বন্যা মোকাবিলায় এখনই উদ্যোগ নিতে হবে
০৩ জুন ২০২৫, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ০৩ জুন ২০২৫, ১২:০৬ এএম

কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাত ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দেশের উত্তর-পূর্ব ও উত্তর-মধ্যাঞ্চলের অন্তত ১১টি জেলার নিম্নাঞ্চলে বানের পানি প্রবেশ করেছে। জেলাগুলো হলো: সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বরগুনা, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, বান্দরবান, নীলফামারী ও লালমনিরহাট। এসব জেলার নদনদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেক নদনদীর পানি বিপদসীমার ওপর অথবা কাছাকাছি দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেটের গোলাপগঞ্জে টিলা ধসে একই পরিবারের চারজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। জানা যায়, জেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় বা টিলার পাদদেশে পাঁচ শতাধিক পরিবার অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছে। তাদের অন্যত্র স্থানান্তর না করলে অনুরূপ ঘটনা আরো ঘটতে পারে বলে আশংকা পর্যবেক্ষকদের। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর মোতাবেক, বিভিন্ন এলাকায় গ্রামের পর গ্রাম পানিতে ডুবে গেছে। অধিকাংশ বন্যানিরোধ ও বেড়িবাঁধে ফাটল বা ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। বন্যানিরোধ বা বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণ ধসে পড়লে পরিস্থিতির অবর্ণনীয় অবনতি ঘটবে। বর্ষাকাল আসেনি; তবে খুবই নিকটবর্তী। বর্ষা শুরু হলে পানির চাপ আরো বাড়বে। বন্যার বিস্তার তখন অবধারিত। দেশের বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি বা তার অবনতির জন্য ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢল বিশেষভাবে দায়ী। এর মধ্যেই জানা গেছে, ভারতের আসামে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে সেখানকার অন্তত ছয় জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। ভারতের আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, মিজোরাম প্রভৃতি রাজ্য তো বটেই, এমনকি উত্তর ভারতে বৃষ্টিপাত হলেও তার পানি বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সাগরে পতিত হয়। যখন একসঙ্গে বিপুল পানিরাশি বাংলাদেশে আছাড়ে পড়ে তখন এখানে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। জান-মাল ও সম্পদ-সম্পত্তির অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হয়। দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, ভারত তার বৃষ্টিপাত, বন্যা পরিস্থিতি, নদীর অবস্থা সংক্রান্ত, কোনো খবর, তথ্য-উপাত্ত বাংলাদেশকে সরবরাহ করে না, যদিও এ সংক্রান্ত সমঝোতা দু’দেশের মধ্যে রয়েছে। শুধু তাই নয়, ভারতে বন্যা হলে সেখানকার অভিন্ন নদনদীতে দেয়া বাঁধ একযোগে খুলে দিয়ে বাংলাদেশকে ডুবিয়ে দেয়া হয়। অথচ, সবঝোতা মোতাবেক ভারতের তরফে যদি বান-বন্যা সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ এবং বাঁধ খুলে দেয়ার কথা আগাম জানানো হয়, তাহলে বাংলাদেশ সর্তক ও সাবধান হতে পারে। বন্যা মোকাবিলায় সম্ভাব্য ব্যবস্থা নিতে পারে। বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কিছু কমানো সম্ভবপর হতে পারে। আসল কথা, ভারত পানিকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। শুকনা মওসুমে অভিন্ন নদনদীর পানি না দিয়ে বাংলাদেশকে শুকিয়ে মারে। আবার বর্ষা মওসুমে বাঁধ ছেড়ে দিয়ে বা পানি ঠেলে দিয়ে ডুবিয়ে মারে। বলা বাহুল্য, ভারত ইচ্ছে করে বাংলাদেশকে দাবিয়ে রাখা বা জব্দ করার জন্য পানিঅস্ত্র ব্যবহার করে থাকে।
বাংলাদেশ বছরজুড়েই একটা না একটা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে থাকে। ক’দিন আগে বঙ্গোপসাগর নিম্নচাপের কারণে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় উপকূলীয় এলাকাসহ দেশের সর্বত্র মানুষের অপূরণীয় দুর্ভোগে পড়তে হয়। উপকূলীয় এলাকায় বেড়িবাঁধসহ ফসলাদির ব্যাপক ক্ষতি হয়। এই পরিস্থিতি চলমান থাকার মধ্যেই বন্যার পদাঘাত শুরু হয়েছে। বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যই বন্যানিরোধ বা উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। দুর্ভাগ্যের বিষয়, বন্যানিরোধ বা বেড়িবাঁধ কোনোটাই টেকসই করে নির্মিত নয়। বন্যা বা জলোচ্ছ্বাস শুরু হলে শুরুতেই বাঁধগুলোতে ফাটল দেখা দেয়। নির্মাণক্রুটিই যে এর কারণ, তাতে সন্দেহ নেই। এজন্য দায়ী নির্মাণ কর্তৃপক্ষ বা পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রতিবছরই বাঁধ মেরামত বা সংস্কারের জন্য প্রকল্প নেয়া হয়, বরাদ্দ দেয়া হয়। অথচ, সেই সংস্কার ও মেরামতের কাজ ঠিক মতো হয় না। বরাদ্দকৃত অর্থের বেশিরভাগ লুটপাট হয়ে যায়। এ ব্যাপারে জবাবদিহি নেয়ার ও দেয়ার কোনো ব্যবস্থা কার্যকর নেই। স্বৈরাচারের সাড়ে ১৫ বছরে অনেক ধরনের মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু উপকূলীয় এলাকা সুরক্ষা এবং উপকূলবাসীর সংকট-সমস্যার সুরাহার কোনো ব্যাপকভিত্তিক ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা অথবা প্রকল্প নেয়া হয়নি। উপকূল ও উপকূলবাসীর পক্ষে সেসব ছোটখাটো প্রকল্প নেয়া হয়েছে তা ঠিকমত বাস্তবায়িত হয়নি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার উপকূলীয় জনগণের হিতার্থে যথোপযুক্ত পরিকল্পনা ও প্রকল্প গ্রহণ করবে, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তা বাস্তাবায়নের উদ্যোগ নেবে, এটা আশা করা হলেও তেমন কোনো পরিকল্পনা ও প্রকল্পের কথা দেশের মানুষ এখনো জানতে পারেনি। উল্লেখ করা যেতে পারে, জলবায়ু পরিবর্তনে যেসব দেশ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ, বাংলাদেশ তার অন্যতম। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের উপকূলীয় বিস্তীর্ণ এলাকা সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে ডুবে যাবে। উপকূলীয় এলাকার বিপুল সংখ্যক মানুষ নিরালম্ব হয়ে পড়বে। তাদের অন্য জায়গায় সরিয়ে নেয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। দেশের জন্য, জাতির জন্য এটা যে কত বড় বিপদ, তা বলে শেষ করা যাবে না। এই বিপদ থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য কোনো টেকসই পরিকল্পনা ও প্রকল্প নেই। সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি আমরা রুখতে পারব না। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কীভাবে উপকূলীয় ভূমি রক্ষা করা যাবে, কীভাবে উপকূলীয় জনগণের জীবন-জীবিকা বাঁচানো যাবে। সে চেষ্টা অবশ্যই আমরা করে দেখতে পারি। সে উদ্যোগ-পদক্ষেপ এখনই নিতে হবে। বন্যা যেহেতু আমাদের দেশে সাংবাৎসারিক ব্যাপার। সুতরাং বন্যানিরেধে অবশ্যই উপযুক্ত ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
বলা হয়, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। দেহের শিরা-উপশিরার মতো দেশজুড়ে বিস্তৃত হয়ে গেছে শত শত ছোট-বড় নদী। কিন্তু ভারতের পানি আগ্রাসনের কারণে একদা প্রবাহমান অনেক নদীরই আর অস্তিত্ব নেই। এখন যা টিকে আছে সেগুলোর অবস্থাও শোচনীয়। ওদিকে নদীখেকোরা এতই সক্রিয় ও প্রভাবশালী যে, অনেক নদী বা নদী-অংশ তাদের পেটে চলে গেছে। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, তিস্তা, কর্ণফুলী ইত্যাদি বড় নদীও এখন মরো মরো। প্রাকৃতিক কারণে নদী ভরাট হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক। আমাদের বিদ্যমান নদীগুলোও ভরাট হয়ে গেছে। তাদের পানিধারণ ক্ষমতা অনেক কমে গেছে। এমতাবস্থায়, বর্ষার বৃষ্টির পানিসহ সীমান্তের ওপার থেকে আসা পানি নদীগুলো বুকে ধরে রাখতে পারে না। পানি উপচে পড়ে দুই তীরবর্তী স্থাপনা জনপদ ও শস্যক্ষেত্র ভাসিয়ে নিয়ে যায়। বন্যার প্রকোপ ঠেকাতে হলে নদীগুলো সংস্কার করতে হবে। নদী গতিময় ও ¯্রােতময় হলে পানি দ্রুত সাগরে চলে যাবে। বন্যা ও জলাবদ্ধতা স্বভাবতই কমে যাবে। নদী ব্যবস্থাপনার একটা বড় পরিকল্পনা এখন জরুরি। সন্দেহ নেই, পানি উন্নয়ন বোর্ড তার দায়িত্ব পালনে শোচনীয় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে বছরের পর বছর। এই লাগাতার ব্যর্থতা তার প্রয়োজনীয়তাকেই অপ্রয়োজনীয় করে তুলেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে সক্রিয় ও জাগ্রত করে তুলতে হবে। কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। চলমান পরিস্থিতি ও আসন্ন বন্যা মোকাবিলায় পানি উন্নয়ন বোর্ড কী করতে পারে, তা জরুরি ভিত্তিতে নির্ধারণ করে দিতে হবে। একইসঙ্গে, অর্থ, পরিকল্পনা, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি সম্পদ এবং পরিবেশ সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহের সমন্বয়ে একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

ইরানে মার্কিন বর্বরোচিত হামলা বিশ্বমানবতাকে ভাবিয়ে তুলছে

কমিটি গঠনের ২দিন পরই স্থগিত হলো শেরপুরের নালিতাবাড়ী এনসিপির কমিটি !

প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নিয়ে বিএনপির নতুন প্রস্তাব

রাতের ভোটের নুরুল হুদাকে ধরে পুলিশে দিলো বিক্ষুব্ধ জনতা

ট্রাম্পের বিশ্বাসঘাতকতা

সাহেবাবাদ ডিগ্রি কলেজের গভর্নিং বোর্ডের সভাপতি হলেন ব্যারিস্টার আব্দুল আল মামুন

মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক এমপি ফয়সল বিপ্লব গ্রেপ্তার

শেরপুরে জনপ্রিয় ষাড়ের মই দৌড় প্রতিযোগীতায় আনন্দে মেতে উঠে হাজারো মানুষ

শাহরাস্তিতে ডাকাতিয়া নদীতে পড়ে শিশু নিখোঁজের ৫ ঘন্টা পর মৃত উদ্ধার করলো ডুবুরিরা

জকিগঞ্জে ‘মৃত ব্যক্তি’ জীবিত ফিরে এলেন: দাফনের আগ মুহূর্তে চাঞ্চল্যকর ঘটনা

কুড়িগ্রামে ট্রাক চাপায় প্রাণ গেলো যুবকের

ডা. জোবাইদা রহমানের জন্মদিনে রূপগঞ্জে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি উদ্বোধন

আজ ‘মার্চ টু সচিবালয়’ ঘোষণা চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের

অবশ্যই ইসি পুনঃগঠন হবে : এনসিপি

চার্জ গঠন বিষয়ে শুনানি ২৯ জুন

উন্নতমানের গবেষণার পরিবেশ পেলে মেধাবীরা আবার দেশে ফিরবে : সালাহ উদ্দিন আহমেদ

সচিবালয়ের ভেতর সব সংগঠন বাতিলের নির্দেশনা চেয়ে রিট

দুদকের মামলায় স্ত্রীসহ খালাস পেলেন বিএনপি নেতা দুলু

নিজের সুরক্ষা চেয়ে মা-বাবার বিরুদ্ধে মেয়ের মামলা

দক্ষিণ সিটিতে সকল নাগরিক সেবা প্রদানের আহ্বান, গাফিলতিতে ব্যবস্থা