আত্মহত্যা সমাধানের পথ নয় জঘন্য কাজ
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
আত্মহত্যা থেকে বাঁচতে পরিবার, সামাজিক, ও রাষ্ট্রীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা, ইসলামিক মূল্যবোধ ও নৈতিক শিক্ষা, রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীলতা বিভিন্ন উপায়ে আত্মহত্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব। আত্মহত্যা একটি সামাজিক ব্যাধি। আজকাল পত্রিকার পাতায় কিংবা সোশ্যাল মিডিয়াতে আত্মহত্যার সংবাদ প্রায়ই দেখা যায়। ইসলামে আত্মহত্যা মহাপাপ ও ঘৃণ্য কাজ। মানুষ কেন নিজের উপর তুলনা করে না? মানুষ কেন আত্মহত্যা করে সে বিষয়ে দৃষ্টিপাত করা যাক। আত্মহত্যার অনেক কারণ আছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো : স্বামী স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য , যৌতুকের কারণে ঝগড়া বিবাদ , পিতা-মাতা ও ছেলে মেয়ের মধ্যে মনোমালিন্য, পরীক্ষায় ব্যর্থতা, দীর্ঘস্থায়ী রোগ থেকে মুক্তি, প্রেম বিরহ, মিথ্যা অভিনয়ের ফাঁদে পড়ে কিংবা ব্যবসায়ে ব্যর্থ হয়ে। যখন জ্ঞান-বুদ্ধি,উপলব্ধি ও অনুধাবন শক্তি লোভ পাই, নিজেকে অসহায় ও ভরসাহীন মনে হয় ; তখনই মানুষ আত্মহত্যা করে বসে।
আত্মহত্যার পরিণতি সম্পর্কে কোরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে : আর তোমরা নিজেরা নিজদেরকে হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে পরম দয়ালু। আর যে কেউ সীমালংঘন করে অন্যায়ভাবে তা করবে, অবশ্যই আমরা তাকে আগুনে পোড়াবো; এসব আল্লাহর পক্ষে সহজ। (সূরা নিসা : ২৯-৩০)। আত্মহত্যার ভয়ানক পরিণতি সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজেকে পাহাড়ের ওপর থেকে নিক্ষেপ করে আত্মহত্যা করে, সে জাহান্নামের মধ্যে সর্বদা ওইভাবে লাফিয়ে পড়ে নিজেকে নিক্ষেপ করতে থাকবে। যে ব্যক্তি বিষ পান করে আত্মহত্যা করে, সে-ও জাহান্নামের মধ্যে সর্বদা ওইভাবে নিজ হাতে বিষ পান করতে থাকবে। আর যেকোনো ধারালো অস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যা করে, তার কাছে জাহান্নামে সেই ধারালো অস্ত্র থাকবে,যা দ্বারা সে সর্বদা নিজের পেট ফুঁড়তে থাকবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)।
আত্মহত্যার প্রতিফল সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের এক ব্যক্তি আহত হয়ে সে ব্যথা সহ্য করতে পারেনি। সে একটি ছুরি দিয়ে নিজের হাত নিজেই কেটে ফেলে। এরপর রক্তক্ষরণে সে মারা যায়। এ ব্যক্তি সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘আমার বান্দা নিজেকে হত্যা করার ব্যাপারে বড় তাড়াহুড়া করে ফেলেছে। আমি তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিলাম।’ (বুখারি ও মুসলিম)। এমনকি আত্মহত্যা তো দূরের কথা মৃত্যু কামনা করা যাবে না। হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন, আত্মহত্যা তো দূরের কথা মৃত্যু কামনাও করা যাবে না। মৃত্যু যদি প্রত্যাশা করতেই হয় তবে সে যেন বলে, হে আমার রব আমাকে সে অবধি জীবিত রাখুন, যতক্ষণ আমার জীবনটা হয় আমার জন্য কল্যাণকর । আর আমাকে তখনই মৃত্যু দিন যখন মৃত্যু হয় আমার জন্য শ্রেয়। (বুখারী মুসলিম)।
আত্মহত্যা থেকে বাঁচাতে পরিবার , সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা , ইসলামিক মূল্যবোধ ও নৈতিক শিক্ষা ,রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীলতা ইত্যাদি উপায়ে আত্মহত্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা শ্রেণী কক্ষে সকল শিক্ষার্থীদেরকে আত্মহত্যা না করার ব্যাপারে সচেতনতা কিংবা আত্মহত্যা সমাধানের পথ নয় এ ব্যাপারে শিক্ষা দিতে হবে। প্রত্যেক পিতা মাতার উচিত তাদের সন্তানদের কুরআন হাদিসের জ্ঞান শিখিয়ে তারপর অন্য কিছু শিক্ষা দেওয়া। দ্বিতীয়ত: সন্তানদের যথাযথভাবে লালন পালন করতে হবে। না জেনে, প্রকৃত তথ্য না বের করে সন্তানদের অযথা বকাঝকাও পরিহার করতে হবে। যেমন ধরুন, আপনার সন্তান খুব উচ্চস্বরে কথা বলে, আপনি তাকে তুমি জোরে কথা বলোনা এভাবে না বলে ‘বাবা আস্তে কথা বল’ এভাবেও তো বলতে পারেন। তাদেরকে কখনো মানসিক কষ্ট দেওয়া যাবে না যা তাদেরকে আত্মহত্যার মতো চরম পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করে। প্রতিমুহূর্তে ধৈর্য ধরতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ ! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো ।নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন। এবং অবশ্যই আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, জান-মালের ক্ষতি ও ফল-ফসলের বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের।’ (সূরা বাকারা : ১৫৩,১৫৫)।
মোটকথা যখনই নিজেকে অসহায় ও আশাহত মনে হয় এবং আত্মহত্যা চিন্তা আসে , তখনই পরিবারের সদস্যদের মনে করতে হবে।পাশাপাশি ইসলামে আত্মহত্যা নাজায়েজ এবং এর পরিনাম জাহান্নাম এই এই বিষয়টা মনে রাখতে হবে। সাথে সাথে মনে রাখতে হবে আল্লাহ আমার প্রধান সহায়ক। তিনি সব সমস্যার মুক্তিদাতা।তাছাড়া পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি নফল নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে। কোন সমস্যা সমাধানের পথ আত্মহত্যা নয় বরং ইসলাম সামাজিক দৃষ্টিতে এটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং জঘন্য অপরাধ। এ ধরনের অপরাধ থেকে আমাদের সকলকে অবশ্যই দূরে থাকা উচিত। পরিশেষে বলতে চাই, ‘আর নয় হতাশা/ আর নয় ভয়, আগামীতে আমাদের হবেই হবে জয়।’
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আইপিএলের মেগা নিলামে নজর বাংলাদেশের ১২ ক্রিকেটারের উপর
বেনাপোল থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ
“রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ”
বিএনপিতে অনুপ্রবেশকারীর ঠাঁই হবে না: আমিনুল হক
আলেম সমাজের সাথে ঐতিহাসিক সুসম্পর্ক রয়েছে বিএনপির: ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক নাছির
৪ দিনে ভারত থেকে এলো ৭২৫ মেট্রিক টন চাল
পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে ৩ শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় শিবিরের শোক
নিরীহ কোনো মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয় : আইজিপি
দেশকে এগিয়ে নিতে মেয়েদের সুশিক্ষা অর্জনের বিকল্প নেই - শেরপুরের পুলিশ সুপার
গণতন্ত্রের মোড়কে বাকশাল কায়েম করতে চেয়েছিলেন শেখ হাসিনা: জোনায়েদ সাকি
নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় সরকার চায় - মাওলানা এবিএম জাকারিয়া
বৈশ্বিক নিরাপত্তা ইস্যুতে ট্রাম্পের সঙ্গে ন্যাটো প্রধানের বৈঠক
রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
অর্থবহ সংস্কারের আগে নির্বাচন নয় -প্রিন্সিপাল মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের বৈধ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না
অপরিকল্পিত বাধ-রাস্তা নির্মাণে মাছের বিচরণ ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি হয়েছে: প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা
সাটুরিয়ায় তেলের পাম্পে ভয়াবহ আগুন
নির্বাচনব্যবস্থা আমূল পুনর্গঠনের তাগিদ রাষ্ট্রচিন্তাবিদদের
কর্মস্থলে অনুপস্থিত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা
ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ৮৮৬