চিকুনগুনিয়া আর ডেঙ্গুতে পর্যুদস্ত আমরা
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০২ এএম
“ডেঙ্গু এখন শুধু একটি মৌসুমি রোগ নয়, বরং জনস্বাস্থ্য সংকটের নাম।” - জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের এমন মন্তব্য বারবারই শোনা যাচ্ছে।
বাংলাদেশে বর্ষা মৌসুম এলে সাধারণ মানুষের মনে যে আতঙ্ক ভর করে, তার নাম ডেঙ্গু আর চিকুনগুনিয়া। এডিস মশা-বাহিত এই দুটি ভাইরাসজনিত রোগ কেবল মানুষের স্বাস্থ্যে আঘাত হানছে না, বরং স্বাস্থ্যখাতে বিপুল চাপ ও অর্থনৈতিক ক্ষতি ডেকে আনছে।
রোগের ইতিহাস- একটু পিছন ফিরে দেখা যাক।
ডেঙ্গু: বাংলাদেশে প্রথম শনাক্ত ১৯৬৪ সালে। তবে ২০০০ সালের পর থেকে ডেঙ্গু মহামারী আকার ধারণ করে।
চিকুনগুনিয়া: আফ্রিকাজাত এই রোগ বাংলাদেশে প্রথম ২০০৮ সালে স্পোরাডিক আকারে আসে অর্থাৎ অল্প অল্প কোথাও কোথাও ছিল। ২০১৭ সালে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক প্রাদুর্ভাব ঘটে।
রোগের প্রকৃতি ও উপসর্গ-
ডেঙ্গু:
হাই ফিভার (১০৪ক্ক পর্যন্ত)। চোখের পেছনে ব্যথা। জয়েন্ট ও হাড়ে ভয়াবহ ব্যথা (“ব্রেকবোন ফিভার”) ।গুরুতর ক্ষেত্রে রক্তক্ষরণ, শক সিনড্রোম, মৃত্যু।
চিকুনগুনিয়া:
হঠাৎ জ্বর। তীব্র জয়েন্ট পেইন (কারও কারও মাসের পর মাস স্থায়ী)। র্যাশ, চোখ লাল হওয়া। দীর্ঘস্থায়ী দুর্বলতা ও কর্মক্ষমতা হ্রাস।
বর্তমানে বাংলাদেশের চিত্র:
২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে ১,৬০০ জনের বেশি মানুষ মারা যায় (বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ)।
একই বছরে আক্রান্ত হন ৩ লক্ষাধিক মানুষ।
চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব তুলনামূলক কম হলেও, আক্রান্ত রোগীদের ৪০-৬০% মাসের পর মাস জয়েন্ট পেইনে ভোগেন।
২০২৫ সালেও আক্রান্তের সংখ্যা খুব বাড়ছে, বিশেষ করে ঢাকায় হাসপাতালের বেড সংকট তীব্র হয়েছে।
কেন বাংলাদেশে প্রাদুর্ভাব এত বেশি?
১. অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও খারাপ ড্রেনেজ ব্যবস্থা
২. আবর্জনার স্তূপ, জমে থাকা পরিষ্কার পানি
৩. নিয়মিত ফগিং ও কীটনাশকের অকার্যকারিতা
৪. জনসচেতনতার ঘাটতি
৫. জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দীর্ঘ বর্ষা মৌসুম ও উষ্ণ আবহাওয়া
জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতিতে আঘাত-
মৃত্যু ও অক্ষমতা: ডেঙ্গু মৃত্যুর কারণ, আর চিকুনগুনিয়া ব্যাপকভাবে কর্মক্ষমতা হ্রাস করছে।
হাসপাতাল চাপ: প্রতিদিন হাজারো রোগী ভর্তি হচ্ছে, বেড ও রক্ত সংকট দেখা দিচ্ছে।
অর্থনৈতিক ক্ষতি: কর্মক্ষম মানুষ কর্মহীন হওয়ায় উৎপাদনশীলতা হ্রাস, পরিবার ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়ছে।
শিক্ষা ব্যাহত: স্কুলে উপস্থিতি ইতোমধ্যে কমে গিয়েছে, বিশেষত শহরাঞ্চলে।
সরকারের উদ্যোগ:
সিটি করপোরেশনের ফগিং ও মশক নিধন অভিযান
হাসপাতালগুলোতে বিশেষ ওয়ার্ড খোলা
স্কুল-কলেজে পরিচ্ছন্নতা নির্দেশনা
টিভি-রেডিও ও পত্রিকাতে সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন
তবে প্রশ্ন থেকে যায়-এই উদ্যোগগুলো কতটা কার্যকর?
একজন নগরবিদ বলেন, “ফগিং করলেই সমস্যার সমাধান হবে না। শহরের পানি জমে থাকা ও আবর্জনা না সরালে এডিস মশা কখনোই কমবে না।”
করণীয় ঠিক করতে হবে দ্রুত:
ব্যক্তিগত স্তরে:
টব, টায়ার, বোতল, কুলার ইত্যাদিতে পানি জমতে না দেওয়া
মশারি ব্যবহার
দিনের বেলায় ফুলহাতা জামা
সমষ্টিগত স্তরে:
পাড়া-মহল্লায় পরিচ্ছন্নতা অভিযান
স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বৃদ্ধি
স্বেচ্ছাসেবী টিমের মাধ্যমে ড্রেন পরিষ্কার
সরকারি স্তরে:
কার্যকর ও বৈজ্ঞানিক কীটনাশক ব্যবহার
টেকসই নগর পরিকল্পনা
হাসপাতাল পর্যাপ্ত বেড ও টেস্ট কিট নিশ্চিত করা
ল্যাব পরীক্ষা সহজ ও সাস্রয়ী করা।
গবেষণা ও ভবিষ্যতের করণীয়:
ডেঙ্গু ভ্যাকসিন ডেংভেক্সিয়া: বিশ্বের কিছু দেশে ব্যবহৃত হলেও বাংলাদেশে এখনও অনুমোদন নেই।
চিকুনগুনিয়া: এখনও নির্দিষ্ট ভ্যাকসিন নেই, তবে গবেষণা চলছে।
দীর্ঘমেয়াদে: জলবায়ু পরিবর্তন, নগর পরিকল্পনা ও পরিবেশ ব্যবস্থাপনাকে গুরুত্ব দিতে হবে।
সবশেষে বলা যায়, বাংলাদেশ আজ সত্যিই চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গুর কবলে পর্যুদস্ত। প্রতিদিন মানুষের মৃত্যু, অকার্যকর ফগিং, হাসপাতালের চাপ-সব মিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
তবে এই সংকট মোকাবিলা অসম্ভব নয়। ব্যক্তিগত সচেতনতা, সামাজিক উদ্যোগ, সরকারি পরিকল্পনা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা-এই চার স্তম্ভই পারে বাংলাদেশকে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে।
“ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধের মূলমন্ত্র হলো-
‘পানি জমতে দেব না, মশা জন্মাতে দেব না।’”
আহনাফ হক সাইহান
ঢাকা মেডিকেল কলেজ,
ইমেইল: [email protected]
বিভাগ : স্বাস্থ্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
কিছু দল নির্বাচন বিলম্বিত করে ক্ষমতার স্বাদ নিতে চায়: মেজর হাফিজ
আইন ভাঙায় জরিমানা দিতে বাধ্য হলেন কাতারের আমির
জি-২০ সম্মেলন বয়কট করছে যুক্তরাষ্ট্র
গাঁজা বিক্রি নিষেধ করায় খুন
ফরাসী নাগরিকদের জরুরী ভিত্তিতে মালি ত্যাগের পরামর্শ
অনুষ্ঠিত হলো উদ্ভাবন, নীতি ও সহযোগিতাকে কেন্দ্র করে ৫ম বাংলাদেশ ফিনটেক সামিট
স্বাস্থ্যের মিঠু চক্র এখনো সক্রিয়, মানি লন্ডারিং মামলা থেকে রেহাই পেতে সিআইডির কর্মকর্তাদের ম্যানেজের চেষ্টা
ধামরাইয়ে আওয়ামী লীগের ৩ নেতা গ্রেপ্তার
ঈশ্বরদীতে ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বিশাল বর্ণাঢ্য র্যালি
কালীগঞ্জে বিএনপির সমাবেশ ও বর্ণাঢ্য র্যালি
খালেদা জিয়ার আসনে এবার প্রার্থী না দেওয়ার ঘোষণা গণঅধিকার পরিষদের
বগুড়ায় আরডিএ’র নিয়োগ জালিয়াতি, রিমান্ডের জিজ্ঞাসাবাদে দুই চাকরি প্রার্থী
প্রাথমিক শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গ করা প্রসঙ্গে যা বলছে পুলিশ
ড্রোন সাফল্যের পর এবার নৌ প্রতিরক্ষায় বড় চমক দেখাতে পারে ইরান
আয়না ঘর সৃষ্টি করে হাজার-হাজার নেতাকর্মী হত্যা করা হয়েছে : খায়ের ভূঁইয়া
ই-পেমেন্ট সিস্টেম চালু করতে ইসলামী ব্যাংকের সাথে ইবির চুক্তি স্বাক্ষর
হিন্দু-মুসলমান ভাই ভাই, ধানের শীষে ভোট চাই : মির্জা ফখরুল
কিশোরগঞ্জে নিরাপদ খাদ্য আইনে অভিযান; ৪ লাখ টাকা জরিমানা
ময়মনসিংহে নিষিদ্ধ আ.লীগ–যুবলীগের তিন নেতা গ্রেপ্তার
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিংবা প্রশাসন যেন কোনো রাজনৈতিক দলের কাছে নতি স্বীকার না করে
