কর্মসংস্থানবিহীন উচ্চশিক্ষা ও ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের অপচয়
১৬ জুন ২০২৫, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১৬ জুন ২০২৫, ১২:০৪ এএম

বিখ্যাত রোমান দার্শনিক ও ইতিহাসবিদ প্লিনি দ্য এল্ডার (খ্রিষ্টপূর্ব ২৩-৭৯) আমাদের জন্য ভবিষ্যতের এক বড় সমস্যার ইঙ্গিত দিয়ে গিয়েছিলেন। প্লিনি তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘ন্যাচারাল হিস্ট্রি’র দশম খ-ের প্রথম অধ্যায়ে উটপাখির আচরণকে উদাহরণ টেনে বলেন, ‘উটপাখি মনে করে, যখন তারা তাদের মাথা ও ঘাড় একটি ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে ফেলে, তখন তাদের পুরো দেহ ঢেকে যায়।’ আমাদের অনেকের মানসিকতাও উটপাখির মতোই হয়ে দাঁড়িয়েছে, বাস্তবতা এড়িয়ে চলি, ভাবি সমস্যা নেই কিংবা থাকলেও তা আপনাআপনি ঠিক হয়ে যাবে। আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থার যারা নীতিনির্ধারক, মন্ত্রণালয়ের কর্তা, অধিদপ্তরের ডিজি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, কলেজের অধ্যক্ষ-তাঁরাও যেন এই ‘উটপাখি-নীতি’ মেনে চলেন। স্বাধীনতার এত বছর পেরিয়ে, ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান আমাদের সামনে এক নতুন ইতিহাসের সন্ধিক্ষণ এনে দিয়েছে। সময় এসেছে, নিজেদের বিভ্রান্ত শিক্ষাব্যবস্থা ও বিপন্ন উচ্চশিক্ষার দিকে তাকানোর, অগ্রাধিকারগুলো নতুন করে ভাবার, এবং সাহসী কিছু পরিবর্তন আনার। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারে এখনো তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না-যা হতাশাজনক এবং ভবিষ্যতের জন্যও বিপজ্জনক। অথচ, নীতিনির্ধারকদের নিশ্চয়ই অজানা নয় যে, দীর্ঘদিনের ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে ব্ল্যাকবক্সে পুরেই থেমে থাকেনি; উপরন্তু, আলাদিনের চেরাগসম ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’-এর শক্তি ও সম্ভাবনাকেও নীরবে গলাটিপে হত্যার চেষ্টা করেছে নিদারুন অবহেলায়। গত দেড় যুগে আমাদের শিক্ষা নিয়ে যারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তারা গুণগত মানের চেয়ে সংখ্যার পেছনে বেশি ছুটেছেন। শতভাগ পাস, নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয়, সর্বত্র অনার্স-মাস্টার্স চালু, এসব বাহ্যিক অর্জনের আড়ালে ‘উটপাখি-নীতি’ অনুসরণ করে আসল সত্যটা ঢেকে রাখার চেষ্টা চলেছে। অথচ, চাকরির সংকট, শিক্ষার মানের অবনতি, দক্ষতার অভাব, তরুণদের বেকারত্ব-সবই চোখের সামনে স্পষ্ট ছিল। কিন্তু তবুও, একটি গোটা প্রজন্মের ভবিষ্যৎকে বিভ্রান্তিমূলক শিক্ষাব্যবস্থার ছুরি দিয়ে শ্বাসরোধ করেও কর্তারা আত্মতুষ্টিতে বিভোর ছিলেন। ফলাফল? আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এখন যেন কেবল ডিগ্রি উৎপাদনের কারখানা হয়ে উঠেছে। এখানে মান, দক্ষতা বা বাস্তবজ্ঞান নয়-সবচেয়ে বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে শুধু সনদ পাওয়া। অথচ, আমাদের দরকার ছিল এমন এক শিক্ষাব্যবস্থা, যা সত্যিকার অর্থে মানুষকে মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে, দক্ষ করে তোলে, এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করে।
পরিসংখ্যানের বাহ্যিক চাকচিক্যে আত্মতুষ্ট নীতিনির্ধারকরা উচ্চশিক্ষা ও কর্মসংস্থান সংশ্লিষ্ট ডেটার ভয়াবহ বাস্তবতা দীর্ঘদিন ধরেই অবজ্ঞা করে গেছে অবলীলায়। অথচ, গবেষকরা ধারাবাহিকভাবে প্রশ্ন তুলে গেছে, এই ডিগ্রিগুলো শেষ করে তারা কী করছে? কই, কোথায় সেই চাকরি, সেই কর্মক্ষেত্র? অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উত্তর হলো, বেকারত্ব, হতাশা, দিশাহীনতা। ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্টের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতি ১০০ জন স্নাতক ডিগ্রিধারী তরুণ-তরুণীর মধ্যে ৪৭ জনই বেকার। বিশ্বব্যাংক (২০১৯) একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর জরিপ করে বলেছে, স্নাতক পাশ করা ৪৬ শতাংশই বেকার। এদিকে বিআইডিএস (২০২১) এর গবেষণা বলছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করা ৬৬ শতাংশই বেকার থাকছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়; এর অধিভুক্ত ২,২৮৩টি কলেজে প্রায় ৩২ লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে, যা দেশের মোট উচ্চশিক্ষার্থীদের প্রায় ৭২ শতাংশ। তবে দুঃখজনকভাবে, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে বেকারত্বের হার অত্যন্ত বেশি মানবিকে ৭৪, সামাজিক বিজ্ঞানে ৭১, বিজ্ঞানে ৬৬ এবং ব্যবসায় শিক্ষায় ৬৯ শতাংশ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, এই শিক্ষার্থীদের ৪৩ শতাংশই দরিদ্র পরিবারের সদস্য। অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ ও সানেমের যৌথ গবেষণা বলছে, বৈষম্য আর গুণগত শিক্ষার অভাবে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের ৯০ শতাংশ মনে করে, পড়াশোনা করে তারা চাকরি পাবে না। বিবিএসের সাম্প্রতিক তথ্য মতে, উচ্চ মাধ্যমিক ডিগ্রিধারীদের ক্ষেত্রে বেকারত্বের হার ৮.৭৮ শতাংশ, মাধ্যমিক শেষ করা ব্যক্তিদের বেকারত্বের হার মাত্র ২.৪২ শতাংশ ও প্রাথমিক উত্তীর্ণদের বেকারের হার ১.৬৯ শতাংশ। এই চিত্র থেকে স্পষ্ট হয়, শিক্ষিত বেকারত্বই এখন দেশের সবচেয়ে বড় সামাজিক ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি। কারণ, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা মানুষের অন্তর্নিহিত সম্ভাবনা বিকাশের হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারেনি। উপরন্তু, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য অর্থাৎ জ্ঞানের বিকাশ, দক্ষতা অর্জন, মানবিক মূল্যবোধ ও সামাজিক রূপান্তর বিকশিত করতে ব্যর্থ হয়ে জাতিকে অনেকাংশেই পঙ্গু করে দিয়েছে। তাই, প্রশ্ন হচ্ছে, ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড’ ভাবসম্প্রসারণের কফিনে পুরে সম্মিলিতভাবে অন্ধত্ব বরণ করে নেবো? উচ্চশিক্ষার প্রলয় অনিবার্য দেখেও চুপ করে থাকব?
যখন একটি দেশের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী (১৫-৬৪ বছর) মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশের উপরে থাকে এবং অকর্মক্ষম জনগোষ্ঠী (১৪ ও ৬৫+ বছর) ৪০ শতাংশ এর নিচে থাকে, তখন দেশটি ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডে প্রবেশ করে। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ এই বোনাসকালে প্রবেশ করেছে এবং আশা করা যায় ২০৩৯ সাল পর্যন্ত এই সম্ভাবনা অব্যাহত থাকবে। দশকব্যাপী মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৭ শতাংশ কর্মক্ষম জনসংখ্যা নিয়ে বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বা জনসংখ্যাতাত্ত্বিক বোনাসকালের স্বর্ণযুগ পার করে এসেছে। দেশে এখন তরুণ কর্মজীবীর (১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সি) সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। বিবিএসের তথ্যানুযায়ী প্রায় ১১ কোটি কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর মাত্র ৫৮.২ শতাংশ কর্মে নিয়োজিত; আবার, কর্মে নিয়োজিত এই জনগোষ্ঠীর ৮৫.১ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক পেশায় (চাকুরির নিরাপত্তা শূন্য) নিয়োজিত। কর্মসংস্থানের মান নিয়েও চিন্তিত হওয়ার অবকাশ রয়েছে। আরেকটি উল্লেখ করার মতো তথ্য হলো- চাকরি, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কোনোটিতেই যুক্ত নয় এরকম তরুণের (১৫-২৪ বছর) হার প্রায় ৪১ শতাংশ; অর্থাৎ, নিষ্ক্রিয় তরুণের সংখ্যা পৌঁছেছে অন্তত ১ কোটি ২৯ লাখে। নিষ্ক্রিয় ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী তরুণের হার ২২ শতাংশ; ফলে, তরুণ জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ এখন বেকার বা প্রচ্ছন্ন বেকার এবং এই হার ক্রমশ বাড়ছে। ২০১৩ সালে তরুণ বেকারের হার ছিল ৮.১ শতাংশ যা ২০২২ সালে এসে ২২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। গত এক দশকে তরুণদের কর্মসংস্থানের সুযোগ ৩.৪ শতাংশ হারে কমে গেছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাংকের এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৩ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে দেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী যেখানে গড়ে ১.৫ শতাংশ হারে বেড়েছে, সেখানে একই সময়ে কর্মসংস্থান প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ০.২ শতাংশ। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ‘সানেম’ (২০১৭) এর মতে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে কর্মসংস্থানবিহীন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে ধাবিত হচ্ছে। একইভাবে, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) তার ২০১৭ সালের বাজেট সংলাপে মন্তব্য করে যে, ৩০ শতাংশের অধিক শিক্ষিত বেকার নিয়ে বাংলাদেশ কর্মসংস্থানবিহীন মহামন্দার দিকে ধাবিত হচ্ছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটের সুপারিশ বিষয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে সিপিডি মন্তব্য করে যে, কর্মসংস্থানবিহীন প্রবৃদ্ধি থেকে বাংলাদেশ আয়হীন কর্মসংস্থানে পরিণত হয়েছে। ইকোনোমিস্ট ফোরামের প্রথম সম্মেলনে অভিমত ব্যক্ত করা হয় যে, বাংলাদেশ যদি তার উন্নয়ন প্যাটার্ন পরিবর্তন করতে না পারে তাহলে দেশটি কর্মসংস্থানবিহীন প্রবৃদ্ধি ও মধ্য আয়ের ট্র্যাপে পতিত হতে পারে। তাই বলতে দ্বিধা নেই যে, গত দেড় দশকের তথাকথিত উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গালগল্প আজ এক প্রহসনে রূপ নিয়েছে। কর্মসংস্থানের সঙ্গে সংযোগহীন উচ্চশিক্ষা আজ শুধু শিক্ষাব্যবস্থাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে না, বরং ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের অপচয় ঘটিয়ে সমাজে এক গভীর বিপর্যয়ের পথও প্রশস্ত করছে।
স্বাধীনতার অন্যতম চেতনা ছিল, বাংলাদেশ এমন একটি রাষ্ট্রে পরিণত করা যেখানে শিক্ষা হবে মানবিক মুক্তি ও দক্ষতা উন্নয়নের প্রধান হাতিয়ার। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে উল্টো। শিক্ষা ব্যবস্থাকে রাজনৈতিক শোভাযাত্রার অংশ বানিয়ে লুটপাটের হাতিয়ার বানানো হয়েছে। পাঠ্যক্রম থেকে শুরু করে শিক্ষক নিয়োগ, প্রতিষ্ঠান অনুমোদন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন, সবখানেই পেশাদারিত্বের পরিবর্তে লুটপাট, প্রোজেক্ট, স্বজনপ্রীতি, পক্ষপাত এবং দলীয় আনুগত্যের ছায়া। তাই প্লিনি দ্য এল্ডারের উটপাখির উপমা বর্তমান ও আগামীর নীতিনির্ধারকরা যেন অপ্রাসঙ্গিক করে তোলে—তারা যেন শুধু চোখ বন্ধ করে সমস্যাকে অদৃশ্য না ভাবে; বরং, চোখ মেলে বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে সৎ সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রস্তুত হয়। কারণ, আজ প্রয়োজন এক নতুন শিক্ষা দৃষ্টিভঙ্গির, যা হবে বাস্তবভিত্তিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক, গুণগত এবং ভবিষ্যতমুখী। আমাদের শুধু রাজনৈতিক স্বাধীনতা যথেষ্ট নয়; প্রয়োজন নৈতিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, যা গড়ে ওঠে একটি কার্যকর ও মানবিক শিক্ষাব্যবস্থার ভিতর দিয়েই। অন্যথায়, ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড শুধু হারানো সুযোগই নয়, হয়ে উঠবে ভবিষ্যতের জন্য এক ভয়ংকর বোঝা। কর্মসংস্থান এবং শিক্ষাব্যবস্থা এখনও ঠিকমতো কার্যকর করা গেলে, ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের বাকী সুযোগ কাজে লাগিয়ে আগামী দেড় দশকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হতে পারে কয়েকগুণ। এজন্য এখনই চাই কারিগরি শিক্ষা ও স্কিল ডেভেলপমেন্টে জোর, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বৃদ্ধি, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ ও উদ্যোগ বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি, দুর্নীতি রোধ এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা, এবং যুব সমাজের জন্য প্রযুক্তিনির্ভর কর্মসংস্থান ও আত্মকর্মসংস্থানের পরিকাঠামো। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের অপচয় রোধই হতে পারে, দারিদ্র্য, দুর্নীতি, অদক্ষতা ও বেকারত্বের বিরুদ্ধে এক ঐতিহাসিক সংগ্রাম। এই সংগ্রামে জিতলে বাংলাদেশ হয়ে উঠবে একটি আধুনিক, উদ্ভাবনী, মানবিক ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের অপচয় রোধে আশু করণীয়:
১. শিক্ষায় বাজেট বাড়ানো: জিডিপির অন্তত ৫ শতাংশ শিক্ষা ও গবেষণায় বরাদ্দ করতে হবে।
২. শিক্ষকের মানোন্নয়ন ও মর্যাদা: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের ন্যূনতম যোগ্যতা হতে হবে পিএইচডি, পোস্টডক ও ইমপ্যাক্ট জার্নালে প্রকাশনা। উচ্চশিক্ষার পাইপলাইনে গুণগত মান নিশ্চিত করতে হলে বিসিএস (প্রাথমিক) ও বিসিএস (মাধ্যমিক) ক্যাডার চালু করে যোগ্য ও মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগের কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
৩. পাঠ্যক্রম সংস্কার: পাঠ্যক্রম বারবার পরিবর্তনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ভীত, ক্লান্ত ও বিভ্রান্ত না করে, অকার্যকর সৃজনশীল পদ্ধতির কার্যকর সংস্কার নিশ্চিত করতে হবে। বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা, এই শাখাগত বিভাজন তুলে দিয়ে নির্দিষ্ট কিছু বাধ্যতামূলক বিষয়ের পাশাপাশি ১৫-২০টি বিষয়ের গুচ্ছ (যেমন: পদার্থবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, রসায়ন, ফিন্যান্স, মনোবিজ্ঞান, সংগীত, চিত্রকলা ও অর্থনীতি) থেকে শিক্ষার্থীদের পছন্দমতো বিষয় নির্বাচনের স্বাধীনতা দিতে হবে।
৪. বাস্তবভিত্তিক ফল মূল্যায়ন: গণহারে পাস করানোর প্রবণতা বন্ধ করে। প্রকৃত মূল্যায়নের ভিত্তিতে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত করার উদ্যোগ নিতে হবে।
৫. দক্ষ জনশক্তি ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধি: প্রতি বছর বিদেশগামী ৫-১০ লাখ জনশক্তির জন্য বিদ্যমান প্রশিক্ষণ কর্মসূচির পরিধি ও কার্যকারিতা বহুগুণে বাড়াতে হবে।
৬. উচ্চশিক্ষা পুনর্গঠন: নতুন কোনো মানহীন পাবলিক বা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দেওয়া আপাতত বন্ধ করতে হবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ৮৮১টি স্নাতক (সম্মান) কলেজের মধ্যে প্রতি জেলায় ১২টি কলেজে যৌক্তিক আসনসংখ্যা রেখে অন্যান্য কলেজগুলোতে এ প্রোগ্রাম বন্ধ করে ভোকেশনাল ও কর্মমুখী শিক্ষা প্রোগ্রাম চালু করতে হবে। ১৯২১টি স্নাতক পাস (ডিগ্রি) কলেজের ক্ষেত্রেও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।
৭. শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন: ক্লাস বর্জন করে প্রজেক্ট ও রাজনীতিতে ব্যস্ত তথাকথিত শিক্ষাবিদ, ডানিং-ক্রুগার প্রভাবে আত্মতুষ্ট আমলা, কিংবা গবেষণাবিমুখ অধ্যাপকের হাতে নয়, বরং প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ও দূরদর্শী শিক্ষক ও অধ্যাপকদের সমন্বয়ে একটি শিক্ষানীতি ও শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করা এখন সময়ের দাবি।
লেখক: বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডার কর্মকর্তা, অর্থনীতির শিক্ষক ও গবেষক।
Email: [email protected]
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বিশ্বকাপের ভেন্যু থেকে মালাগার নাম প্রত্যাহার

চাঁদপুরে লেক থেকে এক কিশোরের লাশ উদ্ধার

সরকারবিরোধী রূপ নিয়েছিল এনবিআরের আন্দোলন: মন্তব্য জ্বালানি উপদেষ্টার

ফরিদপুরে বিস্ফোরক মামলায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

ঢাকায় ব্যবসায়ী হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে ফরিদপুরে পৃথক বিক্ষোভ মিছিল

বিদ্রোহীদের আক্রমণের ভয়ে থাইল্যান্ডে পালিয়ে গেল মিয়ানমারের ১০০ সেনা

৩৭তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের নতুন সভাপতি মাসুদ, সাধারণ সম্পাদক নাসিম

ইরানি প্রেসিডেন্টকে হত্যার চেষ্টা করেছিল ইসরাইল: ফার্স নিউজের দাবি

এক সপ্তাহে ডলারের দাম কমেছে প্রায় ২ টাকা ৯০ পয়সা

খুলনায় আবাসিক হোটেল থেকে পিস্তল, গুলি, ইয়াবাসহ যুবক আটক

বিপজ্জনক গুহায় দুই শিশুকে নিয়ে রাশিয়ান নারীর বসবাস, উদ্ধার করল পুলিশ

বিএমইউর ডেন্টাল অনুষদের ডীন ডা. সাখাওয়াৎ হোসেন

টালিউডে নওশাবার অভিষেক

জিম্মি মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল তেল আবিব, চাপের মুখে নেতানিয়াহু

হাসিনাকে হটানো র্যাপ-মিম-গ্রাফিতির নতুন ভাষা, বদলে দিচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতি

সিইসির সঙ্গে বৈঠকে পাটোয়ারী-হাসনাত-সারজিসরা

২০২৬ বিশ্বকাপে বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে যাচ্ছে সূর্যের উত্তাপ,সময়সূচি কি পরিবর্তন হবে?

ট্রাইব্যুনালে আনা হয়েছে আবু সাঈদ হত্যা ও লাশ পোড়ানোর মামলার আসামিদের

শাহরুখের কাছে আকর্ষণীয় নায়িকা কে?

ভারতে বাংলায় কথা বললেই ‘বাংলাদেশি ট্যাগ’ লাগিয়ে আটক