ইহুদি জাতির কলঙ্কিত ইতিহাস

Daily Inqilab মুফতি সফিউল্লাহ

০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম

ইহুদী এমন একটি জাতি যাদের নামের সাথে জড়িয়ে আছে বহু সংখ্যক নবী ও রাসুল হত্যার ইতিহাস। ইহুদীদের মধ্যে জগতের সকল প্রকার জঘন্য কার্যকলাপ বিদ্যমান । এরা আদিকাল থেকেই পৃথিবীতে নানান অশান্তি, ফেৎনা-ফাসাদ সৃষ্টি করে আসছে। আদি যুগ হতে এরা হিংস্র প্রকৃতির । এরা অন্য ধর্মের প্রতি ক্ষোভ আদিকাল হতেই বুকে লালন করে আসছে। পৃথিবীতে এদের অপকর্ম, ষড়যন্ত্র, চক্রান্তের কথা সর্বজন স্বীকৃত। পবিত্র কোরআনে লাঞ্ছিত জাতি হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। যুগ যুগ ধরে এরা খোদাদ্রোহিতা ও কুফুরি কর্মকান্ড করে আসছে।ইতিহাস সাক্ষী দেয় যে ইহুদীদের স্থায়ী কোন বসতভিটা ছিল না; আর এরা অন্যদের সাথে মিলে মিশে বসবাস করতে পারেনি।

ইহুদী জাতির ইতিহাস: হযরত ইসহাক আলাইহিস সাল্লাম এর সন্তান ইয়াকুব আলাইহিস সালামের একটি নাম ছিল ইসরাইল তার বংশধররাই বনি ইসরাইল হিসেবে পরিচিত। তাদেরই একটি শাখা পরবর্তীতে ইয়াকুব আলাইহিস সালামের ছেলে ইয়াহুদার নামে নিজেদের ইহুদী পরিচয় দিতে থাকে। যুগ যুগ ধরে তাদের খোদাদ্রোহিতা, কুফরি কর্মকাণ্ড, ও নবীদের আদেশ অমান্য সর্বজন স্বীকৃত। হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম মিশরের রাজা হওয়ার পর বনী ইসরাইলরাও সিরিয়া থেকে মিশরে এসে বসবাস করতে থাকে। মিশরে বনী ইসরাইলদের উপর ফেরাউন অনেক জুলুম নির্যাতন করত। তাদেরকে কষ্টের কাজ করতে বাধ্য করতো। অতঃপর আল্লাহ তাআলা হযরত মূসা(আ.)এর মাধ্যমে ফেরাউন থেকে তাদের মুক্তি দান করেন। তিনি তাদেরকে নিয়ে বায়তুল মাকদিসের দিকে রওয়ানা হন।

তাদের উপর আল্লাহর অনুগ্রহের পরেও তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে অবাধ্যতা করেছে। ইতিহাস সাক্ষী ইহুদি জাতিকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি কষ্টে ভুগেছেন হজরত মুসা (আ.)। তিনি তুর পাহাড়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাওরাত আনার জন্য গেলে তারা গো-বৎসের পূজা আরম্ভ করে। আল্লাহ তাদের শাস্তি দিয়ে ক্ষমা করার পর তারা আল্লাহকে স্বচক্ষে দেখার জন্য পীড়াপীড়ি করে। এ জন্য তাদের ওপর ফেরেশতার মাধ্যমে তুর পাহাড় উঠিয়ে শাস্তির ভয় দেখানো হয়। মুসা (আ.)-এর দোয়ায় তাদের জন্য কুদরতি খাবারের ব্যবস্থা করা হলে তারা অকৃতজ্ঞ হয়ে তা খেতে অস্বীকার করে। মহান আল্লাহ তাআলা তাদেরকে বিভিন্ন সময় শাস্তি দিয়ে সতর্ক করেছেন কিন্তু তারা সতর্ক হয়নি।

হজরত দাউদ (আ.) এর যুগে শনিবারে তাদেরকে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা সত্ত্বেও তারা আল্লাহর বিধান মানে নি পরিণামে তাদের একদলকে আল্লাহ তাআলা বানরে পরিণত করেন। তারপর হযরত সুলাইমান(আ.) বাইতুল মাকদিস পুনঃনির্মাণ করেন। তাদের জন্য সুন্দর বসবাসের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু সুলাইমান আলাই সাল্লাম এর যুগের পরে তারা পুনরায় কুফুরি কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়। তাদেরকে নবী পাঠিয়ে সতর্ক করার পরও তারা ফিরে আসেনি, তখন আল্লাহর গজব হিসেবে তাদের ওপর মিসরের জনৈক সম্রাট চড়াও হয়ে ব্যাপক হত্যা ও লুণ্ঠন চালায়।

এরপর কিছুদিন ভালো চললেও তারা কুপবৃত্তির অনুসরণে মূর্তিপূজা শুরু করে দেয়। হযরত ইলিয়াস(আ.) তাদের মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেন কিন্তু তারা তার উপর অনেক অমানবিক নির্যাতন চালায় এমনকি তাকে হত্যা করতেও উদ্বত হয় । তখন আল্লাহর গজব হিসাবে আবার মিশরের এক সম্রাট তাদের উপর আক্রমণ চালায়। তারপর তারা আবার যখন খারাপ কাজে লিপ্ত হয়; তখন বুখতে নছর তাদের উপর আক্রমণ চালায়। তখন বুখতে নছর হত্যা ও লুণ্ঠনের মাধ্যমে তাদের শহরকে বিরান করে দেয়। ইহুদীরা তখন বায়তুল মকদিস থেকে বাবেলে স্থানান্তরিত হয়। এভাবে তারা যুগে যুগে লাঞ্ছিত, অপদস্ত, নির্বাসিত হতে থাকে। কাল পরিক্রমায় ইহুদিদের কয়েকটি গোত্র মদিনা এসে বসবাস করতে থাকে ।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আমলে তাদের ষড়যন্ত্র, চুক্তিবঙ্গ, সুদব্যবস্থা ও বিভিন্ন অপকর্মের কারণে বনু নাযীর ও বনু কাইনুকাকে মদিনা থেকে বহিষ্কার করা হয়। আর বনু কুরায়যার পুরুষদের হত্যা করা হয়। তখন তাদের বেশির ভাগ খায়বারে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করে। সেখানেও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। যার ফলে খায়বর যুদ্ধ ঘটেছিল। খায়বর যুদ্ধে ইহুদিদের পরাজয় ঘটে। সেখান থেকে তাদেরকে নির্বাসন করার পরে তারা সিরিয়ায় গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করে। অতঃপর হযরত খালেদ বিন ওয়ালিদ রাযি. যখন রোমক সম্রাট হিরাক্লিয়াসকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করে সিরিয়া দখল করেন। তখন সেখানকার স্থানীয় ইহুদীরা ইউরোপ আমেরিকার বিভিন্ন স্থানে চলে যায়।
অতঃপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলার জার্মানি থেকে ইহুদীদের বিতাড়িত করে, এবং প্রায় ৬০ লাখ ইহুদিকে হত্যা করে। বৃটিশদের সহযোগিতায় তারা ফিলিস্তিনে এসে অবস্থান শুরু করে। ইনশাআল্লাহ এখান থেকেও তাদেরকে বিতাড়িত করা হবে। আল্লাহর বাণী চিরসত্য। ইহুদীদের পরাজয়,লাঞ্ছনা,অভাব আসবেই! মুসলমানদের বিজয় আসবেই ইনশাআল্লাহ! আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন: তাদেরকে যেখানেই পাওয়া যাক, তাদের উপর লাঞ্ছনার ছাপ মেরে দেওয়া হয়েছে, অবশ্য আল্লাহর তরফ থেকে যদি কোন উপায় সৃষ্টি হয়ে যায় কিংবা মানুষের পক্ষ হতে কোনও অবলম্বন বের হয়ে আসে, (যা তাদেরকে পোষকতা দান করবে) তবে ভিন্ন কথা। এবং তারা আল্লাহর ক্রোধ নিয়ে ফিরেছে, আর তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে অভাবগ্রস্ততা। এর কারণ এই যে, তারা আল্লাহর আয়াতসমূহ অস্বীকার করত এবং নবীগণকে অন্যায়ভাবে হত্যা করত। (তাছাড়া) এর কারণ এই যে, তারা অবাধ্যতা করত ও সীমালংঘনে লিপ্ত থাকত। (সূরা আলে ইমরান - ১১২)।
অবশেষে ইনশাআল্লাহ ইয়াহুদীদের ধ্বংস ও চিরবিলুপ্তি পরিসাধিত হবে খলীফাতুল্লাহ ইমাম মাহদী (আ.)-এর হাতে! যে ভবিষ্যৎবাণী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অসংখ্য হাদিসে রয়েছে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম জাতিকে ইহুদীদের ষড়যন্ত্র থেকে হেফাজত করুন! এবং ফিলিস্তিনের মুসলিমদেরকে গায়েবী মদদের মাধ্যমে ইহুদিদের ওপর বিজয় দান করুন!

 

 


বিভাগ : ইসলামী জীবন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ফিলিস্তিনে আল্লাহর সাহায্য কতদূরে
এআই দিয়ে ঘিবলি স্টাইল কার্টুন তৈরি ইসলামের দৃষ্টিতে জঘন্য অপরাধ
মুসলিম জাতির শক্তির ভিত্তি
ছারছীনা দরবারের দীনী খিদমত ও সংস্কারমূলক কার্যাবলি
যেভাবে হজের প্রস্তুতি নেব
আরও
X
  

আরও পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সউদী আরবের ৩০০ বিলিয়ন ডলারের ঐতিহাসিক চুক্তি

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সউদী আরবের ৩০০ বিলিয়ন ডলারের ঐতিহাসিক চুক্তি

সিরিয়ার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেন ট্রাম্প

সিরিয়ার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেন ট্রাম্প

গাজায় যুদ্ধ থামবে না, হুঁশিয়ারি নেতানিয়াহুর

গাজায় যুদ্ধ থামবে না, হুঁশিয়ারি নেতানিয়াহুর

ইসরায়েলি নৃশংস হামলায় গাজায় নিহত অন্তত ৮১ ফিলিস্তিনি

ইসরায়েলি নৃশংস হামলায় গাজায় নিহত অন্তত ৮১ ফিলিস্তিনি

কালিগঞ্জে প্রশাসনের নাকের ডগায় অবৈধ বালু উত্তোলন, পরিবেশ বিপর্যয়ের সম্ভাবনা

কালিগঞ্জে প্রশাসনের নাকের ডগায় অবৈধ বালু উত্তোলন, পরিবেশ বিপর্যয়ের সম্ভাবনা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি-প্রক্টরের পদত্যাগ চায় ছাত্রদল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি-প্রক্টরের পদত্যাগ চায় ছাত্রদল

রিয়াল ছেড়ে কেন ব্রাজিলে আনচেলত্তি

রিয়াল ছেড়ে কেন ব্রাজিলে আনচেলত্তি

দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত ঢাবি ছাত্রদল নেতা, বিক্ষোভ প্রতিবাদে উত্তাল ক্যাম্পাস

দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত ঢাবি ছাত্রদল নেতা, বিক্ষোভ প্রতিবাদে উত্তাল ক্যাম্পাস

সেমি-ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ নেপাল

সেমি-ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ নেপাল

এই প্রথমবারের মতো  ‘বাবার কারাবাস’ নিয়ে প্রকাশ্যে  কথা বললেন ইমরান খানের সন্তানদ্বয়

এই প্রথমবারের মতো ‘বাবার কারাবাস’ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বললেন ইমরান খানের সন্তানদ্বয়

আমিরাতের উন্নয়নে বাংলাদেশিদের অবদানের প্রশংসা এবং সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ

আমিরাতের উন্নয়নে বাংলাদেশিদের অবদানের প্রশংসা এবং সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ

কৃষিপণ্য রপ্তানিতে ভাটা, উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা

কৃষিপণ্য রপ্তানিতে ভাটা, উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা

ব্রিফিংয়ে জয়সোয়াল আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার ঘটনায় ভারতের উদ্বেগ!

ব্রিফিংয়ে জয়সোয়াল আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার ঘটনায় ভারতের উদ্বেগ!

আমদানি বৃদ্ধি ও শুল্ক কমানোর পণ্য তালিকা চূড়ান্ত হচ্ছে

আমদানি বৃদ্ধি ও শুল্ক কমানোর পণ্য তালিকা চূড়ান্ত হচ্ছে

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করে না: প্রেস উইং

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করে না: প্রেস উইং

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করে না: প্রেস উইং

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করে না: প্রেস উইং

চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে পতিত সরকারের করা চুক্তি স্থগিত করুন

চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে পতিত সরকারের করা চুক্তি স্থগিত করুন

কমলো উড়োজাহাজের তেলের দাম

কমলো উড়োজাহাজের তেলের দাম

লিবিয়ায় ভয়াবহ সংঘর্ষ, বাসিন্দাদের ঘরে থাকার নির্দেশ

লিবিয়ায় ভয়াবহ সংঘর্ষ, বাসিন্দাদের ঘরে থাকার নির্দেশ

আমরা কি নতুন কোনও যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে যাচ্ছি? প্রশ্ন মেজর হাফিজের

আমরা কি নতুন কোনও যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে যাচ্ছি? প্রশ্ন মেজর হাফিজের