একের পর এক মুসলিম হত্যা, ভারতে আবারো আতঙ্ক ছড়াচ্ছে গো-রক্ষকরা
১১ মে ২০২৩, ১২:৩৩ পিএম | আপডেট: ১১ মে ২০২৩, ১২:৩৩ পিএম
জানুয়ারির এক সকালে উত্তর ভারতের রাজ্য হরিয়ানার ছোট শহর তাউরুর কাছে একটি গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটে। একটি ভ্যানের সাথে ধাক্কা খেয়ে গাড়িটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গাড়িটির ভেতরে তিনজন মুসলিম যুবক ছিলেন – ওয়ারিস, নাফিজ আর শওকীন। ওয়ারিস এখন আর বেঁচে নেই। নাফিজ জেলে। আর শওকীনকে এখনো সেই রাতের ভয়াবহ স্মৃতি তাড়া করে বেড়ায়।
শওকীনের ভাষ্য, তার বন্ধুকে একদল হিন্দু যুবক পিটিয়ে হত্যা করেছে। তাদের গাড়ির পেছনে গরু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জানতে পেরে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। শওকীন বলছিলেন যে, গরুটি ছিল তার বন্ধু নাফিজের। পাশের রাজ্য রাজস্থানের ভিওয়াড়ি জেলা থেকে নিজের বাড়ি হরিয়ানায় গরুটি নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। সাথে ছিল তার দুই বন্ধু ওয়ারিস আর শওকীন। তারা গাড়ি দিয়ে হরিয়ানা যাওয়ার সময় গো-রক্ষকরা তাদের ওপর হামলা করে। এই গো-রক্ষকরা মূলত হিন্দু তরুণ ও যুবকদের নিয়ে গড়া দল, যারা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় গরু আনা-নেয়ার বিষয়টি নজরাদারিতে রাখেন। জবাই করার জন্য যেন গরু আনা নেয়া করা না হয়, তা নিশ্চিত করতে লাঠিসোঁটা নিয়ে পাহারা দেয় তারা।
ভারতের অনেক রাজ্যেই গরু জবাই নিষিদ্ধ। পুলিশের দাবি, ওয়ারিসের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না। “একজন ট্রাক ড্রাইভার ও কয়েকজন গো-রক্ষক আমাদের গাড়ি দুর্ঘটনার খর জানায়। আমরা যখন ঘটনাস্থলে যাই, তিনজন গাড়ির ভেতরেই ছিল। আমরা তাদের নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে একজনের মৃত্যু হয়”, বলেন হরিয়ানার নুহ জেলার পুলিশ সুপার বরুন সিংলা। গাড়িটি যেই ভ্যানের সাথে ধাক্কা খেয়ে দুর্ঘটনা ঘটে, সবজি বহনকারী ঐ ভ্যানটিও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে জানায় পুলিশ। ঐ ঘটনায় নাফিজ আর শওকীনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ‘তাদের গাড়িতে গরু পাওয়া গেছে’ বলে তাদের গ্রেফতার করা হয় বলে জানান পুলিশ সুপার সিংলা।
কিন্তু শওকীনের কাছে ঘটনার সম্পূর্ণ ভিন্ন বিবরণ পাওয়া যায়। জামিনে মুক্তি পাওয়া শওকীন বিবিসিকে বলেন যে, তাদের গাড়িকে গো-রক্ষকদের একটি গাড়ি তাড়া করছিল, যে কারণে সবজির ভ্যানের সাথে সংঘর্ষ হয় গাড়ির। তাউরু এলাকায় ঘটা ঐ ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় যে দুর্ঘটনার পরপরই শওকীনদের গাড়ির কাছে বড় একটি গাড়ি আসে। ঐ গাড়িটির ছাদে একটি সাইরেন লাগানো ছিল। পরের ঘটনা দেখা যায় ঐ সময় ঘটনাস্থলে থাকা এক ব্যক্তির করা ভিডিওতে। ঐ ভিডিওতে দেখা যায় ধারালো অস্ত্র, আগ্নেয়াস্ত্র সহ কিছু গাড়িতে থাকা তিন যুবককে বের করে তাদের গাড়িতে তোলে। গাড়ির বুট থেকে গরুটিও বের করে তারা।
শওকীন বলছে, তাকে ও তার দুই বন্ধুকে ঐ গো-রক্ষকরা মারধোর করে এবং পরে হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়ই ওয়ারিস মারা যায়। “ওয়ারিস দুর্ঘটনায় মারা যায়নি। ঐ দুর্ঘটনায় কারো শরীরে একটি জখমও হয়নি।” তার ভাষ্যে, এটি মুসলিমদের ‘টার্গেট করে হত্যা’ করার পরিকল্পনার একটি অংশ।
ভারতে হিন্দুদের কাছে গরুকে পবিত্র প্রাণী মনে করা হয়। গরু জবাই ভারতে আগেই বেশ সংবেদনশীল বিষয় ছিল। কিছু কিছু রাজ্যে গরু জবাই নিষিদ্ধও। তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দল বিজেপি ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর এই বিষয় নিয়ে ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়েছে। ক্ষমতায় যাওয়ার পর থেকে ভারতে বিজেপি নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকারগুলোর গরু জবাইয়ের বিরুদ্ধে কড়া অভিযান চালিয়েছে। ভারতের ২৮টি রাজ্যের দুই-তৃতীয়াংশের বেশিতেই গরু জবাই এখন নিষিদ্ধ। এগুলোর অধিকাংশ রাজ্যের সরকারই বিজেপি নিয়ন্ত্রিত। হরিয়ানাও সেরকমই একটি রাজ্য। এসব রাজ্যে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে গো-রক্ষকরা ব্যাপক সহিংসতা অবলম্বন করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের মারধোরের শিকার হয় সাধারণত মুসলিম মাংস আর গরু ব্যবসায়ীরা। নরেন্দ্র মোদী অতীতে এসব গো-রক্ষকদের সমালোচনা করেছেন। তবে তারপরও এরকম বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, যেগুলো তুমুল আলোড়ন তোলে ভারতে।
নুহ জেলায় ওয়ারিসের বাড়িতে তার পরিবারের সদস্যরা এখনও স্বজন হারানোর শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ওয়ারিসের বড় ভাই ইমরান বলছিলেন, “কেউ যদি কোনো অপরাধ করে, তাহলে তার শাস্তি পাওয়া নিশ্চিত করার দায়িত্ব পুলিশের।” পুলিশ অবশ্য ওয়ারিসের মৃত্যুর জন্য বারবার দুর্ঘটনাকেই দায়ী করছে। হরিয়ানা পুলিশের একজন ইন্সপেকটর জেনারেল রবি কিরান বলেন যে ওয়ারিসের পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে উঠে এসেছে যে তার মৃত্যু দুর্ঘটনাতেই হয়েছে। এই মামলার বিষয়ে নতুন কোনো তথ্য পেলে পুলিশ এনিয়ে আরো তদন্ত করতে প্রস্তুত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ওয়ারিসের ভাই ইমরান বলেন, ভারতজুড়ে গো-রক্ষকদের চালানো বহু হামলার মধ্যে একটি তার ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনা। ওয়ারিসের মৃত্যুর ঘটনার সাথে একই ধরণের আরেকটি ঘটনার তুলনা টেনে ধরেন তিনি। ওয়ারিস মারা যাওয়ার দুই সপ্তাহ পর জুনাইদ আর নাসির নামে দুই মুসলিম যুবকের মৃত্যু নিয়ে ভারতের গণমাধ্যমে শোরগোল তৈরি হয়। হরিয়ানার ভিওয়ানি জেলায় ফেব্রুয়ারি মাসে আগুনে পুড়ে যাওয়া একটি গাড়ির ভেতরে জুনাইদ আর নাসিরের পুড়ে যাওয়া লাশ পাওয়া গিয়েছিল। তাদের পরিবারের অভিযোগ, গরু পাচারের দায়ে কট্টরপন্থী হিন্দু একটি দলের সদস্যরা তাদের হত্যা করে। ঐ ঘটনায় পাঁচজনকে আসামী করে মামলা হয়। পুলিশ বলছে এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
নাসিরের বাড়ি রাজস্থানের ভরতপুরে তার পরিবারের লোকজনও মনে করে গরু রক্ষা করার জন্য তৈরি করা আইন মুসলিমদের টার্গেট করার জন্যই ব্যবহার করা হচ্ছে। নাসিরের বড় ভাই মাহমুর বলছিলেন, “সবাই ভয়ে থাকে। ভয়টা হল, তারা যে কোনো সময় আপনাকে তুলে নিয়ে যেতে পারে। তারা যে কাউকে তুলে নেয়, মারধোর করে আর পরে গরু পাচারের অভিযোগ দেয়।” গো-রক্ষকরা অবশ্য দাবি করেন যে তারা মুসলিমদের টার্গেট করে কোনো কাজ করেন না। তারা পুলিশের সাথে কাজ করেন এবং আইনের সীমানার মধ্যে থেকেই পদক্ষেপ নেন বলে দাবি করছে তারা। সূত্র: বিবিসি।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি
কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি
কিউবায় সমাবেশ
ঈশ্বরদীতে দূর্বৃত্তের হামলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আহত
থিনেস্ট স্বাস্থ্যের