ঢাকা   শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ | ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

মহাকালের মহান ব্যক্তিত্ব মুহাম্মদ (সা.)

Daily Inqilab জাফর আহমাদ

১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

পৃথিবীর ভূপৃষ্ট যত বড় বড় নায়ক মহানায়ক, সমাজ সংস্কারক, দোর্দ- প্রতাপশালী বিপ্ল­বী, মহাবিপ্লবীদের ভার ধারণ করেছে তাদের মধ্যে পৃথিবী তার সর্বাঙ্গে একমাত্র যে মহামানবের স্পর্শকে অনুভব করে, যার অবদান ও কীর্তিকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে, তিনি বিশ্বমানবতার অকৃত্রিম বন্ধু, পূর্ণাঙ্গ মহামানব, কালেমার পতাকাবাহী মরু-সাইমুম, শেষ নবী, বিশ্বনবী, বিশ^নেতা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম। যার চরিত্রে অসংখ্য গুণের সমাবেশ ঘটেছিল। যাকে পেয়ে তৃষ্ণার্ত পৃথিবী তৃপ্তি লাভ করেছিল। যিনি জীবনের সকল দিক ও বিভাগে আমূল পরিবর্তন করে সমগ্র সমাজ সভ্যাতাকে আল্লাহর রঙ এ রাঙিয়ে করে গেছেন। তিনি নিছক এমন কোন ধর্মীয় নেতা ছিলেন না যে, শুধুমাত্র মসজিদে বসে মানুষদেরকে ধর্মীয় বাণী শুনাতেন বা অধিকাংশ সময় ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। অথবা  তিনি এমনটিও ছিলেন না যে, শুধু ইমামতি নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন বা উপরন্ত ধর্মীয় দিকটি দেখা শুনা করতেন। 
আল্ল­াহর পক্ষ থেকে যে হেদায়াত তথা আল কুরআন ও সত্য দ্বীন তিনি পেয়েছেন তা মানুয়ের গোটা জীবন ব্যবস্থার প্রত্যেকটি বিভাগের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যেখানে কেবলমাত্র আল্ল­াহর আনুগত্য ও বিধান বিজয়ী ছিল। সেখানে আল্ল­াহর আনুগত্য ও বিধানের বিপরীত সকল প্রকার চিন্তা, চেতনা নাম মাত্রও ছিল না। আর এটিই তাঁর কাজ এবং এ কাজ তাঁকে অবশ্যই করতে হয়েছে। কাফের ও মুশরিকরা মেনে লয় তবুও, না মেনে নেয় তবুও এবং বিরোধীতা ও প্রতিরোধের মুখে সমগ্র শক্তির মোকাবেলা করে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ‘মিশন’ অবশ্যই পুর্ণ করতে হয়েছে। পাহাড়সম বাধা আর বিরোধীতা নিয়ে তাবত তাগুতি শক্তির সাথে লড়ে গেছেন। এ জন্য তাঁকে অসংখ্য নির্যাতন, দুঃখ-কষ্ট, কঠিণ ষড়যন্ত্রসহ অত্যাধিক সুযোগ-সুবিধা প্রদানের লোভনীয় অফারের সম্মুখীন হতে হয়েছে। কিন্তু কোন কিছুই তার মিশনকে সম্মুখে এগিয়ে নেয়ার পথকে রোধ করতে পারিনি।   
কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, আমরা দৈনন্দিন কুরআনের সাথে যে ধরনের আচরণ করে যাচ্ছি, আল্ল­াহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবন চরিতের সাথে ঠিক সে আচরণই করে যাচ্ছি। প্রত্যেকেই আমরা নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী কুরআনকে যেমন শতধা ভাগ করেছি। আল্ল­াহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবন চরিতকেও আমরা আমাদের সুবিধা মত ভাগ করে বিশেষ অংশের উপর আমল করে যাচ্ছি। প্রকৃতপক্ষেই আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আল কুরআন ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের  চরিতের সহজ ও সরল কাজগুলো ঘটা করে পালন করে যাচ্ছি, কিন্তু জীবনের অধিকাংশ সমস্যার সমাধানের জন্য ধারস্থ হচ্ছি মানব রচিত মতবাদের কাছে। যার ফলে পার্থিব জীবনে আমরা বিশ্বময় অপমানিত ও লাঞ্জিত হচ্ছি । কুরআনের সাথে কি ধরনের আচরণ করা হচ্ছে সে সম্পর্কে অবশ্যই আল্ল­াহ তায়ালা জিজ্ঞাস করবেন : ‘যারা কুরআনকে টুকরো টুকরো করেছে। সুতরাং তোমার মালিকের শফথ, ওদের সবার কাছে আমি অবশ্যই প্রশ্ন করবো। সে সব বিষয়ে, যা কিছু আচরণ তারা (কুরআনের সাথে) করতো। (সুরা হিজর-৯১-৯৩)।
আল্ল­াহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চরিত্র ছিল আল কুরআন। তাই আল-কুরআন থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাসুল চরিতকে বুঝা যেমন সম্ভব নয়, তেমনি আল-কুরআনের শিক্ষাকে সঠিকভাবে বুঝতে হলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ২৩ বৎসরের জীবনের আলোকেই বুঝতে হবে। কারণ বিশ্বনেতা হযরত মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন  ঐ আন্দোলনের চাহিদা অনুযায়ী যখন যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই অবতীর্ণ করা হয়। আল্লাহ তা’আলা বলেন ‘যারা কুরআনকে অস্বীকার করে তারা বলে আচ্ছা পুরো কুরআনটা তার উপড় একবারেই নাযিল হয় না কেন ? আসলে কুরআন তো এভাবেই  নাযিল হওয়া উচিৎ ছিলো যাতে করে এই ওহি দ্বারা আমি তোমার অন্তরকে মযবুত করে দিতে পারি এ কারনেই আমি একে থেমে থেমে নাযিল করেছি।’ (সুরা-ফোরকান-৩২)। 
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশেষ বিশ্বমানবতার একমাত্র মুক্তির দূত। এ মহামানবের আদর্শ ছাড়া মানুষের মুক্তির চিন্তা করা একটি বাস্তবতাকে উপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছুই নহে। বর্তমান  এ বিপর্যস্ত পৃথিবীটাই প্রধান স্বাক্ষী। সারা পৃথিবী জুড়ে মানব রচিত বা মানুষের মস্তিষ্ক তৈরী আইন ও কানুন দিয়ে শান্তি আনয়নের চেষ্টা সাধনা করা হচ্ছে। কিন্তু শান্তি  তো দুরের কথা, বরং মানুষের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় আমরা কুরআনের হুকুম অনুযায়ী নামায, রোযা, হজ্জ পালণ করছি কিন্তু আল কুরআনের সামাজিক মর্যাদা আমরা দিতে চাই না। এমনিভাবে আমরা কেউ কেউ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মক্কী জীবনের উপর আমল করে যাচ্ছি, মনে হবে যেন রাসুলের মাদানী জীবনের অনুসরণ অতিমানবীয় কাজ।     
অথবা এ মাক্কী জীবনের কাজ শেষ করতে পারলেই মাদানী জীবন এমনি এমনি তৈয়ার হয়ে যাবে। কেউবা আবার রাসুলের মিষ্টি মিষ্টি সুন্নতগুলোর অনুসরণ নিয়ে ব্যস্ত। একদল এমন রয়েছেন যারা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাটির তৈরী নাকি নুরের তৈরী, তিনি গোল টুপি পড়েছেন নাকি কিস্তি টুপি ও দাঁড়িয়ে দুরুদ পড়ব নাকি বসে ইত্যাদি অপ্রাসঙ্গিক তর্কে লিপ্ত আছেন। অনেকটা রসনাভোজি প্রিয় ব্যক্তিদের ন্যয় কিছু ভাইসব তো সারাক্ষণ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলৌকিক দিকগুলো মজা করে উপভোগ করে থাকেন। কিন্তু এতসব ভাইয়েরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসলামী সমাজ গড়ার কথা একবারও মুখে আনেন না। যার ফলে আমাদের জন্য পৃথিবীটা আজ ছোট হয়ে আসছে। এ করুন পরিণতি থেকে বাঁচতে হলে দ্রুত আমাদেরকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পূর্ণাঙ্গ জীবনের কাছে ফিরে আসতে হবে এবং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে আল কুরআনকে  সামাজিক মর্যাদা দিয়েছিলেন সে ভাবে কুরআনের মর্যাদা দিতে হবে ।


বিভাগ : ইসলামী জীবন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম
মসজিদে পরে এসে ঘাড় ডিঙিয়ে সামনের কাতারে যাওয়া জায়েজ নেই
দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য সুন্দর জীবন এবং কৃতজ্ঞতাবোধ
যুগে যুগে জুলুম ও জালিমের পরিণতি
সালাম ইসলামী সম্ভাষণ রীতির এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ
আরও

আরও পড়ুন

কেমন হল ভিভো ভি৪০ লাইটের অভিজ্ঞতা!

কেমন হল ভিভো ভি৪০ লাইটের অভিজ্ঞতা!

তাদের রাজনীতি করতে দেবে কি-না তা দেশের মানুষই সিদ্ধান্ত নেবে: জামায়াতে সেক্রেটারি

তাদের রাজনীতি করতে দেবে কি-না তা দেশের মানুষই সিদ্ধান্ত নেবে: জামায়াতে সেক্রেটারি

উত্তরায় হাসপাতালে সন্ত্রাসী হামলাও লুটপাটের ঘটনায় থানায় মামলা

উত্তরায় হাসপাতালে সন্ত্রাসী হামলাও লুটপাটের ঘটনায় থানায় মামলা

পাকিস্তানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় নিহত ৩২

পাকিস্তানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় নিহত ৩২

আল্লাহকে পেতে হলে রাসুলের পথ অনুসরণ অপরিহার্য: মাওলানা রুহুল আমিন খান

আল্লাহকে পেতে হলে রাসুলের পথ অনুসরণ অপরিহার্য: মাওলানা রুহুল আমিন খান

ঢাকাবাসীকে নিরাপদ রাখতে হবে : ডিএমপি কমিশনার

ঢাকাবাসীকে নিরাপদ রাখতে হবে : ডিএমপি কমিশনার

ভোটের মাধ্যমে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের ঐক্যবন্ধ থাকতে হবে-লুৎফর রহমান আজাদ

ভোটের মাধ্যমে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের ঐক্যবন্ধ থাকতে হবে-লুৎফর রহমান আজাদ

গফরগাঁওয়ের বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ আবদুছ ছালামের ইন্তেকাল

গফরগাঁওয়ের বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ আবদুছ ছালামের ইন্তেকাল

আওয়ামী দোসররা মানুষের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে: তানভীর হুদা

আওয়ামী দোসররা মানুষের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে: তানভীর হুদা

ফিলিস্তিনিদের জন্য কোটি টাকার সহায়তা নিয়ে মিশরে পৌঁছেছে হাফেজ্জী চ্যারিটেবল

ফিলিস্তিনিদের জন্য কোটি টাকার সহায়তা নিয়ে মিশরে পৌঁছেছে হাফেজ্জী চ্যারিটেবল

১৭টি বছর শ্রমিকদলের নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতন করেছে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা- কেন্দ্রীয় সভাপতি

১৭টি বছর শ্রমিকদলের নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতন করেছে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা- কেন্দ্রীয় সভাপতি

বিএনপি যতই চাপ দিক, সংস্কারের ওপর ভিত্তি করেই নির্বাচন: উপদেষ্টা নাহিদ

বিএনপি যতই চাপ দিক, সংস্কারের ওপর ভিত্তি করেই নির্বাচন: উপদেষ্টা নাহিদ

ছয় বছর পর স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের মুখোমুখি পাকিস্তান

ছয় বছর পর স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের মুখোমুখি পাকিস্তান

তারেক রহমান ও কায়কোবাদের মামলা প্রত্যাহার না করলে অনশনসহ কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের

তারেক রহমান ও কায়কোবাদের মামলা প্রত্যাহার না করলে অনশনসহ কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের

টানা তিন সেঞ্চুরিতে তিলাকের বিশ্ব রেকর্ড

টানা তিন সেঞ্চুরিতে তিলাকের বিশ্ব রেকর্ড

সাময়িক বন্ধের পর খুললো যমুনা ফিউচার পার্ক

সাময়িক বন্ধের পর খুললো যমুনা ফিউচার পার্ক

জ্বালানি খাতে সাশ্রয় হয়েছে ৩৭০ কোটি টাকা: জ্বালানি উপদেষ্টা

জ্বালানি খাতে সাশ্রয় হয়েছে ৩৭০ কোটি টাকা: জ্বালানি উপদেষ্টা

গৌরনদীতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দোকান ঘরে বাস নিহত-১ আহত-৬

গৌরনদীতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দোকান ঘরে বাস নিহত-১ আহত-৬

কুড়িগ্রামের উলিপু‌রে ২ আ'লীগ নেতা গ্রেপ্তার

কুড়িগ্রামের উলিপু‌রে ২ আ'লীগ নেতা গ্রেপ্তার

লাওসে ভেজাল মদপানে ৬ বিদেশির মৃত্যু

লাওসে ভেজাল মদপানে ৬ বিদেশির মৃত্যু