মহিমান্বিত মাস রজব : গুরুত্ব ও ফজিলত
২০ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:১৭ এএম | আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:১৭ এএম
হিজরি মাসগুলোর মধ্যে একটি বিশেষ ও মহিমান্বিত মাসের নাম রজব। এ মাস আসে রমজানের আগমনী বার্তা নিয়ে।‘রজব’ শব্দের অর্থ সম্মানিত।সুতরাং রজব মাস অত্যন্ত সম্মানিত ও ফজিলতপূর্ণ। জাহেলিয়ার যুগে আরবরা এ মাসকে অন্য মাসের তুলনায় অধিক সম্মান করতেন। এজন্য তারা এ মাসের নাম রেখেছিল ‘রজব’। ইসলাম আগমনের পর বছরের ১২ মাসের মধ্য থেকে রজবসহ ৪ মাসকে ‘আশহুরে হুরুম’ সম্মানিত মাস ঘোষণা করা হয়। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর কাছে গণনায় মাস ১২টি, তার মধ্যে ৪টি (সম্মানিত হওয়ার কারণে) নিষিদ্ধ মাস, এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। (সূরা তওবা : ৩৬)। মুমিনের ইবাদতের কিছু বিশেষ মৌসুম রয়েছে। যে মৌসুমগুলোতে একজন মুমিন অল্প আমলেও অধিক সাওয়াবের অধিকারী হতে পারেন। তার মধ্য থেকে একটি অন্যতম মাস হলো রজব মাস।
রজব মাসের মর্যাদামাসটির পুরো নাম ‘রজবুল মুরাজ্জাব’ বা ‘আর-রজব আল-মুরাজ্জাব’ হলেও এটি রজব মাস নামেই বেশি পরিচিত। মাসটির অর্থগত তাৎপর্যও রয়েছে। ‘রজব’ শব্দের অর্থ হলো সম্ভ্রান্ত, মহান বা প্রাচুর্যময়। আর ‘মুরাজ্জাব’ অর্থ ‘সম্মানিত’। সুতরাং এর অর্থ দাঁড়ায় ‘প্রাচুর্যময় সম্মানিত মাস’। মর্যাদার এ মাসটিকে মহান আল্লাহ তাআলা যাবতীয় যুদ্ধবিগ্রহ, হানাহানি ও রক্তপাত নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-‘আল্লাহ তাআলার আসমান-জমিন সৃষ্টি করার দিন থেকেই বারো মাসে বৎসর হয়। এর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত; তিনটি একাধারে জিলকদ, জিলহজ ও মহররম এবং চতুর্থটি হলো ‘রজব মুদার’, যা জমাদিউল আখিরা ও শাবানের মধ্যবর্তী মাস।’ (মুসলিম)।
মর্যাদার এ মাসটি মুমিন মুসলমানের ইবাদতের মাস। বরকত লাভের মাস। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) কোমড়ে কাপড় বেঁধে এ মাসের ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত হতেন। রোজা রাখতেন এবং বেশি বেশি বরকত পেতে দোয়া পড়তেন; তাঁর উম্মতকেও দোয়া পড়তে বলতেন। উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজাবা ওয়া শাবানা ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।’অর্থ : ‘হে আল্লাহ! রজব ও শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় করুন; রমজান মাস আমাদের নসিব করুন।’ (বুখারি ও মুসলিম)। ‘রজব মুদার’ বা বহুবিদ কল্যাণের সম্মিলন এ মাস। রমজানের আগে নিজেদের আমল ও ইবাদতের জন্য উপযোগি করে তোলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ মাসও রজব।
তাছাড়া রজব ও শাবান হলো পাশাপাশি দুটি জোড়া মাস। মাস দুটিকে একত্রে রজবান বা রাজাবাইনও বলা হয়। তাই বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগি, দোয়া-ইসতেগফার ও রোজা রাখার মতো আমল ইবাদত করে এ দুই মাসে নিজেদের প্রস্তুত করার উপযুক্ত সময়। রজব মাস জুড়ে বিশ্বনবির ইবাদত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রজব মাস জুড়ে অত্যাধিক আমল-ইবাদত করতেন, রোজা রাখতেন। দোয়া পড়তেন। রমজানের জন্য নিজেকে তৈরি করতে, নিজের মন-মানসিকতাকে পরিচ্ছন্ন করতে এ মাসে বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগি করতেন। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় তা ওঠে এসেছে-- প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি রজব মাসে (ইবাদত দ্বারা) জমি চাষাবাদ করল না আর শাবান মাসে (ইবাদতের মাধ্যমে) জমি আগাছামুক্ত করল না; সে রমজান মাসে (ইবাদতের) ফসল তুলতে পারবে না।’ (বায়হাকি)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রজব হলো আল্লাহর মাস, শাবান হলো আমার মাস; রমজান হলো আমার উম্মতের মাস।’ (তিরমিজি)।
উম্মাহাতুল মুমিনিনদের বর্ণনারজব ও শাবান মাসে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কী পরিমাণ ইবাদত-বন্দগি করতেন; তা উম্মাহাতুল মুমিনিনদের বর্ণনা থেকেই সুস্পষ্ট। হাদিসে এসেছে-- হজরত উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজান মাস ছাড়া সবচেয়ে বেশি রোজা পালন করতেন শাবান মাসে, অতপর রজব মাসে।- হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, ‘যখন রজব মাস আসত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আমলের আধিক্য দেখেই আমরা তা বুঝতে পারতাম।’- কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রজব মাসে ১০টি রোজা রাখতেন, শাবান মাসে ২০টি রোজা রাখতেন; রমজান মাসে ৩০টি রোজা রাখতেন। (দারিমি)।
রজব মাসের বিশেষ আমলসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো বেশি বেশি নফল রোজা পালন করা। মাস জুড়ে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিয়মিত আমল- ‘সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা পালন করা। সাহাবায়ে কেরামের দৃষ্টিতে রজব মাসমাস জুড়ে বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া। বিশেষ করে তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত-দোহা, জাওয়াল, আউয়াবিন; তাহিয়্যাতুল অজু, দুখুলুল মাসজিদ ইত্যাদি নামাজের ব্যাপারে যতœবান হওয়া খুবই জরুরি। সাহাবায়ে কেরামও এ মাসের ইবাদত ও ফজিলত বর্ণনা করেছেন।- হজরত সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিস থেকে জানা যায়, রজব মাসের প্রথম তারিখে ১০ রাকাত নফল নামাজ পড়তে হয়।- হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, অতি মহান (মর্যাদার) ৪টি রাত হলো-- রজব মাসের প্রথম রাত;- শাবান মাসের মধ্য দিবসের রাত (শবে বরাত);- শাওয়াল মাসের প্রথম রাত (ঈদুল ফিতর বা রমজানের ঈদের রাত);- জিলহজ মাসের দশম রাত (ঈদুল আজহা বা কোরবানি ঈদের রাত)। সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, রজব মাসের মর্যাদা, ফজিলত ও আমলের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখা। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করা। রমজানের পরিপূর্ণ ইবাদতের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
সাধারণ মানুষের পেটে লাথি মেরে আ.লীগ নিজেদের ভাগ্য গড়েছে : এমরান সালেহ প্রিন্স
মাদক শুধু ব্যক্তিকে নয় পরিবারকেও ধ্বংস করে
অ্যাম্বাসেডর কাপ উশুতে সেনাবাহিনী চ্যাম্পিয়ন
সিলেটে মাজিদের ফিফটি
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা
বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!
ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা
বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথের কাছে ২৭ রেফারির চিঠি
দিনের শুরুতেই হাসানের জোড়া আঘাত
তারেক রহমান দেশের সাধারণ মানুষের কাছে আস্থার প্রতিক-মোরেলগঞ্জে কাজী খায়রুজ্জামান শিপন
ফ্যাসিবাদের দোসররাই সিন্ডিকেট করে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি করছে: ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক নাছির
আইপিএলের মেগা নিলামে নজর বাংলাদেশের ১২ ক্রিকেটারের উপর
বেনাপোল থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ
“রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ”
বিএনপিতে অনুপ্রবেশকারীর ঠাঁই হবে না: আমিনুল হক
আলেম সমাজের সাথে ঐতিহাসিক সুসম্পর্ক রয়েছে বিএনপির: ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক নাছির
৪ দিনে ভারত থেকে এলো ৭২৫ মেট্রিক টন চাল
পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে ৩ শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় শিবিরের শোক
নিরীহ কোনো মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয় : আইজিপি
দেশকে এগিয়ে নিতে মেয়েদের সুশিক্ষা অর্জনের বিকল্প নেই - শেরপুরের পুলিশ সুপার