠতে পারেনি। এমতাবস্থায়, বিভিন্ন অপরাধীচক্র বিশেষ করে শীর্ষ সন্ত্রাসীরদের দলবল, কিশোর গ্যাং, চোর, ডাকাত, ছিনতাইকারী, রাজনৈতিক দখলবাজ ও চাঁদাবাজরা যাচ্ছেতাই করার সুযোগ পেয়েছে এবং তারা সে সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে এতটুকু কার্পণ্য করছে না। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সাঙ্গপাঙ্গরা খুন, চাঁদাবাজি ইত্যাদি করছে। কিশোর গ্যাং ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বড় শহরগুলোতে দাপিয়ে বেড়াতে শুরু করেছে। ছিনতাই-রাজাহানি বেড়ে গেছে সর্বত্র। দখলবাজি-চাঁদাবাজিও সমানে চলছে। সব ধরনের অপরাধ এভাবে বেড়ে যাওয়ার পেছনে আইনশৃংখলা বাহিনীর অপারগতা ও ব্যর্থতা যেমন দায়ী, তেমনি দায়ী মানুষের আর্থিক দৈন্য, অভাব ও দারিদ্র্য বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের সংকট। দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। অর্থনীতির অধিকাংশ সূচক নি¤œগামী। রেমিটেন্স ছাড়া কোনো ক্ষেত্রেই ভালো খবর নেই। রফতানি বাড়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। রাজস্ব আদায় টার্গেট থেকে অনেক দূরে। বিনিয়োগে চলছে খরা। বিদেশি বিনিয়োগ তো নেই বললেই চলে, দেশীয় বিনিয়োগেরও একই অবস্থা। বিনিয়োগ না হলে উৎপাদন, রফতানি, ব্যবসা-বাণিজ্য, কর্মসংস্থান কীভাবে হবে? অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, ব্যাংকব্যবস্থার উন্নয়ন, বিনিয়োগ বৃদ্ধি ইত্যাদি কোনো ক্ষেত্রেই সরকার আশাব্যাঞ্জক কিছু দেখেিত পারেনি। কৃষির যে ধারাবাহিকতা, তার জন্য সরকারের কোনো অবদান নেই। শিল্পের ক্ষেত্রে সরকার ব্যর্থ। সরকারের নীতি-ব্যবস্থার কারণে বহু শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ওই সব শিল্পকারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা বেকার হয়ে পড়েছে। এতে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে। বেশিরভাগ মানুষের হাতে টাকা নেই। দারিদ্র্য এই সরকারের সময়ে আরো বেড়েছে। মূল্যস্ফীতি ক্রমবর্ধমান। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার কোনো আশার আলো দেখাতে পারছে না। সামষ্টিক অর্থনীতির বেহাল ও গণ অর্থনীতির এহেন সংকটজনক পরিস্থিতিতে দেশে অপরাধ প্রবণতা আরো বাড়তে পারে বলে পর্যবেক্ষকদের আশংকা।
বিশেষ করে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য, ছিনতাই, রাহাজানি বাড়তে পারে। ঘরে খাবার না থাকলে, খাবার কেনার উপায় না থাকলে, কাজ না থাকলে সাধারণ নিরীহ মানুষও বিভিন্নভাবে অপরাধে লিপ্ত হয়ে যেতে পারে। আশঙ্কার এসব দিক সামনে রেখে সরকারকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। গণঅর্থনীতি জোরদারে পদক্ষেপ নিতে হবে। সামষ্টিক অর্থনীতি বিকাশেও কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আইনশৃংখলা সুরক্ষায় উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। শীর্ষ সন্ত্রাসী ও কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে এখনই তৎপর হতে হবে। ইতোমধ্যে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে এবং দু’জনকে ধরা হয়েছে। এটা আশার কথা। কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধেও অনুরূপ অভিযান চালাতে হবে। কিশোর গ্যাং অনেক সময় ভাড়াটে হিসেবে সন্ত্রাস ও হত্যায় জড়িত হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর এক শ্রেণির নেতাও এদের ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ আছে। এ দিকে সংশ্লিষ্ট সকলকে খেয়াল রাখতে হবে। কোনোকাজেই কিশোর গ্যাংকে ব্যবহার করা যাবে না। কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধসহ সকল অপরাধের বিষয়ে জনসাধারণকে সতর্ক করতে হবে। মসজিদের ইমাম সামাজিক নেতৃবৃন্দ এবং সচেতন সবাইকে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ভূমিকা রাখতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

ইরানে মার্কিন বর্বরোচিত হামলা বিশ্বমানবতাকে ভাবিয়ে তুলছে

কমিটি গঠনের ২দিন পরই স্থগিত হলো শেরপুরের নালিতাবাড়ী এনসিপির কমিটি !

প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নিয়ে বিএনপির নতুন প্রস্তাব

রাতের ভোটের নুরুল হুদাকে ধরে পুলিশে দিলো বিক্ষুব্ধ জনতা

ট্রাম্পের বিশ্বাসঘাতকতা

সাহেবাবাদ ডিগ্রি কলেজের গভর্নিং বোর্ডের সভাপতি হলেন ব্যারিস্টার আব্দুল আল মামুন

মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক এমপি ফয়সল বিপ্লব গ্রেপ্তার

শেরপুরে জনপ্রিয় ষাড়ের মই দৌড় প্রতিযোগীতায় আনন্দে মেতে উঠে হাজারো মানুষ

শাহরাস্তিতে ডাকাতিয়া নদীতে পড়ে শিশু নিখোঁজের ৫ ঘন্টা পর মৃত উদ্ধার করলো ডুবুরিরা

জকিগঞ্জে ‘মৃত ব্যক্তি’ জীবিত ফিরে এলেন: দাফনের আগ মুহূর্তে চাঞ্চল্যকর ঘটনা

কুড়িগ্রামে ট্রাক চাপায় প্রাণ গেলো যুবকের

ডা. জোবাইদা রহমানের জন্মদিনে রূপগঞ্জে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি উদ্বোধন

আজ ‘মার্চ টু সচিবালয়’ ঘোষণা চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের

অবশ্যই ইসি পুনঃগঠন হবে : এনসিপি

চার্জ গঠন বিষয়ে শুনানি ২৯ জুন

উন্নতমানের গবেষণার পরিবেশ পেলে মেধাবীরা আবার দেশে ফিরবে : সালাহ উদ্দিন আহমেদ

সচিবালয়ের ভেতর সব সংগঠন বাতিলের নির্দেশনা চেয়ে রিট

দুদকের মামলায় স্ত্রীসহ খালাস পেলেন বিএনপি নেতা দুলু

নিজের সুরক্ষা চেয়ে মা-বাবার বিরুদ্ধে মেয়ের মামলা

দক্ষিণ সিটিতে সকল নাগরিক সেবা প্রদানের আহ্বান, গাফিলতিতে ব্যবস্থা