কোরবানির তাৎপর্য ও শিক্ষা

Daily Inqilab ড. বি এম শহীদুল ইসলাম

০৫ জুন ২০২৫, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ০৫ জুন ২০২৫, ১২:০৭ এএম

মুসলিম উম্মাহর জন্য দুটি উৎসব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর একটি হচ্ছে ঈদুল ফিতর এবং অন্যটি ঈদুল আজহা। ঈদুল ফিতর রোজার সাথে সম্পৃক্ত এবং ঈদুল আজহা কোরবানির সাথে সম্পৃক্ত। পবিত্র ঈদুল আজহা অর্থাৎ কোরবানির তাৎপর্য, উদ্দেশ্য ও শিক্ষা অপরিসীম। আজহা শব্দের অর্থ ত্যাগ বা উৎসর্গ। আর ঈদ শব্দের অর্থ আনন্দ বা উৎসব। এই বিবেচনায় ঈদুল আজহা শব্দের অর্থ দাঁড়ায় ত্যাগের বা উৎসর্গের উৎসব।

আজহা শব্দটি ‘উজহিয়াহ’ থেকে এসেছে। ‘উজহিয়াহ’ শব্দটি ব্যবহার করে সেই পশুকে বোঝানো হয়, যা ঈদুল আজহা বা কোরবানির দিন মহান আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে জবাই করা হয়। অন্যদিকে ‘কোরবুন’ শব্দ থেকে ‘কোরবান’ শব্দের উৎপত্তি। কোরবান অর্থ হচ্ছে উৎসর্গ করা, নৈকট্য লাভ করা, সান্নিধ্য অর্জন করা ইত্যাদি। কোরবান শব্দটির ব্যবহার পবিত্র কুরআনে কয়েক জায়গায় রয়েছে। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আদমের (আ.) দুই সন্তান হাবিল ও কাবিল আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোরবানি করেন। তাদের একজনের কোরবানি কবুল হয় এবং অপর জনের কোরবানি আল্লাহর নিকট কবুল হয়নি। পবিত্র কুরআনে এ সম্পর্কে আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা বলেন: ‘আপনি তাদের- আদমের দুই পুত্রের বাস্তব অবস্থা পাঠ করে শুনিয়ে দিন। যখন তারা উভয়েই কোরবানি করেছিল, তখন তাদের একজনের কোরবানি গৃহীত হয়েছিল এবং অপরজনের কোরবানি গৃহীত হয়নি।’ সুরা মায়েদা, আয়াত ২৭। আল্লাহ এখানে ‘কোরবান’ শব্দ ব্যবহার করেছেন। আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন: ‘তারা কেন সেদিন তাদের সাহায্য করতে পারল না, যাদের তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে নৈকট্য হাসিলের জন্য মাবুদ বানিয়ে নিয়েছিল।’ সুরা আহকাফ: ২৮ আয়াত। অন্য আয়াতে আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন: ‘যারা বলে আল্লাহ তায়ালা তো আমাদের আদেশ দিয়েছেন, যেন আমরা কোনো রাসুলের ওপর ঈমান না আনি, যতক্ষণ না তিনি আমাদের কাছে এমন একটি কোরবানি এনে হাজির করবেন, যাকে গায়েব থেকে এক আগুন এসে খেয়ে ফেলবে।’ সুরা ইমরান: ১৮৩ আয়াত।

কোরবানির আরেকটি আরবি শব্দ হচ্ছে ‘নুসুক’। নুসুক অর্থ ত্যাগ করা, উৎসর্গ করা, বিসর্জন দেয়া ইত্যাদি। যাকে স্যাক্রিফাইস বলা হয়। মূলত এসব শব্দের আসল থিম হচ্ছে- ভোগের বিপরীত ত্যাগ করা বা উৎসর্গ করা। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, ‘কুল ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়াইয়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বি আলামিন।’ অর্থাৎ ‘আপনি বলুন; নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মৃত্যু একমাত্র আল্লাহরই জন্য।’ সুরা আনআম, আয়াত: ১৬২।

কোরবানির আরেকটি আরবি পরিভাষা হচ্ছে- নাহার। ‘নাহার’ অর্থও উৎসর্গ করা, ত্যাগ করা বিসর্জন দেয়া, যা নুসুক শব্দের অনুরূপ অর্থ বহন করে। আল্লাহ তায়ালা বলেন: ‘ফা-সল্লিলি রাব্বিকা ওয়ানহার।’ অর্থ হচ্ছে-‘অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি করুন।’ সুরা কাওসার, আয়াত: ২। এ কারণেই কোরবানির বা ঈদুল আজহার দিনকে ‘ইয়াওমুন নাহার’ বলা হয়।

কোরবানির অন্য একটি আরবি পরিভাষা হচ্ছে, ‘মানসাক’। মানসাক শব্দের অর্থ ত্যাগ করা, উৎসর্গ করা, কোরবানি করা, নৈকট্য লাভ করা, সান্নিধ্য অর্জন করা। আল্লাহতায়ালা বলেন: প্রত্যেক জাতির জন্য আমি পশু কোরবানির নিয়ম করে দিয়েছি, যাতে করে সেই জাতির লোকেরা সেসব পশুর ওপর আল্লাহর নাম নিতে পারে, যা তিনি তাদের জন্য দান করেছেন।’ সুরা আল হাজ্জ্ব: ৩৪ আয়াত। এখানে মানসাক বলতে কোরবানি, ত্যাগ বা উৎসর্গ করাকে বুঝানো হয়েছে। তবে উজহিয়া, কোরবানি, নুসুক, নাহার, মানসিক যে নামই ব্যবহার করেন না কেন, সবগুলোর অর্থ ও উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন। সেটা হলো, আত্মত্যাগ, বিসর্জন ও উৎসর্গের মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি, সান্নিধ্য অর্জন ও নৈকট্য লাভ করা। কারণ, কোরবানির ত্যাগ ও উৎসর্গ আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।

সারা জাহানের প্রতিপালক মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। তিনি আমাদের সবচেয়ে প্রিয়। সাধারণত সন্তান-সন্ততি, পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজনের জন্য আমরা আমাদের প্রিয় জিনিসটি উৎসর্গ করে আনন্দ অনুভব করি। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবচেয়ে প্রিয় বিধায় বান্দা হিসেবে আমাদের তার জন্য সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটি উৎসর্গ করতে হয়। সেটা করতে আমরা কতটুকু প্রস্তুত, সেই পরীক্ষাই মহান রব তার প্রিয় বান্দা ও নবী ইবরাহিম (আ.) মাধ্যমে নিতে চেয়েছেন। আল্লাহ তাকে স্বপ্নে আদেশ করেছেন বৃদ্ধ বয়সে পাওয়া এবং তরুণ বয়সে উপনীত হওয়া সন্তান ইসমাইলকে (আ.) জবাই করার জন্য। একই স্বপ্ন ইবরাহিম (আ.) তিন দিন দেখার পর প্রিয় সন্তান ইসমাইলকে বলেন: ‘হে বৎস! আমি স্বপ্নে দেখি যে, তোমাকে জবাই করছি। এখন তোমার মত কী? সে বলল, হে আমার পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে আপনি তাই করুন। ইনশাআল্লাহ আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন।’ সুরা সফফাত, আয়াত: ১০২।

এখানে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, দুই নবী যারা পিতা-পুত্রও বটে, তারা একজন আরেকজনকে জবাই করার কথোপকথন করছেন। পিতা বলছেন, আমি স্বপ্নে দেখেছি তোমাকে জবাই করছি। জবাবে জবাইয়ের শিকার হতে যাওয়া পুত্র বলছেন, আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তাই করুন। নবী-রাসুলদের স্বপ্নও ওহি এবং আল্লাহর আদেশ পালন করা জীবনের চেয়েও বেশি দামি। পিতা-পুত্র দুই নবী সেটিই প্রমাণ করেছেন। অনেকে মনে করেন, বান্দা আল্লাহর নিজের হাতে তৈরি, সব সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ এবং প্রিয় হওয়ার পরও কেন বান্দাকে জবাই করতে বললেন? আসলে মাশুকে আ’লা বা সবচেয়ে বড় ভালোবাসার সম্পদ আল্লাহ পরীক্ষা করে দেখতে চেয়েছেন যে, নিজ হাতে বানানো বান্দা দুনিয়ায় যাওয়ার পর তার আদেশ পালন করতে কতটুকু প্রস্তুত থাকে, কতটুকু আনুগত্য প্রকাশ করে। পিতা-পুত্র তথা ইবরাহিম (আ.) ও ইসমাইল (আ.) আল্লাহর নির্দেশের পূর্ণাঙ্গ আনুগত্য প্রকাশ করলেন এবং ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। ইবরাহিম (আ.) ইসমাইল (আ.)-কে বেঁধে শুইয়ে দিয়ে তার গলায় ছুরি চালানোর সময় ধারালো ছুরি কাজ করছিল না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তখন আমি তাকে ডেকে বলি; হে ইবরাহিম! তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালে। এভাবে আমি সৎকর্মশীলদের পুরস্কার দিয়ে থাকি। নিশ্চয় এটা এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তার পরিবর্তে দিলাম জবাই করার এক মহান জন্তু।’ সুরা সফফাত, আয়াত: ১০৫-১০৭।

যুগে যুগে প্রত্যেক জাতির জন্যই কোরবানির বিধান ছিল। আল্লাহ বলেন: ‘আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কোরবানির বিধান করে দিয়েছি। তিনি জীবনোপকরণের জন্য যেসব চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছেন, সেগুলোর ওপর তারা যেন আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে।’ সুরা হজ, আয়াত: ৩৪। কিন্তু বর্তমানে যে কোরবানি প্রচলিত, সেটা শুরু হয়েছে ইবরাহিম (আ.) ও ইসমাইলের (আ.) মাধ্যমে। আমাদের সৌভাগ্য যে, আল্লাহ ঘোষণা দিয়ে পরীক্ষা নিয়েছেন এবং দুজন মহান পয়গম্বর সেই পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়ে আমাদের জন্য ত্যাগ ও উৎসর্গের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, যা মুসলিম জাতির জন্য গৌরবেরও বটে।

আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং তাকওয়া অর্জনই কোরবানির উদ্দেশ্য। কারণ উপহার, ত্যাগ স্বীকার ও উৎসর্গ যার জন্য করা হয়, তিনিই সেটা ভোগ করার অধিকার রাখেন। কিন্তু কোরবানি এবং আল্লাহর নামে অন্যান্য উৎসর্গের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন ধরনের। এখানে যার জন্য উৎসর্গ করা হয়, তিনি স্পর্শও করে দেখেন না, বরং কোরবানিদাতা নিজেই তা ভক্ষণ করেন এবং আত্মীয়-স্বজন ও দরিদ্রদের মধ্যে বণ্টন করেন। সেটাও আল্লাহর নির্দেশেই হয়ে থাকে। তিনি বলেন: ‘এবং কাবার নামে উৎসর্গ করা উটকে আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন করেছি। এতে তোমাদের জন্য মঙ্গল রয়েছে। সুতরাং সারিবদ্ধভাবে বাঁধা অবস্থায় তাদের জবাই করার সময় তোমরা আল্লাহর নাম উচ্চারণ কর। অতঃপর যখন তারা কাত হয়ে পড়ে যায়, তখন তা থেকে তোমরা আহার কর। এমনিভাবে আমি এগুলোকে তোমাদের বশীভূত করে দিয়েছি, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। এগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, কিন্তু তার কাছে পৌঁছে তোমাদের মনের তাকওয়া। এমনিভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের বশ করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর মহত্ম ঘোষণা কর এ কারণে যে, তিনি তোমাদের সঠিক পথ প্রদর্শন করেছেন। সুতরাং সৎ কর্মশীলদের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন। সুরা হজ, আয়াত: ৩৬-৩৭। এখানে কোরবানির তাৎপর্য ও শিক্ষা বর্ণনা করার পাশাপাশি কোরবানির গোশত বণ্টনের নিয়মও আল্লাহতায়ালা বলে দিয়েছেন। কোরবানির গোশত নিজের, হাত পাতা ভিখারী এবং হাত না পাতা সম্ভ্রান্ত আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর হক। তাই কোরবানির গোশতকে আমরা তিন ভাগ করে থাকি। এটি আল্লাহতায়ালার হুকুম।

কোরবানি কবুল হওয়ার জন্য তাকওয়া বা অন্তরের সুপ্ত বাসনাই হচ্ছে আসল। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা বলেছেন: ‘তার কাছে রক্ত-মাংস পৌঁছায় না, কিন্তু তার কাছে পৌঁছায় মনের তাকওয়া’। মুসলিম শরীফে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন: ‘তাকওয়া এখানে’। তিনবার বলার পর কলবের দিকে ইশারা করেছেন। তাকওয়া অর্জনের জন্য পরিপূর্ণভাবে খাঁটি মনে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জনের জন্য হতে হবে কোরবানি। কোরবানি না করলে ‘মানুষ কী বলবে’, ‘আমার সন্তানরা কার দরজায় যাবে’, এমন চিন্তা যদি কোরবানির উদ্দেশ্য হয়, তাহলে গোশত খাওয়াই হবে কোরবানির মূল উদ্দেশ্য। এতে তাকওয়া অর্জন হবে না। আর যদি আল্লার সন্তুষ্টিই একমাত্র উদ্দেশ্য হয়, তাহলে আপনার-আমার কোরবানির গোশত অন্য কোথাও যাবে না। বর্তমানে অনুষ্ঠানিকতা ও লৌকিকতা আমাদের ওপর প্রকা-ভাবে চেপে বসেছে। অথচ, ইসলাম আনুষ্ঠানিকতা ও অনুষ্ঠানসর্বস্ব কোনো জীবনবিধান নয়। ইসলামের প্রতিটি ইবাদত-বন্দেগি হতে হবে অহংকারমুক্ত ও রিয়ামুক্ত। লৌকিকতা ও লোক দেখানো ইবাদত-বন্দেগিকে এতো বেশি নিরুৎসাহিত করা হয়েছে যে, রিয়া তথা লোক দেখানো কর্মকে শিরকে খফি বা ছোট শিরক বিবেচনা করা হয়েছে ইসলামে। ইতিহাসের প্রথম আদম সন্তান হাবিল-কাবিলের কোরবানির মতো কবুল হয়েছে কি হয়নি, সেটি ভাবার বিষয় নয়। আমাদের কোরবানি কবুল হচ্ছে কিনা সেটিই দেখার বিষয়।

আল্লাহর সৃষ্টি অনেক ক্ষুদ্র প্রাণী রয়েছে। কত জীবের ভয়ে আমরা প্রতিনিয়ত ভীত সন্ত্রস্ত থাকি। সামান্য মশার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা নমরুদকে পাকড়াও করার দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন। অথচ, বিশাল বিশাল জন্তুকে তিনি মানুষের অনুগত করে দিয়েছেন। সেগুলোকে তার নামে উৎসর্গ করাই হচ্ছে কোরবানি। এ জন্যই আল্লাহ কুদরতিভাবে কোরবানির যোগ্য পশুর প্রাচুর্যও দান করেছেন। গরু-মহিষ, উট, ছাগল, দুম্বা ইত্যাদি। একদিনেই কোটি কোটি পশু জবাই হওয়ার পরও ঘাটতি দেখা যায় না। এমনকি পরবর্তী বছরের কোরবানির জন্য পশু পাওয়া যাবে কি না, সে চিন্তাও করতে হয় না। আমাদের দেশের বাস্তবতা বিবেচনায় নিলে বিষয়টি আরো পরিষ্কার হয়। আমদানির সুযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে কীভাবে আমরা কোরবানির পশু উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেছি। সবকিছুই মহান আল্লাহ তায়ালার মহিমা।

কোরবানি ইসলামের অন্যতম নিদর্শন। কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা পশুকে কোরআনে আল্লাহর নিদর্শন বলা হয়েছে এবং এই নিদর্শনকে সম্মান করাকে অন্তরের তাকওয়া বলে অভিহিত করা হয়েছে। সর্বোপরি, তাকওয়ার সাথে কোরবানিতে রয়েছে সমাজের প্রতিটি সদস্যের কল্যাণ। হাত পাততে না পারা এবং হাত পাততে পারা মানুষের জন্য পুষ্টিকর খাবার জোগান হয় কোরবানির মধ্য দিয়ে। কোরবানি না করে এ দুই শ্রেণির মানুষকে যদি কেউ অর্থ দান করে, তবে কতটুকু করবে? এক বা দুই কেজি খাসি বা গরুর গোশত কিনে দেওয়া বা কিনে খাওয়ার পয়সা দেওয়ার মতো মানসিকতা কতজনের আছে তা একটু ভেবে দেখুন। ভিক্ষুকের প্রতি মানুষের আচার-আচরণ সম্পর্কে সবারই কমবেশি জানা আছে। পবিত্র কোরবানি উপলক্ষে তারা সম্মানিত মেহমান হিসেবে মর্যাদা পায়।

পরিশেষে একথা সুস্পষ্টভাবে বলা যায় যে, কোরবানি নিছক কোনো আনন্দ-উল্লাসের উৎসব নয়- আত্মত্যাগ, আত্মোৎসর্গ ও আত্মসমর্পণের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এ কোরবানির প্রবর্তক স্বয়ং আল্লাহতায়ালা। মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইবরাহিম (আ.) ও তাঁর পুত্র ইসমাইল (আ.) যে অবিস্মরণীয় ত্যাগের মহিমা ও দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা চিরস্মরণীয় ও বাস্তব জীবনে প্রতিফলনের লক্ষ্যে কোরবানির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি মুসলমানদের মাঝে ঐতিহাসিকভাবে চালু রয়েছে। মনে রাখতে হবে যে, শুধু পশুর গলায় ছুরি চালিয়ে কোরবানির কোনো সার্থকতা হাসিল করা যায় না। বরং, হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-লালসা, দাম্ভিকতা-অহমিকা, অবৈধ অর্থ লিপ্সা, গিবত-পরনিন্দা, অন্যের সম্পদ দখল করে নিজের নামে চালিয়ে দেয়া, পরশ্রীকাতরতা, দুর্নীতি, দুর্বৃত্তপনা, নারী নির্যাতন, সামাজিক হানাহানি ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মানবীয় সকল প্রকার পশুত্বের গলায় ছুরি চালাতে পারলেই ঈদুল আজহা ও কোরবানির সত্যিকার ফায়দা হাসিল করা সম্ভব হবে। কোরবানির এ মহান শিক্ষা মুসলিম উম্মাহর জীবনে প্রতিফলনের মাধ্যমে আত্মসমর্পণ, আত্মোৎসর্গ ও ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর হয়ে উঠুক।

লেখক: শিক্ষাবিদ গবেষক ও কলামিস্ট।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

অর্থনীতিতে কালো মেঘ

অর্থনীতিতে কালো মেঘ

ড. দেবাশীষ পাল বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন-এর সদস্য (ভৌত বিজ্ঞান) নিযুক্ত

ড. দেবাশীষ পাল বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন-এর সদস্য (ভৌত বিজ্ঞান) নিযুক্ত

অবৈধ গ্যাস সংযোগ উচ্ছেদে তিতাসের অভিযান ও জরিমানা

অবৈধ গ্যাস সংযোগ উচ্ছেদে তিতাসের অভিযান ও জরিমানা

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার হতে হবে : রাশেদ প্রধান

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার হতে হবে : রাশেদ প্রধান

পুলিশকে ছুরিকাঘাত করা ও হত্যাসহ ১২ মামলার আসামি তানভীর আটক

পুলিশকে ছুরিকাঘাত করা ও হত্যাসহ ১২ মামলার আসামি তানভীর আটক

ঢাবি’র অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মো. আজহারুল ইসলামের মৃত্যুতে ভিসি’র শোক প্রকাশ

ঢাবি’র অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মো. আজহারুল ইসলামের মৃত্যুতে ভিসি’র শোক প্রকাশ

৫ আগস্টের পর ছাত্র রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন এসেছে : এ্যানি

৫ আগস্টের পর ছাত্র রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন এসেছে : এ্যানি

সোনারগাঁও পৌর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদকের পদত্যাগ

সোনারগাঁও পৌর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদকের পদত্যাগ

অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে ছুটির দিনেও প্রতিবাদ সমাবেশ

অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে ছুটির দিনেও প্রতিবাদ সমাবেশ

আদাবর ও মোহাম্মদপুরে ডাকাতি-ছিনতাইসহ কিশোর গ্যাংয়ের ২৭ জন গ্রেফতার

আদাবর ও মোহাম্মদপুরে ডাকাতি-ছিনতাইসহ কিশোর গ্যাংয়ের ২৭ জন গ্রেফতার

ময়মনসিংহে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৯, আহত ১৫

ময়মনসিংহে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৯, আহত ১৫

আগামীকাল ইসিতে নিবন্ধনের আবেদন জমা দেবে এনসিপি

আগামীকাল ইসিতে নিবন্ধনের আবেদন জমা দেবে এনসিপি

ভারতীয় নীতিনির্ধারকরা আ.লীগকে পুনর্বাসনে ষড়যন্ত্র করছে : রিজভী

ভারতীয় নীতিনির্ধারকরা আ.লীগকে পুনর্বাসনে ষড়যন্ত্র করছে : রিজভী

এক লাখ ৮ হাজার বাংলাদেশি ২০২৪ সালেই বিদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন

এক লাখ ৮ হাজার বাংলাদেশি ২০২৪ সালেই বিদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন

অন্তর্বর্তী সরকার একটি বিভাগের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট : সারজিস আলম

অন্তর্বর্তী সরকার একটি বিভাগের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট : সারজিস আলম

নয় বছরেও অধরা তনু হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা

নয় বছরেও অধরা তনু হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা

যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ পাচারের দায়ে ভারতীয় শিক্ষার্থীর ৫ বছর কারাদণ্ড

যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ পাচারের দায়ে ভারতীয় শিক্ষার্থীর ৫ বছর কারাদণ্ড

খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিদায়ী জার্মান রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ

খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিদায়ী জার্মান রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ

সিরাজগঞ্জ-৩ আসন : নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করলেন বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা

সিরাজগঞ্জ-৩ আসন : নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করলেন বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা

বিএনপির কাছে নিজেদের দলের লোকই নিরাপদ নয় -রংপুরে সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম

বিএনপির কাছে নিজেদের দলের লোকই নিরাপদ নয় -রংপুরে সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম