ঢাকা   শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ | ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

নবী সাহাবীদের পদধন্য ফিলিস্তিন আজ রক্তাক্ত

Daily Inqilab মুফতি সফিউল্লাহ

০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম

ফিলিস্তিন মধ্যপ্রাচ্যের দক্ষিণাংশের একটি ভূখণ্ড, যা ভূমধ্যসাগর ও জর্ডান নদীর মাঝে অবস্থিত। ফিলিস্তিন অন্য রাষ্ট্রগুলোর মত সাধারণ কোন রাষ্ট্র নয়। ফিলিস্তিন মুসলমানদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ স্থান। হযরত ইবরাহিম, ইসহাক, ইয়াকুব, মূসা, দাউদ, সুলাইমান ও ঈসা আলাইহিমুস সালাম সহ আরো অনেক নবীর অবস্থান ছিল ফিলিস্তিনে। ফিলিস্তিন মহান আল্লাহর কাছেও পছন্দনীয় ভূমি। । হাজারো সাহাবীদের পদধূলিত এক পূণ্যভূমি। অনেক নবী—রাসূলের সমাধিও রয়েছে। মুসলমানদের আবেগের ভূমি। ইসলামের দৃষ্টিতে মসজিদে আকসা এবং সমগ্র ফিলিস্তিনের মর্যাদা অনেক।

এই ফিলিস্তিনের জেরুসালেম নগরীতেই অবস্থিত বায়তুল মুকদিস । যা ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা মসজিদুল আকসার কথা তুলে ধরেছেন, এখান থেকেই সংঘটিত হয়েছিলো আল্লাহর রাসূল (সা.) এর পবিত্র মেরাজ। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন: পবিত্র ও মহিমাময় সেই সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতের বেলা মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা ভ্রমণ করিয়েছেন, যার আশপাশ আমি বরকতময় করেছি। তাকে আমার নিদর্শন দেখানোর জন্য, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’ (সুরা বনি ইসরাঈল : ১)। পবিত্র কাবা শরিফের পর পৃথিবীতে নির্মিত দ্বিতীয় মসজিদ এটি। হজরত আবু জর গিফারি (রা.) বলেন, ‘আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! দুনিয়াতে প্রথম কোন মসজিদটি নির্মিত হয়েছে? তিনি বললেন, মসজিদুল হারাম। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কোনটি? প্রতিউত্তরে তিনি বললেন, তারপর হলো মসজিদুল আকসা। অতঃপর আমি জানতে চাইলাম যে, উভয়ের মধ্যে ব্যবধান কত বছরের? তিনি বললেন চল্লিশ বছরের ব্যবধান। (বুখারি : ৩১১৫)।

হজরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মসজিদুল হারামে এক রাকাত নামাজ এক লাখ নামাজের সমান। আমার মসজিদে (মসজিদে নববী) এক রাকাত নামাজ এক হাজার নামাজের সমান এবং বায়তুল মাকদিসে এক নামাজ পাঁচশ নামাজের সমান। (মাজমাউজ জাওয়াইদ : ৪/১১)। তবে দুঃখজনক বিষয় হলো এ পুণ্যভূমি এখন ইহুদিদের কবজায়। ৬৪৮ সালে আমিরুল মুমিনিন হজরত উমর (রা.) এর খেলাফতকালে মুসলমানরা ফিলিস্তিন জয় করেন। ১০৯৬ সালে খ্রিস্টানরা তা পুনর্দখল করে নেয়। ১১৮৭ সালে সিপাহশালার সুলতান সালাহউদ্দীন আইয়ুবী আবার জেরুজালেম শহর জয় করেন। এরপর থেকে খ্রিষ্টান ও ইহুদি চক্র ফিলিস্তিনে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার ষড়যন্ত্র করতে থাকে। এ অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য ইহুদিরা তৎকালীন তুরস্কের শাসক সুলতান আবদুল হামিদের কাছে ফিলিস্তিনে বসতির অনুমতি চায়; সুলতান অনুমতি দেননি। ১৯১৭ সালে ব্রিটিশ সরকার বেলফোর ঘোষণায় ফিলিস্তিনে ‘ইহুদিদের একটি জাতীয় বাসস্থান’ প্রতিষ্ঠায় সমর্থন জানায়। উসমানী খেলাফতের পতন হলে ফিলিস্তিনির ম্যানডেট পায় ব্রিটিশরা। ফিলিস্তিনে দলে দলে অভিবাসী ইহুদি আসতে থাকে। ১৯২০ থেকে ১৯৪০ দশকের মধ্যে ইউরোপ থেকে দলে দলে ইহুদীরা ফিলিস্তিনে যেতে শুরু করে এবং তাদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ১৯৩৩ সালে হিটলার জার্মানির ক্ষমতায় এলে ইহুদিদের ওপর নিপীড়ন শুরু হয়। সেখানকার ইহুদিরা পালিয়ে ফিলিস্তিনে আসে। ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইহুদিদের সংখ্যা আরো বেড়ে যায় । ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘে এক ভোটাভুটিতে ফিলিস্তিনকে ভাগ করে দেওয়া হয়।

বৃটিশরা ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিন ছাড়ে এবং ইহুদী নেতারা এরপর ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। বহু ফিলিস্তিনি এর প্রতিবাদ জানালে শুরু হয় যুদ্ধ। যুদ্বে ইসরাইল বিজয়ী হয়। আরব-ইসরায়েলের মধ্যে ১৯৫৬, ১৯৬৭ ও ১৯৭৩ সালে আরও তিনটি যুদ্ধ হয়। এতে ফিলিস্তিনের ভাগ্যে দুর্ভোগ ছাড়া আর কিছুই জোটেনি। ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের আরব-ইসরায়েল যুদ্ব । ইসরায়েল বিপুলভাবে জয়ী হয় এই যুদ্ধে। এরপর থেকে গত ৫০ বছর ধরেই ইসরায়েল এসব দখলীকৃত জায়গায় ইহুদী বসতি স্থাপন করছে। আর মুসলমানদের প্রতি ইহুদিদের জুলুম-নির্যাতন ও অত্যাচারের মাত্রা আরও বাড়তেই থাকে, যা আজও চলছে। তাই আমাদের উচিৎ ইহুদীদের নির্যাতনের ঘৃণাভরে প্রতিবাদ জানানো এবং মুসলিমদের জন্য দোয়া করা। মহান আল্লাহ বায়তুল মাকদিসকে ইহুদীদের থেকে মুক্ত করুন, আমীন!


বিভাগ : ইসলামী জীবন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম
মসজিদে পরে এসে ঘাড় ডিঙিয়ে সামনের কাতারে যাওয়া জায়েজ নেই
দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য সুন্দর জীবন এবং কৃতজ্ঞতাবোধ
যুগে যুগে জুলুম ও জালিমের পরিণতি
সালাম ইসলামী সম্ভাষণ রীতির এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ
আরও

আরও পড়ুন

বগুড়ায় কনসার্টের ভীড়ে ছুরিকাঘাতে যুবকের মৃত্যু

বগুড়ায় কনসার্টের ভীড়ে ছুরিকাঘাতে যুবকের মৃত্যু

অনলাইন জুয়ার প্রচারণায় বুবলী

অনলাইন জুয়ার প্রচারণায় বুবলী

রিংয়ে আমিনুল-সানজিদাদের উৎসব

রিংয়ে আমিনুল-সানজিদাদের উৎসব

চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির কাউন্সিলে প্রত্যক্ষ ভোটে সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত

চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির কাউন্সিলে প্রত্যক্ষ ভোটে সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত

আওয়ামী লীগকে কবর দিয়েছেন শেখ হাসিনা

আওয়ামী লীগকে কবর দিয়েছেন শেখ হাসিনা

রোচ-গ্রেভস জুটি ভাঙতে পারছে না বাংলাদেশ

রোচ-গ্রেভস জুটি ভাঙতে পারছে না বাংলাদেশ

মোমবাতি প্রজ্বলনে তাজরীন ট্র্যাজেডিতে নিহতদের স্মরণ

মোমবাতি প্রজ্বলনে তাজরীন ট্র্যাজেডিতে নিহতদের স্মরণ

সিসিকের সাবেক কাউন্সিলর ১৩ মামলার আসামী আ‘লীগ নেতা লায়েক গ্রেফতার

সিসিকের সাবেক কাউন্সিলর ১৩ মামলার আসামী আ‘লীগ নেতা লায়েক গ্রেফতার

যার হাত ধরে পরীমনি এসেছিলেন চলচ্চিত্রে,তার মরণ দিনে করলেন খাসি জবাই

যার হাত ধরে পরীমনি এসেছিলেন চলচ্চিত্রে,তার মরণ দিনে করলেন খাসি জবাই

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবর্তন হচ্ছে লেকের নাম, নতুন নাম ‘মুগ্ধ সরোবর’

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবর্তন হচ্ছে লেকের নাম, নতুন নাম ‘মুগ্ধ সরোবর’

সোনারগাঁয়ে বিএনপির কার্যালয় উদ্বোধন

সোনারগাঁয়ে বিএনপির কার্যালয় উদ্বোধন

সেনবাগে ইসলামী আন্দোলনের গণ সমাবেশে আওয়ামীলীগ নিষিদ্ধের দাবী

সেনবাগে ইসলামী আন্দোলনের গণ সমাবেশে আওয়ামীলীগ নিষিদ্ধের দাবী

পঞ্চগড়ে সিন্ডিকেট ভাঙতে তেঁতুলিয়ায় ৫৫ টাকায় আলু বিক্রি

পঞ্চগড়ে সিন্ডিকেট ভাঙতে তেঁতুলিয়ায় ৫৫ টাকায় আলু বিক্রি

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক ধর্ম উপদেষ্টা ড.খালিদ হোসেন

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক ধর্ম উপদেষ্টা ড.খালিদ হোসেন

সাধারণ মানুষের পেটে লাথি মেরে আ.লীগ নিজেদের ভাগ্য গড়েছে : এমরান সালেহ প্রিন্স

সাধারণ মানুষের পেটে লাথি মেরে আ.লীগ নিজেদের ভাগ্য গড়েছে : এমরান সালেহ প্রিন্স

মাদক শুধু ব্যক্তিকে নয় পরিবারকেও ধ্বংস করে

মাদক শুধু ব্যক্তিকে নয় পরিবারকেও ধ্বংস করে

অ্যাম্বাসেডর কাপ উশুতে সেনাবাহিনী চ্যাম্পিয়ন

অ্যাম্বাসেডর কাপ উশুতে সেনাবাহিনী চ্যাম্পিয়ন

সিলেটে মাজিদের ফিফটি

সিলেটে মাজিদের ফিফটি

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা

বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!

বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!