ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক-সেতু দ্রুত মেরামত করতে হবে
১১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম
এবারের বন্যায় প্রায় ২৩১টি প্রধান সড়কের ১২৪০ কিলোমিটার এবং প্রায় সাড়ে ৩০০ ব্রিজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো নতুন করে তৈরি অথবা মেরামত করতে হবে। বিগত সরকারের শেষ দিকে দরপত্র যাচাই-বাছাই হয়। প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকার এই কাজ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, বিদ্যমান এই পরিস্থিতিতে এক রকম স্থবির হয়ে পড়েছে সড়ক ও জনপথের (সওজ) ১০টি জোন। বিপুল অংকের এই টাকার সংস্থান থাকলেও কাজ শুরু করতে পারছে না সওজ। কারণ, অন্তর্ভুক্ত ১০৫ প্রকল্পের মধ্যে বেশিরভাগ দরপত্রে ঠিকাদারদের প্রতিযোগিতামূলক অংশগ্রহণ না হওয়ার বিষয়টি সামনে আনা হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানিয়েছেন, যেসব দরপত্রে ঠিকাদারদের অংশগ্রহণ প্রতিযোগিতামূলক হয়নি, সেগুলো পুনঃদরপত্র আহ্বান করা হবে। কালো তালিকায় স্থান পাওয়া ঠিকাদারদের বাদ দিয়ে নতুনদের কাজে আসার জন্য শিগগিরই পদেক্ষেপ নেয়া হবে। পর্যবেক্ষকদের মতে, পুনঃদরপত্র এবং নতুন ঠিকাদারদের কাজ দেয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে অন্তত ৫/৬ মাস সময় লাগবে। তারপর কাজ শুরু করতে আরো অন্তত ১/২ মাস লেগে যাবে। যা এখনই শুরু করা দরকার, তা শুরু করতে আরো যদি ৭/৮ মাস লাগে তবে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও ব্রিজের অবস্থা কী দাঁড়াবে, সহজেই আন্দাজ করা যায়। সওজের সড়ক ও ব্রিজ নির্মাণে অনিয়ম, দুর্নীতি, অর্থলোপাটের কথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশ্বে সড়ক ও ব্রিজ নির্মাণব্যয় বাংলাদেশে অনেক বেশি, এ তথ্য কারো অজানা নেই। এই অতিরিক্ত ব্যয়ের একাংশ ঠিকাদার, সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা এবং মন্ত্রী-এমপিরা ভাগ বাঁটোয়রা করে খেয়ে নেয়। অভিজ্ঞতাহীন দলীয় নেতাকর্মীদের ঠিকাদারি দেয়া বিগত স্বৈরাচারী সরকারের সাধারণ নীতিতে পরিণত হয়। শুধু সওজে নয়, সর্বত্র। কাজের নামে টাকা মারা যখন প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়, তখন কাজের মান বলে কিছু থাকে না। শুধু সওজই নয়, কোনো কর্তৃপক্ষেরই রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট ও নির্মাণ মানসম্পন্ন হয় না। রাস্তা ১/২ মাসের মধ্যে ভেঙ্গেচুরে চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়া, ব্রিজ বা ভবন নির্মাণের সময় কিংবা অব্যবহিত পরে ভেঙ্গে-ধসে ভূমিস্মাৎ হওয়া এ দেশে কোনো বিরল ঘটনা নয়।
বন্যা-বৃষ্টিতে স্বাভাবিকভাবেই রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট ইত্যাদির ক্ষতি হয়। আর নির্মাণে যদি ত্রুটি থাকে, নির্মাণ উপকরণ যদি রেশিও অনুপাতে না দেয়া হয়। কিংবা উপকরণ যদি নি¤œমানের হয়, তবে তো কথাই নেই। রাস্তা খানাখন্দে পরিণত হয়। ব্রিজ-কালভার্ট ধসে পড়ে। প্রতি বছর বন্যায় মহাসড়ক থেকে গ্রামীণ সড়ক পর্যন্ত শত শত কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অসংখ্য ব্রিজ-কালভার্ট নষ্ট হয়। এজন্য নতুন সড়ক নির্মাণ অথবা মেরামতের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়। এবারও সংগত প্রয়োজনেই সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের তরফে এই নির্মাণ-মেরামতের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। সওজও আলোচ্য প্রকল্পগুলো নিয়েছে। কিন্তু ঠিকাদারের অভাবে তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সওজের ৪৫ জন ঠিকাদার বা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। মূলত তারাই সওজে ঠিকাদারী করতো। তাদের কালো তালিকাভুক্ত করে নতুন ঠিকাদার সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এখন মন্ত্রণালয় থেকে বলা হচ্ছে, দরপত্রের প্রক্রিয়া প্রতিযোগিতামূলক হয়নি। তাহলে কারা করবে কাজ? পর্যরেক্ষকদের মতে, সড়ক ও ব্রিজের যে অবস্থা দাঁড়িয়েছি, দ্রুত মেরামত করতে না পারলে তা আরো ক্ষতিগ্রস্ত হবে, চলাচলের উপযুক্ততা হারাবে, যানবাহনের অপরিমেয় ক্ষতি হবে এবং মেরামতিব্যয় অনেক বেশি পড়বে। আমাদের সব ধরনের মোটরযানই আমদানি করতে হয়। এদের যন্ত্রাংশও আমদানি করতে হয়। এসব আমদানিকৃত মহার্ঘ যানবাহন ভাঙ্গাচোরা, খানাখন্দকে ভরা সড়কে চলাচল করলে ক্ষতিগ্রস্তই হবে না, এদের স্বাভাবিক আয়ু বা স্থায়িত্ব কমে যাবে। বলে রাখা দরকার, সড়কে চলাচলের জন্য যানবাহনের মালিকদের শুল্ক দিতে হয় বিভিন্নভাবে। এর বিনিময়ে তারা অবাধ ও মসৃণ যাতায়াত নিশ্চয়ই আশা করতে পারে। যাতায়াত ও ব্যবসা-বাণিজ্য গতিশীল রাখার ক্ষেত্রে মসৃণ যাতায়াত ব্যবস্থার অপরিহার্যতা প্রশ্নাতীত। এমনিতেই আমাদের সড়ক ও পরিবহন ব্যবস্থাপনা ত্রুটিপূর্ণ। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাও অপ্রতুল। রাজধানী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শহর-নগরেও রাস্তাঘাটে যানজট ভয়াবহ রূপে বিদ্যমান। এর কোনো সমাধান নেই। তার ওপর সওজ ও নির্বাধে যাতায়াতের উপযোগী রাস্তাঘাটও না থাকা যানজটের সমস্যাকে আরো জটিল ও কঠিন করে তুলছে।
এমতাবস্থায়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উচিৎ সওজের সড়ক নির্মাণ ও মেরামত প্রকল্পগুলো দ্রুত শুরু ও শেষ করা। ইতোমধ্যে অনেকটা সময় চলে গেছে। এখন কাজ শুরু করতে পারলেও শেষ করা যাবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। আরো কয়েক মাস বিলম্বিত হলে কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না। এখন কাজ দেয়ার জন্য যে প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে, তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন নাও হতে পারে বলে স্বয়ং উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সংশয় প্রকাশ করেছেন। পর্যবেক্ষকদের প্রশ্ন, উপদেষ্টাই যদি সংশয় প্রকাশ করেন, তবে আশার বাণী শোনাবেন কে? কে তার মন্ত্রণালয়কে যথাযথভাবে কাজে লাগাবেন? স্মরণ করা যেতে পারে, মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান দক্ষ-অভিজ্ঞ আমলা হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। কিন্তু উপদেষ্টা হিসেবে তার সে দক্ষতা-অভিজ্ঞতার পরিচয় এখনো দিতে পারেননি। একাধিক বড় ও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব তার ওপর অর্পিত হয়েছে। কোনো ক্ষেত্রেই তিনি জনতুষ্টি অর্জন করতে পারেননি। বিদ্যুতের অবস্থা অত্যন্ত শোচীনয়। গ্যাসের অবস্থাও ভালো নয়। বিদ্যুৎ-গ্যাসের অভাবে মানুষের জীবনধারাই ব্যাহত হচ্ছে না, উৎপাদন ক্ষেত্রেও ব্যাপক বিরূপ প্রভাব পড়েছে। বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে তার পারফরমেন্স মোটেই আশাবাদী হওয়ার মতো নয়। বরং দিন দিন তার ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে না। বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দেখতে হবে। কোথায় তার অপারগতা, সমস্যা ও ব্যর্থতা, তা খতিয়ে দেখতে হবে। এখন গবেষণা, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ও ধীরতা প্রদর্শনের সময় নেই। বক্তৃতা-বিবৃতি ও সভা-সেমিনারে ভাষণ দেওয়ারও অবকাশ নেই। অন্তর্বর্তী সরকার ও তার উপদেষ্টাদের কিছু জরুরি কাজ সম্পন্ন করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ দায়িত্ব সন্তোষজনকভাবে সম্পাদন করতে পারলেই সরকার ও তাদের সাফল্য। আমরা আশা করবো, বিদ্যুৎ-গ্যাসের সংকট নিরসনে সরকার জরুরি পদক্ষেপ নেবে। একই সঙ্গে সড়ক-সেতুর কাজ দ্রুতায়িত করার ব্যবস্থাও নেয়া হবে। প্রয়োজনে এসব ক্ষেত্রে বিকল্প অনুসন্ধান করে তা কাজে লাগাতে হবে। সকল ক্ষেত্রে উপদেষ্টারা তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন ও মনোযোগী থাকবেন, এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
গৌরনদীতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দোকান ঘরে বাস নিহত-১ আহত-৬
কুড়িগ্রামের উলিপুরে ২ আ'লীগ নেতা গ্রেপ্তার
লাওসে ভেজাল মদপানে ৬ বিদেশির মৃত্যু
না.গঞ্জে ডেঙ্গু পরীক্ষার টেস্ট কিট সংকট কে কেন্দ্র করে টেস্ট বাণিজ্যের অভিযোগ
ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে বড় ধরনের বিক্ষোভের প্রস্তুতি
‘পতনের’ মুখে ইউক্রেনের ফ্রন্টলাইন
বিশ্বব্যাংক আয়োজিত জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতির প্রদর্শনী
আগামীকাল রোববার নারায়ণগঞ্জের যেসব এলাকায় ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না
সিলেট সীমান্তে দেড় কোটি টাকার ভারতীয় পণ্য জব্দ
২ মার্চকে জাতীয় পতাকা দিবস হিসেবে স্বীকৃতির আহ্বান জানালেন মঈন খান
সরাসরি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রস্তাব নিয়ে যা বললেন বদিউল আলম
সিংগাইরে সাংবাদিক মামুনের বাবার ইন্তেকাল
বিরামপুরে ধান-ক্ষেত থেকে হাত বাধা আদিবাসী দিনমজুর মহিলার লাশ উদ্ধার!
আওয়ামী শুধু ফ্যাসিস্ট নয়, তাদের আরেকটা নাম দিয়েছি স্যাডিস্ট: মিয়া গোলাম পরওয়ার
খুবিকে ইমপ্যাক্টফুল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে সকলের সহযোগিতা কামনা
লাল পাহাড়ের দেশকে বিদায় জানিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন অরুণ চক্রবর্তী
বিদেশি প্রভুদের নিয়ে বিতাড়িত স্বৈরাচার ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে: তারেক রহমান
আগামী রোববার-সোমবারও বন্ধ থাকবে ঢাকা সিটি কলেজ
অত্যাধুনিক সব ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালাব ইউক্রেনে: পুতিন
নির্বাচনে যত দেরি ষড়যন্ত্র তত বাড়বে: তারেক রহমান