ঢাকা   বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫ | ২৮ কার্তিক ১৪৩২

রাসূলুল্লাহ (সা.) : সততার সর্বোচ্চ আদর্শ ছিলেন যিনি

Daily Inqilab আব্দুল্লাহ আলমামুন আশরাফী

০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম | আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

সততা। মানবীয় গুণাবলীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি দিক। পবিত্র কুরআন মাজীদে অনন্য এ গুণটি নিজের মাঝে পরম মমতায় ধারণ করতে মুমিনদেরকে বিশেষভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে : হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো। (সূরা তাওবা : ১১৯)। আয়াতের বার্তা পরিষ্কার। কুরআন মাজীদ মুসলিম সমাজকে আহ্বান করছে সততার মতো এই সুউচ্চ গুণে গুণান্বিত হওয়ার প্রতি, সৎ ব্যক্তিদের সঙ্গী হওয়ার প্রতি। কেননা, সততাই হলো সকল কল্যাণের চাবিকাঠি।

সততার মত এই মহান গুণের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন একজন উত্তম দৃষ্টান্ত ও আদর্শ। সততার সর্বোচ্চ চূড়ায় ছিল তার অবস্থান। নবুওয়ত প্রাপ্তিরও বহু আগে মক্কার কুরাইশদের পক্ষ থেকে রাসূলুল্লাহ (সা.) কে আস-সাদিক (সত্যবাদী) এবং আল-আমীন (আমানতদার) উপাধি প্রদান করা হয়েছিল। এই বিশ্বস্ততার বিমল গুণে মুগ্ধ কুরাইশরা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে তাদের মূল্যবান সম্পদ গচ্ছিত রাখতো।

নবীজী (সা.) যখন ইসলামের দাওয়াত দেয়া শুরু করেন তখন তাঁর আত্মীয়স্বজন ও তাঁর বংশের লোকেরা শত্রুতা, বিদ্বেষ,ঘৃণা ও বিরোধিতা শুরু করে। এমন ভয়াল প্রতিকূল মুহূর্তেও তিনি সততা ও আমানতদারীর প্রকাশ ঘটিয়ে তাদের গচ্ছিত সম্পদ যথাযথভাবে তাদের হাতে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করে যান।

আল্লাহ তায়ালা যখন নবীজী (সা.) কে নিজের নিকটাত্মীয়দের আখিরাতের প্রতি সতর্ক করার নির্দেশনা প্রদান করেন, তখন তিনি সাফা পর্বতে আরোহণ করে সকলকে ডেকে বলেন : বলো তো, আমি যদি তোমাদের বলি, অশ্বারোহী শত্রুসৈন্য উপত্যকায় এসে পড়েছে, তারা তোমাদের ওপর অতর্কিত আক্রমণ করে উদ্যত, তোমরা কি আমার কথা বিশ্বাস করবে? তারা বলল, হ্যাঁ, আমরা সর্বদা তোমাকে কথা ও কাজে সত্যবাদী পেয়েছি। (সহীহ বুখারী : ৪৭৭০)।

এভাবে আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সততার ঘোষণা দিয়েছে। ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে তা লিপিবদ্ধ। হাজার বছর ধরে মানবসভ্যতা রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সততার সৌরভে সুরভিত। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সততার ব্যাপারে সৃষ্টিজগতের প্রতিপালক স্বয়ং আল্লাহ তায়া’লা সাক্ষ্য রয়েছে। আল্লাহ তায়া’লা বলেন : যে ব্যক্তি সত্য কথা নিয়ে এসেছে এবং নিজেও তা বিশ্বাস করে এরূপ লোকই মুত্তাকী। (যুমার : ৩৩)।

সততার অনন্য উপমা রাসূলুল্লাহ (সা.) সর্বদা কথা ও কাজে অন্যদেরকেও সত্য ও সততার প্রতি উৎসাহিত করতেন। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : তোমরা মিথ্যাচার বর্জন করো। কেননা মিথ্যা পাপাচারের দিকে ধাবিত করে এবং পাপাচার জাহান্নামে নিয়ে যায়। কোন ব্যক্তি সর্বদা মিথ্যা বলতে থাকলে এবং মিথ্যচারকে স্বভাবে পরিণত করলে শেষ পর্যন্ত আল্লাহর নিকট তার নাম মিথ্যুক হিসেবেই লেখা হয়। আর তোমরা অবশ্যই সততা অবলম্বন করবে।

কেননা সততা নেক কাজের দিকে পথ দেখায় এবং নেক কাজ জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়। আর কোন ব্যক্তি সর্বদা সততা বজায় রাখলে এবং সততাকে নিজের স্বভাবে পরিণত করলে, শেষ পর্যন্ত আল্লাহর নিকটে তার নাম পরম সত্যবাদী হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়। (সুনানে আবু দাউদ-৪৯৮৯)।

রাসূলুল্লাহ (সা.) এর মহত্ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে যে, তিনি সন্দেহপূর্ণ বিষয় এড়িয়ে চলতেন। এ ব্যাপারে তিনি নিজে যেমন সচেতন ছিলেন, অন্যদেরও এ ব্যাপারে সচেতন থাকার শিক্ষা দিতেন। সত্য ও সততার প্রতি ভালোবাসা থেকেই তিনি এমনটা করতেন এবং বলতেন। ‏ ‏

আবুল হাওরা আস-সাদী (রাহ.) থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন, হাসান ইবনু আলী (রা.)-কে আমি প্রশ্ন করলাম, আপনি রাসূলুল্লাহ (সা.) হতে কোন কথাটা মনে রেখেছেন? তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর এই কথাটি মনে রেখেছি, যে বিষয়ে তোমার সন্দেহ হয়, তা ছেড়ে দিয়ে যাতে সন্দেহের সম্ভাবনা নেই তা গ্রহণ কর। যেহেতু, সত্য হলো শান্তি ও স্বস্তি এবং মিথ্যা হলো দ্বিধা-সন্দেহ। (জামে তিরমিজি : ২৫১৮)।

সত্যের প্রতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই আগ্রহ ও ভালোবাসা সাময়িক ছিল না। বরং তিনি সর্বদা জীবনের সকল কাজ ও কর্মে সত্যের উপর অটল অবিচল থেকেছেন। সত্য ছিল তাঁর স্বভাবজাত। এ কারণে তিনি মজা ও হাস্যরসের সময়ও সত্য বলতেন। যদিও অনেকে মনে করেন, এইসব একটু মিথ্যার আশ্রয় নেয়া দোষের কিছু নয়।

আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত : একদা এক লোক নবী (সা.) এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে একটি আরোহীর ব্যবস্থা করে দিন। নবী (সা.) বললেন, আমি তোমাকে আরোহণের জন্য একটি উটনীর বাচ্চা দিবো। লোকটি বললো, উটনীর বাচ্চা দিয়ে আমি কি করবো? নবী (সা.) বললেন, সকল উটকে তো উটনীই জন্ম দেয়। (সুনানে আবু দাউদ : ৪৯৯৮)।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বিশ্বনবী (স.) হলেন জগৎসমূহের জন্য রহমত
যিনি ছিলেন পৃথিবীর জন্য রহমত
সামাজিক নিরাপত্তা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় নবীজী (সা.)-এর অনন্য কর্মপন্থা-২
সামাজিক নিরাপত্তা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় নবীজী (সা.)-এর অনন্য কর্মপন্থা-১
ধর্মীয় বিষয়ে কট্টরতা জাতির ধ্বংসের কারণ
আরও

আরও পড়ুন

জাতীয় নির্বাচনে জটিলতা সৃষ্টির অর্থ পলাতক স্বৈরাচারের পুনর্বাসনের পথ সুগম করা : তারেক রহমান

জাতীয় নির্বাচনে জটিলতা সৃষ্টির অর্থ পলাতক স্বৈরাচারের পুনর্বাসনের পথ সুগম করা : তারেক রহমান

দিনাজপুরের হাকিমপুরে ফার্মেসীতে মেয়াদ উত্তার্ণ ঔষধ

দিনাজপুরের হাকিমপুরে ফার্মেসীতে মেয়াদ উত্তার্ণ ঔষধ

স্বাধীনতা হারাতে পারে বিচার বিভাগ, বর্ধিত ক্ষমতা ও আজীবন দায়মুক্তি পেলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান

স্বাধীনতা হারাতে পারে বিচার বিভাগ, বর্ধিত ক্ষমতা ও আজীবন দায়মুক্তি পেলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান

কু‌ষ্টিয়া জেলা পরিষদের সা‌বেক চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রীর বিরু‌দ্ধে দুদ‌কের মামলা

কু‌ষ্টিয়া জেলা পরিষদের সা‌বেক চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রীর বিরু‌দ্ধে দুদ‌কের মামলা

রেলওয়ের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ

রেলওয়ের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ

১৩ বাংলাদেশি জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি

১৩ বাংলাদেশি জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি

নকলায় তিন বেকারিকে ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত

নকলায় তিন বেকারিকে ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত

নাশকতা প্রতিরোধে আমিনবাজারে পুলিশের বিশেষ চেকপোস্ট স্থাপন

নাশকতা প্রতিরোধে আমিনবাজারে পুলিশের বিশেষ চেকপোস্ট স্থাপন

খুলনার রূপসা নদীতে নিখোঁজের ৩ দিন পর মিঠুর লাশ উদ্ধার

খুলনার রূপসা নদীতে নিখোঁজের ৩ দিন পর মিঠুর লাশ উদ্ধার

এসি-ওসি স্যারের নির্দেশে আবু সাঈদকে গুলি করা হয়

এসি-ওসি স্যারের নির্দেশে আবু সাঈদকে গুলি করা হয়

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক ছিলেন: ডা. রানা

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক ছিলেন: ডা. রানা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বিভাগের শিক্ষার্থী  সোনিয়ার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বিভাগের শিক্ষার্থী সোনিয়ার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পে নিয়ম বহির্ভূতভাবে পরামর্শক নিয়োগের পাঁয়তারা

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পে নিয়ম বহির্ভূতভাবে পরামর্শক নিয়োগের পাঁয়তারা

শেরপুরে আইনজীবীকে প্রাণনাশের হুমকি ও বাড়িতে হামলা: গ্রেপ্তার ২

শেরপুরে আইনজীবীকে প্রাণনাশের হুমকি ও বাড়িতে হামলা: গ্রেপ্তার ২

আ.লীগের কর্মসূচি উপেক্ষা করে গণপরিবহন চালানোর ঘোষণা মালিক সমিতির

আ.লীগের কর্মসূচি উপেক্ষা করে গণপরিবহন চালানোর ঘোষণা মালিক সমিতির

আওয়ামীপন্থি শিক্ষক-কর্মকর্তাদের পুনর্বহাল ও পদায়নের প্রতিবাদে নোবিপ্রবিতে ছাত্রদলের মানববন্ধন

আওয়ামীপন্থি শিক্ষক-কর্মকর্তাদের পুনর্বহাল ও পদায়নের প্রতিবাদে নোবিপ্রবিতে ছাত্রদলের মানববন্ধন

ফেসবুক লাইভে প্রধান উপদেষ্টাকে ‘প্রাণনাশের হুমকি’ দেওয়া সেই ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার

ফেসবুক লাইভে প্রধান উপদেষ্টাকে ‘প্রাণনাশের হুমকি’ দেওয়া সেই ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার

পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের শিক্ষামন্ত্রী নওফেলের বাড়িতে অভিযান, ৭ জন আটক

পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের শিক্ষামন্ত্রী নওফেলের বাড়িতে অভিযান, ৭ জন আটক

অপতৎপরতা করলে আইনের সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করা হবে : ডিবিপ্রধান

অপতৎপরতা করলে আইনের সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করা হবে : ডিবিপ্রধান

‘দেশি মুরগি খেতে না পারা’ আলোচিত শিক্ষিকা শাহিনুরের ছয়তলা বাড়ি ও বিউটি পার্লার

‘দেশি মুরগি খেতে না পারা’ আলোচিত শিক্ষিকা শাহিনুরের ছয়তলা বাড়ি ও বিউটি পার্লার