কিয়ামত দিবসের ব্যাতিক্রমী আট সাক্ষী
৩০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম | আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
কিয়ামত দিবসের বিভীষিকাময় অবস্থার কথা কে না জানে, সেই দিন প্রত্যেকে এমন দিশাহারা হবে যে সবাই তার আপনজনের কথা, অর্থ-সম্পদের কথা ভুলে যাবে। এমনকি পশুরাও ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়বে। সেদিন এসব ভীতিকর জিনিসের সাথে আরও একটি ভীতিকর বিষয় হলো- আমাদের পার্থিব জীবনের কাজের ব্যতিক্রমী সব সাক্ষী। সেদিন এমন আট সাক্ষী হবে, যা অস্বীকার করার কোন উপায় ও সুযোগ থাকবে না। নি¤েœ সে আট সাক্ষী নিয়ে কোরআন-সুন্নাহর আলোকে আলোচনা তুলে ধরা হলো : ১. স্থান বা জায়গা: শয়তানের ধোঁকায়, নফসের প্ররোচনায়, পরিবেশের তাড়নায়, কমবেশি সবাই গুনাহ করে থাকে, তো এই গুনাহ যে স্থান বা জায়গায় করা হয়, কাল কিয়ামতের বিভীষিকাময় দিনে জমিনের ওই অংশ আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। পবিত্র কোরআন ইরশাদ হয়েছে, ‘সেদিন পৃথিবীর তার যাবতীয় সংবাদ জানিয়ে দেবে।’ (সূরা যিলযাল : ৪)।
২. সময় : সকাল দুপুর বিকাল তথা রাত-দিনের কোন না কোন সময়েই গুনাহের ওই কাজটি করা হয়ে থাকে। কাল কিয়ামতের দিন, সময়ের ওই অংশটুকু আল্লাহ তায়ালার দরবারে সাক্ষী হয়ে দাঁড়াবে। হযরত হাসান বসরী (রহ.) বলেছেন, ‘প্রতিটি দিন মানুষকে ডেকে বলে, আমি নতুন দিন, আমার ভেতর যে গুনাহ যেরকয কাজ করা হবে, কিয়ামতের দিন আমি তার জন্য সেই রকম সাক্ষী দেব।’ (কুরতুবী : ১৯/২৪৫)। ৩. জিহ্বা : মহান আল্লাহর অপূর্ব সৃষ্টি মানুষের এক ক্ষুদ্রাকায় অঙ্গ হলো জিহ্বা। জিহ্বা আকারে ছোট হলেও এর প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া অনেক বড়। এই জিহ্বার মাধ্যমে মানুষ তার মনের ভাব, অভিব্যক্তি ও কামনা-বাসনা আদান-প্রদান করে থাকে।ভাব প্রকাশের এই মাধ্যমটিকে সত্য-সঠিক ও কল্যাণকর ক্ষেত্রে ব্যবহার করাই যুক্তিযুক্ত। এর বিপরীতে অনর্থক ও অপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে জিহ্বা ব্যবহার করা মারাত্মকতম গুনাহ। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যেকোনো ব্যক্তির ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য হলো অনর্থক কথা ত্যাগ করা’। (তিরমিজি : ২৩১৭)। এই জিহ্বার মাধ্যমে মানুষ যে সকল গুনাহ করে থাকে, কাল কিয়ামতের ময়দানে জিহ্বা তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। পবিত্র কুরআনের ইরশাদ হয়েছে, ‘যেদিন তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে তাদের বিরুদ্ধে তাদের জিহ্বা, হাত ও তাদের পা সাক্ষ্য দেবে।’ (সূরা নূর : ২৪)।
৪. শরীরের অন্যান্য অঙ্গসমূহ: শরীরের মধ্যে আরও যে সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আছে, নির্দিষ্ট ওই অঙ্গ দ্বারা যে গুনাহ করা হয়েছে, শরীরের ওই অঙ্গ কাল কিয়ামতের ময়দানে আল্লাহর দরবারে তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আজ আমি তাদের মুখে মোহর লাগিয়ে দেব। ফলে তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে, এবং তাদের পা সাক্ষ্য দেবে তাদের কৃতকর্মের।’ (সূরা ইয়াসিন : ৫৫)। ৫. দুই ফেরেশতা: মানুষের দৈনন্দিন জীবনের ভালো-মন্দ, নেককাজ ও বদকাজ লেখার জন্য আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে সম্মানিত লিপিকর দুইজন ফেরেশতা প্রতিটি মানুষের জন্য নিয়োজিত আছেন। তারা মানুষের কৃত সব কাজ পুঙ্খানুপুঙ্খানুভাবে লিপিবদ্ধ করে রাখেন। তারাই কাল কিয়ামতের দিনে গুনাহগার ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আল্লাহর সামনে সাক্ষ্য দেবেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অথচ তোমাদের জন্য কিছু তত্ত্বাবধায়ক (ফেরেশতা) নিযুক্ত আছে, সম্মানিত লিপিকরবৃন্দ, যারা জানে তোমরা যা কর।’ (সূরা ইনফিতার:১১-১২)।
৬. মানুষের আমলনামা: কাল কিয়ামতের ময়দানে মানুষের আমলনামা তার কৃতগুনাহের ব্যাপারে সাক্ষ্য দেবে। এ ব্যপারে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,‘আর ‘আমলনামা’ সামনে রেখে দেওয়া হবে। তখন তুমি অপরাধীদেরকে দেখবে, তাতে যা (লেখা) আছে, তার কারণে তারা আতঙ্কিত এবং তারা বলেছে, হায়! আমাদের দুর্ভোগ! এটা কেমন কিতাব, ছোট-বড় যত কর্ম আছে সবই পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব করে রেখেছে, তারা তাদের সমস্ত কৃতকর্ম সামনে উপস্থিত পাবে, তোমার প্রতিপালক কারো প্রতি কোন জুলুম করবেন না।’ (সূরা কাহফ : ৪৯)। ৭. নবী মুহাম্মদ: নবী মুহাম্মদ (সা.) কাল কিয়ামতের উম্মতের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবেন। হাদিসে বর্ণিত আছে, ‘প্রতি জুমআর রাতে সকল নবী ও আম্বিয়াদের কাছে তাদের জাতির। এবং পিতা-মাতার কবরে তাদের সন্তানদের আমল দেখানো হয়।’-কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আক্বওয়াল নং-৪৫৪৯৩। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরানে ইরশাদ হয়েছে,‘সুতরাং (তারা ভেবে দেখুক)- সেই দিন (তাদের অবস্থা) কেমন হবে, যখন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং (হে নবী), আমি তোমাকে ওইসব লোকের বিরুদ্ধে সাক্ষীরুপে উপস্থিত করব?’-সূরা:৪১, উপরিউক্ত আয়াত দ্বারা বোঝা গেল, কিয়ামতের দিন প্রত্যেক নবী- রাসূলগণ নিজ-নিজ উম্মতের ভালো-মন্দ কর্ম সম্পর্কে সাক্ষ্য দেবেন। সেই ধারায় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর নিজ উম্মত সম্পর্কে সাক্ষীরূপে পেশ করা হবে।
৮. আল্লাহ তাআলা : স্বয়ং আল্লাহ তাআলা বান্দার ভালো-মন্দ কর্ম সম্পর্কে কাল কিয়ামতের ময়দানে সাক্ষ্য দিবেন। আল্লাহ বলেন, আমি রহমান, রহিম, গাফফার, সাত্তার, তথাপি কাল কিয়ামতের ময়দানে তোমাদের গুনাহ সম্পর্কে সাক্ষ্য দেব। আল্লাহ আরো বলেন, তোমরা এটা ভয় কর যে, অমুক দেখছে, অমুক দেখছে, তবে এটা কেন ভয় কর না, খেয়াল কর না, স্বয়ং আমি আল্লাহ নিজেই তো দেখছি।এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,‘(হে মানুষ!) তোমরা যে- কাজই কর, তোমরা যখন তাতে লিপ্ত থাক, তখন আমি তোমাদের দেখতে থাকি। তোমার প্রতিপালকের কাছে অনু-পরিমাণ জিনিসও গোপন থাকে না-না পৃথিবীতে, না আকাশে এবং তার চেয়ে ছোট এবং তার চেয়ে বড় এমন কিছু নেই।’ (সূরা: ইউনুস : ৬১)।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বগুড়ায় কনসার্টের ভীড়ে ছুরিকাঘাতে যুবকের মৃত্যু
অনলাইন জুয়ার প্রচারণায় বুবলী
রিংয়ে আমিনুল-সানজিদাদের উৎসব
চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির কাউন্সিলে প্রত্যক্ষ ভোটে সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত
আওয়ামী লীগকে কবর দিয়েছেন শেখ হাসিনা
রোচ-গ্রেভস জুটি ভাঙতে পারছে না বাংলাদেশ
মোমবাতি প্রজ্বলনে তাজরীন ট্র্যাজেডিতে নিহতদের স্মরণ
সিসিকের সাবেক কাউন্সিলর ১৩ মামলার আসামী আ‘লীগ নেতা লায়েক গ্রেফতার
যার হাত ধরে পরীমনি এসেছিলেন চলচ্চিত্রে,তার মরণ দিনে করলেন খাসি জবাই
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবর্তন হচ্ছে লেকের নাম, নতুন নাম ‘মুগ্ধ সরোবর’
সোনারগাঁয়ে বিএনপির কার্যালয় উদ্বোধন
সেনবাগে ইসলামী আন্দোলনের গণ সমাবেশে আওয়ামীলীগ নিষিদ্ধের দাবী
পঞ্চগড়ে সিন্ডিকেট ভাঙতে তেঁতুলিয়ায় ৫৫ টাকায় আলু বিক্রি
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক ধর্ম উপদেষ্টা ড.খালিদ হোসেন
সাধারণ মানুষের পেটে লাথি মেরে আ.লীগ নিজেদের ভাগ্য গড়েছে : এমরান সালেহ প্রিন্স
মাদক শুধু ব্যক্তিকে নয় পরিবারকেও ধ্বংস করে
অ্যাম্বাসেডর কাপ উশুতে সেনাবাহিনী চ্যাম্পিয়ন
সিলেটে মাজিদের ফিফটি
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা
বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!