প্রকৃত মুমিনের পরিচয় ও গুণাবলি
০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:২৩ এএম | আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:২৩ এএম
‘ঈমান’ শব্দের অর্থ বিশ্বাস, আস্থা প্রভৃতি। আর ঈমান আনয়নকারী ব্যক্তিদের বলা হয় মুমিন। তাওহিদ, রিসালাত ও আখিরাতে বিশ্বাসী ব্যক্তিদের মুমিন বলা হয়। ইসলাম মানে আনুগত্য, নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ, ইসলাম গ্রহণ করা ইত্যাদি। মুসলিম মানে আনুগ্যতশীল বা অনুগত ব্যক্তি যিনি নামাজ, জাকাত, রোজা ও হজ্ব এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) যাবতীয় আদেশ-নিষেধ মেনে চলেন। মুমিন ও মুসলিম জন্মগত ও বংশীয় কোনো পরিচয় নয়। এটি বিশ্বাস ও কর্মের মাধ্যমে অর্জন করতে হবে।কুরআনে কারীমের বহু স্থানে ও বহু হাদীসে প্রকৃত মুমিনের পরিচয় ও সফল মুমিনের গুণাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে।
ঈমান, ইয়াকিন, ইখলাস, তাকওয়া, তাজকিয়া ও ইহসান অর্জনের মধ্য দিয়ে ইসলাম বা আত্মসমর্পণ সফল মুমিনের গুণাবলী। আল কোরআনের শুরুতেই বিবৃত হয়েছে, ‘আলিফ লাম মীম! এই সেই মহাগ্রন্থ,যাতে কোনো সন্দেহ নেই , এটি মুত্তাকিদের জন্য পথনির্দেশ। যারা অদৃশ্যে বিশ্বাস স্থাপন করে, নামাজ কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিজিক-দৌলত দিয়েছি তা থেকে তারা ব্যয় করে। আর যারা আপনার প্রতি অবতীর্ণ কিতাবের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে এবং আপনার পূর্বে যেসব কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে সেগুলোর প্রতিও,আর তারা পরকালে দৃঢ় বিশ্বাস রাখে ।এরা এদের রবের পক্ষ থেকে হেদায়েতের উপর রয়েছে, আর এরাই সফলকাম’। (সূরা বাকারা : ১-৫))।
আল্লাহ তায়ালা বলেন : মুমিনগণ সফল হয়েছে। যারা তাদের নামাজে মনোযোগী। আর যারা অনর্থক কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকে। আর যারা জাকাত আদায়কারী। আর যারা নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাজতকারী। নিজেদের স্ত্রী ও যেসব দাসী তাদের মালিকানাধীন তারা ব্যতীত, কেননা তারা নিন্দিত বিষয়গুলোর অন্তর্ভুক্ত নয়। (সূরা মুমিনুন : ১-৬)। একই সূরায় আল্লাহ তায়ালা বলেন : আর যারা নিজেদের আমানতসমূহ ও চুক্তিসমূহে দায়িত্বশীল। আর যারা নিজেদের নামাজসমূহের হেফাজতকারী (নিয়মিত নামাজ আদায় করে এবং অন্যকে আদায়ের উপদেশ দেয়)। তারাই উত্তরাধিকারীগণ। যারা ফেরদাউসের উত্তরাধিকারী হবে,তারা সেখানে চিরস্থায়ী বাসিন্দা হবে। (সূরা মুমিনুন : ৮-১১)। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কোরআন মাজিদে তাঁর প্রিয় বান্দাদের পরিচয় উল্লেখ করে বলেন, ‘দয়াময় আল্লাহর প্রকৃত বান্দা তো তারাই যারা পৃথিবীতে অতি নম্রভাবে চলাফেরা করে ও যখন অজ্ঞলোক তাদের সাথে মূর্খতাসুলভ সম্বোধন করে তখনো তারা সালাম ও শান্তির বাণী বলে।
আর যারা রাত্রিসমূহ অতিবাহিত করে তাদের প্রভুর উদ্দেশ্যে সেজদায় অবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে এবং তারা বলে : হে আমাদের রব, আমাদের হতে জাহান্নামের শাস্তি দূরীভূত করুন, নিশ্চয় উহার শাস্তি ধ্বংস! নিশ্চয়ই তা অস্থায়ী ও স্থায়ী আবাস হিসেবে নিকৃষ্ট স্থান ! আর যখন তারা ব্যয় করে তারা অপচয় করে না এবং কার্পণ্যও করে না বরং তারা (এ দুয়ের মাঝে) মধ্যপন্থা অবলম্বন করে। আর যারা আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহ বা মাবুদকে ডাকে না এবং আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন, যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যারা এসব করে তারা শাস্তি ভোগ করবে এবং কিয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে।তারা ব্যতীত যারা তওবা করে ও সৎকর্ম করে আল্লাহ তাদের খারাপ আমলকে ভালো আমল দিয়ে পরিবর্তন করে দিবেন। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। আর যে তওবা করে এবং সৎকর্ম করে সে আল্লাহর দিকে সম্পূর্ণরূপে অভিমুখী হয়।
আর যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না এবং যখন অসার ক্রিয়াকলাপের সম্মুখীন হয় তখন স্বীয় মর্যাদার সহিত তা উপেক্ষা করে চলে।আর যারা তাদের প্রতিপালকের নিদর্শন স্মরণ করিয়ে দিলে তার প্রতি অন্ধ ও বধিরের মতো আচরণ করে না এবং যারা প্রার্থনা করে : হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদের স্ত্রী ও সন্তানদের মধ্য থেকে চক্ষু শীতলকারী স্ত্রী ও সন্তান দান করুন এবং আমাদেরকে মুত্তাকিদের ইমাম বানিয়ে দিন। এদের প্রতিদান হিসেবে দেওয়া হবে জান্নাতের সুউচ্চ স্থান ,যেহেতু তারা ছিল ধৈর্যশীল । তাদের সেখানে অভ্যর্থনা জানানো হবে অভিবাদন ও সালাম সম্ভাষণসহকারে। তারা সেখানে চিরস্থায়ী হবে। আশ্রয়স্থল ও আবাসন হিসেবে তা কত উৎকৃষ্ট। (সূরা আল ফুরকান : ৬৩-৭৬)। তাকওয়া, পবিত্রতা,সততা,সত্যবাদিতা ও নিষ্ঠার সাথে জীবনযাপনই সফলতার চাবিকাঠি। কোরআন মজিদের বাণী : সফল হলো তারা যারা আত্মশুদ্ধি অর্জন করল,আর ব্যর্থ হলো তারা যারা নিজেকে কলুষিত করল । (সূরা শামস : ৯-১০)।
তাকওয়া বা পরহেজগারি বলতে বেশি আমল করাকে বোঝায় না , বরং বদ আমল বা মন্দ কাজ পরিহার করে চলাই হলো তাকওয়া। প্রিয়নবী (সা.) বলেছেন, ‘তুমি এভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে যেন তুমি তাঁকে দেখছ, যদি তুমি তাঁকে দেখতে না পাও,তাহলে তিনি অবশ্যই তোমাকে দেখছেন। (বুখারি : ৪৮)। ঈমানের বিশুদ্ধতা আমলের বিশুদ্ধতার উপর নির্ভরশীল আর আমলের বিশুদ্ধতা নিয়ত বা অভিপ্রায়ের বিশুদ্ধতার উপর নির্ভরশীল । নবীজী ( সা) বলেন : আমলের প্রতিদান নিয়তের উপর নির্ভরশীল। আর প্রত্যেক ব্যক্তি যা নিয়ত করে তা তার জন্য নির্দিষ্ট। সুতরাং যার অভিবাসন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্য হবে,তার অভিবাসন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্য হবে। আর যার অভিবাসন হবে দুনিয়া অর্জন অথবা কোনো মহিলাকে বিয়ে করার জন্য হবে,তার অভিবাসন সেই উদ্দেশ্যের জন্য নির্দিষ্ট হবে। (বুখারি : ১)। নবীজী (সা) আরো বলেন, ‘তুমি তোমার দ্বীনের প্রতি আন্তরিক হও, সামান্য কাজই তোমার জন্য যথেষ্ট হবে ।‘(আল রাক্কাক, পৃষ্ঠা -৪৩৫ : ৭৯১৪)। ঈমান হলো আন্তরিক বিশ্বাসের প্রতিফলন,আর যিনি কাজে কর্মে এ বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটান তাঁকে মুমিন বলা হয়। একমাত্র চিত্তের বিশুদ্ধতা অর্জনের মাধ্যমেই সফলতা তথা ইহজাগতিক শান্তি ও পরজগতে মুক্তিলাভ সম্ভব। এরই জন্য সব ধর্মাচার, অনুশীলন, বিধিবিধান ও ধর্মীয় অনুশীলন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে প্রকৃত মুমিন হওয়ার তৌফিক দান করুন।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ পা থেকে ১১০ দিন পরে বের করা হলো বু্লেট
বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের ইস্যু তুলে ঝাড়খণ্ডে জিততে পারে নি বিজেপি, তবে মহারাষ্ট্রে বড় জয়
আবু সাঈদকে নিয়ে হাসিনার দাবি কতটুকু সত্য
বগুড়ায় কনসার্টের ভীড়ে ছুরিকাঘাতে যুবকের মৃত্যু
অনলাইন জুয়ার প্রচারণায় বুবলী
রিংয়ে আমিনুল-সানজিদাদের উৎসব
চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির কাউন্সিলে প্রত্যক্ষ ভোটে সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত
আওয়ামী লীগকে কবর দিয়েছেন শেখ হাসিনা
রোচ-গ্রেভস জুটি ভাঙতে পারছে না বাংলাদেশ
মোমবাতি প্রজ্বলনে তাজরীন ট্র্যাজেডিতে নিহতদের স্মরণ
সিসিকের সাবেক কাউন্সিলর ১৩ মামলার আসামী আ‘লীগ নেতা লায়েক গ্রেফতার
যার হাত ধরে পরীমনি এসেছিলেন চলচ্চিত্রে,তার মরণ দিনে করলেন খাসি জবাই
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবর্তন হচ্ছে লেকের নাম, নতুন নাম ‘মুগ্ধ সরোবর’
সোনারগাঁয়ে বিএনপির কার্যালয় উদ্বোধন
সেনবাগে ইসলামী আন্দোলনের গণ সমাবেশে আওয়ামীলীগ নিষিদ্ধের দাবী
পঞ্চগড়ে সিন্ডিকেট ভাঙতে তেঁতুলিয়ায় ৫৫ টাকায় আলু বিক্রি
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক ধর্ম উপদেষ্টা ড.খালিদ হোসেন
সাধারণ মানুষের পেটে লাথি মেরে আ.লীগ নিজেদের ভাগ্য গড়েছে : এমরান সালেহ প্রিন্স
মাদক শুধু ব্যক্তিকে নয় পরিবারকেও ধ্বংস করে
অ্যাম্বাসেডর কাপ উশুতে সেনাবাহিনী চ্যাম্পিয়ন