টাইফয়েড প্রতিরোধে টিকা নিন
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০১ এএম
সারা দেশ ব্যাপি প্রচার প্রচারণা চলছে টাইফয়েড রোগের ভ্যাকসিন ও শিশুদের প্রয়োগের ব্যাপারে, সারা দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় গুলোতে স্বাস্থ্যকর্মীদের সহযোগিতায় ছাত্র-ছাত্রীদের ভ্যাকসিনের জন্য রেজিস্ট্রেশন করানো হচ্ছে অনলাইনে। এটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিসন্দেহে একটি মহতী উদ্যোগ। সাধুবাদ সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে। টাইফয়েড ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইন ২০২৫ শুরু হবে অক্টোবর মাসে। আমরা আমাদের শিশুদের রোগ ব্যাধি থেকে নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাখতে চাই। শিশুদের বয়স ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সীদের বা ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের এ ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। স্থানীয় ইপিআই কেন্দ্র ও স্কুলে সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে এ টিকা প্রদান করা হবে। এ জন্য শিশুর জন্ম নিবন্ধনের ১৭ ডিজিটের নম্বর দিয়ে যঃঃঢ়ং://াধীবঢ়র.মড়া.নফ/ এই ঠিকানা রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। নির্ধারিত তারিখে ইউনয়ন পর্যায়ে টিকা দান কেন্দ্র ও বিদ্যালয়ে হাজির থাকতে হবে। সুতরাং অভিভাবক বৃন্দ নিজ নিজ এলাকার টিকা কেন্দ্র ও বিদ্যালয় থেকে দিন ও তারিখ জেনে রাখুন, প্রস্তুতি নিন, শিশুকে টাইফয়েড থেকে সুরক্ষিত রাখুন।
টাইফয়েড কী:- টাইফয়েড জ্বর একটি সংক্রামক রোগ, সালমোনেলা টাইফি নামক ব্যাকটোরিয়ার আক্রমণে সৃষ্ট একটি প্রাণঘাতী রোগ। আবার প্যারাটাইফয়েড জ্বর সালমোনিলা প্যারাটাইফি এ. বি. সি ব্যাকটোরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হতে পারে। উভয়কে এন্টিরিক জ্বর নামে অভহিত করা হয়।
এ রোগের জীবানু যে ভাবে ছড়ায়: ব্যাকটোরিয়া সংক্রমিত দূষিত খাবার, পানি ও দুধ সেবনের ফলে মুখ দিয়ে ব্যাকটেরিয়া খাদ্যনালীর মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করে। মানুষই টাইফয়েড জ্বরের একমাত্র বাহক। সংক্রমিত ব্যাক্তিই রোগ জীবাণু বহনকারী হিসেবে কাজ করে। এ রোগ সৃষ্টির জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ জীবাণু দেহে প্রবেশ করতে হয়। কারণ পাকস্থলীর পাচক রসের অতীব অম্লতার বা এসিডের জন্য বেশ কিছু জীবাণু নষ্ট হয়ে যায়। জীবাণুগুলো মানব দেহের ক্ষুদ্রান্তে বাসা বাঁধে এবং ক্ষতের সৃষ্টি করে এবং জীবানুর টক্সিন রক্তে মিশে জ্বরের সৃষ্টি করে এবং এগুলো দেহের লসিকা গ্রন্থিতে আশ্রয় গ্রহন করে। এ জ্বর ১০-১৪ দিন থাকে। প্যারাটাইফয়েটের ক্ষেত্রে কিছু দিন কম থাকে। এ রোগের অসংখ্য জীবাণু রোগীর মলমূত্রের সাথে মিশে থাকে। তাছাড়া যারা অল্প কয়েক দিন হলো এই রোগ হতে ভালো হয়ে উঠছেন তাদের মূলমত্রেও বহু দিন পর্যন্ত জীবাণু মিশে থাকতে পারে। এই সব মলমূত্র যেখানে সেখানে ফেলে রাখলে তা শুকিয়ে ধুলার সাথে মিশে যায় এবং অল্প দিন বেঁচে থাকে। কিন্তু পানিতে সাথে মিশে বিশেষভাবে ময়লা পানিতে মিশে বহুদিন পর্যন্ত জীবাণু বেচেঁ থাকে। যে পুকুরে বা জলাশয়ে মিশে মূলমত্রের কাপড় ছোপড় ধোয়া হয় বা পুকুরে পাড়ে রোগীর কাপড় কাঁচা হয় এ মিশ্রিত পানি মিশে জীবাণু ছড়ায়। এ পানি পান করলে বা মুখ ধুলে এ রোগে আক্রান্ত হয়। তাছাড়া কাঁচা ফলমূল, তরিতরকারি, আইসক্রিম, মাছি, পিপীলিকা, আরশোলা ইত্যাদির মাধ্যমে খাবার ও পানির মাধ্যমে ছড়াতে পারে। এটি প্রধানত-পানি বাহিত রোগ রান্নাঘরের খাবার গুলি ঢেকে না রাখলে আরশোলা সংস্পর্শে টাইফয়েড এর জীবাণু খাবারের সাথে মিশতে পারে। ফলে এ খাবার থেকে এ রোগ সৃষ্টি হতে পারে।
যেভাবে বুঝবেন: রোগজীবাণু দেহে প্রবেশের পর রোগের নানা লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে। লক্ষণ প্রকাশ পেতে ১০-১৪ দিন সময় লাগে। জ্বরই এ রোগের প্রধান লক্ষণ। * জ্বর জ্বর ভাব, শরীরের তাপমাত্রা ১০৩ক্ক ফা. থেকে ১০৫ক্ক ডিগ্রী ফা. হতে পারে। *প্রচন্ড মাথা ব্যথা ও শারীরে ব্যথা হয় * রাতে ঘুম কম হয় *প্রলাপ বকে এবং মাথা ঘুরায়, কফ ও কাশি হয়। * কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে * শিশুদের ক্ষেত্রে ডায়রিয়া বা বমির ভাব দেখা দেয়। * রোগী অস্থির হয়, বমি করে, চোখ লাল হয়ে ওঠে, পেট ফাপা, পেটে চাপ দিলে ব্যাথা অনুভূত হয়, * মুখ ও জিহ্বা শুকনো থাকে। জিভের মধ্যবর্তী অংশ সাদা শ্লেষ্মায় ঢাকা থাকে। এ পেটের ডানদিকে চাপ দিলে গড় গড় শব্দ হয়। পেটে বা পিঠে গোলাপী বর্ণের দানা দেখা দিতে পারে। * হাতে চাপ দিলে বসে যায় আবার কিছুক্ষণ পর জেগে ওঠে। * রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে টাইফয়েড নিশ্চিত ভাবে সনাক্ত করা যায়।
* নাড়ির গতি দ্রুতি ও দুর্বল থাকে।
প্রতিরোধের উপায়: * বিশুদ্ধ পানি পান করা * টয়লেট ব্যবহারের পর সাবান ও পানি দিয়ে হাত ভালো করে ধোয়া * রোগ থেকে পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত অন্যের খাবার তৈরী বা পরিবেশন না করা। এ ইনজেকশন ভিত্তিক টিকা গ্রহন করা। সব সময় ভালোভাবে রান্না করা ও গরম খাবার খাওয়া * কাঁচা ফলমূল ও শাক সবজি ভালো করে ধুয়ে বা বাকল ছাড়িয়ে খাওয়া * চিকিৎসকের পরার্মশে নির্ধারিত অ্যান্টিবায়োটিক কোর্স বা নির্ধারিত সময় পর্যন্ত ঔষধ গ্রহণ করা। *সুস্থ হওয়ার পরও পুনরায় রোগের জীবাণু দেহে আছে কিনা তা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া * খাদ্য প্রস্তুুতকারীদের বা পরিষ্কার পরিছন্ন বজায় রেখে স্বাস্থ্য বিধি মেনে খাদ্য তৈরী ও পরিবেশন করা।
কেন শিশুকে ভ্যাকসিন দেবেন ঃ টাইফয়েড পানিও খাবার বাহিত রোগ। শিশুদের মধ্যে এ রোগের প্রকোপ বেশী তাই শিশুদের মাঝেই এর জটিলতা ও মৃত্যুর হার বেশি। এ জন্য শিশুদের টাইফয়েড ভ্যাকসিন দেওয়া প্রয়োজন। তাছাড়া এ ভ্যাকসিন শিশুকে সুস্থ ও নিরাপদ রাখতে যে সব আরো কাজ করে তা হলোঃ- একবার টিকা নিলে পাঁচ-সাত বছর শিশুর স্বাস্থ্যকে সুরক্ষা দেয়। দেহে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরী হয়। এর টাইফয়েড শিশুর দেহে মারাত্মক জটিলতা তৈরী করতে পারে। এর মধ্যে আলসার, ডায়রিয়ার মাধ্যমে পানি শূন্যতা, মস্তিকের প্রেদাহ রোগ সৃষ্টি করে অঙ্গহীন বা অঙ্গের ক্ষতি করতে পারে। ভ্যাকসিন নিলে শিশুর দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরী করে শিশুর জীবন সুস্থ রাখে। টাইফয়েড ভ্যাকসিন শিশুদের সামাজিক সুরক্ষা দেয় বা নিশ্চিত করে।
বেশি সংখ্যক শিশুদের মাঝে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে পারলে রোগ ছড়ানো অনেকটা কমে যায়। ফলে যারা নেয়নি তারাও সুরক্ষা পায়। চিকিৎসকদের মতে এটি নিরাপদ ও সহনীয। গুরুতর প্রতিক্রিয়া খুবই কম। তবে ইনজেসনের স্থানে ব্যথা, লাল হয়ে ফুলে ওঠা ও সামান্য জ্বর হতে পারে। এটি ধীরে ধীরে এমনিতেই করে যায়। তারপরেও কোন প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে অব্যশই চিকিৎসের পরামর্শ নিবেন। কেউ অসুস্থ বা চিকিৎসাধীন থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে টিকা দিবেন।
ষ মোঃ জহির আলম শাহীন
অধ্যক্ষ, ফুলসাইন্দ দ্বি-পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয়
ও কলেজ,
গোলাপগঞ্জ, সিলেট।
বিভাগ : স্বাস্থ্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
সরাইলে ইউএনও হিসেবে যোগদান করেছেন মো. আবুবকর সরকার
বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড সিরিজে আছেন জেসি
পদ ফিরে পেলেন বিএনপির বহিষ্কার হওয়া ৩৯ নেতা
এনসিপি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলায় যুগ্ম সমন্বয়কারী সৈয়দ ইমরান সাময়িক বহিষ্কার
নাইম-শহিদুলের ফিফটি
শেরপুরে বিএনপি অফিস ভাঙচুর মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা জেলহাজতে
কিনব্রিজের ঐতিহাসিক ঘড়ির সামনে ট্রফি উন্মোচন
বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে কোম্পানীগঞ্জে বিএনপির বর্ণাঢ্য র্যালি ও আলোচনা সভা
কারাগার থেকে হাজতি পালানোর ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি
ঝিনাইদহে শহীদ জিয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধন
সিলেট-রংপুর ম্যাচে বোলারদের দাপট
শেরপুরে চাকরির প্রলোভনে পাহাড়ে এনে টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা: আটক ৫
প্রায় ৬ বছর পরে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ফল আমদানি শুরু হয়েছে
জনগণের ভোটাধিকার যারা বাধাগ্রস্ত করবে জনগণ তাদের রুখে দিবে: মাহবুবের রহমান শামীম
আরও ১৪ জেলায় নতুন ডিসি
গৌরনদীতে ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা জামায়াতের প্রার্থীর
শাপলা তুলতে গিয়ে ৪ স্কুলশিক্ষার্থীর মৃত্যু
বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে উত্তপ্ত ময়মনসিংহ ,দুই পক্ষের ধাওয়া–ভাঙচুরে ছাত্রদল নেতা আবিদ নিহত
ময়মনসিংহ–তারাকান্দা সড়ক এখন ছিনতাইকারীদের রাজত্ব— রাত হলেই শুরু হয় ছিনতাই
আটক ইসরায়েলি সাবেক সেনা প্রসিকিউটরের আত্মহত্যা চেষ্টা
