ঢাকা   শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ | ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

মানবাধিকারের নামে সমাকামিতা প্রমোট করা জনগণ মানবে না

Daily Inqilab ইনকিলাব

৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০১ এএম

গত ১৬ বছর ধরে রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর মাধ্যমে গুম ও বিচাবর্হিভুত হত্যাকান্ডসহ অব্যাহতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে বিরোধীদলের লাখ লাখ নেতাকর্মীকে বছরের পর বছর ধরে হয়রানি খুব সাধারণ ঘটনায় পরিনত হয়েছিল। ছাত্রদের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন দমনে সরকারের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও নৃশংসতার ঘটনা নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে সোচ্চার ভ’মিকায় দেখা গেছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান এজেন্ডা হচ্ছে সংস্কার এবং গণতান্ত্রিক নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করা। এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে সরকারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন থাকলে নাগরিকদের মানবাধিকার হরণ বা লঙ্ঘনের ঘটনা এমনিতেই কমে আসবে। কিন্তু অর্ন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস স্থাপনের তোড়জোড় দেখা যাচ্ছে। পশ্চিমা মানবাধিকারের প্রশ্নে এলজিবিটি বা সমকামিতাকে আইনসিদ্ধ করার বা প্রশ্রয় দেয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। বিগত সরকারের সময় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তকে যৌণশিক্ষার নামে সমকামিতা ও ফ্রি সেক্স প্রমোট করার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক জনমত ও তীব্র ক্ষোভ লক্ষ্য করা গেছে। ফলে ইসলামি মূল্যবোধের পরিপন্থী এবং সমকামিতার উস্কানিমূলক কিছু বিষয় পাঠ্য পুস্তক থেকে বাদ দিতে বাধ্য হয় সরকার। জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ঢাকা সফর করছেন। তিনি আইনের শাসন এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতার উপর জোর দিয়েছেন। তবে মানবাধিকারের নামে এলজিবিটি ও সমকামিতাকে উৎসাহিত করার বিষয়টি এখন আর কারো অজানা নয়। এ বিষয়ে দেশের মানুষ খুব সজাগ ও সচেতন রয়েছে।

দেশের শতকরা ৯২ ভাগ মানুষ মুসলমান। আর ইসলাম হচ্ছে সার্বজনীন মানবাধিকারের সর্বোচ্চ গ্যারান্টি। ইসলামে বর্ণ ও জাতিগত বৈষম্য, শ্রেণী ও লিঙ্গ বৈষম্যের কোনো সুযোগ নেই। ইসলাম নারীকে অনন্য মর্যাদার আসন দিয়েছে। ইসলামি মূল্যবোধ ও আধুনিক পাশ্চাত্য সমাজের মূল্যবোধে কিছু পার্থক্য রয়েছে। সে পার্থক্য বা বৈচিত্র্যকে অগ্রাহ্য করার সুযোগ নেই। কিন্তু অবাধ যৌনাচার ও সমকামিতা প্রধান ধর্মগুলোতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। সেখানে সমকামিতার মত বিষয়গুলো আমাদের সামাজিক ঐতিহ্য, ইসলামি সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের জন্য চরম হুমকি। আমাদের রাষ্ট্র পশ্চিমা গণতন্ত্র ও পুঁজিবাদী বাজার অর্থনীতিকে গ্রহণ করলেও এ দেশের মানুষ অবাধ যৌনাচার ও সমকামিতাকে বরদাশত করবে না। ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোসহ দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে দেশে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে। অর্ন্তবর্তী সরকারে সে সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি না থাকলেও প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড.মুহাম্মদ ইউনূসকে মনোনয়নে একটি রাজনৈতিক সমঝোতা ছিল এমন সমর্থন এখনো অটুট রয়েছে। কিন্তু পশ্চিমা এজেন্ডা বাস্তবায়নে নিয়োজিত এনজিওদের প্রতিনিধিত্বশীল কেউ যদি পশ্চিমাদের প্ররোচনায় মানবাধিকারের নামে এলজিবিটি ও সমকামিতাকে প্রশ্রয় দিতে চান, দেশের জনগণ তা মেনে নেবে না। দেশের তাহজিব-তমুদ্দন ও ধর্মীয় মূল্যবোধের বিপরীত কোনো কিছু চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা অতীতের মত ভবিষ্যতেও ব্যর্থ হবে। ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে তা রুখে দিতে পিছ পা হবে না।
ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের অফিস স্থাপন এবং মানবাধিকার হাইকমিশনার ভলকার তুর্কের ঢাকা সফর নিয়ে সমাজে এক ধরনের মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। মানবাধিকার কার্যালয় থাকলেই মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণার আলোকে অধিকারগুলো নিশ্চিত হবে, এমনটা দাবি করা যায় না। আমাদের একটি জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আছে। একে শক্তিশালী ও স্বাধীন করার আইনগত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যদিকে জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে মাত্র ১৭টি অনুন্নত দেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপিত হয়েছে। জাতিগত সংঘাত ও বিভেদ-বৈষম্য পীড়িত দেশ কম্বোডিয়া, চাদ, গুয়াতেমালা, বুরকিনা ফাসো, লাইবেরিয়া, মৌরিতানিয়া, হন্ডুরাস, নাইজেরিয়া, সিরিয়া, তিউনিসিয়া, নাইজার ও ফিলিস্তিন ও ইয়েমেনে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের অফিস রয়েছে। মুসলিম প্রধান দেশগুলোতে জাতিসংঘ মানবাধিকার অফিসের কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য সম্পর্কে সন্দেহের অবকাশ আছে। এনজিও এবং মানবাধিকার প্রশ্নে পশ্চিমা দেশ ও দাতা সংস্থাগুলোর ফান্ডিং উদ্দেশ্যহীন নয়। পাঠ্যপুস্তকে যৌনশিক্ষা ও তৃতীয় লিঙ্গের বিষয়গুলোকে সন্নিবেশিত করার পেছনে পশ্চিমা প্রভাবকে দায়ি করা হয়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার অফিস খোলার তড়িঘড়ি প্রয়াসকে অনেকেই পশ্চিমা গোপন এজেন্ডা বাস্তবায়নের অপপ্রয়াস বলে মনে করছেন। অর্ন্তবর্তী সরকারের কেউ যেন এনজিও’র মত পশ্চিমা এজেন্ডা বাস্তবায়নের ফাঁদে পা না দেন সে বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ মানবাধিকার অফিস খুলে সমকামিতা প্রমোট করার মতো কোনো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিলে জনগণ তা রুখে দেবে। বাংলাদেশে জাতিগত সংঘাত বা বিভেদ নেই। বড় দেশগুলোতে বা কোনো পশ্চিমা দেশে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের অফিস নেই। এমনকি ভারতের মত জাতিগত বৈষম্য, দাঙ্গা ও মুসলমান গণহত্যার ঝুঁকিপূর্ণ দেশে জাতিসংঘ মানবাধিকার অফিস স্থাপন না করে বাংলাদেশে কেন এটা করতে হবে তা’ জানার অধিকার দেশের মানুষের আছে। অর্ন্তবর্তী সরকারকে এ বিষয়ে সঠিক ব্যাখ্যা দিতে হবে। মানুষের আশঙ্কা ও সন্দেহ দূর করতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা আশা করব, ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলের দেশগুলোতে সুশাসন ও মানবাধিকার সমুন্নোত রাখতে ইতিবাচক ভ’মিকা পালন করবে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

দেশনেত্রীর প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধা ও সম্মান
বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনসহ সরকারের কাজের পরিধি বিশাল
অদক্ষ ফার্মাসিস্ট দ্বারাই চলছে ফার্মেসি
নির্বাচন কমিশন গঠন : গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু
মানসিক সুস্থতায় কর্মবিরতি
আরও

আরও পড়ুন

আল্লাহকে পেতে হলে রাসুলের পথ অনুসরণ অপরিহার্য: মাওলানা রুহুল আমিন খান

আল্লাহকে পেতে হলে রাসুলের পথ অনুসরণ অপরিহার্য: মাওলানা রুহুল আমিন খান

ঢাকাবাসীকে নিরাপদ রাখতে হবে : ডিএমপি কমিশনার

ঢাকাবাসীকে নিরাপদ রাখতে হবে : ডিএমপি কমিশনার

ভোটের মাধ্যমে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের ঐক্যবন্ধ থাকতে হবে-লুৎফর রহমান আজাদ

ভোটের মাধ্যমে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের ঐক্যবন্ধ থাকতে হবে-লুৎফর রহমান আজাদ

গফরগাঁওয়ের বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ আবদুছ ছালামের ইন্তেকাল

গফরগাঁওয়ের বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ আবদুছ ছালামের ইন্তেকাল

আওয়ামী দোসররা মানুষের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে: তানভীর হুদা

আওয়ামী দোসররা মানুষের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে: তানভীর হুদা

ফিলিস্তিনিদের জন্য কোটি টাকার সহায়তা নিয়ে মিশরে পৌঁছেছে হাফেজ্জী চ্যারিটেবল

ফিলিস্তিনিদের জন্য কোটি টাকার সহায়তা নিয়ে মিশরে পৌঁছেছে হাফেজ্জী চ্যারিটেবল

১৭টি বছর শ্রমিকদলের নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতন করেছে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা- কেন্দ্রীয় সভাপতি

১৭টি বছর শ্রমিকদলের নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতন করেছে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা- কেন্দ্রীয় সভাপতি

বিএনপি যতই চাপ দিক, সংস্কারের ওপর ভিত্তি করেই নির্বাচন: উপদেষ্টা নাহিদ

বিএনপি যতই চাপ দিক, সংস্কারের ওপর ভিত্তি করেই নির্বাচন: উপদেষ্টা নাহিদ

ছয় বছর পর স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের মুখোমুখি পাকিস্তান

ছয় বছর পর স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের মুখোমুখি পাকিস্তান

তারেক রহমান ও কায়কোবাদের মামলা প্রত্যাহার না করলে অনশনসহ কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের

তারেক রহমান ও কায়কোবাদের মামলা প্রত্যাহার না করলে অনশনসহ কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের

টানা তিন সেঞ্চুরিতে তিলাকের বিশ্ব রেকর্ড

টানা তিন সেঞ্চুরিতে তিলাকের বিশ্ব রেকর্ড

সাময়িক বন্ধের পর খুললো যমুনা ফিউচার পার্ক

সাময়িক বন্ধের পর খুললো যমুনা ফিউচার পার্ক

জ্বালানি খাতে সাশ্রয় হয়েছে ৩৭০ কোটি টাকা: জ্বালানি উপদেষ্টা

জ্বালানি খাতে সাশ্রয় হয়েছে ৩৭০ কোটি টাকা: জ্বালানি উপদেষ্টা

গৌরনদীতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দোকান ঘরে বাস নিহত-১ আহত-৬

গৌরনদীতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দোকান ঘরে বাস নিহত-১ আহত-৬

কুড়িগ্রামের উলিপু‌রে ২ আ'লীগ নেতা গ্রেপ্তার

কুড়িগ্রামের উলিপু‌রে ২ আ'লীগ নেতা গ্রেপ্তার

লাওসে ভেজাল মদপানে ৬ বিদেশির মৃত্যু

লাওসে ভেজাল মদপানে ৬ বিদেশির মৃত্যু

না.গঞ্জে ডেঙ্গু পরীক্ষার টেস্ট কিট সংকট কে কেন্দ্র করে টেস্ট বাণিজ্যের অভিযোগ

না.গঞ্জে ডেঙ্গু পরীক্ষার টেস্ট কিট সংকট কে কেন্দ্র করে টেস্ট বাণিজ্যের অভিযোগ

ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে বড় ধরনের বিক্ষোভের প্রস্তুতি

ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে বড় ধরনের বিক্ষোভের প্রস্তুতি

‘পতনের’ মুখে ইউক্রেনের ফ্রন্টলাইন

‘পতনের’ মুখে ইউক্রেনের ফ্রন্টলাইন

বিশ্বব্যাংক আয়োজিত জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতির প্রদর্শনী

বিশ্বব্যাংক আয়োজিত জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতির প্রদর্শনী