মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মত নয় যারা
২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম
মানবজাতির জন্য রহমত হিসেবে পাঠানো হয়েছে, শেষ নবী, সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) কে। আমরা নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রহমতের কতশত ভাগ পেয়েছি, যেগুলো গণনা করে শেষ করা যাবে না, তার রহমতেরই একটি ভাগ হলো- তাঁর বরকতে শ্রেষ্ঠ উম্মাত হওয়ার গৌরবপূর্ণ মর্যাদা লাভ করেছি। এমন রহমতের নবীর প্রতি দেহমনে, চিন্তা-চেতনায়, কাজে-কর্মে, বিশ্বাসে, সর্বাত্মকভাবে সদাসর্বদা প্রেম-ভালোবাসা প্রদর্শন ও তার অনুসরণ-অনুকরণ ঈমানের অন্যতম দাবি। এ দাবি বাদ দিয়ে নবীর উম্মত হওয়া যায় না। তাই তো দেখা যায়, হাদিসের কিতাবাদিতে এমন অনেক কাজের কথা উল্লেখ আছে, যে কাজ সম্পাদনকারীকে রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর উম্মত নয় বলে, কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। এমন কিছু কাজের কথা এখানে উল্লেখ করা হলো-
ছোটদের উপর দয়া: মানবশিশু, মানব বাগানের ফুল। সুতরাং তাদের সাথে মন্দ আচরণ ও রাগারাগি করা মানবফুল নষ্ট করার নামান্তর। তাই তো রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,‘যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদের উপর দয়া করে না, আমাদের বড়দের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে না, এবং ভালো কাজের আদেশ করে না, আর মন্দ কাজের নিষেধ করে না, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।’(তিরমিজি : ১৯২১)। অন্যের মাল আত্মসাৎকারী: ইমরান বিন হোসাইন(রা.) সূত্রে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কারো মাল ছিনতাই করে, সে আমার উম্মত না।’ (ইবনে মাজা:৩৯৩৭)বোঝা গেল, অন্যের কষ্টার্জিত সম্পদ, তার অগোচরে ছিনতাই করা, চুরি করা, অত্যন্ত জঘন্যতম একটি গুনাহ। যেকারনে রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে উম্মতের লিস্ট থেকে বের করে দিয়েছেন।
স্ত্রীকে স্বামীর বিরুদ্ধে উসকে দেওয়া: স্বামী-স্ত্রীর পরস্পর মধুর সম্পর্কের মাঝে যে ফাটল ধরানোর জন্য কিংবা স্ত্রীকে স্বামীর বিরুদ্ধে উসকে দেওয়ার জন্য নানাভাবে কাজ করে, কিংবা গোলাম ও মনিবের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করার জন্য, এই ধরনের ন্যাক্কারজনক কাজ করে, তাদের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীকে উসকে দেয় এবং মালিকের বিরুদ্ধে গোলামকে উসকে দেয় সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (আবু দাউদ : ২১৭৫)।
বিলাপ করে চেহারায় প্রহার করা: হযরত ইবনে মাসুদ সূত্রে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ বলেছেন যে চেহারায় প্রহার করে এবং (জামার) পোশাক-আশাকের গরিবান ছিঁড়ে ফেলে এবং আইয়ামে জাহেলিয়াতের মতো ডাকাডাকি করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’(বুখারী:১২৯৭) বোঝা গেল, পৃথিবীর ইতিহাসে, এমন একটি সময় গিয়েছে, যখন মানুষ নিকষ কালো আঁধারে নিমজ্জিত ছিল। যখন ছিল না, সামান্য আলোর আভা ও আভাস। ছিলনা আলোকিত কোনো মানুষের বসবাস। মানবতার ওই অন্তিমকালে সৃষ্টির প্রতি স্রষ্টার দয়া হলো,তখনই পৃথিবীবাসীর জন্য অনন্য নেয়ামত নবী মোহাম্মদের আগমন হলো। তিনি মানুষদেরকে নানা কুসংস্কার ও কু-প্রথা থেক খুব শক্তভাবে সতর্ক করলেন।
মুসলমানদের বিরুদ্ধে অস্ত্র উত্তোলন: আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের (মুসলমানদের) বিরুদ্ধে অস্ত্র উত্তোলন করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (বুখারী : ৬৮৭৪)। মুসলমানদের সাথে প্রতারণা করা: আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে আমাদের (মুসলমানদের) সাথে প্রতারণা করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (মুসলিম : ১৬৪)। রাসূলের তরীকা থেকে মুখ ফিরানো: ইবনে ওমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত (রীতিনীতি) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, সে আমার দলভুক্ত নয়।’ (মুসলিম : ১৪০১)। অন্যের জিনিস নিজের বলে দাবি করা: হযরত আবুজর (রা.) সূত্রে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এমন জিনিসের দাবি করে, যা তার নয়; সে আমার দলভুক্ত নয় এবং সে যেন তার আবাসস্থল জাহান্নাম বানিয়ে নেয়।’ (মুসলিম : ২৩১৯)। সুর করে কোরআন পড়া: হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সুর করে কোরআন পড়ে না; সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (বুখারী : ৭৫২৭)
নারী-পুরুষের অন্যের সাদৃশ্যতা গ্রহণ করা: মহান আল্লাহ তায়ালা নারী-পুরুষ দুটি জাতিকে ভিন্ন ভিন্ন আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন, এটা মহান আল্লাহ তায়ালার কুদরতের অনন্য বহিঃপ্রকাশ। এই কুদরতকে যারা অগ্রাহ্য করে নিজের প্রাপ্ত আকৃতিকে অন্য লিঙ্গের সাথে সাদৃশ্যতা গ্রহণ করে, তার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সা.) কঠোর ভাষায় নিন্দা করেছেন। এ ব্যাপারে আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর(রা.) সূত্রে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)বলেছেন, ‘যে পুরুষ মহিলাদের সাদৃশ্যতা গ্রহণ করে, আর যে মহিলা পুরুষদের সাদৃশ্যতা গ্রহণ করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (মুসনাদে আহমদ : ৬৮৭৫)।
সুতরাং শ্রেষ্ঠ নবীর শ্রেষ্ঠ উম্মতের সম্মান আমাদের বজায় রাখতে হবে। রাসুলের সুন্নাহ অনুসরণের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধভাবে সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা পালন করতে হবে। সেই সঙ্গে দ্বীনের ব্যাপারে অবিচল ও সুদৃঢ় থাকতে হবে। দ্বীনের ব্যাপারে ইস্তিকামাত তথা অবিচল ও সুদৃঢ় থাকা, দ্বীনি সফলতার চাবিকাঠি। দুনিয়ার যত ধরনের পথ ভ্রষ্টতা ও পাপাচার দেখা যায়, তা সবই দৃঢ়তা থেকে সরে যাওয়ার ফল। ধর্মীয় বিশ্বাসের ক্ষেত্রে দৃঢ়তা থাকা আবশ্যক। আল্লাহতায়ালা এ প্রসঙ্গে ইরশাদ করেন, ‘আপনি দ্বীনের পথে দৃঢ়ভাবে সোজা চলতে থাকুন যেভাবে আপনি আদিষ্ট হয়েছেন।’ (সুরা হুদ : ১১২)। মহান আল্লাহতালা আমাদের সবাইকে উপরিউক্ত কাজগুলোকে বর্জন করে, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর খাঁটি উম্মত হয়ে ইহজগত ত্যাগ করে, পরকালীন জীবনে, চিরস্থায়ী জান্নাতে যাওয়ার তাওফিক দান করুন।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বগুড়ায় কনসার্টের ভীড়ে ছুরিকাঘাতে যুবকের মৃত্যু
অনলাইন জুয়ার প্রচারণায় বুবলী
রিংয়ে আমিনুল-সানজিদাদের উৎসব
চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির কাউন্সিলে প্রত্যক্ষ ভোটে সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত
আওয়ামী লীগকে কবর দিয়েছেন শেখ হাসিনা
রোচ-গ্রেভস জুটি ভাঙতে পারছে না বাংলাদেশ
মোমবাতি প্রজ্বলনে তাজরীন ট্র্যাজেডিতে নিহতদের স্মরণ
সিসিকের সাবেক কাউন্সিলর ১৩ মামলার আসামী আ‘লীগ নেতা লায়েক গ্রেফতার
যার হাত ধরে পরীমনি এসেছিলেন চলচ্চিত্রে,তার মরণ দিনে করলেন খাসি জবাই
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবর্তন হচ্ছে লেকের নাম, নতুন নাম ‘মুগ্ধ সরোবর’
সোনারগাঁয়ে বিএনপির কার্যালয় উদ্বোধন
সেনবাগে ইসলামী আন্দোলনের গণ সমাবেশে আওয়ামীলীগ নিষিদ্ধের দাবী
পঞ্চগড়ে সিন্ডিকেট ভাঙতে তেঁতুলিয়ায় ৫৫ টাকায় আলু বিক্রি
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক ধর্ম উপদেষ্টা ড.খালিদ হোসেন
সাধারণ মানুষের পেটে লাথি মেরে আ.লীগ নিজেদের ভাগ্য গড়েছে : এমরান সালেহ প্রিন্স
মাদক শুধু ব্যক্তিকে নয় পরিবারকেও ধ্বংস করে
অ্যাম্বাসেডর কাপ উশুতে সেনাবাহিনী চ্যাম্পিয়ন
সিলেটে মাজিদের ফিফটি
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা
বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!