শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের সুরক্ষা দেয়ার প্রবণতা দুঃখজনক
২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে নির্বিচারে খুন, গুম, দুর্নীতি, অবিচার, অন্যায় ইত্যাদি ছিল নিত্যকার ঘটনা। দেশকে ‘মঘের মুল্লুক’ বানিয়ে মানুষকে অত্যাচার, নিপীড়ন ও নির্যাতন করা হয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেশের সকল শ্রেণি-পেশার হাজার হাজার মানুষ জীবন দিয়ে ও আহত হয়ে শেখ হাসিনাকে উৎখাত করে দেশছাড়া করেছে। স্বাভাবিকভাবেই জনগণ শেখ হাসিনার শাসনামলের সমস্ত অপকর্মের হিসাব ও বিচার চাচ্ছে। তার শাসনামলে অপকর্মের সাথে জড়িতদের কেউ যাতে রেহাই না পায় এবং তাদের যথাযথ বিচার হয়, তা নিশ্চিত করাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের অন্যতম স্পিরিট। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেড় দশকের বেশি সময় ধরে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এবং তাদের পরিবারের সদস্যসহ মন্ত্রী-এমপি, নেতাকর্মী, ব্যবসায়ী, আমলা, পুলিশ, সেনাবাহিনীর সদস্য, সাংবাদিক থেকে বিচারক পর্যন্ত অনেকেই দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত ছিল। তারা দেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। এখনও যারা দেশে রয়ে গেছে, তাদের কাছেও অঢেল অর্থ-সম্পদ রয়েছে। একেকজন সম্পদের পাহাড় নিয়ে বসে আছে। এদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া জনগণের দাবি।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে শেখ হাসিনার দোসর মন্ত্রী-এমপি, ব্যবসায়ী, সেনাকর্মকর্তা, সাংবাদিক ও অন্য বেশ কিছু প্রভাবশালীকে গ্রেফতার এবং বিচারের মুখোমুখি করেছে। তবে তাদের বাইরেও আরও অনেকে রয়ে গেছে। এদের কেউ কেউ পালিয়ে দেশের বাইরে চলে গেছে। অনেকে দেশে ঘাপটি মেরে রয়েছে। এই ঘাপটি মেরে থাকারা তাদের অপকর্ম থেকে বাঁচতে নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যেহেতু তাদের হাতে অঢেল অর্থ রয়েছে, তাই তার প্রভাবে তারা অপকর্ম ঢাকতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তাদের অর্থের কাছে প্রশাসন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংস্থা নতিস্বীকার করছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনামলে সাজানো প্রশাসন এখন পর্যন্ত পুরোপুরি তার দোসরমুক্ত হয়নি। সরকার সংস্কার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে অনেকে রং বদলেছে। রং বদলানো ও ঘাপটি মেরে থাকারা এখন শেখ হাসিনার সহচর ও সুবিধাভোগীদের বাঁচানোর জন্য সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এমনকি, যারা গ্রেফতার হয়ে বিচারের মুখোমুখি, তাদের আইনি সহায়তা দেয়ার জন্য অনেক আইনজীবী এগিয়ে এসেছে। অস্বীকার করার উপায় নেই, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার উৎখাতে আইনজীবীদের ব্যাপক অবদান রয়েছে। তাদের কেউ কেউ যখন ফ্যাসিস্টের দোসরদের আইনি সহায়তা দেয়, তখন তা সাধারণ মানুষের কাছে দৃষ্টিকটু ঠেকে। এটা তাদের পেশাগত দায়িত্বের অন্তর্গত হলেও নৈতিক সততা বলে কথা আছে। অভিযুক্তর আইনি সহায়তা পাওয়া তাদের অধিকার। তা সত্ত্বেও তাদের সহায়তা দেয়ার প্রশ্নে নীতি-নৈতিকতার কথা উঠবেই। যেসব আইনজীবী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেছে, তাদের এ দিকটি ভেবে দেখা উচিৎ। ইতোমধ্যে কোনো কোনো বিশিষ্ট আইনজীবী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পক্ষে আইনি সহায়তা দেয়ার কথা বলেছেন। শেখ হাসিনার বিচারের ক্ষেত্রে অবশ্যই তার আইনজীবী থাকবেন। তবে দেশের জন্য ভয়ংকর এবং অসংখ্য ছাত্র-জনতা হত্যার অভিযোগ ও দেশকে স্বৈরাচারি শাসনের মাধ্যমে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে, তার পক্ষে নীতিগত দিক থেকে ওকালতি বা সুরক্ষা দেয়া কতটা সুবিবেচনা প্রসূত, সে প্রশ্ন থেকে যায়। দেখা যাচ্ছে, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তার দোসররা দিন যাওয়ার সাথে সাথে সক্রিয় হয়ে উঠছে। এর কারণ হচ্ছে, তাদের প্রতি প্রশাসনসহ একটি শ্রেণীর অনুকম্পা প্রবণতা। এর ফলে, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাসহ ভয়াবহ অপরাধে সম্পৃক্তদের পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে, যা ছাত্র-জনতার স্পিরিটের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল।
উদ্বেগের সাথে পরিলক্ষিত হচ্ছে, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসরদের কেউ কেউ অন্তর্বর্তী সরকারের ফ্যাসিজম উচ্ছেদের পদক্ষেপকে হাসিনার শাসনামলের সাথে তুলনা করছেন। তারা এমনও বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে যেভাবে গ্রেফতার ও মামলা হচ্ছে, স্বাধীনতার পর নাকি এমন চিত্র আর দেখা যায়নি। তারা এ ধরনের দুঃসাহস এখন দেখাচ্ছে। এটা দেখাতে পারছে, প্রশাসনসহ সর্বত্র ঘাপটি মেরে থাকা শেখ হাসিনার দোসরদের খুঁটির জোর ও অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত হওয়ার কারণে। শুধু তাই নয়, অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য হাসিনার পান্ডাবাহিনী একদিকে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে, অন্যদিকে অঢেল অর্থ বিনিয়োগের মাধমে লবিস্ট নিয়োগ করে আন্তর্জাতিক মহলে ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন করার কাজে নেমে পড়েছে। তার সাথে যুক্ত আছে ভারতের মোদির গোদি মিডিয়া। অন্তর্বর্তী সরকারকে এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। আন্তর্জাতিক মহলে শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের প্রপাগান্ডার পাল্টা জবাব কিভাবে দেয়া যায়, তা নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং দূতাবাসগুলোকে সক্রিয় হবে। ইতোমধ্যে শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের খুন, গুম, দুর্নীতি থেকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য একটি চক্র প্রবলভাবে সক্রিয়া হয়ে উঠেছে। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুই শতাধিকের বেশি খুনের মামলা হলেও তার এন্তার দুর্নীতির কোনো তদন্ত কাজ শুরু হয়নি। এ সুযোগে দুর্নীতি ঢাকার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে তার দোসররা উঠেপড়ে লেগেছে। সংস্থাটিতে এখনও শেখ হাসিনার দোসররা রয়ে গেছে এবং এর চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য নানা কায়দা করা শুরু করেছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, যে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যাপক জনসমর্থন নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেছে, তার সাথে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শাসনামলের তুলনার যে প্রবণতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, তা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। এ সরকারের মূল দায়িত্বই হচ্ছে, দেশের মাটি থেকে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার চিহ্ন মুছে ফেলা। এ কাজে যত বিলম্ব হবে, সরকার তত বিপাকে পড়বে। সরকারের উচিত, সময়ক্ষেপণ না করে অনতিবিলম্বে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের খুন, গুম, দুর্নীতির বিচার ত্বরান্বিত ও নিশ্চিত করা।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক
পাঠ্যবই ছাপায় অনিয়মে আনন্দ প্রিন্টার্সকে সতর্কতা
দক্ষিণ লেবাননে ৬ চিকিৎসাকর্মী নিহত
জনগণের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে হবে
আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না কেউ গায়ে পড়লে জবাবের প্রস্তুতি রাখতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথের কাছে ২৭ রেফারির চিঠি
ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা
বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা
সিলেটে মাজিদের ফিফটি
অ্যাম্বাসেডর কাপ উশুতে সেনাবাহিনী চ্যাম্পিয়ন
মাদক শুধু ব্যক্তিকে নয় পরিবারকেও ধ্বংস করে
সাধারণ মানুষের পেটে লাথি মেরে আ.লীগ নিজেদের ভাগ্য গড়েছে : এমরান সালেহ প্রিন্স
ধর্মদ্রোহী সরকারের সময় কোনো ধর্মই নিরাপদ ছিল না
দৌলতখানে শীতকালীন সবজি পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক
সুন্দরগঞ্জে ছয় পা বিশিষ্ট বাছুরের জন্ম
বৈষম্যের শিকার কুমিল্লার ১৫ হাজার এতিম শিশু
দালালচক্রে জিম্মি রোগীরা
ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোই সাটুরিয়ার শিশু শিক্ষার্থীদের ভরসা
পঞ্চগড়ে চিকিৎসক পদায়নের দাবিতে সড়ক অবরোধ