ডাকসু-জাকসুতে শিবিরের বিজয়ে বিএনপির শংকিত হওয়ার কিছু নেই
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০২ এএম
ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের বিজয়ের বিষয়টি এখন টক অব দ্যা কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। গত ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে অত্যন্ত সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে, যা সব মহলেই প্রশংসিত হয়েছে। দেশ-বিদেশের মিডিয়ায়ও বিষয়টি হাইলাইট হয়েছে। কিছু প্রশ্ন থাকলেও জাকসু নির্বাচনেও ছাত্রশিবিরের বিশাল বিজয় অর্জিত হয়েছে। এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ১১ সেপ্টেম্বর। এ দুই বিজয়কে অনেকেই শিবির তথা জায়ামাতের উত্থান হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। ভারতেরও কেউ কেউ শিবিরের বিজয়কে বাংলাদেশে ইসলামী মৌলবাদীদের উত্থান হিসেবে আখ্যায়িত করে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ভারতে যে বিশ্বের নিকৃষ্ট সাম্প্রদায়িক দল বিজেপি তথা হিন্দু মৌলবাদীরা ক্ষমতায় আছে এবং অনবরত সারাদেশে সাম্প্রদায়িক বিভিন্ন অপকর্ম, এমনকি মুসলিম নিধন করছে, সম্পদ ধ্বংস করছে সে দিকে তাদের বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই। তাদের দুঃশ্চিন্তা শুধুমাত্র বাংলাদেশে মুসলিম মৌলবাদীদের বিজয় নিয়ে। তাই তাদের কথাবার্তা পাগলের বিলাপ বলে মনে করে এদেশের মানুষ। যা’হোক, ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে শিবিরের বিশাল বিজয়ে যারা জামায়াতের উত্থান বলে আশংকা প্রকাশ করছে, তা অমূলক, হিসাব-নিকাশের ভুল। কারণ, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সর্বাধিক বড় দল হচ্ছে ছাত্রদল। দ্বিতীয় ছাত্রলীগ। তৃতীয় ছাত্রশিবির। তারপর অন্যরা। ঢাবিতেও কিছু কম-বেশি একই অবস্থা চলছে বহুদিন থেকে। তবুও বিশ্বের নিকৃষ্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে ছাত্রলীগ প্রশাসনের সহায়তায় সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে সব ধরনের অপকর্ম চালিয়েছে। উপরন্তু হেলমেট বাহিনী গড়ে তুলে বিরোধী দলের মিছিল-মিটিংয়ে ব্যাপক আক্রমণ চালিয়েছে এবং বহুজনকে হতাহত করেছে। সে অবস্থায় ছাত্রদল ঠিকমতো টিকতে পারেনি কোথাও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও সাংগঠনিক কোনো কাজ কর্ম করতে পারেনি ছাত্রদল। আর তখন শিবিরও প্রকাশ্যে ঢুকতেই পারেনি সেখানে। সে অবস্থায় ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের ভূমিধ্বস বিজয় নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই বলে এই বিজয়কে জামায়াতের উত্থান বলা ঠিক নয়, ভুল ধারণা। কারণ, অনেকের মতে, শিবিরের বিজয়ের ক্ষেত্রে সহযোগীর ভূমিকা পালন করেছে ছাত্রলীগ। আগেই বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হচ্ছে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগ ছাত্রদলকে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ও শত্রু বলে মনে করে। ছাত্রশিবিরকেও শত্রু মনে করে। তবে, ছাত্রদলের চেয়ে কম। তাই বড় শত্রুকে মোকাবেলা করতে ছোট শত্রুকে কাছে টেনে নিয়েছে। আওয়ামী লীগ-জামায়াতের সখ্যের নজির রয়েছে অসংখ্য। তাই এ বিজয়কে এককভাবে শিবিরের বা জামায়াতের উত্থান বলা ঠিক নয়। তবে, এটা ঠিক যে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রশিবিরের একটা ক্লিন ইমেজ রয়েছে। পায়ের রগ কাটা অভিযোগ ছাড়া অন্য কোনো অভিযোগÑ যেমন: টেন্ডারবাজি, মাদক সংশ্লিষ্টতা, দখলবাজি, চাঁদাবাজি ইত্যাদি অভিযোগ নেই শিবিরের বিরুদ্ধে। তারা অত্যন্ত নিয়মতান্ত্রিক, ধর্মানুরাগী, শিষ্টাচারী, সুশৃংখল এবং সুসংগঠিত। উপরন্তু তাদের অধিকাংশই খুবই সত, মেধাবী ও নিষ্ঠাবান, যার সুখ্যাতি রয়েছে সর্বত্রই। তারা চাকরি, রাজনীতি ও ব্যবসায় খুব ভালো করছে। কিন্তু অন্য ছাত্র সংগঠনের বেশিরভাগ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। তাই অন্যের ছিদ্রান্বেষণ বন্ধ করে নিজেদের দোষ-ত্রুটি সুধরিয়ে সুখ্যাতি অর্জন করা উচিত। তাহলে ছাত্র রাজনীতির অতীত গৌরব পুনরুদ্ধার হবে।
স্মরণীয় যে, বর্তমানে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। তাই তারা প্রকাশ্যে সাংগঠনিক কোনো কর্মকা- পরিচালনা করতে পারছে না। তবে, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাঝে মধ্যে ঝটিকা মিছিল করছে। কিছু গ্রেফতারও হচ্ছে। কিন্তু তারা রাজনৈতিক কাজ ছাড়া অন্য কাজ করছে অনায়াসে। যেমন, চলাফেরা, লেখাপড়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত ইত্যাদি। তেমনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও বিচরণ করছে তারা বিনা বাধায়। উপরন্তু তারা ডাকসু ও হলের নির্বাচনে প্রার্থী হতে না পারলেও শিক্ষার্থী হিসাবে ভোটার হয়েছে এবং ভোট দিয়েছে নির্বিঘেœ। কিন্তু কোথায় তারা ভোট দিয়েছে? তাদের তো নিজস্ব কোনো প্যানেল বা প্রার্থী নেই। তাহলে কোথায় তারা ভোট দিয়েছে? দুনিয়া ওলট-পালট হলেও হতে পারে, কিন্তু ছাত্রলীগ ছাত্রদলকে ভোট দেবে না। একই অবস্থা হয়েছে জাকসুতেও। যেখানেই নির্বাচন হবে সেখানেই একই অবস্থা সৃষ্টি করবে ছাত্র লীগ। জাতীয় নির্বাচনেও বিএনপিকে পরাজিত করতে আওয়ামী লীগ প্রয়োজনে জামায়াতের সাথে হাত মেলাতে বিন্দুমাত্র কুণ্ঠাবোধ করবে না।
ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল জাতীয় পর্যায়ে প্রভাব ফেলবে বলে অনেকেই ধারণা করছে এবং নানা ধরনের আশংকা ব্যক্ত করছে, তা সঠিক নয়, অমূলক। কারণ, অতীতের ডাকসুর বড় মাপের অনেক নেতা রয়েছে, এমনকি ভিপি, জিএস ইত্যাদি পদেরও অনেক নেতা আছে, যারা জাতীয় রাজনীতিতে এসে তেমন কিছু করতে পারেনি। বড় রাজনৈতিক দলের ছোট খাট নেতা হয়ে রয়েছে। আর নিজে দল করলেও প্যাড সর্বোস্ব দল হিসাবে কোনো মতে টিকে আছে। এমপি-মন্ত্রী হওয়া তো দূরে থাক, স্থানীয় নির্বাচনের মেম্বার, চেয়ারম্যান হওয়ার অবস্থাও তাদের অনেকের নেই। এ ক্ষেত্রে নাম বললে বিষয়টি প্রমাণিত হতো। কিন্তু মান-ইজ্জত রক্ষা করার স্বার্থে তা করা সমীচীন নয়।
প্রসংগত উল্লেখ্য যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের বিশাল বিজয়ে বিএনপি ও তার লোকরা বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। কারণ, গণঅভ্যুন্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পর বিএনপি রাজনীতি তথা নির্বাচনের ময়দানে অপ্রতিদ্বন্দ্বী দলে পরিণত হয়েছে। তাই দলটির লোকদের অনেকের মধ্যে ধারণা সৃষ্টি হয় যে, ক্ষমতায় এসে গেছি। কর্মকা-ও পরিচালনা করে সেভাবে। চাঁদাবাজি, দখলবাজি ইত্যাদি নানা ধরনের অপকর্মের সাথে জড়িয়ে পড়ে অনেকেই। এ জন্য দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছে অনেকেই। তবুও তাদের অপকর্ম বন্ধ হয়নি, অব্যাহতই রয়েছে। তাই বিএনপির লোকদের একটা উচিত শিক্ষা পাওয়া দরকার ছিল। সেটাই পেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে, যার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে আগামী জাতীয় নির্বাচনে এমন আশংকা ব্যক্ত করছে অনেকেই। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে দলের সব লোকদের কুকর্ম বন্ধ করতে হবে। উপরন্তু দলের সাংগঠনিক দুর্বলতাগুলো দূর করতে হবে। বিশেষ করে প্রচার মাধ্যমকে খুবই শক্তিশালী করতে হবে। বুদ্ধিজীবী লালন-পালন করতে হবে। কারণ, প্রচারেই প্রসার। জাতীয় সরকার তথা সমমনাদের নিয়ে একত্রে নির্বাচন ও জয়ী হলে সরকার গঠন করার কথা বিএনপি বহুদিন থেকে বলে আসছে, তাতে অবিচল থাকতে হবে এবং সেভাবে কর্মকা- পরিচালনা করতে হবে। অর্থাৎ ফ্যাসিস্ট হাসিনা বিরোধী শক্তির ঐক্যকে অটুট রাখতে হবে এবং আরো গতিশীল করতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, ফ্যাসিস্টরা যদি পুনরায় ক্ষমতায় ফিরে আসে, তাহলে কারো অস্তিত্ব রাখবে না। তাই ফ্যাসিস্ট বিরোধী দৃঢ় ঐক্যই রক্ষাকবচ। দেশের স্বাধীনতা রক্ষা এবং শান্তি ও উন্নতির উত্তম পথ।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
[email protected]
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
কিছু দল নির্বাচন বিলম্বিত করে ক্ষমতার স্বাদ নিতে চায়: মেজর হাফিজ
আইন ভাঙায় জরিমানা দিতে বাধ্য হলেন কাতারের আমির
জি-২০ সম্মেলন বয়কট করছে যুক্তরাষ্ট্র
গাঁজা বিক্রি নিষেধ করায় খুন
ফরাসী নাগরিকদের জরুরী ভিত্তিতে মালি ত্যাগের পরামর্শ
অনুষ্ঠিত হলো উদ্ভাবন, নীতি ও সহযোগিতাকে কেন্দ্র করে ৫ম বাংলাদেশ ফিনটেক সামিট
স্বাস্থ্যের মিঠু চক্র এখনো সক্রিয়, মানি লন্ডারিং মামলা থেকে রেহাই পেতে সিআইডির কর্মকর্তাদের ম্যানেজের চেষ্টা
ধামরাইয়ে আওয়ামী লীগের ৩ নেতা গ্রেপ্তার
ঈশ্বরদীতে ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বিশাল বর্ণাঢ্য র্যালি
কালীগঞ্জে বিএনপির সমাবেশ ও বর্ণাঢ্য র্যালি
খালেদা জিয়ার আসনে এবার প্রার্থী না দেওয়ার ঘোষণা গণঅধিকার পরিষদের
বগুড়ায় আরডিএ’র নিয়োগ জালিয়াতি, রিমান্ডের জিজ্ঞাসাবাদে দুই চাকরি প্রার্থী
প্রাথমিক শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গ করা প্রসঙ্গে যা বলছে পুলিশ
ড্রোন সাফল্যের পর এবার নৌ প্রতিরক্ষায় বড় চমক দেখাতে পারে ইরান
আয়না ঘর সৃষ্টি করে হাজার-হাজার নেতাকর্মী হত্যা করা হয়েছে : খায়ের ভূঁইয়া
ই-পেমেন্ট সিস্টেম চালু করতে ইসলামী ব্যাংকের সাথে ইবির চুক্তি স্বাক্ষর
হিন্দু-মুসলমান ভাই ভাই, ধানের শীষে ভোট চাই : মির্জা ফখরুল
কিশোরগঞ্জে নিরাপদ খাদ্য আইনে অভিযান; ৪ লাখ টাকা জরিমানা
ময়মনসিংহে নিষিদ্ধ আ.লীগ–যুবলীগের তিন নেতা গ্রেপ্তার
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিংবা প্রশাসন যেন কোনো রাজনৈতিক দলের কাছে নতি স্বীকার না করে
