যেসব গুনাহে ঈমান চলে যায়
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম
গুনাহের প্রতি মানুষের আকর্ষণ স্বভাবজাত। শয়তানের ধোঁকা, নফসের প্ররোচনা, পরিবেশের তাড়না, মানুষকে বিভিন্ন গুনাহের কাজে জড়িয়ে ফেলে। মানুষের এই পাপ প্রবণতার বিষয়ে এক হাদিসে রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জাহান্নামকে ঘিরে রাখা হয়েছে আকর্ষণীয় কাজকর্ম দিয়ে আর জান্নাতকে ঘিরে রাখা হয়েছে নিরস কাজকর্ম দিয়ে। (বুখারি, হাদিস,৭/২৪৫৫)। তবে গুনাহ বর্জন করা ও গুনাহ থেকে পুরোপুরিভাবে বেঁচে থাকা প্রতিটি মুমিন- মুসলমানের জন্য অপরিহার্য কর্তব্য ও আবশ্যক। কোরআন সুন্নাহর আলোকে গুনাহের স্তরভেদে নানাবিধ ক্ষতির কথা জানা যায়, তবে দূর অতীতের মাশায়েখেগণ স্বীয় অভিজ্ঞতার আলোকে বলেছেন, এমন তিনটি গুনাহ আছে, যে গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তিরা ঈমান থেকে মাহরুম বা বঞ্চিত হয়ে যায়। নি¤েœ সেই তিনটি গুনাহ নিয়ে আলোচনা তুলে ধরা হলো।
মন্দ পরিণীতির ভয় না থাকা: মানুষ যত বড় বুজুর্গ আর মুত্তাকী হোক না কেন; তার দিলের ভিতরে সদা-সর্বদা মৃত্যুর সময়কার ভয় এবং চিন্তা জাগ্রত রাখা জরুরি। এর বিপরীতে মৃত্যুর সময়কার মন্দ পরিণতি থেকে নির্ভীকর্ণ থাকা মৃত্যুর সময় কালেমা থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণ হয়ে থাকে। এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তবে কি তারা আল্লাহ প্রদত্ত অবকাশ (-এর পরিণাম) সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে গেছে? (যদি তাই হয়) তবে (তারা যেন স্মরণ রাখে), আল্লাহ প্রদত্ত অবকাশ সম্পর্কে নিশ্চিত থাকে কেবল সেইসব লোক, যারা শেষ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’(সূরা আ‘রাফ : ৯৯)।
উপরিউক্ত আয়াত দ্বারা বোঝা গেল, আল্লাহ তাআলা মানুষকে তাদের পাপাচার সত্ত্বেও দুনিয়ায় বাহ্যিক সুখ-সাচ্ছন্দ্য দিয়ে থাকেন, যার উদ্দেশ্য হয় তাদেরকে ঢিল ও অবকাশ দেওয়া। তারা যখন সেই অবকাশ এর ভেতর উপর্যুপরি গুনাহের কাজ করেই যেতে থাকে, তখন এক পর্যায়ে আকস্মিকভাবে তাদের পাকড়াও করা হয়। সুতরাং সুখ-সাচ্ছন্দের ভেতরেও নিজ আমল সম্পর্কে মানুষের গাফেল থাকা উচিত নয়। বরং সর্বদা আত্মসংশোধনে যতœবান থাকা চাই। তা না হলে এই ঢিল ও অবকাশ আমার মৃত্যুর সময় ঈমান থেকে মাহরুমের কারণ হয়ে যেতে পারে।
শরীয়তের বিধি-বিধান বোঝা মনে করা: আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বান্দার ওপর সবচেয়ে বড় বিধান হলো ঈমান। ঈমান হলো ইসলামকে একমাত্র সত্য ধর্ম মেনে তা গ্রহণ করে নেওয়া। ইসলাম আকাইদ ও আহকাম, তথা বিশ্বাস ও বিধানাবলির সমষ্টি। ইসলামের বর্ণিত হুকুম- আকাম ও বিধি বিধানকে বোঝা মনে করা এবং আমলের উপযুক্ত মনে না করা ঈমান থেকে মাহরুমের সবচেয়ে বড় কারণ। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং সবর সালাতের মাধ্যমে সাহায্য লাভ কর। সালাতকে অবশ্যই কঠিন মনে হয়, কিন্তু তাদের পক্ষে (কঠিন) নয়, যারা খুশু‘ (অর্থাৎ ধ্যান ও বিনয়)-এর সাথে পড়ে।’(সূরা বাকারা:৪৫)।
বোঝা গেল, যার মধ্যে ঈমান আকিদা,পরকালের বিশ্বাস এবং আল্লাহ তাআলার আনুগত্য পরিপূর্ণভাবে নেই; তার কাছে শরীয়তের যাবতীয় হুকুম-আহকাম, বিধিবিধান পালন করা এক ধরনের বোঝা ও মুসিবতের মতো মনে হয়। যেমন ধরুন- যাপিত জীবনে অনেক মা-বোনেরা বলে থাকে, বর্তমানে যুগে পর্দা বিধান চলে না; কিংবা শরীয়তসিদ্ধ এই বিধানকে বোঝা মনে করে। অনুরূপভাবে পুরুষরা সুদ-ঘুষ থেকে বেঁচে থাকা বোঝা মনে করে, মোটকথা কোরআন সুন্নাহে বর্ণিত শরীয়তের যেকোন বিধি-বিধানকে বোঝা মনে করা ঈমান থেকে বঞ্চিত হওয়ার অন্যতম কারণ।
ধর্ম হিসেবে ইসলাম পেয়ে শুকর না করা: মহান আল্লাহ মানব জাতিকে অসংখ্য অগণিত নিয়ামত দান করেছেন, যা পৃথিবীর সব মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেও গণনা করে শেষ করা যাবেনা। এতোসব নিয়ামতের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামত হল, ধর্ম হিসেবে ইসলামকে লাভ করা। এতো বড় নেয়ামত পেয়ে যারা এই নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে না, এটাই তাদের ঈমান থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণ হতে পারে। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে কৃতজ্ঞতা আদায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে বলেছেন, ‘এবং সেই সময়টাও স্মরণ কর, যখন তোমাদের প্রতিপালক ঘোষণা করেছিলেন, তোমরা সত্যিকারের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে আমি তোমাদেরকে আরো বেশি দেব, আর যদি অকৃতজ্ঞতা কর, তবে জেনে রেখো, আমার শাস্তি অতি কঠিন।’(সূরা ইব্রাহীম : ৭)।
তাইতো সকাল সন্ধ্যা শুকরিয়া আদায় হিসেবে রাসূলুল্লাহ (সা.) নি¤েœাক্ত দোয়া পড়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। দোয়াটি হলো : ‘রাদীতু বিল্লাহি রাব্বান ওয়া বিল ইসলামি দীনান ওয়াবি মুহাম্মাদি নাবীয়্যান’। যার অর্থ হলো, আমি খুশি আল্লাহ তায়ালাকে রব হিসেবে পেয়ে, আমি খুশি ইসলামকে ধর্ম হিসেবে পেয়ে, আমি পরম খুশি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নবী হিসেবে পেয়ে।’(আবু দাউদ : ৫০৮৮)। যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা এই দোয়া নিয়মিত পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে কিয়ামতের দিন অবশ্যই খুশি করবেন, এবং প্রাত্যহিক জীবনে যে ব্যক্তি সকালে তিনবার এই দোয়া পাঠ করবে, সন্ধ্যা পর্যন্ত আকস্মিক বালা-মুসিবত থেকে নিরাপদ থাকবে। যেসব কারণে মানুষ ঈমান থেকে মাহরুম হয়, সেসব কাজের বিবরণ উপরে বিস্তারিত আকারে তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে ওই কাজগুলো এড়িয়ে চলে ঈমান রক্ষা করার তওফিক দান করুন।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আইপিএলের মেগা নিলামে নজর বাংলাদেশের ১২ ক্রিকেটারের উপর
বেনাপোল থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ
“রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ”
বিএনপিতে অনুপ্রবেশকারীর ঠাঁই হবে না: আমিনুল হক
আলেম সমাজের সাথে ঐতিহাসিক সুসম্পর্ক রয়েছে বিএনপির: ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক নাছির
৪ দিনে ভারত থেকে এলো ৭২৫ মেট্রিক টন চাল
পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে ৩ শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় শিবিরের শোক
নিরীহ কোনো মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয় : আইজিপি
দেশকে এগিয়ে নিতে মেয়েদের সুশিক্ষা অর্জনের বিকল্প নেই - শেরপুরের পুলিশ সুপার
গণতন্ত্রের মোড়কে বাকশাল কায়েম করতে চেয়েছিলেন শেখ হাসিনা: জোনায়েদ সাকি
নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় সরকার চায় - মাওলানা এবিএম জাকারিয়া
বৈশ্বিক নিরাপত্তা ইস্যুতে ট্রাম্পের সঙ্গে ন্যাটো প্রধানের বৈঠক
রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
অর্থবহ সংস্কারের আগে নির্বাচন নয় -প্রিন্সিপাল মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের বৈধ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না
অপরিকল্পিত বাধ-রাস্তা নির্মাণে মাছের বিচরণ ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি হয়েছে: প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা
সাটুরিয়ায় তেলের পাম্পে ভয়াবহ আগুন
নির্বাচনব্যবস্থা আমূল পুনর্গঠনের তাগিদ রাষ্ট্রচিন্তাবিদদের
কর্মস্থলে অনুপস্থিত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা
ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ৮৮৬