দুর্নীতি নিরোধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০১ এএম
বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতির মহোৎসব হয়েছে। কোনো ক্ষেত্রেই নিয়ম-বিধি অনুসরণ করা হয়নি। সরকারি অর্থ-সম্পদের বেশুমার লুটপাট হয়েছে। দুর্নীতি ও লুটের অর্থ অবাধে পাচার হয়েছে। দ্য ফিনান্সিয়াল টাইমসের মতে, সাড়ে ১৫ বছরে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। পত্রিকাটি এই পাচারকে দিনের আলোয় চুরি বলে অভিহিত করেছে। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা, তার পরিবার-পরিজন, দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এবং ব্যবসায়ীদের একটি শ্রেণি যাবতীয় দুর্নীতি, লুণ্ঠন ও পাচারের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। এই মাফিয়াদের সহযোগী হিসাবে ভূমিকা রাখে প্রশাসনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা, যারা দলবাজ হিসাবে কুখ্যাত। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট সরকার উৎখাত হয়েছে। পরিবারের সদস্যসহ আত্মীয়-স্বজন নিয়ে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন। মন্ত্রী-এমপিরাও পলাতক বা লাপাত্তা। সহযোগী ব্যবসায়ীদের অনেকে পলাতক, কেউ কেউ কারাগারে, অর্থ উপদেষ্টার ভাষায়, হাজার কোটি টাকার মালিকরা দৌড়ের ওপর। প্রশাসন ও পুলিশসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে স্বৈরাচারের দোসররা বেশিরভাগই বহাল আছেন। আশা করা গিয়েছিল, অন্তর্বর্তী সরকার পতিত স্বৈরাচার, তার অলিগার্ক ও দোসরদের বিরুদ্ধে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেবে। পিরিতাপের বিষয়, সরকারের ১৪ মাস অতিবাহিত হতে চললেও তেমন কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি। স্বৈরাচারের দলীয় নেতাকর্মীরা খোড়ল থেকে মাথা বের করে ঝটিকা মিছিল করছেন, কথিত ব্যবসায়ীরা অরাজকতা সৃষ্টির পেছনে অর্থায়ন করছেন, প্রশাসন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ঘাপটি মেরে থাকা কর্মকর্তারা বিভিন্নভাবে সক্রিয়তা দেখাচ্ছেন। উদ্বেগজনক এই পরিস্থিতির জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্বলতা ও অকর্মন্যতাই দায়ী। প্রশ্ন উঠতে পারে, এই সরকারের সময় অনিয়ম, দুর্নীতি, অর্থ পাচার কি বন্ধ হয়েছে বা কমেছে? পর্যবেক্ষকদের কারো মতে, বন্ধ হয়নি, তবে কিছুটা কমেছে। কারো মতে, দৃশ্যত কমেছে মনে হলেও অন্যভাবে বেড়েছে। কোনো কোনো উপদেষ্টা ও উপদেষ্টার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। শেয়ারবাজার থেকে বিনিয়োগকারীদের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ আছে। বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগও আছে। সরকারি ক্রয় ও কাজের দরপত্রে অনিয়ম-দুর্নীতি অনেকটাই সাধারণ বাস্তবতা। এখনো এ বাস্তবতা বহাল। অন্তর্বর্তী সরকার এক্ষেত্রে ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতা প্রমাণ করতে পারেনি। ইনকিলাবে প্রকাশিত একটি খবর থেকে এটা বলাই যায়, আগের মতোই সব চলছে।
খবরে বলা হয়েছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের ভূমিকম্প ও দুর্যোগ অনুসন্ধান সংক্রান্ত সরঞ্জাম কেনার প্রকল্পে (তৃতীয় পর্যায়) দুর্নীতির পাঁয়তারা লক্ষ করা গেছে। অভিযোগ উঠেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক, বিশেষ করে প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে। প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে অনিয়ম, বিশেষ করে দুর্নীতি ও কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। বলা হয়েছে, তিনি যোগ্য ও অভিজ্ঞ দরদাতাদের বাদ দিয়ে অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে দরপত্র পাইয়ে দিয়েছেন। অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তিগত মানদন্ডে অযোগ্য হলেও এক প্রতিষ্ঠানকেই চারটি টেন্ডার প্যাকেজ দেয়া হয়েছে। দেয়া হয়েছে কাজের কার্যাদেশ। এ প্রেক্ষিতে দরপত্রে অংশ নেয়া কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথোরিটির (বিপিপি) কাছে অভিযোগ জানায়। বিপিপির পক্ষ থেকে একটি রিভিউ প্যানেল গঠন করা হয়। রিভিউ প্যানেলের সদস্যরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অভিযোগের সত্যতা পায় এবং দরপত্র বাতিল করে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় দরপত্র পুনরায় আহ্বান করার নির্দেশনা দেয়। এরপরও বিপিপির নিদের্শনা কার্যকর করা হয়নি। জিজ্ঞাসিত হয়ে প্রকল্প পরিচালক ইনকিলাবকে জানিয়েছেন, বিপিপির রায় বাস্তবায়নের জন্য আমরা প্রক্রিয়া শুরু করেছি। অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেছেন, রায় বাস্তবায়ন করা দরকার। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর মধ্যেই দরপত্র ও কার্যাদেশ পাওয়া প্রতিষ্ঠানটি উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করেছে। বর্তমানে সকল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পুনঃ দরপত্র আহবান প্রক্রিয়া বন্ধ থাকবে কিনা, খবরে তার উল্লেখ নেই। তবে অনুমান করা যায়, গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পটির বাস্তবায়ন বিলম্বিত হতে পারে। ভূমিকম্প ও দুর্যোগ অনুসন্ধান সংক্রান্ত সরঞ্জাম বা যন্ত্রপাতি প্রয়োজন হয়েছে বলেই কেনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যদি তা কিনতে বিলম্ব হয়, তবে সেটা দেশের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, এসব সরঞ্জাম বা যন্ত্রপাতি সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা ব্যবহার করবেন। একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইনকিলাবকে জানিয়েছেন, সশস্ত্র বাহিনী ভূমিকম্প বা দুর্যোগের সময় যেসব ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে থাকে সেগুলোর নির্দিষ্ট মান থাকা জরুরি। এই মান অমান্য করে যন্ত্রপাতি কিনলে মাঠ পর্যায়ে তা অকেজো হয়ে যেতে পারে। কাজেই, সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিষয়টি আমলে নিয়ে মানসম্পন্ন ক্রয় নিশ্চিত করতে হবে।
আমরা আগেই উল্লেখ করেছি, সরকারি ক্রয় ও কাজের ক্ষেত্রে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়ে থাকে। ক্রয়ের ক্ষেত্রে হলে মানসম্পন্ন জিনিস পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকে না। আর কাজের ক্ষেত্রে হলে মানসম্পন্ন কাজ আশা করা যায় না। সরকারের বিভিন্ন অধিদফতর, বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানে যারা ক্রয় ও কাজের দরপত্রের সাথে জড়িত তাদের মধ্যে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রবণতা বেশি। এসব জায়গায় পোস্টিং পেতে প্রতিযোগিতা হয়, মোটা অংকের টাকার লেনদেন হয়। এ অভিযোগও আছে, ডিসি-এসপি, এমনকি সচিব নিয়োগ-পদায়নের ক্ষেত্রেও এ লেনদেন হয়ে থাকে। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েও এ অভিযোগ বিরল নয়। চাঁদাবাজি নিয়ে শোর ওঠে, ছোট-ছোট দুর্নীতি নিয়ে তুলকালাম হয়, কিন্তু প্রশাসনিক দুর্নীতি অনেকটাই আড়ালে থেকে যায়। প্রশাসনের কর্মকর্তারা অনেকেই দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের তথ্য থেকে জানা যায়, যারা বিদেশে অর্থ পাচার করেছেন, বিদেশে হোম বা বাড়িঘর অথবা ব্যবসা-বাণিজ্য গড়েছেন তাদের একাংশ সরকারি কর্মকতা। দুর্নীতিলব্ধ অর্থ দিয়েই সেটা তারা করেছেন। তাদের সংখ্যা একেবারে কম নয়। প্রশাসনিক দুর্নীতি কোন পর্যায়ে আছে, এ থেকেই বুঝ যায়। দুর্নীতি নানাভাবে হচ্ছে। কথায় বলে, আগুন আর দুর্নীতি কেউ ঢাকতে পারে না। স্বৈরাচার আমলের দুর্নীতিবাজরা অধরা থাকছেন না। ওই আমলের আর্থিক দুর্নীতির শ্বেতপত্র তৈরি হয়েছে। এখন যারা দুর্নীতিতে লিপ্ত আছেন তারা যত ফন্দি-ফিকির করুন না কেন, রেহাই পাবেন না। ভবিষ্যতে তাদের দুর্নীতির শ্বেতপত্র হবে। তাই, সরকারের উচিত, দুর্নীতি নিরোধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
সরকারের আশ্বাসে প্রাথমিক শিক্ষকদের কর্মবিরতি আপাতত স্থগিত
সাতক্ষীরায় এমএফএস-এর অপব্যবহার রোধে এজেন্টদের সচেতনতা বাড়াতে জেলা পুলিশ ও বিকাশ-এর সমন্বয় কর্মশালা
গণমাধ্যম শ্বাসরুদ্ধ করে ‘রাজত্ব’ কায়েম ,বদলি হলেন ডিসি মুফিদুল
নাসিরনগরে তিন আওয়ামী নেতা গ্রেফতার
ইসরায়েলি যুদ্ধের প্রথম ১২ ঘণ্টার অভিজ্ঞতা জানালেন জ্যেষ্ঠ ইরানি জেনারেল
মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে কাপনের কাপড় জড়িয়ে মশাল মিছিল
“মোস্ট ইনোভেটিভ ফিনটেক প্রোডাক্ট ডিজাইন অব দ্য ইয়ার” অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে মাস্টারকার্ড বাংলাদেশ
যারা নির্বাচনকে বানচাল বা বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে নির্বাচনে তাদের ভরাডুবি হবে: শামীম
২৬টি সম্মাননা প্রদানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হলো ৩য় বাংলাদেশ ফিনটেক অ্যাওয়ার্ড
সালাহউদ্দিন আহমদের অনুরোধে অনশন ভাঙলেন আম জনতার তারেক, নেওয়া হলো হাসপাতালে
ধানের শীষে ভোট দিন, এলাকার উন্নয়নের দায়িত্ব আমার : ব্যারিস্টার মীর হেলাল
সরাইলে ইউএনও হিসেবে যোগদান করেছেন মো. আবুবকর সরকার
আগামী নির্বাচন হতে যাচ্ছে মাইলফলক : সিইসি
বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড সিরিজে আছেন জেসি
পদ ফিরে পেলেন বিএনপির বহিষ্কার হওয়া ৩৯ নেতা
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মন্তব্য কূটনৈতিক সৌজন্যের পরিপন্থী : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
এনসিপি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলায় যুগ্ম সমন্বয়কারী সৈয়দ ইমরান সাময়িক বহিষ্কার
নাইম-শহিদুলের ফিফটি
৫ লক্ষ টাকা জরিমানা ও ৩ হাজার কেজি পলিথিন জব্দ
শেরপুরে বিএনপি অফিস ভাঙচুর মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা জেলহাজতে
