তাকওয়ার পোশাকই সর্বোৎকৃষ্ট
২৯ জুলাই ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২৪, ১২:০৩ এএম
দুনিয়ায় মানুষের মৌলিক প্রয়োজন তিনটি- অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান। প্রত্যেকটিই আল্লাহ তাআলার অপার নিআমতরাজির এক একটি নিদর্শন। মানুষের ওপর দুনিয়াবী এসব অনুগ্রহের কথা আল্লাহ তাআলা কুরআন কারীমে বিভিন্ন জায়গায় উল্লেখ করেছেন। বান্দার প্রতি মহান রবের দয়া ও অনুকম্পা বারবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। যেন শোকরগোযার বান্দারা শোকর আদায় করতে পারে এবং আরো বেশি থেকে বেশি আল্লাহ তাআলার ইবাদতে মনোনিবেশ করতে পারে।
আমরা যদি সূরা কুরাইশের নি¤েœাক্ত আয়াতগুলোর প্রতি লক্ষ্য করি, তাহলে দেখতে পাব, সেখানে আল্লাহ তাআলা কুরাইশের লোকদের উদ্দেশ্য করে বলছেন : তারা যেন এই ঘর (কা‘বার) মালিকের ইবাদত করে, যিনি তাদেরকে ক্ষুধায় আহার দিয়েছেন এবং ভীতি থেকে নিরাপদ রেখেছেন। (সূরা কুরাইশ : ৩-৪)। এমনিভাবে আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বস্ত্র ও পোশাকের নিআমতের কথা উল্লেখ করে ইরশাদ করেছেন : হে বনী আদম, আমি তোমাদের জন্য পোশাকের ব্যবস্থা করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং তা (তোমাদের জন্য) শোভাস্বরূপ। বস্তুত, তাকওয়ার যে পোশাক সেটাই সর্বোৎকৃষ্ট। এগুলো আল্লাহর নিআমতরাজির অন্যতম। যেন তারা উপদেশ গ্রহণ করে। (সূরা আ‘রাফ : ২৬)।
উপরোক্ত আয়াতে কারীমায় লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, আল্লাহ তাআলা বাহ্যিক পোশাকের বাইরে আরেকটি পোশাকের কথা উল্লেখ করেছেন। আর তা হচ্ছে, ‘লিবাসুত তাকওয়া’ বা তাকওয়ার পোশাক। সাথে একথাও বলে দিয়েছেন যে, বাহ্যিক পোশাকের চেয়ে লিবাসুত তাকওয়াই অধিক উৎকৃষ্ট। কারণ বাহ্যিক পোশাক তো কেবল গরম বা ঠা-ার তীব্রতা থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারে।
পক্ষান্তরে, লিবাসুত তাকওয়া মুমিনদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবে। তাছাড়া দুনিয়াবী পোশাক সর্বোচ্চ দুনিয়ায় অল্প কিছুদিনের জন্য কাজে আসবে। অথচ লিবাসুত তাকওয়া এমন পোশাক, যেটা দুনিয়াতেও মুমিনদেরকে সকল অনিষ্ট থেকে হেফাযত করবে, আবার পরকালেও সেটা কাজে দেবে। তবে ‘লিবাসুত তাকওয়া’ কী, কীভাবে আমরা তা অর্জন করব, কুরআনের আয়াতের ‘লিবাসুত তাকওয়া’ শব্দবন্ধের ব্যাখ্যায় সালাফে সালেহীন বেশকিছু বিষয় উল্লেখ করেছেন। তাকওয়ার লিবাস ধারণ করতে চাইলে আমাদেরকে এই সবগুলো বিষয়ই হাসিল করতে হবে।
সংক্ষেপে আমরা বিষয়গুলো তুলে ধরছি : ১. ঈমান ও ইসলাম। যেহেতু মানুষের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর বিষয় হচ্ছে কুফর। আর দ্বীন ও ঈমান মানুষকে এই ভয়াবহ ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। তাই অনেকেই লিবাসুত তাকওয়ার ব্যাখ্যায় ঈমান ও ইসলামের কথা উল্লেখ করেছেন। ২. সৎ কাজ। জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচতে সৎ কাজের কোনো বিকল্প নেই। এজন্য ‘লিবাসুত তাকওয়া’ হিসেবে কোনো কোনো মনীষী সৎ কাজের বিষয়টি তুলে ধরেছেন।
৩. উত্তম পথ। যেকোনো বিষয়ে সফলতা লাভের জন্য সঠিক পথ ও পন্থা অবলম্বন করা প্রথম কর্তব্য। পরকালীন কাজের ক্ষেত্রেও অনুরূপ। সেই বিবেচনায় লিবাসুত তাকওয়া ধারণ করতে হলে উত্তম পথে নিজেকে চালিত করা অনেক বেশি জরুরি। ৪. আল্লাহর ভয়। তাকওয়ার মৌলিক কথাই হচ্ছে, সকল কাজে-কর্মে একমাত্র আল্লাহর হুকুম মেনে চলা এবং তাঁর নিষিদ্ধ বিষয়কে ভয় করে চলা। তাই লিবাসুত তাকওয়া গ্রহণ করতে হলে অবশ্যই অন্তরে আল্লাহর ভয় অর্জন করতে হবে।
৫. লজ্জাশীলতা। এটি এমন একটি গুণ, যা মানুষকে সব ধরনের বিবস্ত্রতা ও বেহয়াপনা থেকে রক্ষা করে। সে মানুষের সামনে যেমন লজ্জাজনক কাজ থেকে বিরত থাকে, তেমনি আপন রবের অপছন্দনীয় কাজ করতেও লজ্জাবোধ করে। যার দরুন লজ্জাশীল ব্যক্তি খুব সহজেই লিবাসুত তাকওয়া অর্জনে সক্ষম হন। ৬. উপরোক্ত গুণাবলির পাশাপাশি আমাদের বাহ্যিক পোশাক এবং চালচলনও এমন হওয়া উচিত, যা তাকওয়ার পরিচায়ক। (দ্র. তাফসীরে তবারী ১২/৩৬৬-৩৬৮)।
লিবাসুত তাকওয়া এমন কোনো পোশাক নয়, যেটা মার্কেট থেকে কিনে এনে গায়ে চড়ানো যাবে। বরং এর জন্য চাই নিরলস চেষ্টা ও মুজাহাদা। পাশাপাশি আল্লাহ তাআলার দরবারে দুআ-মুনাজাত এবং রোনাজারিও কাম্য। বিখ্যাত সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি প্রায়ই তাঁর দুআয় বলতেন : হে আল্লাহ, আমাদেরকে লিবাসুত তাকওয়া দান করুন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা : ৩০১৪৮)। এমনিভাবে প্রখ্যাত দুইজন তাবেয়ী সাঈদ ইবনে আবিল হাসান (রাহ.) ও মালেক ইবনে দীনার (রাহ.) এভাবে দুআ করতেন : হে আল্লাহ, আমাদেরকে ঈমানের ভূষণে সজ্জিত করুন এবং তাকওয়ার আচ্ছাদনে আবৃত করুন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা : ৩০৫০৬)।
অতএব, পোশাকের যথাযথ ব্যবহারে আমাদের যতœবান হতে হবে। পাশাপাশি এর যেন কোনো অপব্যবহার না হয় এবং তা সংগ্রহে আমরা যেন কোনো অপব্যয়ের শিকার না হই, সেদিকেও সতর্ক দৃষ্টি দিতে হবে। সবশেষে আবারও কুরআনের সেই কথাই স্মরণ করি, ‘তাকওয়ার পোশাকই সর্বোৎকৃষ্ট’। লিবাসুত তাকওয়া যদি হাসিল না হয়, তবে শত পোশাক গায়ে জড়িয়েও বিবস্ত্রতা ঢাকা যাবে না। একসময় না একসময় তা প্রকাশ হয়েই পড়বে। আরব কবি আবুল আতাহিয়ার ভাষায় : ‘মানুষ যতক্ষণ না তাকওয়ার লেবাস পরিধান করবে, গায়ে পোশাক থাকা সত্ত্বেও সে হবে বিবস্ত্র।’ (দিওয়ানু আবিল আতাহিয়া, পৃ.-১৫৮ )।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
লাওসে ভেজাল মদপানে ৬ বিদেশির মৃত্যু
না.গঞ্জে ডেঙ্গু পরীক্ষার টেস্ট কিট সংকট কে কেন্দ্র করে টেস্ট বাণিজ্যের অভিযোগ
ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে বড় ধরনের বিক্ষোভের প্রস্তুতি
‘পতনের’ মুখে ইউক্রেনের ফ্রন্টলাইন
বিশ্বব্যাংক আয়োজিত জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতির প্রদর্শনী
আগামীকাল রোববার নারায়ণগঞ্জের যেসব এলাকায় ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না
সিলেট সীমান্তে দেড় কোটি টাকার ভারতীয় পণ্য জব্দ
২ মার্চকে জাতীয় পতাকা দিবস হিসেবে স্বীকৃতির আহ্বান জানালেন মঈন খান
সরাসরি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রস্তাব নিয়ে যা বললেন বদিউল আলম
সিংগাইরে সাংবাদিক মামুনের বাবার ইন্তেকাল
বিরামপুরে ধান-ক্ষেত থেকে হাত বাধা আদিবাসী দিনমজুর মহিলার লাশ উদ্ধার!
আওয়ামী শুধু ফ্যাসিস্ট নয়, তাদের আরেকটা নাম দিয়েছি স্যাডিস্ট: মিয়া গোলাম পরওয়ার
খুবিকে ইমপ্যাক্টফুল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে সকলের সহযোগিতা কামনা
লাল পাহাড়ের দেশকে বিদায় জানিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন অরুণ চক্রবর্তী
বিদেশি প্রভুদের নিয়ে বিতাড়িত স্বৈরাচার ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে: তারেক রহমান
আগামী রোববার-সোমবারও বন্ধ থাকবে ঢাকা সিটি কলেজ
অত্যাধুনিক সব ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালাব ইউক্রেনে: পুতিন
নির্বাচনে যত দেরি ষড়যন্ত্র তত বাড়বে: তারেক রহমান
‘ফিফা ছিল খুবই দুর্বল, আমিই একে বিশাল প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করেছি’
ফ্যাসিস্ট হাসিনা কাউকে রেহাই দেয়নি, জাতির ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে পালিয়ে গেছেন: রিজভী