স্বাস্থ্য সুরক্ষায় উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
১৭ জুলাই ২০২৫, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২৫, ১২:০৩ এএম
সারা বিশ্বের সাথে ১১ জুলাই বাংলাদেশেও পালিত হল বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস ২০২৫। একটি দেশের উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি হলো তার জনসংখ্যা। তবে এই জনসংখ্যাকে যদি জনশক্তিতে পরিণত করা না যায়, তবে তা সমাজ, অর্থনীতি ও পরিবেশে একাধিক নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার বিষয়টিও গভীরভাবে জড়িত। জনসংখ্যার চাপ স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে দুর্বল করতে পারে এবং নাগরিকদের মৌলিক সুরক্ষা নিশ্চিত করাও কঠিন হয়ে পড়ে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে এই তিনটি বিষয় জনসংখ্যা, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা-একটি ত্রিমাত্রিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছ।
> জনসংখ্যার চিত্র: একটি উদ্বেগজনক বাস্তবতা-
বাংলাদেশ বিশ্বের ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর একটি। ২০২৫ সালের হিসেব অনুযায়ী দেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি ৫৭ লাখ। প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ১,২০০ জনেরও বেশি মানুষ বসবাস করছে। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জন্মহার কিছুটা কমেছে, তবুও জনসংখ্যার ঘনত্ব এবং বার্ধক্যজনিত জনসংখ্যার বৃদ্ধি আমাদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা কাঠামোকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।
অপরিকল্পিত নগরায়ন, পরিবেশ দূষণ, স্বাস্থ্যসেবা সংকট এবং কর্মসংস্থানের অভাব সবকিছু মিলে এই জনসংখ্যা এখন আশীর্বাদের চেয়ে অভিশাপ হয়ে উঠছে। বিশেষত গ্রামীণ অঞ্চল ও শহরের বস্তি গুলোতে জনসংখ্যা ঘনত্বের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বেড়েছে।
স্বাস্থ্যব্যবস্থার চিত্র: অর্জন ও দুর্বলতা-
স্বাস্থ্যখাতে বাংলাদেশ অনেক অর্জন করলেও এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার কমলেও তা এখনো কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। গ্রামীণ এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি আজও কঠিন। সরকার স্বাস্থ্য খাতে বার্ষিক বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি করলেও তা জনসংখ্যার তুলনায় যথেষ্ট নয়। সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক, নার্স ও আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব প্রকট। করোনাভাইরাস মহামারি আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থার দুর্বলতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।
নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ যেমন-ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ক্যানসার ইত্যাদির হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। অন্যদিকে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, কলেরা, টাইফয়েডর মতো সংক্রামক রোগ এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
> সুরক্ষা ব্যবস্থার সংকট: জনস্বাস্থ্য ও মানবিক নিরাপত্তা-
জনস্বাস্থ্যের সঙ্গে সুরক্ষার সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। বিশুদ্ধ পানি, পুষ্টিকর খাবার, স্যানিটেশন, বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপদ পরিবেশের অভাব জনসাধারণের জীবনমানকে প্রতিনিয়ত হুমকির মুখে ফেলছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা, জলাবদ্ধতা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো ঘটনা জনস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ আরও ঝুঁকির মধ্যে পড়ছ। বস্তিবাসী, গৃহহীন এবং হিজড়া জনগোষ্ঠীসহ সমাজের প্রান্তিক শ্রেণির মানুষজন স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার দিক থেকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
নারী ও শিশুরা নির্যাতন, মানবপাচার ও যৌন সহিংসতার মতো নিরাপত্তা ইস্যুতে সবচেয়ে বশি ভুক্তভোগী। সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী প্রকল্প থাকলেও কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ।
> জনসংখ্যা, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার পারস্পরিক সম্পর্ক-
এই তিনটি বিষয় পরস্পরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। জনসংখ্যা যত বাড়বে, স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর চাপ ততই বাড়বে, যা মানুষের নিরাপত্তা বিঘিœত করে। আবার স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা নিশ্চিত না হলে জনসংখ্যার মানসম্মত বিকাশ সম্ভব নয়।
অসুস্থ, অপুষ্ট, অশিক্ষিত ও অসচেতন একটি জনসংখ্যা জাতির উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে না। তাই জনসংখ্যাকে সময় উপযোগি শিক্ষা প্রদান করে জন শক্তিতে পরিণত করন, স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণ এবং সামাজিক নিরাপত্তা বলয় জোরদার করা সময়ের দাবি।
> সরকারি উদ্যোগ ও পরিকল্পনা-
বাংলাদেশ সরকার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বেশ কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়েছে:
পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম, সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ফ্যামিলি প্ল্যানিং কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। গর্ভনিরোধক সরঞ্জাম সহজলভ্য করা হয়েছে। জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য গণমাধ্যমে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ, ২০৩০ সালের মধ্যে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি-বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা ইত্যাদির মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা-টেলিমেডিসিন, ই-হেলথ কার্ড ও মোবাইল অ্যাপ ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা আরও সহজ করা হচ্ছে।
সমস্যা ও চ্যালেঞ্জসমূহ-
তবে এখনো অনেক বাধা রয়েছে, যেমন:
অসচেতনতা: এখনও বহু মানুষ কার কখন পরিবার পরিকল্পনা করা প্রয়োজন তা বোঝে না।
শিক্ষার অভাব: সময়োপযোগী স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সম্পর্কে অনেকেই সচেতন নয়।
দুর্নীতি ও অপচয়: স্বাস্থ্যখাতের বাজেটের যথাযথ ব্যবহার হয় না।
অপর্যাপ্ত জনবল: গ্রামীণ এলাকায় ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর ঘাটতি রয়েছে।
প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা: ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবায় এখনও বহু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
> ভবিষ্যৎ করণীয়-
১. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা বাড়ানো।
২. স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি।
৩. প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার বিস্তার-ইউনিয়ন পর্যায়ে আরও স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন ও আধুনিকীকরণ প্রয়োজন।
৪. নারী ও শিশু সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ- শিশুবিবাহ ও যৌন সহিংসতা রোধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
৫. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করা।
সরকারের পাশাপাশি সকল নাগরিকের সচেতনতা, দায়িত্ববোধ ও আন্তরিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন। জনসংখ্যা হবে সম্পদ, বোঝা নয়-এই লক্ষ্যেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
হোমিও চিকিৎসক, কলাম লেখক ও গবেষক
প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি
ইমেইল : [email protected]
বিভাগ : স্বাস্থ্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
এনসিপি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলায় যুগ্ম সমন্বয়কারী সৈয়দ ইমরান সাময়িক বহিষ্কার
নাইম-শহিদুলের ফিফটি
শেরপুরে বিএনপি অফিস ভাঙচুর মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা জেলহাজতে
কিনব্রিজের ঐতিহাসিক ঘড়ির সামনে ট্রফি উন্মোচন
বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে কোম্পানীগঞ্জে বিএনপির বর্ণাঢ্য র্যালি ও আলোচনা সভা
কারাগার থেকে হাজতি পালানোর ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি
ঝিনাইদহে শহীদ জিয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধন
সিলেট-রংপুর ম্যাচে বোলারদের দাপট
শেরপুরে চাকরির প্রলোভনে পাহাড়ে এনে টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা: আটক ৫
প্রায় ৬ বছর পরে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ফল আমদানি শুরু হয়েছে
জনগণের ভোটাধিকার যারা বাধাগ্রস্ত করবে জনগণ তাদের রুখে দিবে: মাহবুবের রহমান শামীম
আরও ১৪ জেলায় নতুন ডিসি
গৌরনদীতে ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা জামায়াতের প্রার্থীর
শাপলা তুলতে গিয়ে ৪ স্কুলশিক্ষার্থীর মৃত্যু
বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে উত্তপ্ত ময়মনসিংহ ,দুই পক্ষের ধাওয়া–ভাঙচুরে ছাত্রদল নেতা আবিদ নিহত
ময়মনসিংহ–তারাকান্দা সড়ক এখন ছিনতাইকারীদের রাজত্ব— রাত হলেই শুরু হয় ছিনতাই
আটক ইসরায়েলি সাবেক সেনা প্রসিকিউটরের আত্মহত্যা চেষ্টা
সড়ক দূর্ঘটনা রোধে রামপালে জামায়েতে ইসলামীর মানববন্ধন
বাংলাদেশের ইতিহাসে জুলাই এক স্থায়ী ছাপ রেখে গেছে: ঢাবি ভিসি
মেহেরপুরে নদীতে শাপলা ফুল তুলতে নেমে নিখোঁজ; ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার
