ঢাকা   বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫ | ২৮ কার্তিক ১৪৩২

ধর্মীয় বিষয়ে কট্টরতা জাতির ধ্বংসের কারণ

Daily Inqilab মাওলানা মারজান আহমাদ চৌধুরী ফুলতলী

০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম | আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

বিদায় হজের সময় রাসূলুল্লাহ (সা.) আকাবায় কঙ্কর নিক্ষেপ করার জন্য আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা.)-কে কয়টি কঙ্কর কুড়িয়ে আনতে বললেন। ইবন আব্বাস ইঞ্চিখানেক মাপের ৭টি কঙ্কর আনলেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) কঙ্করগুলো নেড়েচেড়ে বললেন, ‘এই মাপের কঙ্কর নিক্ষেপ করবে’ (এর চেয়ে বড় নয়)। এরপর বললেন, ‘আমি তোমাদেরকে দ্বীনের ব্যাপারে কট্টরতা করার বিষয়ে সতর্ক করছি। তোমাদের পূর্ববর্তী বহু জাতি দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করার কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে।’ (সুনান আন-নাসায়ী, ৩০৫৭)

রাসূলুল্লাহ (সা.) বারবার আমাদেরকে দ্বীনি বিষয়ে বাড়াবাড়ি বা কট্টরতার ব্যাপারে সতর্ক করে গেছেন। দ্বীনি বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি করে লাভবান হওয়া তো দূরের কথা; কয়দিন পর এই কট্টরতা আপনাকে দ্বীন থেকে বিমুখ করে দেবে। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয় দ্বীন সহজ। যে ব্যক্তি দ্বীনকে কঠিন করে তুলে, দ্বীন তাকে পরাভূত করে দেয়। সুতরাং মধ্যপন্থা অবলম্বন করো, সাধ্য অনুযায়ী আমল করো, (নিজেকে-অন্যকে) সুসংবাদ দাও। সকাল-সন্ধ্যা এবং শেষরাতে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করো।’ (সহিহ বুখারী-৩৯)

ইদানীং বাংলাদেশে একটি ‘ইসলামপন্থী’ শ্রেণীর মধ্যে ধর্মীয় বিষয় নিয়ে যে চরম বাড়াবাড়ি দেখা যাচ্ছে, এটি ভবিষ্যতে দেশের জন্য ভয়াবহ হবে। এখনই হয়ে গেছে। একটি লোক যতবড় যিন্দিক হোক; তার দেহ কবর থেকে তুলে আপনি পুড়াতে পারেন না। ইসলামে একজন কাফিরের মৃতদেহের প্রতিও সম্মান দেখাতে বলা হয়েছে। মৃতদেহ বিকৃত করার যদি সামান্য বৈধতা থাকত, তাহলে সর্বপ্রথম রাসূল (সা.)-এর হক ছিল, তিনি হামযা (রা.)-কে হত্যাকারীদের এমন শাস্তি দিতে পারতেন। কিন্তু রাসূল (সা.) এটিকে নিষিদ্ধ করেছেন। প্রশাসন ওই যিন্দিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ মানলাম (অবশ্য বাংলাদেশের প্রশাসন কখনোই সফল হয় না), তবু এই নৃশংসতা আপনি করতে পারেন না।

গত কয়দিনে মিলাদুন্নবী (সা.) নিয়ে দেশে একপ্রকার গৃহযুদ্ধ হয়ে গেল। মিলাদুন্নবী (সা.) পালন করতে না দেয়ার অঙ্গীকার নিয়ে একশ্রেণী লাঠিসোঁটা সমেত মাঠে হাজির। ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালনের পক্ষে যেমন আমাদের যুক্তি-প্রমাণ ও ঐতিহ্য আছে, বিপক্ষেও নিশ্চয় আছে। এগুলো নিয়ে একাডেমিক আলোচনা হতে পারত। কিন্তু হয়নি। সম্ভবত কিছু ‘তৌহিদি জনতা’ মনে করেছেন, এতে তাদের পরহেজগারি পুরোপুরি প্রকাশ হবে না!

অসহিষ্ণুতা বেশিদিন একমুখী চলে না। অসহিষ্ণুতা আরেক অসহিষ্ণুতার জন্ম দেয়। পাকিস্তান এর প্রমাণ। পাকিস্তানে ধর্মীয় বিরোধ নিয়ে মসজিদ, মাযার ইত্যাদিতে হামলা করা নিত্যদিনের কাহিনী। ইশকে রাসূলের নামে অপরাধী সাব্যস্ত হওয়ার আগেই মানুষকে পিটিয়ে, জ্বালিয়ে ফেলা স্বাভাবিক ঘটনা, প্রায়ই ওখানে হয়। আমরাও এমন একটি সমাজের দিকে এগুচ্ছি সম্ভবত, আল্লাহুল মুসতা’আন।

পরিশেষে একটি ফতওয়া দিয়ে শেষ করি। ফতওয়া আমার বা কোনো আলিমের নয়। ফতওয়া তাঁর, যার ওপর আপনি ঈমান এনেছেন। আমাদের নবী (সা.) তিনবার বলেছেন, ‘সাবধান! কট্টরপন্থীরা ধ্বংস হয়ে গেছে (বা ধ্বংস হোক)।’ (সহিহ মুসলিম, ২৬৭০) রবিউল আউয়ালের পবিত্র মাসে কামনা করি, আল্লাহ যেন আমাদেরকে তাঁর হাবীব (সা.)-এর চারিত্রিক মাধুর্য, সহজতা ও সহনশীলতা থেকে কিছু শেখার তাওফিক দেন।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বিশ্বনবী (স.) হলেন জগৎসমূহের জন্য রহমত
যিনি ছিলেন পৃথিবীর জন্য রহমত
সামাজিক নিরাপত্তা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় নবীজী (সা.)-এর অনন্য কর্মপন্থা-২
সামাজিক নিরাপত্তা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় নবীজী (সা.)-এর অনন্য কর্মপন্থা-১
প্রিয়নবী (সা.) : যার আবির্ভাব ছিল পৃথিবীর জন্য নিয়ামত-২
আরও

আরও পড়ুন

চকরিয়ায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় আহত নিশানও চলে গেলেন না ফেরার দেশে

চকরিয়ায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় আহত নিশানও চলে গেলেন না ফেরার দেশে

কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে বিক্ষোভ সমাবেশে পীর সাহেব মধুপুর

কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে বিক্ষোভ সমাবেশে পীর সাহেব মধুপুর

১৩ নভেম্বর ঘিরে কঠোর নজরদারিতে হবিগঞ্জ জেলা পুলিশ

১৩ নভেম্বর ঘিরে কঠোর নজরদারিতে হবিগঞ্জ জেলা পুলিশ

কাউখালীতে নাশকতা ঠেকাতে পুলিশের বিশেষ মহড়া অনুষ্ঠিত

কাউখালীতে নাশকতা ঠেকাতে পুলিশের বিশেষ মহড়া অনুষ্ঠিত

মোদি সংকটে পড়লেই কেন কথিত ‘জঙ্গি’ হামলা হয় ভারতে?

মোদি সংকটে পড়লেই কেন কথিত ‘জঙ্গি’ হামলা হয় ভারতে?

নিষিদ্ধ আ‘ লীগের নাশকতা সৃষ্টির প্রতিবাদে সিলেটে শিবিরের বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ

নিষিদ্ধ আ‘ লীগের নাশকতা সৃষ্টির প্রতিবাদে সিলেটে শিবিরের বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ

এনসিপির ঢাকা অফিসে ব্রিটিশ হাইক‌মিশনা‌র, নির্বাচন ইস্যুতে নাহিদের সঙ্গে বৈঠক

এনসিপির ঢাকা অফিসে ব্রিটিশ হাইক‌মিশনা‌র, নির্বাচন ইস্যুতে নাহিদের সঙ্গে বৈঠক

আওয়ামী লীগ নেতার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে গুলির খোসা উদ্ধার

আওয়ামী লীগ নেতার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে গুলির খোসা উদ্ধার

প্রধান উপদেষ্টা কাল জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন

প্রধান উপদেষ্টা কাল জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন

ছাগলনাইয়ায় অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পক্ষে আর্থিক সহায়তা

ছাগলনাইয়ায় অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পক্ষে আর্থিক সহায়তা

মেহেরপুরে পুলিশ সুপারের বাসভবনে আগুন

মেহেরপুরে পুলিশ সুপারের বাসভবনে আগুন

ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মদিনার ইসলামে বিশ্বাসী, মওদুদীর ইসলামে নয়: হাফিজ ইব্রাহিম

ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মদিনার ইসলামে বিশ্বাসী, মওদুদীর ইসলামে নয়: হাফিজ ইব্রাহিম

২৯৯ আসন বিএনপিকে উপহার দিতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে : দীপেন দেওয়ান

২৯৯ আসন বিএনপিকে উপহার দিতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে : দীপেন দেওয়ান

চট্টগ্রাম বন্দর ও এপিএম টার্মিনালসের মধ্যে ৩০ বছরের কনসেশন চুক্তি সাক্ষর

চট্টগ্রাম বন্দর ও এপিএম টার্মিনালসের মধ্যে ৩০ বছরের কনসেশন চুক্তি সাক্ষর

কমলগঞ্জে শখের বসে শেখা বাঁশিই এখন  কৃষ্ণ দাসের জীবিকা

কমলগঞ্জে শখের বসে শেখা বাঁশিই এখন  কৃষ্ণ দাসের জীবিকা

দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও গোয়েন্দাপ্রধান গ্রেফতার

দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও গোয়েন্দাপ্রধান গ্রেফতার

কমলগঞ্জে রেললাইনে স্লিপার ফেলে ট্রেন দুর্ঘটনার চেষ্টা

কমলগঞ্জে রেললাইনে স্লিপার ফেলে ট্রেন দুর্ঘটনার চেষ্টা

এবার ধোলাইপাড়ে বাসে আগুন

এবার ধোলাইপাড়ে বাসে আগুন

জাতীয় নির্বাচনে জটিলতা সৃষ্টির অর্থ পলাতক স্বৈরাচারের পুনর্বাসনের পথ সুগম করা : তারেক রহমান

জাতীয় নির্বাচনে জটিলতা সৃষ্টির অর্থ পলাতক স্বৈরাচারের পুনর্বাসনের পথ সুগম করা : তারেক রহমান

দিনাজপুরের হাকিমপুরে ফার্মেসীতে মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ

দিনাজপুরের হাকিমপুরে ফার্মেসীতে মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ