ওজন স্তর সংরক্ষণের বিকল্প নেই
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০২ এএম
বিশ্ব ওজোন দিবস পলক্ষে জাতিসংঘের মহাসচিবের বার্তায় জানানো হয়েছে, ধারাবাহিক পদক্ষেপের ফলে ওজোন স্তর ধীরে ধীরে নিরাময়ের পথে। তবে একইসাথে তিনি সতর্ক করেছেন, পৃথিবী এখনো বৈশ্বিক তাপমাত্রা প্রাক-শিল্প যুগের তুলনায় ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বাড়ার ঝুঁকির মুখে রয়েছে। তিনি সরকারগুলিকে প্রোটোকলের কিগালি সংশোধনী অনুমোদন ও বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন। এই সংশোধনীর মাধ্যমে হাইড্রোফ্লুরোকার্বন ধাপে ধাপে কমিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে। এটি শতাব্দীর শেষে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে ০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত এড়াতে সহায়তা করতে পারে। বার্তায় আরও বলা হয়েছে, নতুন জাতীয় জলবায়ু পরিকল্পনায় এসব প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করতে হবে, যাতে তা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস সীমা রক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। এক ডিগ্রির প্রতিটি ভগ্নাংশ গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি পদক্ষেপই জরুরি।
সূর্যের ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি সরাসরি ত্বকে প্রবেশ করে ত্বকের ক্যান্সার, বিশেষ করে মেলানোমা-বহির্ভূত ত্বকের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। অতিবেগুনি রশ্মির সংস্পর্শে চোখের ছানি হতে পারে, যা দৃষ্টিশক্তি হ্রাস ঘটায়। অতিবেগুনি রশ্মি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে। এই রশ্মি জিনের গঠন পরিবর্তন করে মিউটেশন বা বংশগত পরিবর্তনের হার বাড়াতে পারে। ওজোন স্তর ক্ষয়ের ফলে অতিবেগুনি রশ্মি বৃদ্ধি পেলে উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার ফলে ফসলের ফলন হ্রাস পায় এবং গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। সমুদ্রে বসবাসকারী ছোট প্ল্যাঙ্কটন এবং অন্যান্য সামুদ্রিক জীবের জীবনচক্রের উপর অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ে, যা সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ।
ওজোন স্তরের প্রধান উপকারিতা হলো এটি সূর্য থেকে আসা ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে পৃথিবীর জীবজগতকে রক্ষা করে। ওজোন স্তর একটি অদৃশ্য ঢাল হিসেবে কাজ করে এবং পৃথিবীর জীবকূলকে এই মারাত্মক বিকিরণ থেকে বাঁচায়। ওজোন স্তর হচ্ছে পৃথিবীর বায়ুম-লের একটি স্তর যেখানে তুলনামূলকভাবে বেশি মাত্রায় ওজোন গ্যাস থাকে। এই স্তর থাকে প্রধানত স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের নিচের অংশে, যা ভূপৃষ্ঠ থেকে কমবেশি ২০-৩০ কিমি উপরে অবস্থিত। এই স্তরের পুরুত্ব স্থানভেদে এবং মৌসুমভেদে কমবেশি হয়। বায়ুম-লে ওজোনের প্রায় ৯০ শতাংশ স্ট্রাটোস্ফিয়ারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ওজন গ্যাসের ঘনত্ব মাপা হয় ডবসন ইউনিট (ডিইউ)-এ। বিজ্ঞানী ডবসন আবিষ্কৃত স্পেক্ট্রোফটোমেটের সাহায্যে এই ঘনত্ব পরিমাপ করা হয়। নিরক্ষীয় গ্যাসের উপর ওজন গ্যাসের ঘনত্ব ১৫০ ডিইউ নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের ওপর ৩৫০ ডিইউ, মেরু ও উপমেয় অঞ্চলের ওপর ৪৫০ ডিইউ।
বিজ্ঞানীদের হিসাব অনুযায়ী ১৯৭০ সালের পর থেকে স্ট্রাটোস্ফিয়ারের মোট ওজনের প্রায় ৪% ধ্বংস হয়েছে। উভয় মেরুর দিকে ধ্বংসের মাত্রা বেশি। ওজন স্তর বিনাশের কারণগুলিকে দুটি স্তরে ভাগ করা হয়। যথা: ১) প্রাকৃতিক ঘটনা: অগ্নুৎপাত, বজ্রপাত প্রভৃতি প্রাকৃতিক ঘটনায় ওজোন স্তরে প্রাকৃতিক ঘটনায় ওজোন স্তরের কিছুটা নষ্ট হয়। ২) অতিবেগুনি রশ্মির সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়া: অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে ওজন অণু ভেঙ্গে অক্সিজেন অণু ও পরমাণু উৎপন্ন করে। ৩) সূর্য রশ্মির পরিমাণ বৃদ্ধি: প্রতি ১০ থেকে ১৫ বছর অন্তর সূর্য রশ্মির পরিমাণ বাড়ে। সূর্য থেকে আগত ক্ষুদ্র তরঙ্গ বায়ুম-লের নাইট্রোজেন নাইট্রাস অক্সাইডে পরিণত হয়।
সূর্য থেকে আগত ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্মি ওজন স্তর শোষণ করে নেয়। ওজোন স্তর সূর্যের ক্ষতিকর মধ্যম মাত্রার শতকরা ৯৭-৯৯ অংশই শোষণ করে নেয়, যা ভূ-পৃষ্ঠে অবস্থানরত উদ্ভাসিত জীবনসমূহের সমূহ ক্ষতিসাধন করতে সক্ষম। মধ্যম তরঙ্গদৈর্ঘ্যের সূর্যের এই অতিবেগুণী রশ্মি মানব দেহের ত্বক এমনকি হাড়ের ক্যান্সারসহ অন্যান্য মারাত্মক ব্যাধি সৃষ্টিতে সমর্থ। এই ক্ষতিকর রশ্মি পৃথিবীর জীবজগতের সকল প্রাণের প্রতি তীব্র হুমকি স্বরূপ। বায়ুমন্ডলের ওজোন স্তর প্রতিনিয়তই এই মারাত্মক ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্নিগুলোকে প্রতিহত করে পৃথিবীর প্রাণীকূলকে রক্ষা করছে।
ওজোন স্তর সুরক্ষায় বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ওজোন স্তর-ক্ষয়কারী পদার্থের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যা পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ ও সংশ্লিষ্ট বিধিমালা প্রণয়ন এবং আন্তর্জাতিক চুক্তিসমূহ মেনে চলার মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে। সরকার জীববৈচিত্র্য ও সার্বিক পরিবেশ সুরক্ষায় কাজ করছে এবং ওজোন স্তর সুরক্ষায় সমাজের সকল স্তরের মানুষকে যুক্ত করে একটি টেকসই বাংলাদেশ গড়তে অঙ্গীকারবদ্ধ। সরকার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চুক্তি যেমন জাতিসংঘের জীববৈচিত্র্য সনদ এর পক্ষ এবং ওজোন স্তর সুরক্ষার জন্য বৈশ্বিক চুক্তিসমূহ অনুসরণ করে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং এর উপাদানসমূহের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করতে কাজ করছে। কার্বন নিঃসরণ কমানো এবং পরিবেশবান্ধব প্রকল্প গ্রহণ করে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ১৯৯২ সালে প্রণীত জাতীয় পরিবেশ নীতি পরিবেশগত বিষয়গুলো তদারকি ও সংরক্ষণে সহায়তা করে। পরিবেশ অধিদপ্তর পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ এর অধীনে পরিবেশের মান উন্নয়ন এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।
ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ, যা ওজোন স্তরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, সেগুলোর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর আইন প্রয়োগ ও নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন। ওজোন স্তর সুরক্ষায় পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি গ্রহণ ও পুরাতন প্রযুক্তির ব্যবহার বন্ধে উৎসাহ প্রদান করতে হবে। সমাজে পরিবেশ শিক্ষার প্রচার এবং ওজোন স্তর সংরক্ষণে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে একটি সবুজ ও টেকসই বাংলাদেশ গড়ে তোলা যায়। বনায়ন ও বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে কার্বন শোষণ ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়তা করা যেতে পারে।
লেখক: প্রেসিডেন্ট, আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী সংগঠন ফ্রিডম ইন্টারন্যাশনাল এন্টি অ্যালকোহল।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
“মোস্ট ইনোভেটিভ ফিনটেক প্রোডাক্ট ডিজাইন অব দ্য ইয়ার” অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে মাস্টারকার্ড বাংলাদেশ
যারা নির্বাচনকে বানচাল বা বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে নির্বাচনে তাদের ভরাডুবি হবে: শামীম
২৬টি সম্মাননা প্রদানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হলো ৩য় বাংলাদেশ ফিনটেক অ্যাওয়ার্ড
ধানের শীষে ভোট দিন, এলাকার উন্নয়নের দায়িত্ব আমার : ব্যারিস্টার মীর হেলাল
সরাইলে ইউএনও হিসেবে যোগদান করেছেন মো. আবুবকর সরকার
আগামী নির্বাচন হতে যাচ্ছে মাইলফলক : সিইসি
বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড সিরিজে আছেন জেসি
পদ ফিরে পেলেন বিএনপির বহিষ্কার হওয়া ৩৯ নেতা
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মন্তব্য কূটনৈতিক সৌজন্যের পরিপন্থী : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
এনসিপি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলায় যুগ্ম সমন্বয়কারী সৈয়দ ইমরান সাময়িক বহিষ্কার
নাইম-শহিদুলের ফিফটি
৫ লক্ষ টাকা জরিমানা ও ৩ হাজার কেজি পলিথিন জব্দ
শেরপুরে বিএনপি অফিস ভাঙচুর মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা জেলহাজতে
কিনব্রিজের ঐতিহাসিক ঘড়ির সামনে ট্রফি উন্মোচন
বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে কোম্পানীগঞ্জে বিএনপির বর্ণাঢ্য র্যালি ও আলোচনা সভা
কারাগার থেকে হাজতি পালানোর ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি
ঝিনাইদহে শহীদ জিয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধন
সিলেট-রংপুর ম্যাচে বোলারদের দাপট
শেরপুরে চাকরির প্রলোভনে পাহাড়ে এনে টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা: আটক ৫
প্রায় ৬ বছর পরে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ফল আমদানি শুরু হয়েছে
